উইক এন্ডের ঘুম ভাঙল সহকর্মী ভায়লিতার এস এম এস পেয়ে, সে আমার সাথে কখনোই ইংরেজি বলেনা তার উদ্দেশ্য হচ্ছে তিন বছরে সে আমাকে ফ্রেঞ্চ শিখায়েই ছাড়বে। আমিও ঠিক করেছি তাই হোক ফ্রেঞ্চ আমি শিখেই ছাড়ব। তার এস এম এস পড়ে যা বুঝলাম তা হচ্ছে সে আমাকে একটা ক্যানন ক্যমেরার ফিক্সড লেন্স কিনে দিতে চায়।
প্রথমে মনে হয়েছিল সপ্ন দেখছি, স্বপ্নে আমি মাঝে মাঝে অনেক বড়োলোক হয়ে যাই কোন দিন আল্যিসিয়া সিলভারস্টোন কিংবা আঞ্জেলিনা জুলির সাথে ডেট করি, কালো কালো লিমুজিন গাড়ীতে ঘুরে বেড়াই হোটেলে খেয়ে ওয়েটারকে ১০০ ডলারের নোট দিয়ে হাসি মুখে জানতে চাই আর ইউ হ্যাপি উইথ দ্যাট? কিন্ত অ্যালার্মের শব্দে ঘুম থেকে উঠে তরিঘড়ি দুই টুকরা পাওরুটি মুখে দিয়ে সাবওয়ে তে বসে চিন্তা করি স্বপ্নটা যদি বাস্তবে রুপ নিত! স্বপ্ন নয় বাস্তবে আছি বুঝতে পারার পর প্রথমে ভেবেছিলাম স্প্যাম ইমেইলের মতো স্প্যাম এস এম এস কবে থেকে শুরু হলো? আমার ফ্রেঞ্চের উপর আমার নিজেরই আস্থা নেই তাই গুগুলে ট্রান্সলেট করে দেখলাম অর্থ প্রায় কাছাকাছি। কনফার্মেশনের জন্য ফোন করলাম ভায়লিতাকে ‘স্যালুত !
কেছ কিছ পাস মুনামি...(hai whats going on my friend! )’ বলতেই সে বলল ডিসেম্বারের প্রথম সপ্তাহে আমাকে ক্যানন ৫০ মিমি. ফিক্সড লেন্স কিনে দিবে তার সাথে কখন আমি মিডিয়া মার্কে যেতে পারি সময়টা যেন জানাই
ঠাহর করে উঠতে কিছুক্ষণ সময় লাগল তারপর আবার এই নিদৃষ্ট লেন্সেই বা কেন? জানতে চাইলাম ঘটনা কি বিস্তারিত বল। তারপর সে বলে আমার মা নতুন বয়ফ্রেন্ড পেয়েছে! তোমার অবদানের জন্য তোমাকে পুরস্কৃত করা হবে [ মনে মনে বললাম যাক আগে মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি..] ঘটনার শুরু দুই সপ্তাহ আগে, আমাকে এক সন্ধ্যায় পিজা খাবার দাওয়াত করে বলে তোমার ক্যেমারাটা নিয়ে এসো। ভাবলাম মাগনা পাইলে মানুষ আলকাতরাও খায় আর এই দফায় তো পিজা! সেদিন হাত না ধুয়েই ক্যমেরা নিয়ে সোজা তার বাসায়। বাসায় গিয়ে দেখি আমি ভায়লিতা আর তার মা। অন্য সবাই সাধারন কাপড়ে কিন্তু ভায়লিতার মা একটু বেশি ড্রেসড আপ, চুলের পাশে ফুল টুল দিয়ে অস্থির অবস্থা। এক পর্যায়ে ভায়লিতা তার মায়ের কটা ছবি তুলে দেবার জন্য বলার পর আমি প্রায় ১০ /১২ টা ছবি তুলে দিয়ে এক সময় কি মনেকরে বলেছিলাম আমার ভাল লেন্স নেই পোট্রেট ছবি তোলার জন্য ফিক্সড লেন্স লাগে আমার লেন্সটা ফিক্সড লেন্সনা একটা ক্যনন ৫০ মি মি ১.৪ ফিক্সড লেন্স থাকলে খুব ভাল হতো, কিন্ত আমি দেশে যাবার জন্য টাকা জমাচ্ছি তাই আপাতত এই প্রজেক্ট বাদ ।
ছবি তোলার পরের গল্পটা আমার জানা ছিলনা। যেটা পরে জেনেছি। ভায়লিতার বাবা মারা গেছে দুই বছর তার মা একা থাকে বিষয়টা তার ভাল লাগেনা তাই সুইজারল্যান্ডের অনলাইন বন্ধু খুঁজার সাইটে [swissfriends.ch] সে তার মায়ের নতুন বন্ধু ঠিক করে দেবার জন্য আমার তোলা ছবি গুলা দিয়ে সে একটা প্রোফাইল তৈরি করেছে। আর সেই প্রোফাইল দেখে ৩ জন আগ্রহ দেখিয়েছে, তিন জনের মাঝে এরিক, জন্সন এবং ইমানুয়েল নামে তিনজনের মাঝে শেষ জনকে তার মা নতুন বন্ধু হিসেবে ফাইনাল করেছে । আমি জানতে চাইলাম বাকি দুজনকে বাদ দেয়ার কারন কি ছিল? উনি আমাকে অকপটে উত্তর দিলেন প্রথম জনের সাথে কথোপকথনের বেশির ভাগ অংশ জুড়ে সে শুধু আমার শরীর পর্যবেক্ষণ করল, দ্বিতীয়জনের কথা বার্তায় বেশ ডমিনেটিং মনে হল। আমার যে জিনিষটার খুব প্রয়োজন তা হচ্ছে নির্ভরতা আমার এমন একজন মানুষ চাই যাকে বিশ্বাস করতে পারি। যার সাথে হাতে হাত ধরে বহুদূর যেতে পারি সময়ে অসময়ে ফেলে আসা কষ্ট হাসি আনন্দের গল্প গুলা শেয়ার করতে পারি। ভালো লাগলো জেনে যে নির্ভরতা বিষয়টা আসলেই খুব গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হোক কম কিংবা বেশি বয়সের মানুষদের জন্য।
ভায়লিতা এখন নতুন বাবা আর মা কে নিয়ে নানান জায়গায় ঘুরতে যায় আর ফেইস বুকে আপডেট দেয়।“ Having beautiful time with my new family member! its my new DAD” আমার ভালই লাগে...৬২ বছরের একজন মহিলার জন্য বয়ফ্রেন্ড খুঁজে দেয়ার মতো অসাধারন কাজের ফটোগ্রাফার হিসাবে নিজেকে ভাবতে! টিউশনি- স্কলারশিপ- টি শার্ট পেইন্ট সহ টুকিটাকি অনেক পেশা থেকে টাকা কামিয়েছি কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও ঘটক হিসেবে কিছু একটা হয়তো এটাই আমার প্রথম ও শেষ কামাই। ভাবতে খুব অবাক লাগে একই সময়ে একই পৃথিবীর এক প্রান্তে আমরা এক প্রান্তে সুইসরা। আশপাশের কাছের মানুষদের মাঝে ৬০ বছরে কেউ বিধবা হলে তার জন্য নতুন করে বন্ধু খুঁজে দেবার সাহস আমার আছে কিনা কিংবা যার জন্য খুঁজে দিব সেই বা সহজে একসেপ্ট করবে কিনা এই বিষয়টা নিয়ে মাঝে মাঝে খুব চিন্তা করি। আমাদের সমাজে পুরুষদের ৬০ বছরে নতুন বন্ধু পেতে সমস্যা হয়না কিন্তু মহিলাদের?
-মাহমুদ
ফেইস বুক আই ডিঃ
Mahmud Geneva
ব্লগঃ http://www.nil-pipra.blogspot.com/
বি দ্রঃ প্রতিষ্ঠিত লেখকদের অনেকের কল্পনাশক্তি খুব প্রখর, কল্পনা থেকেই উনারা খুব সুন্দর গল্প তৈরি করে ফেলতে পারেন আমি তা পারিনা, তাই আসেপাশের ঘটে জাওয়া বিচ্ছিন্ন ঘটনা গুলা এককরে আমি লিখতে চেষ্টা করি। আমার এই চেষ্টা কতটুকু সফলতা পায় তা আমার প্রিয় মানুষদের মূল্যায়নের উপর নির্ভর করবে। প্রিয় মানুষদের নিয়ে ভালো কিছু ভাবার, ভালো কিছু করার অদম্য ইচ্ছা সব সময় হৃদয়ে লালন করি কিন্ত হাজারো প্রতিকুলতার জোয়ারে অনেক ক্ষেত্রেই তা হারিয়ে যায়। তেমন কিছুর বিশেষ অভাব নেই আমার এই খুদ্র জিবনে শুধু উৎসাহ ছাড়া। আপনাদের এতটুকু উৎসাহ আমাকে দেবে যোজন যোজন পথ পাড়ি দেবার অসীম সাহস! ভালো থাকবেন সাবাই...
nice
ReplyDelete