Subscribe:

বন্ধুত্বের শাশ্বত বন্ধন,মনে পড়ে চিরন্তন'

    • স্থান-বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সময়-২০০৫ সালের কোন এক সুন্দর দুপুরদৃশ্যপটে আমরা মানে আমি,নিশু,মৌসুম,আনন্তি হলরুমের সামনে দাঁড়ানো,সামনে সবচেয়ে রাগী সায়মা ম্যাডাম,ক্লাশ পালিয়ে এসে ধরা খেয়েছি!আপনারাই বলেন,তখন 9 এ পড়ি,স্কুল জীবন তো শেষ ই প্রাই,অথচ একদিনও স্কুলের একটাও ক্লাশ ফাঁকি দেইনি এটা কোনভাবে মানা যায়??


      ভবিষ্যতে বাচ্চাদের কি গল্প শোনাবো?এর চেয়ে তো গলায় কলস বেঁধে বিদ্যাময়ীর পুকুরেই ডুব দেয়া ভালো!তাই আজ ফাইনাল ডিসিশন,ক্লাশ ফাঁকি দিবোই।শাশ্বতী কে কোনভাবেই এই মহত্‍ কার্যে অংশ নেয়াতে পারলাম না।যদি মোদের ডাক শুনে সে না আসে তবে চারজনেই চল রে....সিঁড়িটা পাড় হতেই পড়বি তো পড় সায়মা ম্যাডামের হাতেই !ম্যাডাম-ক্লাশ টাইমে এখানে?চারজন কি এক ক্লাশের?আমাদের মহলে গাধা নামক সুপরিচিত মৌসুম-ম্যাডাম,আমরা একই ক্লাশের কিন্তু আমরা দুজন পানি করতে আসছি আর ওরা দুজন বাথরুম খাইতে আসছে....ও কি বলতে চাইছিলো তা তো বুঝতে ই পারছেন,যাই হোক,হাসতে হাসতে পানিশমেন্ট থেকে বেঁচে গেছি এটাই বড় কথা।ও!তাই বলে কিন্তু ভাববেন যে ওদের জন্য শাস্তি পাইনি!10 এ থাকতে একদিন টিফিন আওয়ারে এত সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছিলো। 

    • আমার আবার একটুতেই ঠান্ডা জ্বর লেগে যায়,ক্লাশের সব মেয়েরা মাঠে ভিজছিলো,আমি দাঁড়িয়ে দেখছিলাম।আমার বিচ্ছু ফ্রেন্ডগুলো কি আমাকে ছাড়া ভিজবে?ধরে বেঁধে আমাকে ভিজালো,তারপর আমি ডাবল ধামাকা পেলাম,নাচতে নাচতে ভিজতে গিয়ে ধপাস করে পড়ে গেলাম আবার আমি আর শাশ্বতী ক্লাশক্যাপ্টেন বলে ডাবল মার খেলাম।তবে যে পরিমান মজা করেছিলাম তার তুলনায় এটা কিছুই না!আমাদের বিচ্ছুগ্রুপটার একটা পরিচয় দেই,শাশ্বতী চক্রবর্ত্তী,সুস্মিতা দাশ নিশু,আনন্তি সিরাজুম,শ্রেয়সী সরকার দোলা,ফারহানা আক্তার মৌসুম আর আমি এই অধম পম্পি সাহা সমা (SSC'07,HSC'09 batch)।বিদ্যাময়ী স্কুলের অনেক সিনিয়র জুনিয়রের পরিচিত মুখ আমরা,আর প্রতিটা টিচারের অনেক অনেক আদরের।সাংস্কৃতিক প্রোগাম থেকে শুরু করে ডিভেট,পিকনিক থেকে স্কুল ম্যাগাজিন সব কিছুর আয়োজনে আমরা সবার আগে।আমরা ছিলাম অত্যন্ত ভদ্র টাইপের বাঁদর।লক্ষ্য একটাই,লেখাপড়া ঠিক রেখে জীবনটাকে যতটুকু এনজয় করা যায়।প্রাইভেট,ক্লাশ আমরা একসাথে থাকলে কোনটাই বোরিং লাগতো না।আমাদের ক্লাশে মজার একটা নমুনা শুনুন-ম্যাডাম রচনা লিখতে দিছে 'স্কুলের প্রথম দিন',আমরা সেটাকে বানালাম,'জীবনের প্রথম দিন',রচনাটি এমন দাঁড়ালো-)

    • "প্রথম চোখ মেলে দেখতে পেলাম ডাক্তারের পাশে দাঁড়ানো ইন্টার্নের ভাইয়াটিকে,তাকে দেখে আমি কাঁদতে ভুলে গেলাম,দেখলাম সেও খুব অস্থির হয়ে উঠছে আমি কাঁদছি না দেখে,আমি কাঁদার পর এত সুন্দর একটা হাসি দিলো যে আমি আজো তা ভুলতে পারিনি...."।

      টিফিন আওয়ারে হিন্দু ধর্ম ক্লাশে বসে চিত্‍কার করে গান গেতাম,পুকুরে পা ডুবিয়ে বসে থাকতাম,মাঠে সবাই গোল হয়ে বসে আড্ডা দিত আর আমি ওদের কারো কোলে শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখতাম।রাতে যখন পড়তে বসতাম,আধা ঘন্টা পরপর মিসকল দিতাম,কম্পিটিশন দিয়ে রাত জেগে পড়তাম,একজনের পড়া শেষ না হলে জেগে থেকে তাকে সঙ্গ দিতাম,আবার পড়া আগে শেষ হয়ে গেলে কনফারেন্সে আড্ডা মারতাম।আমাদের পুরো জগত্‍টা ছিলো এই ফ্রেন্ডদের নিয়েই।আমি ছিলাম মিস্ পিছলা বিবি!চলতে ফিরতে শুকনা জায়গাতেও ঠাস করে পিছলা খেয়ে পড়ে যেতাম।তাই ওরা এটা সবসময় খেয়াল রাখতো,একটু পিচ্ছিল হলেই আমাকে ধরে ধরে হাটতো।ওদের একটা সিদ্ধান্ত আছে যে আমার মৃত্যুর পর ওরা নিজ উদ্যোগে চেকআপ করাবে যে আমি কয়টা হাড্ডি কি অবস্থায় নিয়ে মরতে পারলাম!আমি রাতে প্রায়ই স্বপ্ন দেখে ভয় পেতাম,মার ফোন আমার কাছে থাকতো,তাই আমি সবার আগে ওদের কাউকে ফোন দিতাম,লাইনে রেখে পরে মার কাছে যেতাম।
    • মন খারাপ থাকলে ওদের ফোন দিয়ে ঝাড়তাম।সব ফিলিংস আমাদের সবার ছিলো,নিজের বলে কিছু ছিলোনা।প্রতিটা ফ্রেন্ডশীপ ডে,আমাদের rag day,picnic,birthday এখনকার মতো এত জমকালোভাবে করা হতো না,কিন্তু ছিলো একরকম স্বচ্ছ আনন্দের।ফ্যামিলি অনেক কড়া শাসনে রাখতো,তার মাঝেই ফাঁক খুঁজে মজা করে নিতাম।শুধু বছরের একটা দিন ফ্রি পেতাম,তা হলো দূর্গাপূজার নবমীর দিন,ঐদিনটাতে কি যে এনজয় করতাম।এভাবেই স্কুল পেরিয়ে কলেজ লাইফটার শুরুতেই ধাক্কা।দোলা কমার্স নিয়ে চলে গেলো অন্য কলেজে,আমাদের মধ্যে আমি আর আনন্তি এক সেকশনে আর বাকি তিনজন অন্যটাতে।আমরা ক্লাশে থাকতাম কম,ক্যাম্পাসের সিংহাসন,পুকুর ঘাট আর কোণার একটা রুমে বসে গল্প আর পড়াশুনা করতাম একসাথে ।তখন বেশ স্বাধীন আমরা,প্রায়ই বের হতাম রিকশাভ্রমনে,চিত্‍কার করে গান গেতাম রিকশায় বসে,কারো বাসায় get together party করে হৈ হুল্লোড় করতাম.... পড়তে পড়তে বোর হয়ে যাচ্ছেন,না??bt আমার যে লেখতে অনেক ভালো লাগছে,পুরোনো স্মৃতিগুলো ভেবে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে।আজ আর আমরা একসাথে নেই।একেকজন একেকজায়গায় নিজেরমতো জগত সাজিয়ে নিয়েছি।দোলা দেশের বাইরে,মৌসুম চট্টগ্রাম,আমি বগুড়া,বাকিরা ঢাকা।

    • এখানেও আমার অনেক ভালো কিছু ফ্রেন্ড আছে যাদের সাথে সারাদিন অনেক আনন্দে কাটে আমার।আজো আমি পিছলা খাই,ওরা আমাকে ধরে হাটে,কিন্তু পড়ার আগে নিজেকে সামলে নিতে শিখে গেছি এখন।ভয় পেলে নিজেই নিজেকে বুঝাই,কাউকে ডিসটার্ব করিনা।তোদের মাঝে একজন ছাড়া আর কারো উপর depend করি না।

      সেই একজন......কলেজের শেষের দিকে একদিন কারো কথায় খুব মন খারাপ করে বাইরে এসে কাঁদছিলাম।শাশ্বতী পিছন থেকে এসে ধরে বলল,"plz কাঁদিস না,at least তোর চোখের জল আমি সহ্য করতে পারিনা" আমার হাতটা ধরে আমার কান্না দেখে ও এভাবে কাঁদছিলো যে আমি কান্না বন্ধ করে ওকে দেখছিলাম।আমরা সবসময়ই আমাদের সার্কেলে সবচেয়ে close ছিলাম,আজ অবধি এক মুহুর্তের জন্যও আমরা হাত ছাড়ি তো নি বরং প্রতিনিয়ত আরো শক্ত করে আগলে ধরছে আমাকে।যত ঝামেলা আসছে আমার জীবনে,খুঁটি হয়ে দাঁড়িয়েছে আমার পাশে,ভেঙে পড়তে দেয়নি।আমার মনের খবর আমি ওর চেয়ে ভালো জানিনা।আমার কোন সংকট সময় নেই যে আমি ওকে পাইনি।দুইজন দুই জায়গাতে থাকি,কষ্ট পেলে ওকে ফোন করে অর্ধেক কাঁদি,বাকি অর্ধেক জমিয়ে রাখি দেখা হলে ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদবো বলে।আজো পাগলীটা আমি কাঁদলে কাঁদতে থাকে।ও আমার জীবনের এমন একটা গিফট যাকে ছাড়া আমি অচল....

    • সংস্কৃতে শাশ্বতীসমা একটা শব্দ,যার অর্থ চিরন্তন সময়,আসলেই আমরা চিরন্তন সময়ের ফ্রেন্ড....শুধু শাশ্বতী না,তোদের প্রতিটাকে আমি অনেক ভালোবাসি,আজো ময়মনসিংহ গেলে স্কুল,কলেজের সামনে দিয়ে গেলে চোখে পানি চলে আসে,অনেক মনে পড়ে সেইদিনগুলোর কথা,পাশে নাই তো কি হইছে,যেখানেই থাকিস তোরা,খুব ভালো থাকিস।আমাদের ছয়জনের স্বরচিত একটা গান ছিল,সেটার কটা লাইন দিয়েই লেখাটা শেষ করছি-

      বন্ধুত্বের এই শাশ্বত বন্ধনমনে পড়ে যায় চিরন্তন

      এসো বন্ধু এস,হাতে হাত ধরি,যাই হারিয়ে সেই ভালো লাগার দিনে,হাসি কান্নার সেই ভেলাতে,যেথায় ভেসেছি আমরা ছজনে,সুখগুলো সাজিয়েছিলাম ভাজে ভাজে,দুঃখ সেথায় পড়তো ঝরে বৃষ্টি সাজে।

      থাকি না যেথায় আজ যত দূরে,বাঁধব নতুন তান একই সুরে।

      ফেলে এসেছি দিনগুলো সেই কবে,ফিরে কি পাবো তারে নতুন করে....-
    • -পম্পি সাহা সমা'

No comments:

Post a Comment