Subscribe:

একজন কবি

কবি ক্লান্ত, কবিরে পানি দেও আনি – বৃদ্ধ শরাফত আলীর কন্ঠে সারা রাত জেগে থাকার ক্লান্তি কিন্তু চোখে এখনও মাদকতা।কে যেন বৃদ্ধের গলা শুনে আনতেছি বলে দৌড় লাগালো।আমার বয়স তখন ছয় কি সাত হবে।ঘুম ভাঙ্গা চোখ নিয়ে শীতে কাপতে কাপতে আমি একজন কবিকে দেখতে আসছি।কবির বিশাল বড় চুল দেখে আমার মনে ভয় জাগে।আমি আস্তে আস্তে কবির কাছে এগিয়ে গিয়ে বসি।তারপর একসময় সাহস করে মুখ ফুটিয়ে বলি, “একটা কবিতা হুনি তো?”


কথা শেষ হয়নাই, তার আগেই আমার জামাহীন গায়ের হাড় উঠানো পিঠে ভয়ংকর একটা কিল খেলাম।কিলটা মেরেছে আমার বাপজান।আমার বাপজান ভীষণ রাগী মানুষ।আমাদের সোনাগাজী গ্রামের সবাই তাকে ভীষণ ভয় খায়।আমি একমাত্র প্রাণী যে উনাকে ভয় পায় না।আদর করে আমি তাকে ডাকি মিয়াভাই।সবাই ডাকে, আমিও ডাকি – এতে দোষ কিসের? যাই হোক, কিল খেয়ে আমি কোনরকমে কান্না থামায় কবির থেকে একটু দূরে সরে বসি।আমার বাবা কবির কাছে হাত জোড় করে বলে, “ক্ষমা করবেন গুরু।পুলাপাইন মানুষ, কবিতার ও কি আর বুঝবো”।

আমি তখন শীতে কাপতে কাপতে উঠে দাঁড়ায় বলি, “কিবায় কয়েছে?আমি কবিতা বেশ আচ্ছা করি বুঝি”।আমি মাথা ঝাকিয়ে ঝাকিয়ে রবি ঠাকুরের কবিতা আবৃত্তি করি –

“আমাদের ছোট নদী চলে বাকে বাকে
বৈশাখ মাসে তার হাটু জল থাকে”

আমি এরপর কবির দিকে তাকিয়ে বলি, “এমন একখান ছন্দে ছন্দে মিলাই শুনান তো দিকি”।

কবি ফিক করে হেসে দেয়।আমাকে কাছে ডাকে হাত নাড়িয়ে।আমার বাবা তখন রক্ত গরম চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।আমি জানি আজকে বাসায় ফেরার পর আমার কপালে মাইর আছে।কিন্তু তা আমি থোরাই কেয়ার করি।কতদিন ধরে অপেক্ষা করছি একটা সত্যিকারের কবিকে দেখবো, তার মুখে কবিতা শুনবো।আমার সামনে এখন যেই কবি বসে আছেন তাকে অবশ্য আমার ভালো লাগছেনা।তার কোন দাড়ি গোফ নেই রবি ঠাকুরের মত।তার শুধু আছে বিশাল বড় বড় চুল।চুলে আবার উকুন আছে অনেক স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।আমার খুব ইচ্ছা আছে আম্মার সেলাইয়ের কাচিটা দিয়ে উকুন ভরা চুলগুলো খচ খচ করে কেটে দেই।

কবি আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখ বড় বড় করে বললেন,

“কবি আজ বলিবেনা কবিতা, শুধুই সত্যবচন
অন্তরে ধারণ করি তা মানিবে দশজন
শোন তবে নিজ গৃহে ভালোবাসাটা আগে রাখিয়ো
নিজ সংসার সর্বোত্তম সেবুঝ আগে জানিয়ো
অবুঝ সেজন যার অন্তরে সংসারা মায়া নাই
হৃদয়ে তাহার অনল বাজিবে সেকথা বলি যাই
মায়ে পিতায় ভালোবাসা দাও স্ত্রী পুত্রে যত্ন
ধরনী তবে আপন হইবে শান্তি পাইবে আত্ন”

আমি কবিকে শুধাই, “তবে কবি আপনার ঘর কই?”

কবি আকাশের দিকে হাসিমুখে চেয়ে বলেন, “আমি নিজেকেই তো খুজে পাইনাই।পরিবার কোথা পাবো”।

আমি অবাক হয়ে কবির দিকে চেয়ে থাকি।এই কবির নাম নইবত শাহী।তিনি গ্রামে গ্রামে যেয়ে পুথি পড়েন, মানুষকে সুন্দর সুন্দর দীক্ষা দেন।৭৭ সালের এক স্বপ্নীল কুয়াশায় মুর্ছিত ভোরে আমি আমার জীবনের প্রথম দীক্ষাটা পেলাম।আমি জানতে পারলাম, আমার আত্নকে আজ খুজে পেতে হবে।কবি সেদিন আরো বলেছিলেন, আত্নকে খুজে পাওয়া সবচেয়ে দুষ্কর সাধনা।সবাই সেই সাধনায় সফল হয় না।কেউ কেউ হয় এবং এরপর হারিয়ে যায়।কেন হারিয়ে যায় তা কেউ জানেনা।৬ বছরের আমি কতটুকু সেদিন বুঝেছিলাম জানিনা।কিন্তু কথাগুলো বুকের মধ্যে বেধে রেখেছিলাম।কবি যাওয়ার আগে আমার বাবাকে ডেকে বলেছিলেন, “ছেলেটাকে সাবধানে রাখিয়ো।এ একদিন দুনিয়ার সাথে কথা বলবে”।

৮৭ সালের ঝিলমিলে সময়ে আমি মসজিদের শহরে এলাম।এই শহরটা একসময় আমাকে কতটা বদলে দেবে আমি জানতামনা।আমি জানতামনা এই শহরটা কতটা বিচিত্র হয়ে ওঠে রাতের আধারে ঘুমন্ত প্রমত্ত অট্টালিকাগুলো বুকে ধরে।আমার ইনসোমনিয়া ছিলো, রাত জেগে জেগে শুধু বই পড়তাম।একজনকে প্রচন্ড ভালোবাসতাম, তাকে গ্রামে রেখে আসার যন্ত্রণা আমাকে ভীষণভাবে পোড়াতো।এই যন্ত্রণাটাও আমাকে ঘুমাতে দিতোনা।আমি তাকে চিঠি লিখতাম ইয়া বড় বড়।একদিন লিখলামঃ

“প্রিয় দীপা,
আমি প্রায় ছয়রাত জেগে সাতকাহন বইটা শেষ করলাম।যার কাহনে বইটি লেখা হয়েছে সেই দীপাবলীকে হাজার প্রান্তে আবিষ্কার করার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছি।আমার তাকে ভাল লাগেনি।
তোমার সাথে তার নামের মিলটা আমাকে তার ব্যাপারে আরো ভাবিয়েছে।আমি তার চরিত্রের ধারগুলো তোমার সাথে বারবার মিলিয়ে দেখেছি।আমি বুঝতে পেরেছি আমার দীপা আমার ভালোবাসার মত শুভ্র, স্বচ্ছ আর নম্র।দীপাবলীর সাথে তোমাকে মেলানো যাবেনা।তুমি তোমার মতই, সবচেয়ে পবিত্র সবচেয়ে ভালোবাসার।
যতবার তোমাকে ভালোবাসি বলি ততবার ক্ষুধা বেড়ে যায় – তোমাকে দেখার একটু ছুয়ে দেয়ার আরেকটু কাছে আনার।তোমার মনে আছে অনেক ছোটকালে আমি তোমার ফুল বিছানো হাতে শুয়ে থাকতাম।তুমি বলতে, আরেকটু শুয়ে থাকনারে বাবা, শান্তি লাগে।আমি এখনো সবুজ ঘাসের মাঠটা খুজি।তোমার হাতটা খুজি।মাঝে মাঝে রাতে খেতে পারিনা।কার উপর যেন অনেক অভিমান হয়।হয়ত সেই দোষী মানবীটা তুমি।এবার বাড়ি যেয়ে তোমাকে যেমন করেই হোক বিয়ে করে ফেলবো।একা থাকার এই দায়টা আমি আর নিতে পারছিনা।তোমাকে আমার ভেতরের আত্নাটা দেখানো দরকার”।

দীপা আমাকে লিখেছিলোঃ
“তুমি কেমন করে আমাকে আর কারো সাথে মিলাবে বলো।তোমার জন্য আমি তো ওই একটাই তাই না।আমার কলেজ পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবে সামনে।তোমার মত আমিও ঢাকায় পড়তে আসবো।আমার ঢাকা একদম ভালো লাগেনা জানো, কিন্তু তোমাকে ছাড়া থাকতে পারিনা।আর একটুও অপেক্ষা করতে ইচ্ছা করেনা।
তুমি আমাকে কতদিন ফুল দাওনা।আমি তোমার পুরোনো ফুলগুলো লুকিয়ে লুকিয়ে দেখি।মাঝে মাঝে রাতে সেগুলো নাকে স্পর্শ করিয়ে ঘুমাই।সেই ছোট্টকাল থেকে একটা মানুষকেই জেনেছি, চেয়েছি।তার গায়ের গন্ধটা অনুভব না করলে আমারও চোখ লাগেনা।তুমি ঠিকমত খাও তো?এভাবে আর রাত জাগবেনা।আমি বুঝতে পারি, কষ্ট হয়।আমি আছি তো তোমার পাশে, দরকার হলে আরো একশ বছর”।

দীপা যখন হারিয়ে যায়, আমি তখন পরীক্ষার হলে।হঠাৎ করে হাত থেকে কলম পড়ে যায়।উঠিয়ে নিয়ে যখন লিখতে যাই তখন কোয়ান্টাম ফিজিক্সের পাতায় প্রথম লিখা উঠেছিলো-“দীপা”।আমি লেখাটাকে কাটতে পারিনা, মুছতে পারিনা।চোখ দিয়ে পানি বের হওয়া দেখে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক্সামিনার একটু অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।কোনরকমে পরীক্ষাটা শেষ করে বাসায় যেয়ে দীপাকে চিঠি লিখি,

“তুমি এমন করে সারাদিন আমার মাঝে থাকো কেমন করে?তোমার চোখের দিকে আরো হাজার বছর তাকিয়ে থাকবো কথা দিচ্ছি।আমি বুঝতে চাই তুমি আমাকে কেমন করে এত ভালোবাসো।আমি বুঝতে চাই আমার মনের ক্ষুধার শেষ সীমাটা কোথায়।আর একটু অপেক্ষা করো”।

দুদিন পর মায়ের চিঠি পাই।সেখানে দীপার কথা কিচ্ছু লেখা নাই।মা শুধু লিখেছিলো আমি যেন চিঠি পেয়েই বাড়ি এসে পড়ি।বাবার শরীরটা ভালো না।

আমার মনে আছে কোন এক শান্ত গোধুলীতে আমি দীপাকে গ্রাস করে নেয়া নদী মেঘনার পাড়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম।আমার হাতে তখন দীপার ছোট্ট লাল ওড়না।ওর অনেক প্রিয় রক্ত রঙ্গা সেই ওড়নাটা আমি ওর থেকে নিয়ে গিয়েছিলাম।রাতে ঘুমানোর আগে আমি এই ওড়নাটার গন্ধ নিয়ে ঘুমিয়ে থাকতাম।এই মানুষটাকে যাকে ছোটকাল থেকে পাগলের মত চেয়েছি, ভালোবেসেছি, নিজের সবচেয়ে কাছে রেখেছি তাকে আর এই জগতে কোথাও পাওয়া যাবেনা, কোত্থাও না।এই বোধটা আমাকে মেঘনার সর্বগ্রাসী স্রোতটা থেকে বেশি করে আঘাত করছে।আমি তখন নির্লিপ্ততায় আক্রান্ত, অনুভূতিহীন এক মাংশপিন্ড।আমি হাটু গেড়ে নদীর পাশে আশ্রয় নেই।অনেক অনেক দিন পর আমার ভেতরের মানুষটা আজকে কাদতে চাইছে।আমি দম ফেলতে ভুলে গিয়ে আজ কান্নায় মত্ত হলাম।কেউ আমাকে দেখেনি, কেউ  আমার কান্না শোনেনি।সেসময়টা শুধু আমি আর দীপার লাল ওড়নাটা ছিলো।আমরা একজন আরেকজনকে সময় দিয়েছি।সেদিন আমার নবজন্ম হয়, আমি হয়ে উঠি একজন বিশুদ্ধ মানুষ।একজন দীপা আমাকে শুদ্ধতম আবেগে ভাসিয়ে নেয়, জগতের পঙ্কিলতা থেকে আমাকে মুক্তি দেয়।আমি আমার সমস্ত আবেগ দিয়ে তাকে চেয়েছি, আজ সেই আবেগগুলোকে আমাকে আরেকটু ভালোবাসার জায়গা করে দেয়।আমি যতদিন বেচে আছি ততদিন তার কাছে সব থেকে বেশি কৃতজ্ঞ থাকবো।সেদিন রাতে আমি দীপাকে আরেকটা চিঠি লিখলামঃ

“আমাকে এতগুলো বছর ধরে যা দিয়েছো, আমি এখন থেকে তা তোমাকে পরিশোধ করবো।প্রিয় দীপা আমার ভেতরের সব ভালোবাসা তোমার জন্য ছিলো। কথা দিচ্ছি তা এমন ভাবেই অক্ষত থাকবে”।


ঠিক এমন করেই একজন কবির জন্ম হয়েছিলো যে পৃথিবীকে ভালোবাসতোনা, মানুষকে ভালোবাসতোনা। এমন করে কি কবি হওয়া যায়? আমি জানতামনা, কারণ আমি দীপাকে ছাড়া আর কিছু নিয়েই কবিতা লিখিনি।আমি রাতের পর রাত জেগেছি, দিনকে রেখেছি অন্ধকারের আড়ালে।আমার সহস্র কবিতাগুলো দীপার জন্য লিখেছি, শুধু একটু, আরো একটু তাকে অনুভব করার জন্য।আমি কখনো মানতে পারিনি দীপা আমাকে রেখে অন্য আরেকটা জগতে আছে।এ ব্যাপারটা অনুভব করার মত মানসিক শক্তি আমার ছিলোনা।

 

***********************************************************************************************

 

“মাহমুদ সাহেব, আপনার এই কবিতাটা আমার ভালো লাগেনাই”

যে মেয়েটা এই কথাটা বললো আমি তার দিকে তাকাতে চাচ্ছিলাম না।কিন্তু মেয়েটা দ্বিতীয়বার যখন একই কথাটা বললো তখন বাধ্য হয়ে তার দিকে বড় বড় চোখ নিয়ে তাকালাম এবং বললাম, “আমারও ভালো লাগেনি।আমি চাইনি কবিতাটা প্রকাশ করতে,ওইযে সামনে ভূড়িওয়ালা প্রকাশক বসে আছেন লাল শার্ট গায়ে দিয়ে।উনাকে ধরুন এবং আমাকে নিস্তার দিন”।

মেয়েটা আমার থেকেও বড় বড় চোখ করে বললো, “আপনি বলেন তো আমি কোন কবিতাটার কথা বললাম?””

আমি আসলেও জানতাম না কিশোরী কোন কবিতা নিয়ে এত মাথা ঘামাচ্ছে।আমি তার দিকে অসহায় দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকলাম।মেয়েটা মনে হলো বেশ মজা পাচ্ছে আমাকে এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলে।হাসতে হাসতে একসময় বললো, এই যে আমি এই কবিতাটার কথা বলছিলাম”।

যে কবিতাটা আমাকে দেখানো হলো তার নাম ছিলো "অনূঢ়া" ।এই কবিতাটা আমি দীপা হারিয়ে যাওয়ার কিছুদিন পর লিখেছিলাম।কবিতার শেষ কিছু লাইন আমার খুব প্রিয় ছিলোঃ

আকাশের এক টুকরো মেঘ যেন তোমার স্পর্শ
নীরবে নিভৃতে তুমি জেগে থাকো সব ব্যকুলতা নিয়ে
তোমাকে নিয়ে ভাবি বলে আজ তুচ্ছ হয় পুরোটা বিশ্ব

আমি অবাক হয়ে তাকে বললাম, “এখানে আপনার আপত্তিটা কোথা হতে আসলো?”

মেয়েটা রাগত স্বরে বললো, “কবিতাটার নাম দীপাবলী আর এখানে যে দীপাকে আপনি একেছেন সে আমার মত নয়”।

আমি হতাশ হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, “আপনার মত হবে কেন?আমি এখানে আমার দীপাকে একেছি।আপনার জন্য এই কবিতাটা লিখা হয়নি”।


আমি খুব অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, মেয়েটার চোখে পানি এসে পড়েছে।আমি কি তাকে খুব কঠিন কিছু বলেছি, আমার মনে হয়না।সে একটু পর নিজে থেকেই বললো, “আমার নাম দীপা।আমি ভেবেছিলাম কবিতাটা আমার জন্য”।

অনেকদিন পর একটা ঝড় আমাকে গ্রাস করলো।তিনবছর আগে দীপা যখন হারিয়ে গিয়েছিলো তখন থেকে আমি কারো মুখে এই নামটা শুনিনি।আমি শুধু নিজের মাঝে তাকে আবৃত্তি করতাম।হঠাৎ করে এমন কিছু হবে তা আমি ভাবিনি।নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, “চা খাবেন? নিউমার্কেটের একনম্বর গেটে দিয়ে ভেতরে ঢুকলে একটা খুব সুন্দর চায়ের দোকান আছে।আমি খুব অনুরোধ করবো”।

দীপা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, “আপনার ভক্তরা তাহলে কি করবে?আর আমি কেন যাবো আপনার সাথে চা খেতে?”

আমি অপ্রস্তুত হলাম কিছুটা।তাকে বললাম, “প্রথমত আমি ভক্ত শব্দটায় খুব বিরক্ত বোধ করি।আমার কবিতাগুলো আমার জন্য।ওইযে ভূড়িওয়ালা লোকটাকে দেখছেন উনি আমার মামা।জোর করে কবিতার বই বের করিয়েছেন, আমার বই এর পাবলিসিটি করেছেন। দ্বি্তীয়ত, আমি আপনাকে যেতেই হবে তা বলিনি। অনুরোধ করেছি মাত্র।আপনাকে আমি হয়তো কোন কারণে কষ্ট দিয়েছি।তাই মনের ভেতর কেমন যেন খচখচ করছে”।

দীপাকে নিয়ে চা খেতে খেতে যেটা জানলাম, “তিনি আসলে কিশোরী নন ঠিক।এইবছর সে একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে পরিবেশ বিজ্ঞানে।তিনি নিজেও কবিতা লিখেন কিন্তু তার মামা নেই বিধায় কবিতা ছাপা হয়না।ভয় পেয়েছি যখন জানলাম তার বাবা পুলিশ”।

দীপা আমাকে হঠাৎ করে জিজ্ঞেস করলো, “আপনার দীপা অনেক সুন্দর?”

আমি হেসে হেসে বললাম, “হ্যা অনেক সুন্দর।সে জেগে থাকে আমার নয়নে নয়নে”।

দীপা অবাক হয়ে বললো, “ঘুমায় না কখনো?”

আমি বললাম, “না কখনো ঘুমায় না। আমি তাকে জাগিয়ে রাখি”।

দীপার হাত থেকে চায়ের কাপটা একটু উল্টে গিয়ে তার জামায় পড়লো।সেটা আমি খেয়াল না করেই তাকে বললাম, “এখন বলুন এমন করে কাদলেন কেন? আমার কথা শুনে কাদেননি আমি জানি।আপত্তি না থাকলে শেয়ার করুন”।

দীপা চুপ হয়ে থাকলো বেশ কিছুক্ষণ।তারপর বললো, “আপনার মত একজন কবিকে একসময় বেশ চাইতাম।তাকে বারংবার অনুরোধ করেছিলাম আমার জন্য একটা কবিতা লিখে দিতে।সে কথা দিয়েছিলো লিখে দিবে কোন এক দিন, খুব তাড়াতাড়ি।আমার খালাতো ভাই ছিল।এই কিছুদিন আগে বিয়ে করলো।একদিন ওর বউকে দেখিয়ে বলে, বুঝেছো দীপা কিন্তু আমাকে অনেক চাইতো।আমাকে বলতো ওর জন্য কবিতা লিখে দিতে।একদম সময় করতে পারিনি”।

আমি দীপাকে জিজ্ঞেস করলাম, “তুমি তাকে চাইতে?”।

দীপা চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালো।আমিও উঠে দাড়ালাম।রিকশায় উঠার আগে বললো, “আচ্ছা আপনার সাথে আরেকদিন কবিতা নিয়ে গল্প করতে হবে।সামনের মাসের ২৫ তারিখ আমার জন্মদিন।পাবলিক লাইব্রেরীতে আমার সব কবি বন্ধুকে দাওয়াত দিয়েছি।আপনি আসবেন?”

আমি মাথা নেড়ে বললাম, “না।আমার এত মানুষের মাঝে থাকতে ভালো লাগেনা।আপনার সাথে কথা বলে ভালো লাগলো দীপা।আবার হয়তো কোন একদিন দেখা হবে”।

দীপা হাসিমুখে বিদায় নিলো।যাওয়ার আগে আবার বললো, “দেখা হবে আবার”।

আমার কেন যেন মনে হচ্ছিলো আবার তার সাথে সত্যি হয়তো দেখা হবে।আমার ইচ্ছা না হলেও দেখা হবে।


এক বছর পর সত্যিই দেখা হয়ে গেলো।দীপার পরনে ছিলো পহেলা বৈশাখের শাড়ি।সাথে তার থেকে লম্বা কিন্তু বয়সে কম একটা ছেলে।স্থানটা ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লাইব্রেরীর পাশে।আমাকে দেখে এগিয়ে এসে বললো, “মাহমুদ সাহেব আমি বলেছিলাম না দেখা হবে।কেমন আছেন?”

আমি বললাম, “ভালো আছি, বেশ আছি।আপনি কেমন আছেন?”

দীপা হাসিমুখে বুঝালো যে খারাপ নেই।এরপর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটাকে দেখিয়ে বললো, “এটা আমার একমাত্র ভাই।কালকেই মাত্র এসেছে নিউইয়র্ক থেকে। ও ওখানেই পড়াশোনা করে।আমার থেকে এক বছর ছোট্ট”।

আমি নাদিলের সাথে পরিচিত হলাম।বুঝতে পারলাম দীপাদের পরিবারের সবাই তার মতই বেশ শৌখিন এবং সৌজন্যবাদী।

আমি দীপার সাথে একটু সামনে এগিয়ে গেলে তার বাবার সাথে দেখা হলো।দীপা তার বাবাকে যেয়ে যখন আমার পরিচয় দিলো তখন পুলিশ সাহেব খুব পরিচিত কারো সাথে দেখা হয়েছে এমন একটা হাসি দিয়ে বললো, “কবি মাহমুদ রাফি কেমন আছেন?এত অল্প বয়সে কবিতা লিখেন কি করে?”

আমি বুঝতে পারছিলাম না তাকে কোন কথাটার উত্তর দেবো।একসময় বললাম, “কবিতাটা তো ভেতর থেকে আসে।বয়স বাধা দেয় তার সাধ্য কিসে?”

পুলিশ সাহেব আমার কাধে হাত দিয়ে বললেন, “আমি তো ভাবতাম কবিতা শুধু বড় বড় সাদা চুলের বিশাল চশমা পড়া বৃদ্ধদের যৌবন ছড়িয়ে দেবার প্রয়াস।জড়তা কবিতায় ভাব এনে দেয়, নাহলে তা শুধুই হবে কাচা হাতের ছন্দ”।

আমি হাসলাম, আর কোন উত্তর দেবার মত প্রয়াস চালালাম না।দীপার বাবা রহমান সাহেব একজন আমুদে ব্যক্তি।তার ছেলে মেয়েদেরকে উনি লিখালিখিতে সবসময় উৎসাহ দিতেন।কিন্তু মেয়েটাই শুধু তার হালকা পাতলা লিখালিখি করে।সাহিত্যের প্রতি রহমান সাহেবের এতো অনুরাগের কারণ ছিলো উনার বাবা।উনার বাবা কলিম শরাফী একজন বিশিষ্ট লেখক ছিলেন।রহমান সাহেব অনেক চেষ্টা করে, কলম ভেঙ্গেও কবিতা লিখতে পারতেন না, গল্প বানাতে পারতেন না। তবে উনি উনার বাবাকে ভালোবাসতেন, বেশ ভালোবাসতেন।

দীপার সাথে এরপর মাঝে মাঝেই দেখা হতো।আমি খুব অবাক হয়েছিলাম যখন দীপা তার প্রথম প্রকাশিত কবিতার বইটি আমাকে উৎসর্গ করলো।আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, “কেন?”

দীপা বলেছিলো, “আপনি আমাকে কবি বানিয়েছেন বন্ধু।আপনাকে দেখলেই কবিতা লিখতে ইচ্ছা করে”।

একদিন সন্ধ্যায় খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো।আমি তখন অফিস শেষে আমার ভাড়া করা ছোট্ট একরুমের বাসায় ফিরে যাচ্ছিলাম।হঠাৎ করে দীপার সাথে দেখা হলো।আমাকে দেখে হাসতে হাসতে বললো, “কবি ছাতাটা তো উল্টিয়ে গেছে।চলুন সামনের চায়ের দোকানে বসি।বৃষ্টি থামুক, তারপর নাহয় বাসায় ফেরত যাবেন”।

আমি মাথা নেড়ে দীপার সাথে হাটতে হাটতে জিজ্ঞেস করলাম, “আমাকে কবি বলো কেন?আমি সবার জন্য কবি না, শুধু একজনের জন্য”।

দীপা আমার দিকে তাকিয়ে বলে, “যার কথা সব কবিতায় বলেন সেই মানুষটার জন্য তাই না?”

আমি কিছু বলিনা।এই ব্যাপারটা নিয়ে এখন কথা বলতে একদম ভালো লাগছেনা।হঠাৎ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভিড়মি খেলাম।আজকের মত এতো সুন্দর আকাশ কখনো আগে দেখিনি তো।দীপাকে বললাম, “দেখো আকাশটা কেমন গাঢ় নীল হয়ে আছে।বৃষ্টির মাঝে এত সুন্দর আকাশ কখনো দেখেছো?”

দীপা মাটির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “ওই মেয়েটার নামও দীপা ছিলো?”

আমি যন্ত্রণাকাতর দৃষ্টি নিয়ে বললাম, “হা ছিলো।আর আমি এটা নিয়ে কথা বলতে  চাইনা”।


দীপা নখ দিয়ে চায়ের দোকানের বেঞ্চিতে দাগ কাটতে থাকে।কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, “কবিকে সে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো?”

আমি বুঝতে পারলাম আজকে তাকে এ ব্যাপারটা বলতে হবে।আমি এ কথাগুলো কাউকে বলতে চাইনা।গত চার বছর ধরে আমি নিজের সাথে যুদ্ধ করেছি, প্রতি মুহূর্তে করেছি তাকে লুকিয়ে রাখতে।আমার ভালো লাগেনা অন্য কারো মুখে দীপার কথা শুনতে।আমি চায়ের কাপে শেষ চুমুকটা দিয়ে মাথার পানি ঝাড়তে ঝাড়তে বললাম, “হ্যা ও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।অনেক অনেক দূরে চলে গেছে”।

দীপা উঠে দাড়ালো।আমাকে বললো, “আজ যাই।পরের সপ্তাহে বই মেলায় দেখা হবে হা?”

আমি হাসি মুখে হাত নাড়লাম বিদায় জানাতে।দীপা ঘুরে এসে বললো, “কেউ কখনো কাউকে ছেড়ে যায়না।বিশ্বাস করুন।দীপা কোথাও যায়নি।দীপা কখনো কোত্থাও যাবেনা”।


আমি দীপার গালে হাত দিয়ে বললাম, “ছোট্ট মেয়ে আমি এটা জানিতো।আমি তাকে প্রতিমুহূর্তে অনুভব করি।ধোয়া আবর্জনায় অথবা কংক্রীটের কারখানায় সবসময় সে থাকে আমার নয়নে নয়নে।তোমার এই কবি তাকে জীবিত রাখে ছন্দের তুলিতে”।

দীপা আমার হাত ধরে বললো, “যাই তবে।দেখা হবে?”

আমি দীপাকে আবার থামালাম।তাকে বললাম, “প্রিয় দীপা আমাকে ক্ষমা করো।আমার ভালোবাসাটা সব সে নিয়ে গেছে।এখন আমি শুধুই জীবাশ্ম”।

দীপা মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো, “কে বলেছে একথা? আপনি একজন কবি, আমার প্রিয় কবি।আপনি মানুন অথবা না মানুন।আপনি সদা জীবন্ত আপনার কবিতায় ফুটে ওঠা অনুভূতির মত।আপনার মত জীবিত আর কেউ হতেই পারেনা।ভালোবাসার মানুষকে এভাবে কে কবে বাচিয়ে রাখে, আকড়ে রাখে?”


দীপার সাথে আবার দেখা হলো একুশ বছর পর।আমি তখন নিজ ঘরে শুয়ে আছি আধো জাগরণে।বুকে তখন প্রচন্ড যন্ত্রণা।ডাক্তার বলে কিছুদিন আগে আমার স্ট্রোক হয়েছে।আমাকে এখন শুধু শুয়ে শুয়ে থাকতে হবে আর পাতলা খাবার খেতে হবে।বিকেলে আমি বাসার পাশের সবুজ মাঠে বসে থাকি এটাও করতে পারবোনা।আমি এখন অর্ধমৃত হয়ে আছি বলা যায়।বাসায় আমার বেশ কিছু আত্নীয় স্বজন ঘুরাঘুরি করে।ব্যাপারটা আমার একদম ভালো লাগেনা।আমি আমার সমগ্র জীবনটা একা কাটিয়ে দিয়েছি, এখন এত মানুষের অত্যাচার আর সহ্য হয়না।একটু পরপর সবাই প্রতিযোগিতা করে এটা ওটা খাওয়াতে চায়।আমার কবিতার বেশ কিছু পাঠক নিয়মিত আমাকে দেখে যায়, কপালে হাত দিয়ে জ্বর মাপে।আমার খুব বলতে ইচ্ছা করে যে আমার হৃদয়ে সমস্যা।এর সাথে গায়ের উত্তাপের কোন সমস্যা নাই বাবারা।

এমনই এক ঘোলাটে দিনে দীপার আগমন।আমি ঘুম ঘুম অবস্থায় তাকে দেখে একটু ইতস্তত বোধ করলাম।চোখটা পুরোপুরি খুলে জিজ্ঞেস করলাম, “কেমন আছো দীপা?”

দীপা পরিচিতি মিষ্টি হাসিটা দিয়ে বললো, “আমিতো ভালোই আছি।আপনি তো বেশি একটা ভালো নাই”।

আমি উঠে বসতে বসতে বলি, “আমি ভালোই আছি।মানুষ আমাকে অসুস্থ বানিয়ে রাখতে চায়”।


আমার খাটের পাশে সোফায় একটা মেয়ে বসে ছিলো, সেটা অনেক পরে আমার খেয়াল হলো।মেয়েটার বয়স ১৩ -১৪ বছরের বেশি হবেনা। আমি ভালো করে যখন মেয়েটার দিকে তাকালাম তখন বিশাল একটা ধাক্কা খেলাম।আমার মনে হলো যেন দীপাকে দেখছি।সেই দীপাকে যার সাথে সবুজ মাঠে আমি ভালোবাসার ঘ্রাণ নিতাম।যাকে আমি প্রতিদিন কলমের ছোয়ায় নবজীবন দান করি।আমি কষ্ট হলেও আস্তে আস্তে হেটে হেটে মেয়েটার পাশে গিয়ে বসলাম।মেয়েটা একটুও ইতস্তত বোধ করলোনা।আমি মেয়েটার মাথায় হাত দিয়ে বললাম, “মা আপনার নাম কি?”

পেছন থেকে দীপা বললো, “ওর নাম দীপান্বিতা।নামটা মুসলমান নাম না যদিও কিন্তু আমার খুব ভালো লাগে।আমি ওকে দীপা বলে ডাকি জানেন?”

আমি হাসলাম।মেয়েটার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম, “মা আপনি আমার খুব প্রিয় একজন মানুষের মত।আমি সেই প্রিয় মানুষটাকে ছাড়া আর আর কখনো কারো জন্য কবিতা লিখিনি।আজকে নিয়মটা ভাঙ্গবো, আপনার জন্যে একটা কবিতা উপহার দেবো।আপনি নেবেন?”

ছোট্ট দীপা মাথা নাড়ে।আমি তাকে আবৃত্তি করে শোনাইঃ

“নীল সমুদ্র হয়ে
বিষণ্ণ মনের সব ব্যাথা নিয়ে যাও
উত্তাল হাওয়া হয়ে
সব অন্ধকারকে আলোয় ছেয়ে দাও
জ্বলজ্বলে নক্ষত্রের মত
পথিককে পথ দেখাও
দীপান্বিতা হয়ে মনুষত্ব্যকে
বুকে আগলে নাও”


গভীর রাতে আমি যখন ঘুমিয়ে পড়ার চেষ্টা করি তখন হঠাৎ করে আমার অনুভব হয় আমি হারিয়ে যাচ্ছি।এই অনুভূতি সব জীবন্ত কিছুর একবারই হয়।আমার পাশে বসে থাকা কে যেন একজন তখন বললো, কবিরে পানি দেও।

আমি সেই ছোট্টকালে ফিরে যাই।বৃদ্ধ কবিকে মনে পড়ে, তার জ্বলজ্বলে চোখের কথা মনে পড়ে।ঠিক এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে, আমিও কবি হয়ে বেচে ছিলাম।আমার আর সেই কবির আত্নাটা একই খাচায় আবদ্ধ ছিলো।সে ভালোবেসেছিলো জগতকে, আমি ভালোবেসেছিলাম দীপাকে।পাশ থেকে মনে হলো দীপা বলছে, “সব কবিতা আমার জন্য ছিলো, শুধু আমার জন্য?

আমি মাথা নেড়ে তাকে উত্তর দিতে চেষ্টা করি, কিন্তু সামর্থ্য হয়না।বিড়বিড় করে বলি, “কথা রেখেছি।তুমি রাখোনি, আমি রেখেছি”



-- সাদ আহাম্মেদ

1 comment:

  1. আসুন জেনে নিই সহবাসের সময় ছেলেদের কি কি সমস্যা হয় ও তার সমাধান
    সহবাস সমস্যা

    পুরুষের সকল স্বাস্থ্য সমস্যার প্রাকৃতিক ও মেডিকেল সমাধান
    পুরুষের স্বাস্থ্য

    পুরুষের সকল স্বাস্থ্য ও যৌন সমস্যার প্রাকৃতিক ও মেডিকেল সমাধান
    পুরুষের স্বাস্থ্য ও যৌন সমস্যা

    নারীর সকল স্বাস্থ্য সমস্যার প্রাকৃতিক ও মেডিকেল সমাধান
    নারীর স্বাস্থ্য

    নারীর সকল স্বাস্থ্য ও যৌন সমস্যার প্রাকৃতিক ও মেডিকেল সমাধান
    নারীর স্বাস্থ্য ও যৌন সমস্যা

    নারীর সকল স্বাস্থ্য ও যৌন সমস্যার প্রাকৃতিক ও মেডিকেল সমাধান
    নারীর স্বাস্থ্য ও যৌন সমস্যা

    র্দীর্ঘক্ষন সহবাস করতে না পারার সমস্যা ও তার মেডিকেল সমাধান নিয়ে প্রশ্নোত্তর!
    যৌন সমস্যা ও তার সমাধান

    সহবাসের স্বাভাবিক নিয়ম

    সহবাসের আগে ও পরে করনীয়
    সহবাস

    ReplyDelete