Subscribe:

"জোড়া দাঁড়কাক এবং মাধবীর জীবনে বৃষ্টি"

শাহবাগের মোড় থেকে বেরিয়ে টিএসসিতে যাবার জন্য রিকশা ঠিক করছিল মাধবী। রাস্তায় উপচে পড়া চলন্ত রিকশা, ট্যাক্সি, মিনিবাসের সাঁ সাঁ শব্দ আগের মত কানে বাজছে না আজ মাধবীর। অফিস চলাকালীন সময়ের প্রবল জনস্রোতে বরাবরের মত তীব্র বেগ পেতে হচ্ছিল আজও। রাস্তার ওপাশে একটা রিকশা দীর্ঘক্ষন ধরে আটকে আছে দেখতে পাচ্ছে মাধবী।


স্থলযানের নিরন্তর যান্ত্রিক কোলাহল উপেক্ষা করে মাধবীর অস্ফুট শব্দ পৌঁছুল না ঘর্মাক্ত রিকশাওয়ালার অন্যমনস্ক কর্ণকুহরে। সহসা রাস্তা অতিক্রম করারও উপায় নেই ওখান থেকে। অনেকটা পথ মাড়িয়ে ওভারব্রীজ ধরে কোনমতে রাস্তা পেরুতে সমর্থ হল মাধবী। পুরো শরীর ঘামে জবজব করছে। গত কয়েকদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমে ভেঙ্গে পড়া নতশরীর। এসব কিছুই আজ গায়ে মাখছে না সে। আজ মাধবীর জীবনে হতে যাচ্ছে এক বিশেষ দিন। তীব্র ভাল লাগার, ভালবাসার এক অনন্য দিন। ১৪ই ফেব্রুয়ারি আজ। তার স্বপ্নপুরুষটি অপেক্ষা করছে তার জন্য টিএসসিতে। শুধুই তার জন্য। কাল গভীর রাতে ফোন করে বিশেষ কিছু বলবে বলেছে আবীর।

বলার কথা মনে করেই তীব্র আবেগে কেঁপে কেঁপে ওঠছে মাধবীর দেহ-মন। কি প্রচন্ডই না ভালবেসে ফেলেছে আবীরকে সে এই এক বছরে, নিজের অজান্তে। আর তাই, দরিদ্র সংসারের ভার টেনে নেওয়া ভেঙ্গে পড়া ক্লান্ত শরীর কোনভাবেই গায়ে মাখছে না মাধবী। নিজের অজান্তেই হাঁটার মধ্যেই চলে যায় কামনার স্বপ্নপুরীতে, যেখানে বসবাস করছে শুধু সে আর তার আরাধ্য পুরুষ আবীর। কল্পনার সাগরে আবেগভরা ফুল দিয়ে সাজাতে থাকে অভিষারের রঙ্গিন বিছানা, স্বর্গফুল বিস্তীর্ন সেই নরম বিছানায় আবিষ্ট হয়ে থাকবে তারা দুজন।

হঠাৎ তীব্র যান্ত্রিক টুং-টাং শব্দে সম্বিত ফিরে পায় মাধবী। অল্পবয়সী রিকশাওয়ালা বলে, “কই যাইবেন আফা?” মাধবী, জায়গার নাম বলে কোনরকমে দ্রুত উঠে পড়ে রিকশাতে। ভয়াবহ যানজট অতিক্রম করে ধীরে ধীরে চলতে থাকে রিকশা। “দেবপাড়ার গলি দিয়ে ঘুরে যেতে হবে গো আফা, এইদিকে খুব জ্যাম, একটু বাড়ায়ে দিয়েন আফা! এমনিতেই আজ জোড়া-দাঁড়কাক দেইখা বের হইছি, জোড়া দাঁড়কাক দেইখা বার হইলে দিন খারাপ যায় আফা”– অল্পবয়সী রিকশাওয়ালা বলতে থাকে ক্লান্ত স্বরে।

রিকশাওয়ালার কথাগুলো কানে গেল না মাধবীর। তার কল্পনা-বেষ্টিত হয়ে আছে শুধু আবীরের ছবি। একই ইউনিভার্সিটিতে নাট্যকলা বিভাগে পড়ে আবীর, সেই সূত্রেই প্রথম পরিচয়। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে সময় পেলে টুকটাক থিয়েটারে অভিনয়ও করত আবীর।

কদিন আগেই আবীর বলছিল, এই বছরের শেষে লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়েই ঘরে তুলে নিবে তাকে। তারপর একটা চাকরী জুটিয়ে নিয়ে ছোট্ট সংসার বাঁধবে তারা। ছোট্ট একটা ঘর নিবে বনানীতে। সেখানে সোনার সংসার গড়বে তার ভালবাসার মানুষকে নিয়ে। সেখানে থাকবে শুধু সুখ আর তীব্র ভালবাসা। সেই ভালবাসার বানে আবেগস্বত্ব বীজের জন্ম দিবে তারা নীল ভালবাসার প্রাণয়িক মিশ্রনে। সেই কল্পিত বীজের নামও নামও ঠিক করে নিয়েছে আবীর। ছেলে হলে আকাশ, আর মেয়ে হলে বর্ষা। লজ্জায় লাল হয়ে যেত মাধবী। মাঝে মাঝে কি যে পাগলামি করে না আবীর!

“নামেন গো আফা, আইসা পড়লাম”– পঞ্চাশ টাকার একটা নোট হাতে ধরিয়ে টিএসসির মোড়ে দ্রুত এগুতে থাকে মাধবী। প্রতীক্ষার দুটি চোখ চারদিকে খুঁজতে থাকে তার প্রিয় মানুষটিকে, ভালবাসার দিনের তার আরাধ্য পুরুষটিকে। জনকোলাহল ডিঙ্গিয়ে একটু এগুতেই মাধবী দেখতে পায় আবীর বিষন্ন মুখে বসে আছে একটি শিমুল গাছের নিচে গা এলিয়ে। মাধবীর আগমনকে একরকম উপেক্ষা করে, না তাকিয়েই আবীর আবেগহীন গলায় প্রশ্ন করে, “ভাল আছ?” উত্তর দেয় না মাধবী, চুপ করে বসে থাকে ঠিক সেও আবীরের মত করে। মাধবীর অজানা তীব্র এক ভাল লাগা তৈরি হয় সবসময় আবীরের সান্নিধ্যে আসলে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। কিছুক্ষণ নীরবতার পর এই প্রথম চোখ তুলে তাকায় আবীর, নির্লিপ্ত চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি হল, কথা বলছ না যে?”

“উত্তর দিতে ইচ্ছে করছে না।“– মাধবী স্মিত হাসিমাখা মুখে বলে।

ক্ষীণ রেগে যায় আবীর। চেপে ধরা গলায় বলে, “ঢং কোরোনাতো মাধবী, আমার ভাল লাগছে না আজ, আমি তোমাকে কিছু সিরিয়াস কথা বলব। প্লিজ আমার কথা শেষ না হওয়ার আগে তুমি কিছু বল না।”

“খুব, কঠিন কিছু?” — মাধবী মৃদু হেসে বলে।

“সেটা তুমি বুঝে নিও। কথাগুলো শুনে তুমি মুখ ফুলিয়ে বসবে কিনা এটাও তোমার নিজস্ব ব্যাপার!”

“তোমাকে এত অন্যরকম লাগছে কেন আজ?”-মাধবী ঈষৎ বিরক্তি নিয়ে বলল।

মাধবী, গত বছর ঠিক এই দিনে আমি তোমাকে প্রথম ভালবাসার প্রস্তাব করেছিলাম। মনে আছে তোমার? তুমি সে প্রস্তাব পাগলের মত গ্রহণ করেছিলে। আমার বন্ধু অপু তোমাকে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল সেদিন। মাধবী, এই এক বছর আমার দিক থেকে যেটা করা হয়েছিল, সেটা প্রকৃত ভালবাসা ছিল না, ছিল শুধুই অভিনয়।

এটা আমার জন্য ছিল নতুন একটা উপলব্ধি। এই উপলব্ধি অর্জন করা আমার খুব প্রয়োজন ছিল। আর এর জন্য তোমাকে ব্যবহারের কোন বিকল্প ছিল না। ভালবাসার স্বরূপ উদঘাটনের জন্য এই এক্সপেরিমেন্ট অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছিল আমার জন্য। তুমি তো জানই আমার শেষ বর্ষের থিসিসের বিষয়ই ছিল এটা। তাই বাস্তব উপলব্ধিটা আমার জন্য খুব আনুষাঙ্গিক হয়ে দাঁড়িয়েছিল তখন। খুব শিঘ্রী আমি মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা থিসিসটি সাবমিট করব। কাজটাও গুছিয়ে নিয়েছি। তোমাকে উৎসর্গ করেছি আমি আমার থিসিস পেপারটি। আমি তোমার কাছে বিনীত ক্ষমা চাচ্ছি এই অনিচ্ছাকৃত অভিনয়ের জন্য। প্লিজ, ক্ষমা করে দিও। আমার ভবিষ্যেতের জন্য এর বিকল্প উপায় আমার সামনে খোলা ছিল না। ভাল দেখে অন্য কোন রাজকুমারকে বিয়ে করে নিও। আমার শুভকামনা থাকবে সবসময়, তোমার সাথে।“

যান্ত্রিক রোবটের মত কথা শুনে যাচ্ছিল মাধবী। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে সে এখন। কিছুক্ষণ পাথরের মূর্তির মত বসে রইল। কথা গলায় আটকে যাচ্ছে, মাধবীর। মাথায় কেমন এক অচেনা চিনচিনে ব্যথা অনুভব করছে। চোখ ভিজে যাওয়াতে ঝাপসা দেখছে সব। অঝোর ধারার বুকফাটা কান্নার ঢেউ বুকের ভিতর থাকলেও বাইরে প্রচণ্ড ঘৃণায় মুখে থুথু জমতে শুরু করেছে মাধবীর। অনেক দরিদ্র ঘরের মেয়ে মাধবী। দারিদ্রক্লিষ্ট সংসারের পুরো দায়ভার তার উপর। সংসারের ক্লান্তিভর দিনের ভিতরে একটুখানি বিশ্রামের জন্য আবীরের কাছে ছুটে আসত সে, পেত মিথ্যা ভালবাসার ক্ষীণ ছোঁয়া। আবীরের কাছে জীবন সঁপে দিয়েছিল সে। অনেকে বলেছিল তখন, বামুন হয়ে কখনও বড়লোকদের ভালবাসতে নেই, কারোর কথাতেই কান দেয়নি সে। সকল অভিযোগই পাশে ফেলে অন্ধের মত ভালবেসে গিয়েছিল সে আবীরকে। নিজের ভালবসারা প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল ছিল সবসময়। আজ বুঝতে পারল সে, ভালবাসার ল্যাবে সে ছিল শুধুই নিছক সাজানো ভালবাসার ইক্যুপমেন্ট, যাকে ব্যবহার করা হয় শুধু ভালবাসার আউটপুট/ডাটা বের করার জন্য। ঘেন্নায় শির শির করে কাঁপতে থাকে মাধবীর ঢেলে-পড়া শরীর। মন জুড়ে গর্জে ওঠা ঝড়ের ক্ষ্যাপা তাণ্ডব। নির্মম কষাঘাতে রিক্ত মনের অতল গভীরস্থল। প্রতিশোধের রক্ত ঝাঁড়া দিয়ে উঠে মাধবীর মাথায়। তীব্র চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে মাধবীর,

“আবীর, তুই কাপুরুষ তুই জানোয়ার।"

কিন্তু কিছুই বলা হয়না মাধবীর, কারন মাধবী জানে জানোয়ারদের কাছে যে আবেগের কোন মূল্যই নেই! নিজেই ছোট হবে শুধু শুধু। নিজেকে চাপিয়ে নিল মাধবী পুরোপুরি। শুধু শেষবারের মত একটি শব্দই বলল,

“আসি”।

প্রত্যাগমনের সময় মাধবী আর আবীরের দিকে চোখটি তুলেও তাকাল না। আবীরও ছিল সহজাত নিশ্চুপ।

ঘরে এসে তীব্র আবেগাপ্লুত কন্ঠে অঝোর ধারায় ডুকরে কেঁদে উঠল মাধবী। ক্লান্ত শ্রান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দিল সাথে সাথে। আবীরের জন্য জমা রাখা তীব্র ঘৃণার থুথু বাথরুমে গিয়ে ঝেড়ে ফেলল আগে। পরক্ষণেই স্বভাববিরুদ্ধ নিজেকে স্বাভাবিক করে নিল। মাধবী তার মনকে শক্ত করতে লাগল। বাবাহীন সংসারের দায়িত্বভার তার উপরেই যে, তার তো ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। তাছাড়া জানোয়ারদের জন্য আবার কষ্ট কিসের। নতুন উদ্যেমে আবার জেগে উঠার চেষ্টা করল মাধবী। আবার নিজেকে কাজকর্মের মধ্যে ডুবিয়ে নিতে থাকল সে। কোমল মনের গভীর ভালবাসার সমুদ্র থেকে আবীরকে প্রতিচ্ছবিকে মুছে দিতে থাকল সারাক্ষণ একটু একটু করে, কিন্তু তার নিজস্ব ভালবাসাকে জিইয়ে রাখবে চিরকাল, নিজের কোমল হৃদয়ে। তার ভালবাসায় তো কোন খাঁদ ছিল না। সেই ভালবাসাকে নিয়েই বেঁচে থাকতে চায় মাধবী, সেটাই তার ভবিষ্যৎ পথচলার জন্য হয়ে থাকবে চলনসই পাথেয়।

ভালই চলছিল কয়েকমাস মাধবীর। কাজ আর পরিবার এই নিয়েই এখন তার একাকী জীবন। একরঙ্গা পথচলা।

একদিন অপুর ফোন। অনেকদিন পর বলেই হয়তো প্রথমে গলা চিনতে পারেনি মাধবী।

“মাধবী, আমি অপু, আবীরের বন্ধু। চিনতে পেরেছ তুমি?”

“ও, হ্যাঁ, অপু। চিনতে পেরেছি এখন।”

সব পুরুষের প্রতিই একই রকম ঘৃনা কাজ করে এখন মাধবীর। সব পুরুষকেই এখন আবীরের সদৃশ মনে হয়!

“তোমার সাথে একটু জরুরী কথা ছিল, একটু আসবে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ২৩ নং ওয়ার্ড।”

চমকে উঠল মাধবী। চাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করল, ‘কেন, কিছু হয়েছে?’

‘আস আগে, আসার পর বলছি। প্লিজ ’
মাধবী কালক্ষেপণ না করে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বের হল। হাসপাতালের ঢোকার পথেই অপুর সাথে দেখা। অপুর হাতে একটা ব্যাগ, স্বচ্ছ ব্যাগে সাদা কাপড়ের থান স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। মাধবী শক্ত হয়ে তাকিয়ে আছে অপুর দিকে। কোন কথা বলছে না। অপুই প্রথমে চলমান নীরবতা ভাঙ্গল।

“মাধবী এই চেয়ারটায় একটু বস, আমি একটু আসছি।“

মাধবী হাসপাতালের করিডোরে লম্বা চেযারে হেলান দিয়ে অপেক্ষা করতে থাকল অপুর জন্য।

কিছুক্ষণ পরই অপু খালি হাতে ফিরে আসল। অপু দৃঢ়স্বরে বলল, “মাধবী, তোমাকে একটু শক্ত হতে হবে।“

মাধবী ভেঙ্গে পড়া স্বরে জিজ্ঞেস করল, “কি হয়েছে, অপু?”

অপু কিছু না বলে একটি লাল খাম এগিয়ে দিল মাধবীর দিকে।

ঠিক এই রঙ্গের খামই আবীর প্রথম প্রস্তাবের সময় দিয়েছিল। তখন খাম খুলে গোলাপ ফুলের পাপড়ির মধ্যে তার রাতজাগা ভরা আবেগের কথাগুলো লিখা ছিল। কিন্তু আজও কেন?

মাধবী অপ্রকৃতস্থের মত খামটি খুলতে লাগল। অপু পাশ ফিরে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে মাধবীর অন্য দিকে মুখ ফিরে। কেমন যেন আচমকা দমবন্ধ লাগছে মাধবীর! চারপাশটা কেমন অসহ্য লাগছে।

আগেরবারের মত খামটি খুলে গোলাপের কোন পাপড়ি পেল না আজ। পেল একটি কালো পাতার চিঠি, যেখানে সাদা কালিতে লিখা–

“প্রিয় মাধবী,

তুমি যখন এ চিঠিটি পাবে, তখন আমি অন্য কোন এক জগতে। লক্ষিটি, তোমার সাথে আমি কোন প্রতারণা করতে চাইনি। হয়তো আমার ভালবাসা তোমার চেয়েও বিশুদ্ধ ছিল। কিন্তু সেই ভালবাসা গ্রহণ করার শক্তি যে ঈশ্বর আমাকে দেননি। ফাইনাল পরীক্ষার কিছুদিন আগে আমার মাথায় কোন এক অজ্ঞাত কারনে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। অনেক ডাক্তার দেখাই। একটা সময় ব্লিডিং কনটিনিউয়াসলি চলতেই থাকে। ডাক্তার আমার সময় বেঁধে দেয়। হাতে অল্প সময়! অনেক চেষ্টা করেছি । কিন্তু কোন প্রতিকার করতে পারিনি। জানি, তোমাকে বললে তুমি ঠিকই আমার সহযাত্রী হতে। কিন্তু আমি তোমাকে বিধ্বস্থ হতে দিতে চাইনি। আমি এটা সহ্য করতে পারতাম না। আমার জন্য আমি তোমার জীবনটাকে কেন নষ্ট হতে দিব, মাধবী? তোমার উপর অনেকজনের জীবন নির্ভরশীল। তাদের পুরো দায়িত্ব তোমার উপর। তোমাকে ভালভাবে সংসারের হাল ধরে থাকতে হবে তোমার জন্য না হলেও, তাদের জন্য। আমার জীবনের সাথে তোমাকে জড়ানোর কোন মানেই হয়না এখন। তোমার জীবন থেকে সরে আসার এর থেকে ভাল উপায়ও পাইনি আমি। সেখান থেকে আসার পর আমি বুঝেছি, ভালবাসার যাতনা কি জিনিস! কিন্তু কি করব বল? বিকল্প কোন উপায়ই ছিল না যে আমার! খুব ভালো থেকো মাধবী, সবসময়। মনের মত কাউকে বিয়ে করে সুখী হও তুমি। শুধূ একটা আর্জি আমার। তোমার সন্তান হলে আমার দেয়া নামটা রাখার চেষ্টা কর, প্লিজ। আমার চিনচিনে ব্যথাটা শুরু হয়েছে আবার। আর লেখার সময নেই হযতো।

ভাল থেকো মাধবী, সবসময়।

–ইতি,
তোমার আবীর।

মাধবী, হাসপাতালের করিডোরের জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখে, বাইরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে। কালো হয়ে আসছে চারিদিক। একটা ইলেকট্রিসিটির খুটির উপর এক জোড়া-দাঁড়কাক ঘাপটি মেড়ে বসে আছে অনেকক্ষণ। হাসপাতালের কোলাহল ছাপিয়ে বৃষ্টির রিনিঝিনি শব্দই শুধু কানে বাজছে মাধবীর।

............এক অদ্ভূত অনুভূতি টের পাচ্ছে মাধবী, যার সাথে পার্থিব কোন কিছুরই মিল নেই।

-রিপন কুমার দে

No comments:

Post a Comment