শুনেছিলাম ভালবাসার সম্পর্কগুলো নাকি শুরুর দিকে খুবই মধুর মনে হয় আর সময়ের সাথে সাথে মধু কমতে থাকে। আশেপাশের মানুষদের দেখে এই theory তে বিশ্বাসও করে ফেলেছিলাম মোটামুটি আর এজন্যেই ঠিকও করেছিলাম দরকার নাই আমার এসব প্যাঁচালে পরার, এসব থেকে আমি ১০০ হাত দুরেই ভাল। কিন্তু ভুলে গিয়েছিলাম বলে কয়ে না কাউকে ভালবাসা যায় আর না সেটা থেকে ভাগা যায়, তাই ভালবাসা থেকে ভাগার অনেক attempt নিয়েও পারলাম না তার থেকে দূরে থাকতে।
সে প্রতিবার তার ভালবাসার কথা আমাকে বলার চেষ্টা করত আর আমি চিন্তায় পড়ে গেছি দেখলে ভদ্র ছেলের মত বলতো আচ্ছা আর বলবো না কিন্তু প্রতিবার একি কাজ করতো আর আমিও তাকে প্রতিবার হাজারো সমস্যার কথা বলে ভালবাসা নামক জিনিসটা থেকে নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা চালিয়ে গেলাম। সেই চেষ্টার ফলস্বরূপ তার সাথে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করার সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেললাম আর সেও আমাকে বাধা দিল না কারন তার চিন্তা ছিল আমি যদি ভবিষ্যতে অন্য কাউকে ভালবাসি সে সেটা সহ্য করতে পারবে না যদিও আমি কোনোদিন কারো প্রেমে পরতে পারি এটা কখনই বিশ্বাসই করতে পারতাম না। সিদ্ধান্ত যদিও আমি নিলাম আর সেই অনুযায়ি আমলও করা শুরু করলাম কিন্তু কিছুদিন এর মাঝেই বুঝতে পারলাম যে ভালবাসা থেকে ভাগার চেষ্টা করছিলাম তা আমার চেয়ে আরও ১০০গুণ বেশি গতিতে আমার দিকে ছুটে আসছে। নিজেকে বোঝানোর অনেক চেষ্টা করলাম কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারলাম না।
নিজের সাথে সংর্ঘর্ষ করতে করতে এরই ভেতর ৫ মাস কেটে গেল, অনেকবার চেষ্টা করেও তাকে call দেয়ার সাহস করতে পারলাম না। হঠাৎ একদিন তার ফোন পেয়ে খুব অবাক হলেও এই ৫ মাসের মধ্যে প্রথমবারের মত মন থেকে হাসতে পারলাম মনে হল। যদিও সে বলেছিল আমার সাথে আর কোনোদিনও যোগাযোগ করবে না তাও কথা রাখতে পারল না, আর এই প্রথম কারো কথা না রাখতে পারার কারনে আমি অনেক বেশি খুশি হলাম। সেদিন সে আমাকে তার ভালবাসার কথা বলতে ফোন দেয়নি বড়ং আমি তাকে ভালবাসি কিনা সেটা জানতে চেয়েছিল আর আমি পারিনি তাকে মিথ্যা বলতে আর চাচ্ছিলামও না। মনে হচ্ছিল এখন না বললে আর কোনদিনও তাকে বলতে পারব না, তাই জীবনে প্রথম বারের মত ভালবাসার কাছে হার মেনে নিয়ে তাকে বলে দিলাম হ্যা ভালবাসি আর সেই থেকেই শুরু হল আমাদের পথ চলা। কিন্তু আমার অনেক দিনের মনে মনে বানানো theory কে ভুল প্রমানিত করে আমাদের সম্পর্কের শুরুতেই ছোট ছোট ব্যাপার নিয়ে ঝামেলা বাধতে শুরু করল, কারণটা হল সে অতি মাত্রায় introvert, মেয়েদের সাথে ওইভাবে মিশেইনি আগে কখনো।
আমার সাথে relation এর পর প্রথম যেদিন বের হলাম একসাথে সেদিন তো তাকাতেই পারল না আমার দিকে ঠিক মতো। তার অবস্থা দেখে অবশ্য আমার মজাই লেগেছিল কিন্তু তার কিছুদিন পর থেকে মজা লাগা বাদ দিয়ে মেজাজ মন ২টাই খারাপ হওয়া শুরু হল কারণ, ভালবাসার ২টা কথা বলা তো দূরে থাক আমাকে যে মাঝে মাঝে একটু সময় দেয়া উচিত তাও জনাব বুঝতে পারতেন না; তার নমুনা হিসেবে বলি, আমাদের প্রথম valentines day, আমরা একই campus এ ছিলাম কিন্তু যার যার friend দের সাথে মনে হচ্ছিল এটা ভালবাসা দিবস না হয়ে বন্ধু দিবস হলে বেশি ভাল হত। সেদিন অবশ্য আমার সাথে সে ৫ মিনিটের জন্য দেখা করেছিল আমাকে ছোট একটা উপহার দিল, আমাকে দেয়া তার প্রথম উপহার তাও মনটা অনেক খারাপ লাগছিল এটা চিন্তা করে যে একটা মানুষ এতটা নিরস কিভাবে হয়!! আমার জন্মদিন এর দিন তো আর এক ধাপ এগিয়ে উনি আমার সাথে ৫ মিনিট এর জন্য দেখাও করলেন না। সব অভিমান মনে জমিয়ে রাখছিলাম কারণ আমি তার মত খুব বেশি introvert না হলেও খুব বেশি extrovert ও ছিলাম না। কিন্তু কতদিন আর মনের কথা ভালবাসার মানুষের কাছ থেকে লুকানো যায়!! একদিন সব জমিয়ে রাখা অভিমান burst out হল আর এমনভাবেই হল যে আমাদের break-up হয়ে গেল যদিও সেই break-up এর বয়স সীমা ছিল ১ দিন।
সেই দিন টা কিভাবে কাটিয়েছিলাম তা আর মনে করতে চাই না শুধু বুঝতে পারলাম যে সম্ভব না। এই একটা দিনের দুরত্ব আমদের অনেক বেশি কাছে এনে দিল।একদিন তার কাছ থেকে একটা এসএমএস পেলাম যাতে লেখা ছিল, আমি সোনা চেয়ে হিরা পেয়ে গেলাম কিন্তু এত দামি জিনিসটার যত্ন কিভাবে করতে হয় তা জানা ছিল না। এভাবেই সময়ের সাথে সাথে আমাদের সম্পর্ক আরও গভীর হতে থাকল।আমদের সম্পর্কের ১ বছর এর মধ্যেই সে আমেরিকাতে পারি জমালো উচ্চশিক্ষার জন্যে। যাওয়ার দিন আমাকে একটা আংটি পরিয়ে দিয়ে বলল তোমাকে engage করে গেলাম। কিছুতেই চোখের পানি আটকাতে পারছিলাম না আমি আর আমার দেখা সবচেয়ে শক্ত মনের মানুষটাও আমার কাছ থেকে শত চেষ্টা করেও তার চোখের জল লুকাতে পারল না।বুকের ভেতর ১০০ কেজির চেয়ে বেশি ওজনের একটা পাথর চাপা দিয়ে তাকে বিদায় দিতে হল।
সে চলে যাওয়ার পর মনে হল আমার পৃথিবী আমার থেকে অনেক দূরে চলে গেল কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই বুঝতে পারলাম যারা মনের খুব কাছে থাকে তারা দুরুত্বের কারণে কখনো দূরে যায় না। পৃথিবীর দুই প্রান্তের দুরুত্ব কে, দিন রাতের ব্যবধান কে দূরে ঠেলে দিয়ে দুইজন দুইজনের সবচেয়ে কাছের মানুষ হয়েই থাকলাম। দুরুত্ব শুধুমাত্র একটা শব্ধ হয়েই থেকে গেল আমাদের মাঝে, দুঃখিত মাঝে না এক পাশে। দুইজন দুইজন কে সকালে ঘুম থেকে উঠানো থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিটা ব্যাপার না বলা হলে তো মনে হয় বড় একটা কাজ বাকি রয়ে গেল। আর যেদিন দুইজন একসাথে কোনো ছুটি পাই সেদিন তো কথাই নেই, দীর্ঘ সময় নিয়ে dating করি শুধু difference টা হল আগে dating করতাম পার্ক, রেস্টুরেন্ট অথবা রিক্সায় ঘুরে ঘুরে আর এখন করি FB, Skype আর yahoo messenger এ। সারাদিনের সব ছোট ছোট ভাল লাগা খারাপ লাগা তাকেই তো বলি আর তারটাও শুনি, খুব কাছে না থাকলে কি এত কিছু বলা যায় কাউকে!একদিন তো আমার পরীক্ষা আর আমার পরতে ইচ্ছে করিছিলো না শুনে উনি বললেন তিনি নাকি সামনে বসে থেকে আমাকে পড়াবেন যেন আমি কোনো ফাঁকি না মারতে পারি এবং তার কথা মেনে নিয়ে আমাকেও ওয়েব ক্যাম অন করে তার সামনে বই নিয়ে বসতে হল আর একটু নড়াচড়া করলেই উনার ঝারি খেতে হল। মাঝে মাঝে তো ক্লান্তির চোটে আমার সাথে কথা বলতে বলতেই সে ঘুমিয়ে পরে আর আমিও বসে বসে তার ঘুম দেখি। কারো ঘুম দেখতেও যে কখনো এত ভাল লাগবে আগে কখনো বুঝতে পারিনি।
আমার অপেক্ষার পালা প্রায় শেষ হয়ে এল। আবার তার হাত ধরে হারিয়ে যেতে পারব, রিক্সায় করে ঘুরতে পারব, আইসক্রিম খেতে পারব। এই অনুভূতিটা যে কত বেশি সুখের তা কাউকে বলে বোঝানো যাবে না। কাছের মানুষটিকে আরো কাছে পাওয়ার আনন্দের চেয়ে বেশি আনন্দের আর কিছু আছে কিনা এই পৃথিবীতে আমার জানা নেই। মহান সৃষ্টিকর্তার দরবারে প্রতিবার সেজদা দিয়ে শুধু এটাই চাই যেন আমার কাছের মানুষটার সাথে আরো বেশি কাছের হয়ে থাকতে পারি সারাজীবন।
-অহনা (ঈদ গল্প লেখা প্রতিযোগিতা)
No comments:
Post a Comment