Subscribe:

বন্ধুত্বের আকাশে বর্ণহীন রংধনু

আকাশের পাখিগুলোর মত আজ উড়তে ইচ্ছা করছে অহনার। খুব খুব আনন্দ হচ্ছে ওর। এত দিনের কষ্ট সব ভুলে গেল ও। মা বাবাও আজ খুব আনন্দিত। কারণ অহনা ক্লাস ফাইভে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে। খবরটা শোনার পর মা প্রথমে অহনাকেই মিষ্টি খাইয়ে দিয়েছে। উফফ! কত্ত কষ্ট করে এতদিন পড়াশুনা করেছে! আজ সেটা সার্থক!


    এত বড় একটা অর্জনের পরও বড়দের কাছ থেকে তার শুনতে হচ্ছে এটাই নাকি কেবল শুরু! ভবিষ্যতে আরও বেশি করে পড়াশুনা করতে হবে। এসব কথা শোনে আর অহনা রাগ হয়। আজকের দিনেই কি তাদের এসব বলার দরকার আছে?! একটু ওর প্রশংসা করবে কিনা সবাই আরও আরও পড়তে বলে! আরে! ও কি এতদিন বেশি বেশি পড়াশুনা করেনি!?!

    এইরকম প্রানোচ্ছল অহনা। সারাদিন হাসিঠাট্টা, মজা করা, দুষ্টুমি করা, বান্ধবীদের সাথে প্রাণ খুলে গল্প করা আরও কত্ত কি! ছবি আঁকতে ও খুব পছন্দ করে। তাই অবসর পেলেই রঙ তুলির খেলায় মেতে ওঠে। পড়াশুনাতেও কিন্তু অহনা খুব ভাল, রেজাল্টেই তার প্রকাশ পায়। রাজশাহীর সবচেয়ে ভাল বালিকা বিদ্যালয়ে ও পড়ে।

    এমনিতে অহনা খুব সহজ সরল প্রকৃতির। সারাদিন দুষ্টুমি করলেও ওর মনটা এক্কেবারে সরল। কারও সাথে মিথ্যা কথা বলতে পারে না। কোনো কিছু লুকায় না,ওর বান্ধবীদের খুব ভালবাসে। ওদের সাথে সব কিছু শেয়ার করে। বান্ধবীদের সাথে মজা করার দিন গুনে শেষ করা যাবে না। ওদের মধ্যে অহনাই সবচেয়ে চঞ্চল। মা বাবা, ভাই সবাইকে নিয়ে সে খুব ভাল আছে।

    এইবার অহনা ক্লাস সিক্সে উঠল। স্কুলের মেয়েরা নিজেদের মাঝে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। বড় ক্লাসে উঠলে হয়ত এমনি হয় কিন্তু অহনা তো বদলিয়ে যায়নি। ধীরে ধীরে সে লক্ষ্য করল তার বান্ধবীরা খন্ড খন্ড গ্রুপে বিভক্ত হয়ে গেছে। গ্রুপের বাইরে কেউ কারো সাথে মিশে না।
     
     কারো অগোচরে সবাই একে অন্যের সম্পর্কে দোষ ত্রুটি বর্ণনা করে। অহনাকেও অনেকে বলে কিন্তু এসব শুনতে ওর ভাল লাগে না। ওতো সবাইকেই ফ্রেন্ড মনে করতো কিন্তু ওদের মাঝে গ্রুপ ভাগ হয়ে যাওয়ায় ও বুঝতে পারে না যে ও কার দলে যাবে। দ্বিধার মাঝে দিন কাটে।

    অহনা ক্লাসের ২ রোল। সবাই ওর সাথে খাতির করে চলে। তবে অহনার মাঝে কখনোই ওর পড়াশুনা নিয়ে অহঙ্কারবোধ কাজ করে নি। এভাবেই চলছিল ওর দিনগুলি।

এরই মাঝে একদিন সুপ্ত ওকে ফোন করল। সুপ্তর সাথে ও ছোট্টবেলায় একই স্কুলে পড়ত। ক্লাস প্লে আর নার্সারি। এরপর সুপ্ত বাবা মার সাথে সিরাজগঞ্জ চলে যায়।
    অনেকদিন পর ফাইভের বৃত্তি পরীক্ষার আগে ফোন করে বলল যে সে আবার ওদের ওখানে আসছে। সুপ্তর বাবা একেবারে ট্রান্সফার হয়ে রাজশাহী চলে আসবে। অহনা এই কথা শুনে তো মহা খুশি। ওইদিন অনেক গল্প করেছিল ওরা।

    বৃত্তি পরীক্ষার জন্য এতদিন ওদের কথা হয়নি। আজ আবার সুপ্ত ফোন করে অহনার খবর নিল। আজকেও ওরা অনেক গল্প করল। বন্ধুকে ফিরে পেয়ে অহনাও খুব খুশি, সুপ্তও খুব খুশি। সুপ্তর কথা ক্লাসের সবাইকে সে বলেছে।

    ১৬ই এপ্রিল, অহনার জন্মদিন। এক সপ্তাহ আগে থেকে অহনার প্রস্তুতি! জন্মদিনে কোন জামা পরবে, কতগুলো চকলেট কিনবে, মা বাবার কাছে কি গিফট চাইবে, বান্ধবীদের কি কি খাওয়াবে, আরও কত্ত কি!!
    অবশেষে দিনটি চলেই আসল। সকাল থেকেই অহনা খুব খুশি। মা প্রথমে ওকে উইশ করছে। ঠিক রাত বারোটায়!
    ঘুম থেকে উঠার একটু পরই দেখল কে যেন ওদের বাসায় এসেছে। দরজার কাছে এসে তো অহনা একেবারেই অবাক। সুপ্ত!!! হাতে একগুচ্ছ ফুল আর গিফট! অহনার মা নিজেও সুপ্তকে দেখে খুব খুশি হলেন। অনেক কিছু খেতে দিলেন সুপ্তকে। আর এদিকে অহনা তো ওর গিফট নিয়ে লাফালাফি শুরু করল। একটা ছোট্ট কিউট টেডি বিয়ার, একটা বড় ওয়াটার কালার বক্স আর অনেক অনেক চকলেট! সুপ্ত জানে যে অহনা ড্রয়িং করতে খুব পছন্দ করে। এত্ত কিছু দেখে অহনা খুব খুশি। তবে সুপ্ত বেশিক্ষণ থাকতে পারল না কারণ একটু পরেই অহনা স্কুলে যাবে।

    স্কুলে এসে অহনা সবার অনেক অনেক উইশ পেল। অনেক গিফটও পেল। জন্মদিনের জন্য আজ সবাই একসাথে বসে অহনার সাথে গল্প করছে আর চকলেট, কেক খাচ্ছে। অনেক অনেক গল্প করছে ওরা।
    এর মাঝে সুপ্তর কথা অহনা সবাইকে বলল। সুপ্তর দেওয়া গিফট ও সবাইকে দেখানোর জন্য স্কুলে নিয়েও এসেছে। অহনা যতটা উচ্ছ্বাস নিয়ে গিফট গুলো সবাইকে দেখালো, ওর বান্ধবীদের কাছ থেকে সেরকম সাড়া পেলো না।
    সবাই চুপচাপ দেখল আর একে অপরের দিকে আড়চোখে তাকালো। অহনা সে দিকে গুরুত্ব দিল না। মনের সুখে জন্মদিনের আনন্দ করতে লাগলো।

    কয়েকদিন পর স্কুলে এসে অহনা সবার মাঝে কেমন যেন অদ্ভুত ব্যবহার লক্ষ্য করল। কেউ আর আগের মত ওর সাথে কথা বলে না। সবাই ওকে এড়িয়ে যায় আর মাঝে মাঝে আড়চোখে তাকায়। খুব বিরক্ত লাগল অহনার। এভাবেই কয়েকদিন পার হয়ে গেল। অহনা কিছুতেই বুঝতে পারছিলো না যে কি হয়েছে। ওর কাছের বান্ধবীরাও যেন দূরে চলে গেছে। খুব মন খারাপ হলো অহনার।
    একদিন সে তার কাছের বান্ধবী রুবাইকে জিজ্ঞাসা করলো যে কেন ওরা এমন করছে। প্রথম প্রথম রুবাই কিছুই বলছিল না। কিন্তু এরপর যা বলল তা শুনে অহনা কিছুই বলতে পারল না। এমন কিছু শোনার জন্য অহনা মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।

    রুবাই যা বলল তার সার সংক্ষেপ হলোঃ অহনার বয়ফ্রেন্ড আছে। সুপ্তই সেই ছেলে। সুপ্তর সাথে নাকি ওর অনেক দিনের সম্পর্ক। ক্লাসের শেষের রোল মিতু, তুলিরা যেমন বয়ফ্রেন্ড বানায়, সারাদিন পার্কে আর রেস্টুরেন্টে ঘুরে বেড়ায়,পড়াশুনা করে না, অহনাও নাকি অমন হয়ে গেছে। ও নাকি সুপ্তকে ভালবাসে। আর কয়েকদিন পর সুপ্তর সাথে পালিয়ে বিয়ে করবে! গত কয়েকদিন ধরে সবাই এ ব্যাপারে কথা বলছে। অনেকে এটাও বলেছে যে অহনার জন্মদিনের দিন সুপ্ত অহনার বাসায় এসে ওকে গিফট দিয়ে প্রোপোজ করেছে! অহনা এখন খারাপ হয়ে গেছে তাই কেউ ওর সাথে মিশতে চায় না।

    এইসব কথা শুনে অহনা চুপ হয়ে গেল। কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছিল না। অহনার কচি মন তখনো বোঝে না, জানে না যে একটা ছেলে মেয়ের মাঝে ভালবাসা কি জিনিস।

    চিল্লায় চিল্লায় বলতে ইচ্ছা করছিল যে এইসব মিথ্যা কিন্তু ওর মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হয়নি। কান্নায় ওর গলা ধরে গেল কিন্তু চোখ দিয়ে এক ফোঁটাও পানি বের হলো না। ওইদিন চুপচাপ ক্লাস শেষে ও বাড়ি ফিরে এল। কারও সাথে কথা বলল না। রাতে বালিশে মুখ গুঁজে খুব খুব কাঁদল।
    খুব মন খারাপ নিয়েই পরদিন স্কুলে গেল অহনা। ওই একই অবস্থা। সবাই আগের মত খারাপ ব্যবহার শুরু করলো। অহনা ওর কাছের কয়েকজন বান্ধবীকে বুঝানোর চেষ্টা করল কিন্তু পারল না।
    ওরা অহনার সামনে কিছু বলে না কিন্তু যখনই ও অন্য কোথাও যায় তখনই ওদের আলোচনা শুরু হয়। ক্লাসের কারও না কারও কাছ থেকে সে সব জানতে পারে অহনা।

    এভাবেই কয়েকদিন চলে গেল। অহনা পড়াশুনায় আর আগের মত মনোযোগ দিতে পারে না। সবসময় মাথায় একটা চাপ অনুভব করে। ও জানে যে এসব কিছু মিথ্যা কিন্তু ওর পুতুল খেলার মিষ্টি মন মানসিকতা এই মিথ্যা অপবাদের ভার বহন করতে পারে না । সারাদিন ও চুপ হয়ে বসে থাকে। আর রাতে লুকিয়ে লুকিয়ে অঝোর ধারায় কাঁদতে থাকে।

    এরপর একদিন যা ঘটল তার জন্য সে একদমই প্রস্তুত ছিল না। ওইদিন সন্ধ্যায় অহনা খুব কষ্ট করে পড়াশুনা করার চেষ্টা করছিলো, সামনে ওর পরীক্ষা। এই সময় মা ঘরে এল। অহনার দিকে একবার রূঢ় দৃষ্টিতে তাকালো। এরপর খুব জোরে থাপ্পড় মারল ওর গালে। হতবাক হয়ে অহনা মায়ের দিকে তাকালো আর জোরে জোরে কাঁদতে লাগল। মা তখন রেগে অনেক কিছুই একবারে বলে গেল। মায়ের মুখে সেই একই কথা, যেগুলো এখন স্কুলের সবার মুখে মুখে। অহনা কিছুই বলতে পারল না শুধু কান্নার মাঝে ক্ষীণ শব্দ শোনা গেল, "মা...আমার কোনও দোষ নাই মা।" ............

    রাতের আকাশে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে অহনা। এইটুকু বয়সে সে বুঝে গেছে যে পৃথিবীর মানুষগুলো খুব আজব। আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্ররাজির দিকে তাকিয়ে আজও অহনা মনে মনে বললো, "কেউ ভাল না...কেউ না।" মায়ের কথাগুলো খুব মনে হচ্ছিল ওর।

    অহনা যেখানে প্রাইভেট পড়তে যায় সেখানে ওর ক্লাসের অন্য মেয়েরাও পড়তে আসে। ওদের মায়েরাও ওদের সাথে আসে এবং নানা ব্যাপারে কথা বলে। এরই মাঝে তারা তাদের মেয়েদের কাছ থেকে অহনার ব্যাপারে জানতে পেরেছে। মেয়েগুলো বাড়িতে গিয়ে তাদের মায়েদের কে এসব বলেছে। প্রায় সব মায়েরাই তাদের মেয়েকে অহনার সাথে মিশতে মানা করেছে । এই ব্যাপারে একজন সচেতন অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেছে বলে তারা মনে করেন। এবং সবাইকে সচেতন করার জন্য তারা এই ব্যাপারটা চেনাজানা সকলকে বলে দিয়েছেন। সেদিন তারা অহনা প্রসঙ্গে সরাসরি অহনার মাকে অপমান করেছে। নিজের মেয়ের প্রতি ভালোভাবে নজর রাখতে বলেছে। অহনা জানে না যে তারা মাকে আর কি বলেছে, শুধু জানে যে মা খুব অপমানিত বোধ করেছে। তাই মা রাগ করে অহনার গায়ে হাত তুলেছে। পরে অবশ্য মা তাকে জড়িয়ে ধরে খুব কেঁদেছে।

    বাসার অবস্থা এখন থমথমে। অহনার মনে চিন্তার ঝড়। যে ব্যাপারটা নিয়ে এত কিছু তার মূলে আছে ওর আর সুপ্তর বন্ধুত্ব। কিন্তু কি এমন অপরাধ ছিল ওর? ও তো আর বুঝতে পারেনি যে আমাদের সমাজ ছেলে আর মেয়ের বন্ধুত্বকে খারাপ মনে করে। ছেলে আর মেয়ে নাকি কখনো বন্ধু হতে পারে না, এটা সে আগে জানত না।

    অহনাকে যখন ক্লাসে সবাই অপমান করেছে তখন ও একটা শব্দ বারবার শুনতে পেয়েছে। তা হল ভালবাসা। আচ্ছা ও তো ভালবাসা নিয়ে কখনো চিন্তা করে নি। কিন্তু ওদের ক্লাসের মেয়েরা ঠিকই এটার ব্যাপারে অনেক কিছুই জানে, বোঝে। তাহলে কি অহনা এখনও ছোটই আছে? ক্লাসের মেয়েদের মত বড় হতে পারে নি? নাকি ওই মেয়েগুলোই বেশি বড় হয়ে গেছে?

    যাই হোক না কেন, অহনার মনে একটা ধারণা গেঁথে গেছে যে ভালবাসা জিনিসটা খুব খারাপ। ও আর কখনো এটার ব্যাপারে চিন্তা করবে না। "ভালবাসা" আর "খারাপ" এই দুটো শব্দ এখন অহনার মস্তিষ্কে একই সমান্তরালে....

    এভাবেই চলতে থাকলো মিষ্টি মেয়ে অহনার দুঃসহ জীবন। সময়ের স্রোতে আগের অহনা হারিয়ে গেল। এখন সে কারও সাথে কথা বলে না। আর প্রয়োজন ছাড়া কেউ ওর সাথে কথাও বলতে আসে না।
মা অবশ্য পরে অহনাকে সরি বলেছে এবং অহনার সব কথা বিশ্বাস করেছে। শুধু মা'ই তাকে বিশ্বাস করেছে। তবুও অহনা ওই কষ্ট ভুলে যেতে পারে না। আগের মত আর ছবি আঁকে না। মাঝে মাঝে ছবি আকলেও ছবিগুলোর মধ্যে কষ্টের আভাস ভেসে আসে। দুঃখ তার নিত্যদিনের সঙ্গী।
গল্পের বই পড়ার ধৈর্যও হারিয়ে গেছে। নিজেকে ব্যস্ত রেখে সব ভোলার চেষ্টা করেছে কিন্তু পারে নি।
আজকাল কোনও কাজেও তার মন বসে না। মানুষের ভিড় এড়িয়ে চলে। বারবার তার মনে হয় এই বুঝি কেউ তাকে নতুন করে ভুল বুঝল। নিজের মনের কথা কারও কাছে প্রকাশ করতে পারে না। মানুষের মনকে অহনা খুব ভয় পায়....

এরপর কয়েক বছর কেটে গেল। ক্লাস সিক্স থেকে সেভেনে ওঠার সময় অহনা রোল দুই ধাপ পিছিয়ে ৪ হয়। তখন অহনা মানুষ কে আরো ভাল ভাবে বুঝতে পারল কারণ রোল পিছানোর সাথে সাথে ক্লাসের ভাল ছাত্রীরা তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলো। আগে যে শুধু রোলের জন্য ওরা বন্ধুত্ব করেছিল তা বুঝতে পারল। এরপর এইট,নাইন-টেন অহনার রোল ৫ ও ৬ হয়। সবাই তখন বলতে শুরু করে, ঐ ছেলের সাথে রিলেশনের জন্য অহনার এই অধঃপতন!
   
           এই সমাজের কারণে অহনাকে খুব বেশি বাস্তবিক একটা সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। সত্যিই সিদ্ধান্তটা খুব বেশি বাস্তবিক। সুপ্ত আর অহনা এখন বন্ধু না। ওই ঘটনার পরে অহনা কোনো একদিন সুপ্তর সাথে দেখা করে ওদের বন্ধুত্বের ইতি টেনেছে। সুপ্তকে ও তেমন কিছু বলেনি। শুধু ওর দেওয়া গিফটগুলো ফিরিয়ে দিয়ে বলেছে যে তার পক্ষে এই বন্ধুত্ব রাখা আর সম্ভব না। সুপ্ত যদি ওকে কখনও বন্ধু মনে করে তাহলে যেন আর ওর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা না করে। সুপ্ত নতুন করে কিছু বলতে পারেনি। অহনার দিকে তাকিয়ে ছিল শুধু। অনেক বেশি কষ্ট পেলে মানুষ কথা বলতে পারে না, হয়তো কাঁদতেও পারে না...

    পরে অবশ্য সুপ্ত জানতে চেয়েছিলো এই কঠিন সিদ্ধান্তের কারণ। কিন্তু অহনা কিছুই বলে নি। অহনা সুপ্তর চোখে ওর মনের কষ্টটা বুঝতে পারছিল কিন্তু ওখান থেকে কিছু না বলে চলে এসেছিল, আর ফিরে তাকায় নি।

   

                  অহনা এখন ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। অনেক কিছু হয়ে গেছে এই কয় বছরে। ভাল মন্দ অনেক স্মৃতি তৈরি হয়েছে তবে ছোট বয়সের সেই কষ্টটা এখনও হৃদয়ে রয়েই গেছে। কোনও অপরাধ না থাকা সত্ত্বেও সমাজের দায়ে কত বড় মূল্য দিতে হয়েছে তাকে। এখন মাঝে মাঝে তার মনে হয় সুপ্তর সাথে তখন বন্ধুত্ব না ভাঙ্গলে হয়তো ভালো হতো। সুপ্তকে সব খুলে বলা উচিত ছিল। কিন্তু ওই সময় অহনা কিছুই বুঝতে পারে নি। বোঝার মত বয়স তার ছিলনা। ওইদিনের পর সুপ্ত আর কখনও অহনার সাথে যোগাযোগ করে নি। সুপ্ত অহনার কথা রেখে নিজের বন্ধুত্বের প্রমাণ দিয়েছে...

    ভালবাসা জিনিসটাকে ও এখন খুব ভালভাবে বুঝতে পারে। তবে এই শব্দটা শুনলেই ওর ওইসব কথা মনে হয় আর হৃদয়ে কষ্টের ঝড় বয়ে যায়। এর মাঝে অনেকেই ওর কাছে প্রেম নিবেদন করেছে কিন্তু ও কাউকেই গ্রহণ করেনি। ভালবাসাকে কোন এক অজ্ঞাত কারণে তার কাছে খুব খারাপ মনে হয়। ওই সময় যারা অহনার কষ্টের কারণ হয়েছিলো, ক্লাসের মেয়েগুলোর কারো হয়তো ব্যাপারটা মনে নেই কিন্তু অহনা ভুলতে পারেনা। ভালবাসতেও পারে না। কিন্তু কেন জানি মনের অজান্তেই মাঝে মাঝে সে সুপ্তকে খুঁজে বেড়ায়.......

                অহনা এখনো রাত জাগে। আকাশের ঐ উজ্জ্বল নক্ষত্রগুলো ধীরে ধীরে ঝাপসা হয়ে আসে। অহনা জানালার এপাশ থেকে সূর্যোদয় দেখে। আশায় আশায় থাকে, হয়তো ওর জীবনেও সূর্য আসবে। আসবে একটা নতুন আলোকিত সকাল... সকালের স্নিগ্ধ আলোয় ও আবার ফিরে পাবে সুপ্তকে.............



নাজিবা সুলতানা

No comments:

Post a Comment