আজ ৬৯ এ পা পড়ল আরমান সাহেবের । প্রতিদিনকার মত দুঃখী দুঃখী ভাব নিয়ে আজ থাকা যাবে না,মনে মনে ভেবে নেন তিনি । তাই সকালেই গোসল সেরে,ছেলের দেয়া পাঞ্জাবী পরে বারান্দার এমাথা থেকে ওমাথা পায়চারী করছেন । আজ তার মন ভালো । সকালে তিনি জেনেছেন আজ ছেলে,ছেলের বউ আর টুশি তাকে দেখতে আসবে ।
আজ আবার সেই পুরোনো আরমান মনে হচ্ছে নিজেকে । যখন চাকরী করতেন, বাসায় রাহেলা আর তার ছেলেমেয়ে তার অপেক্ষায় বসে থাকত । তিনি অপেক্ষা করতেন বাসায় ফিরে ছেলেমেয়েদের সাথে সময় কাটাবেন বলে । বাসার সবাই ও তার অপেক্ষায় প্রহর গুনতো । রাহেলা অফিস থেকে আসার সাথে সাথেই কাঁধের ব্যাগ নিয়ে,চুলায় চড়ানো গরম পানি বালতিতে ঢেলে দিতেন । আরমান সাহেব গরম পানি ছাড়া গোসল করতে পারতেন না একদমই । গোসল করেই আগুন গরম খাবার প্লেটে চাই তার । তাই গোসল সারতে সারতে খাবার পরিবেশনের কাজ গুছিয়ে নিতেন রাহেলা ।
রাহীদ,রাইয়ান আর সুপ্তি অপেক্ষা করে থাকতো,বাবা তাদের জন্য কি নিয়ে ফিরেছেন সেটা দেখার জন্য । প্রায় দিন আরমান সাহেব জুস্,চকলেট,চিপ্স এইসব নিয়ে ফিরতেন । রাহেলা প্রচন্ড রাগ করতো । বলতো,"এইসব খেলে ছেলেমেয়েদের স্বাস্থ্য নষ্ট হয় । কেনো আনো এসব ছাই-পাশ ? " আরমান সাহেব হাসতেন শুধু ।
আজ অপেক্ষাটা উলটো । আজ তিনি অপেক্ষা করছেন তার ছেলের জন্য । রাহেলা তো সব অপেক্ষার উর্ধে চলে গিয়েছেন আরো ৮-৯ বছর আগেই । আজ তিনি একলাই অপেক্ষা করেন ।
সময় কাটানোর জন্য পেপার হাতে নিলেন আরমান সাহেব । চশমাটা খুঁজে বের করতে গিয়ে মনে পড়লো,একটা কাঁচ ভেঙ্গে গিয়েছে দিন দুয়েক আগে । চশমা ছাড়া প্রায় কিছুই দেখতে পাননা তিনি । সেটা জানানোরও কোন মানুষ নেই তার আশেপাশে । খাটের পাশের ড্রয়ারটা খুলে ভাঙ্গা চশমাটা রেখে দিলেন আরমান সাহেব ।
পাশে রাখা লাঠিটা হাতে নিলেন । বাইরে বেরুবেন তিনি । একটু হেঁটে আসলে ব্যায়ামও করা হবে । বসে বসে হাড়ে মরিচা ধরে গেছে । অনেকদিন বাইরেও বেরুনো হয় না তার । মোড়ের দিকে একটা দোকানের চা তার খুব প্রিয় । এক উসিলায় সেটাও চেখে দেখা যাবে ।
আস্তে আস্তে হাঁটতে থাকেন তিনি । দোকানে যাবেন । নাতনীর জন্য খাবার দাবার কিছু নেয়া যায় । ছোট বাচ্চারা চকলেট,চিপ্স এইসব হাবিজাবি খুব পছন্দ করে । সুপ্তিটা খুব আদুরে হয়েছে । শেষবার তার কাছে বেড়াতে এসে বলে,"দাদাভাই,তুমি আমাকে কত্তো আদর করো । এর পরেরবার তোমাকে ঠিক আমার সাথে নিয়ে যাব । তুমি সবসময় আমাকে চকলেট কিনে দিও ? "
আজ অনেক কিছু কিনেছেন । ছেলে হাত খরচ বাবদ প্রতি মাসেই কিছু টাকা দেয় । সেখান থেকে কিছু টাকা তিনি সুপ্তির জন্য জমিয়ে রাখেন । বাচ্চাটা এসব খাবার দাবার পেলে খুব খুশি হয় । ছেলে আসবেন ভেবে তিনি চশমাটা আর ঠিক করেননি । তাহলে সুপ্তির জন্য চকলেট,চিপ্স কেনার টাকা কম পড়ে যায় ।
ছেলে টাকা দিয়ে গেলে চশমাটা ঠিক করিয়ে নিবেন,মনে মনে ভাবলেন তিনি । আরো সাবধান হতে হবে তাকে । যে হারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে,রাহীদের নিশ্চয়ই সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় । এর মধ্যে এসব উটকো ঝামেলা করে ছেলের কষ্ট বাড়াতে চাননা তিনি ।
সন্ধ্যা হয়ে আসে । এখন আর শরীরে আগের মতো জুত পাননা । তাই খাটে এসে চুপচাপ বসে থাকেন তিনি । আরো সময় পেরোয় । রাহীদের ফোন আসে একসময় । এই বস্তুটার ব্যাবহার তিনি জানেননা বললেই চলে ।শুধু বোঝেন ফোন এলে বামদিকের একটা বাটন টিপলেই কথা শুনা যায় । বোতাম টিপে ফোনটা কানে নিতেই,ওপাশ থেকে রাহীদের কন্ঠ ভেসে আসে ...
-বাবা,আজ আসতে পারছি না । আমার শশুরবাড়ীর আত্মীয়-স্বজন বেড়াতে এসেছে হঠাৎ করে । তাদের আপ্যায়ন করে বিদেয় করতে করতে সন্ধ্যে হয়ে গেলো । কাল থেকে আবার অফিস্ । এ সপ্তাহে আর আসতে পারছি না । দেখি,শুক্রবারে দেখা করে যাব ।
-আচ্ছা । বউ আর সুপ্তি কেমন আছে ?
-আছে ভালোই ।
-সামনের সপ্তাহে আসবি ভালো কথা । আমার যে কিছু টাকার দরকার ছিলো ?
-কি বলো বাবা ? সেদিনই না তোমাকে হাজার দুয়েক টাকা দিয়ে এলাম । একলা মানুষ,এতো টাকা কোথায় খরচ করো ? আমার ব্যাপারটাও তো তোমার দেখতে হবে । শুধু তোমাকে নিয়ে ভাবলে কি আর চলে ? দেখি,পরের সপ্তাহে ম্যানেজ করতে পারি কিনা ।
-না মানে,আমার চশমাটা...
পুরো কথা শেষ করতে পারেননা আরমান সাহেব । ওপাশ থেকে ভেসে আসে নৈশব্দ । বুকের বাঁ পাশটায় কেমন যেনো করে ওঠে তাঁর । তিনি শুয়ে পড়েন কিছু না খেয়েই ।
রাতে খাওয়ার সময় পাশের বেডের মঞ্জুর সাহেব,বার কয়েক ডেকে বুঝতে পারলেন,মানুষটা ঘুমিয়ে গেছেন । আর ডাকেননা তিনি । মন খারাপ হয় তারও । এখানে সবকয়টা মানুষ সংসারে আবর্জনার মতো । শেষ বয়সটা আদর-ভালোবাসায় কাটানোর সৌভাগ্য তাদের নেই । অথচ রক্ত পানি করা উপার্জন দিয়ে একসময় বড়
একটা সংসার চালিয়েছেন নিজেরাই । আজ তাদের কাঁধ দূর্বল । কোন দ্বায়িত্ব নেয়ার শক্তি শরীরে অবশিষ্ট নেই । তাই আজ তারা সংসারের সবচেয়ে অপ্রয়োজনীয় আসবাব ।
সকাল হতেই মঞ্জুর সাহেব পাশে ফিরে দেখেন, আরমান সাহেবের ঘুম এখনো ভাঙ্গেনি । তিনি অবাক হন । নামাজ তো কখনো কাজা করেননা আরমান সাহেব ।আজ মনে হয় শরীর ভালো না । তাই জাগান না তাকে । হাত-মুখ ধুয়ে বেরিয়ে পড়েন হেটে আসবেন বলে । ফিরে যখন দেখলেন,আরমান সাহেব এখনো ঘুমে,কেমন সন্দেহ হয় তার । গায়ে হাত রাখতেই বুঝতে পারলেন,সংসার থেকে আজ আরেকটা নষ্ট আসবাব কমে গেছে ।
কিছুক্ষনের মধ্যেই লোকজন জড়ো হয়ে যায় । রাহীদ আর রাইয়ান কে জানানো হলো । মেয়ে বিয়ে করে দেশের বাইরে ;তাই সে জানলো কি না জানা নেই মঞ্জুর সাহেবের । ছোট ছেলে এখনো বিয়ে করেননি বোঝাই যায় । চুল স্পাইক করে কেউ মৃত বাবাকে দেখতে আসতে পারে কল্পনাও করতে পারেননি মঞ্জুর সাহেব । ঘৃণায় তার মুখে থুতু জমতে থাকে । তিনি আরমান সাহেবের ড্রয়ার খুলে,সেখানে রাখা সামান্য কিছু টাকা আর একটা চিঠি রাহীদের হাতে তুলে দেন ।
চিঠিটা খুলে রাহীদ দেখতে পেলো কাঁপা কাঁপা হাতে কোনরকমে লেখা কিছু কথা---
"বাবা রাহীদ,তোমার মেয়ের জন্য কিছু টাকা জমা করে রাখলাম । আজকাল মনে হয়
বেশিদিন বাঁচবো না । তাই নিজের জন্য খরচ করতে ভালো লাগে না । মরে গেলে তো
এই টাকা গুলো কোন কাজেই আসবে না ।
চাকরী-বাকরী করিনা,তাই নাতনীকে ভালো কিছু দিতেও পারি না ।একবার সুপ্তি
আমার কাছে বারবি ডল না কি একটা চেয়েছিলো ।আমি দিতে পারিনি । এই টাকাটা
দিয়ে কিনে দিতে পারিস কিনা দেখিস । বেশি নেই । অসুখে পড়ে কিছু টাকা
ভেঙ্গে ফেলেছিলাম । তুই নিজের থেকে কিছু দিয়ে দিস্ ।
-তোর বাবা"
চিঠি দেখে কোন ভাবান্তর হয় না রাহীদের । বরং একটু বিরক্তই হয় । মেয়েকে কি বারবি ডলও কিনে দেয়ার টাকা নেই তার ?কেনো মেয়ে বাবার কাছে চেয়ে বসলো ?এইসব খারাপ অভ্যাস কোথায় পেয়েছে কে জানে ? আজই বাসায় গিয়ে জিজ্ঞেস করতে হবে তার...
পাশে তাকাতেই মঞ্জুর সাহেবের দিকে চোখ পড়ল তার । সে এগিয়ে গিয়ে বললো,বাবার দাফন-কাফন বাবদ যা খরচ হয়,এই টাকা থেকে দিয়ে দিবেন । রাতের ফ্লাইটে আমার আজ আবার দেশের বাইরে যাওয়ার কথা । তাই থাকতে পারছি না এখানে । আপনি একটু দেখবেন ।টাকা যা বাঁচে আপনি রেখে দিয়েন ।
মঞ্জুর সাহেব কঠিন দৃষ্টিতে তাকালে রাহীদের দিকে । কিছু বললেন না । খুব ইচ্ছে ছিলো চড় মারার ছেলেটার গালে । কিন্তু,টাকাটা দরকার তাই আর কিছু বললেন না ।
শুধু ভেবে নিলেন ,সব বাবা-মা নিশ্চয়ই তাদের মত অভাগা হয় না । আর প্রার্থনা করেন,আরমান সাহেবের মতো এমন কষ্টের মৃত্যু যেন কোন বাবা-মার কপালে না জোটে ।
-অধিবৃত্ত
নতুন নতুন গল্প ও জোকস পেতে ভিজিট করতে পারেন আমার সাইটে
ReplyDeletewww.valobasargolpo2.xyz,
ভালোবাসার গল্প
রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প
নতুন ভালোবাসার গল্প
সেরা ভালোবাসার গল্প
বাংলা মজার জোকস,
১৮+ জোকস,
কোপাকুপি জোকস
বাংলা কৌতুক,
হাসির কৌতুক,
bangla jokes,
bangali jokes, mojar jokes,
bangla funny koutuk,
hasir koutuk,
bangla koutuk,
ভালবাসার গল্প,
valobasar Golpo,
Sad Golpo,
মন করার গল্প,
bangla hasir koutuk doctor jokes