Subscribe:

নতুন বছর

'মা,ওমা.......শুনতাছ?'                                                                                                                   
'কি?'
'ওই যে,সবাই কি নাচ-গান করতাছে.................কাইল নাকি নতুন বছর?নতুন বছরে আমাগো কিছু ভালা খাওন দিবা না?'
'ওই,এত বকবক করছ্ কেন্?রাতের বেলায়ও একটু শান্তিতে থাকতে দিবি না?দেখতাছস না তোর ভাই ঘুমাইছে?'
 ও তাকিয়ে দেখে ওর ছোট ভাই নয়ন আসলেই ঘুমিয়ে পড়েছে।
একটু চুপ করে থেকে তার মা আবার বলল,'ওরা তো আইজকা অনেক বালা বালা খানা খাইব........যা: তোর যদি বেশী মনে চায়,অগো থেইক্কা চায়া খা গা,যা..........'


  সাত বছরের ছোট্ট মেয়ে পুটি বুঝতে পারে না তার মা কেন তাকে এত বকে???সে টোকাইয়ের কাজ করে।মাঝে মাঝে যখন স্কুলের সামনে সে কাগজ টোকাতে যায় ...সে দেখে,স্কুলের ছেলেমেয়েরা তাদের মায়েদের কাছে নানা রকম আবদার করে।তাদের মায়েরা তারা যা চায় তা কিনে দেয় অথবা স্নেহ মাখা কন্ঠে বলে,'সোনামনি,এখন না..পরে কিনে দিবো.......'                                                                       
  কিন্তু তার মা কেন এমন করে না???

  দারিদ্রতার যুদ্ধে মায়া-মমতা যে হার মানে,এই নির্মম সত্যটি ছোট্ট পুটি আজও বুঝতে পারে না।

           তবে মায়ের শেষ কথাটা তার মনে ধরে গেলো। সে বেরিয়ে এলো তাদের বস্তির ছোট্ট খুপরি থেকে।দেখতে পেলো একটু দূরেই অনেক আলো জ্বলছে। সেখানে কত মানুষ হইহুল্লোর করছে।অথচ তাদের বস্তিতে কবরের নিরবতা। কেন এই পার্থক্য সে বুঝতে পারে না।
           'নতুন বছর মনে হয় শুধু বড়লোক গো ..........',আপন যুক্তি বের করে নেয় সে ।
                            সে দৌড়ে যায় ভিড়ের দিকে ।                                                               
   'শিলা....শিলা কি জাওয়ানি.........'গানটা চলছে শুনতে পায় সে।সে বুঝতে পারে কারণ গানটা ওর বহুবার শোনা। একটু এগিয়ে গিয়ে দেখে অনেক আলোর মিছিল........আকাশে ছুটোছুটি করছে লাল,নীল,সবুজ রঙের আলো...........................
           সে হা করে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ.....................

 একটু পরে তার দৃষ্টি যায় একটা টেবিলের দিকে,যেখানে সাজানো আছে নানা খাবার। সে দেখে একটা খাবার বড় বড় গোল গোল রুটির মধ্যে চারকোণা কি জানি বসানো.......কি খাবার সেটা!!!!!কে জানে...তার আগ্রহ নেই সে দিকে। তার আগ্রহ সাদা সাদা চিকন চিকন সাজানো ভাতের দিকে..........

        সে ভেবে পায় না,ভাত এত চিকন হয় কিভাবে ?ভেবে একটা যুক্তি বের করে সে,'মনে হয় ওরা সিদ্ধ করে বেশি '.......একটু এগিয়ে যায় সে ।
 একটা সুন্দরমতো আপার ওড়না টেনে বলে,'আপা,কয়টা চিকন ভাত দিবেন???'
  'চিকন ভাত?এটা আবার কি???' সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকাল সেই আপা ।
     'ওই যে-' আঙ্গুল দিয়ে টেবিলটার দিকে দেখায় সে।
 আরো কিছু আপা ভাইয়া জড়ো হয় সেখানে।পুটির কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠে তারা।সে হাসি যেন আর থামতেই চায় না।..........
অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে এক ভাইয়া বলে,'আরে  stupid,ওটা  fried rice।ওটা আমাদের সেলিব্রেশন এর খাবার।ওটা তোর জন্য না। যা ভাগ এখান থেকে........'
 ধমক খেয়ে সে সরে আসে।দূর থেকে দাড়িয়ে কিছুক্ষণ দেখে ওদেরকে।
  তারপর ফিরে যায় তার বস্তির ঘরটাতে।ঘরে ঢুুকতেই হঠাত্ সে শুনতে পায় বাইরে সমস্বরে সবাই খটমটে  ভাষায় কি যেন একটা বলছে।সে অর্থ বুঝতে পারে না।কিন্তু এটা ঠিকই বুঝতে পারে যে,নতুন বছর এসে গেছে।আর সবাই তাকে বরণ করার জন্য কিছু একটা বলছে। কিন্তু সে এবার আর সেখানে যায় না। চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ে।
 ঘুমিয়ে স্বপ্নে দেখে....
        সে একটা সুন্দর লাল জামা পরে বসে আছে।কিছুক্ষণ পর অনেক সংখ্যা লেখা একটা বড় কাগজ তার কাছে আসে। পুটি জিজ্ঞাসা করে,
    'কেডা তুমি?'
   'আমি নতুন বছর।সবাই তো আমার কাছে অনেক কিছু চায়,তুমি কি চাও?'
    'আমি ওই চিকন চিকন ভাত খাইবার চাই।'

    বলার সাথে সাথে তার সামনে হাজির সেই চিকন চিকন ভাত।সে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।
 কিছুক্ষণ বাদে সে ওই পাতাকে জীজ্ঞাসা করে,'আচ্ছা তুমি কি আমাগো দু:খ দুর কইরা দিতে পারো না?তোমারে বড়লোকেরা কত টাকা পয়সা খরচ কইরা আনে,সেইডা থেইক্কা যদি অল্পও  আমাগো  দিতা তাইলে তো আমাগো আর দু:খ থাকতো না।'                                  

পাতাটা হঠাত্ হেসে উঠে।    খিলখিল শব্দে কানে তালা লেগে যায় পুটির।                                        

হাসিটা তার বড় চেনা।    ঠিইইক আপা ভাইয়াগুলোর  হাসি......................




জান্নাতুল ফেরদৌস রাহা

No comments:

Post a Comment