Subscribe:

সেই সব দিনগুলি...

স্কুল থেকে বাসায় এসেছি মাত্র... ব্যাগ রেখেই দিলাম নিচে দৌড়। প্রতিদিনের মতই আমাদের গ্রুপের সবাই ব্যাট বল নিয়ে হাজির... আমাদের গ্রুপ মানে আমাদের এলাকার গ্রুপ... কেও আমাদের বিল্ডিঙের ৪ তালায় থাকে... কেও পাশের বিল্ডিঙের ২ তালায়... ক্লাস ওয়ান থেকে ভার্সিটি , সবাই আছেন আমাদের মাঝে... সবাই মিলে যেন একটি পরিবার...



প্রতিদিন বিকাল হলেই কেও একজন এসে বিল্ডিঙের সব বেল বাজিয়ে দিত দৌড়...আর সব ছেলেরা ধপ ধপ শব্দে সিঁড়ি দিয়ে নামত... শীতকাল হলে ব্যাডমিনটন, মাঝে মাঝে ফুটবল... তবে বেশিরভাগ সময় ক্রিকেট... আমি ছিলাম সবার পছন্দের... সবার পছন্দ হওয়ার বিশেষ কারণও অবশ্য আছে... স্কুল-কলেজের হোমওয়ার্ক – Assignment করে দিতাম নির্দ্বিধায়... দোকান থেকে সিগারেট কিনে আনা, বল ড্রেনে পরে গেলে বিশেষ কায়দায় তুলে আনা সব কাজেই ছিলাম পারদর্শী...!! প্রতিটা মুহূর্তই উপভোগ করতাম... কতবার যে পাশের বাড়ির দাদু এসে খেলা বন্ধ করে সবাইকে তাড়িয়ে দিয়েছে হিসেব নেই... কিন্তু কিসের কি! পরের দিন দাদুর লাঠি দিয়েই স্ট্যাম্প বানিয়ে খেলা শুরু।


আমরা খেলতাম আর আসেপাশের বাড়ির বারান্দায় দাড়িয়ে কিছু মানুষকে দেখা যেত তাকিয়ে থাকতে... নিতু আপুও তাদেরই একজন... এক দৃষ্টিতে নিতু আপু রুবেল ভাই এর দিকে তাকিয়ে থাকত... রুবেল ভাইও কম না... সেও প্রতিদিন নতুন নতুন শার্ট পরে আমাদের মাঝে হাজির... আমরা তো বুঝি এত নতুনত্ত কিসের জন্য। রবেল ভাই কে নিয়ে খেলতে চেতনা কেও... তার চোখের সামনে বল গড়িয়ে চার হয়ে যায় তার খেয়ালই নাই... সে তাকিয়ে আছে ৩ তালায় নিতু আপুর দিকে...


-আপনাকে এখানে ফিল্ডিং করার জন্য দার করানো হইসে -আমি তো তোর নিতু আপুর সাথে ফিল্ডিংই করতেছি!! তুই তো বলিশ নাই কোন ফিল্ডিং...


কথায় পারা যায়না... আর এই নিতু আপুও কেমন জানি... রুবেল ভাই হাত নারালে সেও হাত নারাবে ঠিকই... কিন্তু ফোন নাম্বার দিবে না! কথা বলতে রাজি না...একবার ফুটবল খেলব তাই সবাই দল ঠিক করছিলাম... কাওকেই গোলকিপার বানানো যায়না...সবাই গোল দিতে চায়... এমন সময় রুবেল ভাই নিজ থেকে এসে বলল “ আমি গোলকিপার হব ”। আমরাও স্বস্তি পেলাম ! কিন্তু পরে দেখি আমরা খেলছি আর সে গোলপোস্টে দাড়িয়ে ৩ তালার দিকে তাকিয়ে আছে...! একদিন রুবেল ভাই চিঠি লিখার সিদ্ধান্ত নিল... বরাবরের মতই দায়িত্ব আসল আমার উপর... আমাকে লিখে দিতে হবে। পরের দিন লিখলাম... লিখে নিতু আপুর কাছে দিয়েও আসলাম... কিন্তু নিতু আপু এত চালাক আগে জানতাম না...! নিতু আপু রুবেল ভাইকে ফিরতি চিঠিতে লিখে পাঠাল “প্রেম কি তুমি করবে নাকি রুমন??”


ওহ, বলাই হয়নি... আমিই রুমন...


হঠাৎ আম্মু বাসা চেঞ্জ করার সিদ্ধান্ত নিল... আম্মু চায় আমি যেন ভাল স্কুলে পড়ি... এলাকার স্কুল নাকি ভাল না... কান্নাকাটি করে অনেক বুঝালাম আম্মুকে... আমাদের গ্রুপের সবাই আমাদের বাসায় এসে আম্মুকে রিকুয়েস্ট করল। সব আবার আগের মত চলতে থাকল...


এদিকে রুবেল ভাই চিঠি লেখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবারই একটা না একটা বানান ভুল করবে আর চিঠি ছিড়ে ফেলবে... আমরা চিন্তা করলাম...ভেবে দেখলাম যে নিতু আপু খালি খালি রুবেল ভাই এর সাথে মজা করছে... বেচারা কত কষ্ট করে নিতু আপুর জন্য... কত রকমের চকলেট কিনে আমাদের দিয়ে তার কাছে পাঠায়... কিন্তু সে পাত্তাই দেয়না... পাত্তা না দিলে নাই... ডিরেক্ট না বলে দে! সেটাও বলবে না... আমরা ঠিক করলাম নিতু আপুর বাসার নিচে খেলা বন্ধ করে দিব। নিশ্চই এতে কোন ফল পাওয়া যাবে। সব ঠিক ঠাক। পরদিন থেকে আমরা খেলা বন্ধ করে দিলাম... অনেক কষ্ট করে ৬ দিন না খেলে কাটালাম কিন্তু এরপর ঠিক করলাম নিতু আপু মরুক...আমরা আমাদের মত খেলতে থাকব... ওই দিনই নিতু আপু চিঠি পাঠাল রুবেল ভাইকে... রুবেল ভাইতো চিঠি হাতে পেয়ে কিছুখন নাচানাচি... কাওকে দেখায়ও না... নিজেও পড়ে না... হাত থেকে কেড়ে নিল একজন... নিয়ে পড়তে আরম্ভ করল... চিঠিতে আনন্দ হওয়ার মত কিছু লেখা ছিল না... শুধু লেখা ছিল... “তোমার সাথে আর শয়তানি করব না... বাবা নতুন বাসা ঠিক করেছে... এই বাসা চেঞ্জ করে ফেলবে...এখানে আর থাকা হবেনা”


রুবেল ভাই ৫ মিনিট পুরা চুপ... এরপর বলে “এখন বাসায় যাই, মন মেজাজ ভাল নাই”। ঐদিন আমরাও বাসায় চলে যাই... খেলার মত মন ছিলনা... এরপর বেশ কয়েকদিন রুবেল ভাইএর কোন খোঁজ নেই... ভাবলাম মন হয়ত খারাপ... হয়ত বলছি কেন...! খারাপ হবারই কথা... একদিন বিকালে আমরা সবাই রুবেল ভাই এর বাসায় গেলাম তাকে নিয়ে আসতে... গিয়ে আনটি কে যখন রুবেল ভাইয়ের কথা বললাম তখন আনটি জানালো রুবেল ভাই নাকি আমাদের সাথে খেলতে যাচ্ছে বলে বাহিরে গেছে!! আমরা এমন ভান করলাম যেন তেমন কিছু হয়নাই... তারপর মিটিং এ বসলাম... আমাদের গ্রুপের কেও তেমন খারাপ না..... রুবেল ভাই আবার খারাপ হয়ে গেল নাতো...! মানে, নেশা করা শুরু করল নাতো!! আমরা ঠিক করলাম রুবেল ভাইয়ের বাসার সামনে দাড়ায় থাকব... যখন আসবে তখন ধরব...! আজান দিয়ে দিল। তাই কয়েকজন চলে গেল... কিন্তু আমি যাওয়ার মানুষ না। দরকার হলে সারা রাত দাড়ায় থাকব। সারা রাত দাড়ায় থাকার প্রয়োজন হল না। রুবেল ভাই রাত ৮ তার দিকেই চলে আসল... আমাকে দেখে খুব বেশি অবাক হল না... বলল, “কিরে রুমন, কি খবর??”

আমি কোন উত্তর না দিয়ে সরাসরি জিজ্ঞেস করলাম, কই ছিলে ??

আমার বলার ধরন দেখে রুবেল ভাই বুঝল যে মিথ্যা কথা বলে লাভ নেই... রুবেল ভাই বলল, “ইয়ে…নিতুদের নতুন বাসার সামনে”

আমি তো অবাক...! এই গাধা একা একা নতুন বাসাও খুঁজে বের করসে!!

পরের দিন থেকে আমাদের খেলার জায়গায় ২ জনের অনুপস্থিতি দেখা গেল... মানে রুবেল ভাই এর সাথে আমিও যুক্ত হলাম... দুই জন মিলে প্রতিদিন বিকালে নিতু আপুর বাসার সামনে যেতাম... নিতু আপুও এখন ভাল হয়ে গেসে। আগের মত রুবেল ভাই কে আর ঘুরায় না... মোবাইল নাম্বারও দিয়ে দিসে... ক্লাস ফাঁকি দিয়ে দুইজন প্রায়ই ঘুরতে যায়... আগে রুবেল ভাই এর Practical আমি করে দিতাম... এখন নিতু আপুর টাও করে দিতে হয়... কিন্তু দুঃখের বিষয় নিতু আপু ভাবে যে ওগুলা রুবেল ভাই করে...

যাইহোক... তারা খুশি থাকলেই আমি খুশি... 

২...

সময় বিকাল ৪ টা... কিছুখন পরেই আসরের আজান দিবে... আর তখনই আমি আর রুবেল ভাই হাঁটা শুরু করব নিতু আপুদের বাসার দিকে... রুবেল ভাই বাসায় যত সেন্ট আছে সব শার্টে মাখসে... নিতু আপু থাকবে ৪ তালায়... ওখান থেকে সেন্টের গন্ধ ক্যামনে পাবে আল্লাহ জানে... আগের বাসায় তাও তিন তালায় থাকত... প্রতিদিন নিতু আপুদের বাসার নিচে দাড়ায় থেকে ১ ঘণ্টা চোখাচোখি করে কি যে মজা রুবেল ভাই পায় সেটা সে-ই জানে... শুরুর দিকে আমিও মজা পেতাম... প্রতিদিন দামি দামি চকলেট আর আইসক্রিম খাওয়াত রুবেল ভাই। এখনও খাওয়ায় কিন্তু আগের মত আর ভাললাগেনা। একদিন বিরক্ত হয়ে বলেই বসলাম রুবেল ভাইকে যে আমার ভাল লাগেনা এইভাবে বাসার নিচে দাড়ায় থাকতে... এরচেয়ে আগের মত খেললেই ভাল টাইম পাস হয়। রুবেল ভাই বলল... চিন্তা করিস না তোকেও একটা খুঁজে দিব, এরপর তুই তোরটা নিয়ে ব্যস্ত থাকবি আর আমি আমার কাজ করব... আমি বললাম... “তোরটা মানে??”

-তোরটা মানে তোর গার্লফ্রেন্ড... আমি খুঁজে দিব... নো চিন্তা

-গার্ল ফ্রেন্ড আবার খুঁজে কিভাবে?? আর তোমার পছন্দ আমার ভাললাগেনা... সব খ্যাঁত...

-কি?? তোর নিতু আপু খ্যাঁত??

- না না, আমি কি নিতু আপুর কথা বলসি নাকি...

-কি বলসিশ আমি বুঝসি... তুই যা আগের মত “কিরিকেট” খেল। জালাইস না...

-ভাই, আমরা প্রতিদিন এখানে এভাবে আসলে আমাদের গ্রুপের ওরা আবার ঝামেলা করবে... পিচ্চিগুলা অনেক জ্বালায়... পরে আম্মুকে বলে দিলে আমি শেষ।

-আরে বলবে না...

-আমি যদি ওদের জায়গায় থাকতাম তাহলে অলরেডি বলে দিতাম...!-আমি ওদের জায়গায় থাকলে কিছুই করতাম না... তো ?


এভাবেই দিন কেটে যায়... প্রতিদিন বিকালে Safari, Park, Kitkat সহ নাম না জানা অনেক চকলেট নিতু আপুর কাছে বিতরন চলতে থাকে... আমি বকশিশ হিসেবে কিছু পাই...

সামনে আমার এসএসসি পরীক্ষা। রুবেল ভাইয়ের এইচএসসি। দুই জনেরই সামনে শনি। আমাকে নিয়ে সবার খুবই আশা... কিভাবে কিভাবে জানি ক্লাস ফাইভ আর এইটে বৃত্তি পাইসিলাম... সবাই প্রায় নিশ্চিত যে আমি এলাকা কাপানো কোন ফলাফল করতে যাচ্ছি... কিন্তু আমিই জানি আমার কি অবস্থা... রুবেল ভাইকে পড়ার কথা বললেই বলে দেরি আছে... আরও বলে, “ আগে তোর এসএসসি তারপরও কিছুদিন সময় আছে...”

আমি কিছু বলিনা... বললেই বলে নিজের পড়ায় মন দে...সবাইকে জানিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে ১ মাসের জন্য বাসায় থাকব বলে ঠিক করলাম... যা পড়ার এই এক মাসেই পড়ব... দেখতে দেখতেই পরীক্ষা একেবারে কাছে চলে এল...

পরীক্ষার আগের দিন আমাকে পুরোপুরি অবাক করে দিয়ে রুবেল ভাই আমাদের গ্রুপের ছোট বড় সব সাইজের ছেলেপেলে নিয়ে বাসায় এসে হাজির। পরীক্ষা দেয়ার জন্য যা যা দরকার সব নিয়ে আসল... আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম... কোনদিনই এমন হবে ভাবি নাই... কান্নাই চলে আসল... রুবেল ভাই বলল, ‘ভাল ভাবে পরীক্ষা দিশ”

পরীক্ষাও চোখের পলকেই শেষ হয়ে গেল... পরীক্ষার মধ্যে কারও সাথে কোন দেখা হল না... ভাবতেই অবাক লাগল... এতদিন কাওকে না দেখে থাকলাম কিভাবে...! অবশ্য মাঝখানে রুবেল ভাই একবার ফোন করেছিল কিন্তু ঐ নাম্বারটা এখন বন্ধ করে রাখা। একবার ঠিক করলাম রুবেল ভাইয়ের বাসায় গিয়ে এতদিন কি কি কাহিনী হল তা শুনে আসব। কিন্তু আবার ভেবে দেখলাম ২,৩ দিন পর তারও পরীক্ষা... এমনিতেই পড়ে না... এর ভিতর আমি গেলে আনটি রাগ করবে... তাই আর গেলাম না... মনের আনন্দে দাদা বাড়ি–নানা বাড়ি ঘুরতে লাগলাম... বাংলাদেশের অনেক কিছুই আছে যেগুলার ব্যাপারে খালি শুনেই গেসি সারাজীবন... ওগুলা এখন ঘুরে ঘুরে দেখতেসি... ভালই লাগছে... ঢাকার বাহিরে থাকা অবস্থাতেই এসএসসির ফলাফল দিল... খুবই ভাল ফল করলাম...এরচেয়ে ভাল ফলাফল হয়ও না এই শিক্ষা ব্যবস্থায়... কিন্তু কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মনে হল ভাল ফল করেই যেন দোষ করলাম... বাবা আমাকে রাজউক কলেজের হোস্টেলে পাঠিয়ে দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগলেন। এলাকার একটা স্কুল থেকে এত ভাল ফল করেছি... এরপরে বাবার চিন্তা যেন আর বেড়েই গেল।

সব ঠিকঠাক... কলেজে ভর্তি শেষ। এখন পরের শুক্রবারই হোস্টেলের পথে রওনা হব...বলার অপেক্ষা রাখেনা যে খুবই খারাপ লাগছিল। তবে যাওয়ার আগে রুবেল ভাইয়ের সাথে দেখা করাটা জরুরি... কত দিন দেখা হয়না... পরীক্ষার পর হয়ত দেখা করা যেত কিন্তু আমি ঢাকার বাহিরে গেলাম...তার আবার এইচএসসি...সব মিলিয়ে যতই ৩-৪ বিল্ডিঙের দূরত্ব হোক, দেখা হয়নাই এই কয়দিন... বাসায় যেতেও ভয় লাগে... যদি আঙ্কেল দেয় এক ঝারি...! পরে ঠিক করলাম নিতু আপুর বাসার সামনে গিয়ে দেখি...

আসরের আজান দিতেই বাসা থেকে বের হলাম... নিতু আপুদের বাসার সামনে গিয়েই থমকে যাই... রুবেল ভাই সেই আগের মতই দাড়ায় আছে... আমি গিয়ে বললাম... “ঐ তোমার না পরীক্ষা?? এখানে কি ” ??-পরীক্ষা তো কি হইসে... আমি তো এখানে প্রতিদিনই আসি... তোর কি খবর?? তুই তো ফাটায়ে দিলি!! এখন যেখানেই যাই সবাই জিজ্ঞেস করে তোমার সাথের ঐ ছেলেটা কই ?!! ভালই লাগে...

আমি কোন কথার উত্তর না দিয়েই নিতু আপুর কথা জিজ্ঞেস করলাম... কোন উত্তর আসল না... রুবেল ভাই বলল নিতু আপুর বাবা নাকি নিতু আপুর এইচএসসির জন্য ফোন নিয়ে নিসে... ঘর থেকেও বের হতে মানা... তাও নিতু আপু কিছুখন পর পর উকি মেরে যাচ্ছে...


নিমেষেই আমাদের সবার মাঝে দূরত্ব বারতে থাকল... সবাই নিজের কাজ নিয়েও ব্যস্ত। হোস্টেলে যাওয়ার আগে রুবেল ভাই এর সাথে শেষবারের মত দেখা করলাম... বৃহস্পতিবার বিকালে সবাই একসাথে খেললাম... এরপর আর দেখা হয়নাই... হোস্টেল থেকে ঠিক মত ফোন করতে পারতাম না... ফোন করলেও ২,১ মিনিটের বেশি কথা বলা যেত না। এভাবেই দিন চলতে থাকল... হঠাৎ একদিন আব্বু-আম্মু কলেজে এসে হাজির... আব্বু-আম্মু এসে জানালো যে বাসাও চেঞ্জ করে ফেলসে..... আগের বাসায় থাকা নাকি আর সম্ভব না... আমি আর কি বলব... আম্মুর কাছে তো রুবেল ভাই এর কথা , নিতু আপুর কথাও জিজ্ঞেস করতে পারিনা!


কলেজের ২ বছর যখন প্রায় শেষের পথে তখনই একদিন রুবেল ভাই কলেজে আসল...! সাথে নিতু আপু... দুই জনই এখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। তাদেরকে দেখে অনেক ভাল লাগল... একসাথে দুপুরের খাবার খেয়ে আবার ওরা চলে গেল... ঐ সাক্ষাতের পর যে আর দেখা হবে না তা কখনই ভাবি নাই... দেখা না হওয়ার কারণও আছে... কলেজ লাইফ শেষ করে আমিও চিটাগাং চলে যাই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে... সবাই সবার কাজে ব্যস্ত... সময় পেলে ২,১ দিনের জন্য ঢাকা আসি ঠিকই... কিন্তু আমাদের বাসা তো আর ঐ দিকে নেই... ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করার পর বাবা বিদেশে যাওয়ার সব কিছু ঠিক করে ফেললেন... বাকি পড়াশুনা ওখানেই করে আসতে হবে... নিজে নিজেই চিন্তা করলাম... জগত বড়ই বিচিত্র... প্রথমে এলাকা... সেখান থেকে কলেজ উত্তরায়... উত্তরা থেকে চিটাগং...এখন আবার বিদেশ... দূরত্ব আর কত বাড়বে কে জানে...

পড়াশুনা প্রায় শেষ... গ্রীষ্মের ছুটিতে ২৩ দিনের জন্য দেশে আসা। এখন আমি পুরাই মুক্ত। বাহিরে বের হওয়ার সময় মা হাজার তা প্রশ্ন করেন না। একা একা যাওয়া যাবেনা এটাও বলেন না... তাই দেশে ফেরার পরদিনই ঠিক করলাম আগের বাসায় যাব... সবাই হয়ত আমাকে দেখে চিনতে পারবেনা... কিন্তু আমি তাদের ঠিকই চিনতে পারব...


একাই রওনা দিলাম... মা এক কাছে রুবেল ভাইয়ের ফোন নাম্বার খুজসিলাম কিন্তু দিতে পারল না... রিকশা নিয়ে যখন বাসার দিকে রওনা দিলাম , তখন বারবারই মনে হচ্ছিল যে পথ ভুল করছি... কিন্তু আশেপাশের মানুষকে জিজ্ঞেস করলে বলে পথ নাকি ঠিকই আছে...! আমাদের খেলার জায়গাটা খুজছিলাম বারবার... কারন আমি জানি ওইটা খুঁজে বের করতে পারলে আমি সব চিনতে পারব। কিন্তু ঐ জায়গাটাই পেলাম না... কিছুখন পর একটা ১৩ তলা নীল বিল্ডিং দেখতে পেলাম... যার তলায় তলায় দামি দামি এসি ঝুলানো। এটাই যে সেই জায়গা সেটা বুঝতে কিছুখন সময় লাগল... আশে পাশের বিল্ডিং গুলোও চেনা যাচ্ছে না... ৩ তলা ৭ তলা হয়ে গেছে... রঙও পালটে গেছে...

নিচে একটা দাদু থাকত তার ঘরটাও দেখছিনা...হঠাৎ একটা ছেলেকে আসতে দেখলাম যাকে খুব চেনা চেনা লাগল... কিন্তু নামটা কোন ভাবেই মনে করতে পারলাম... পরে সে-ই আমাকে চিনে ফেলল... ওর নাম যখন মনে করতেই পারছিলাম না তখন ও বলল , “আরে ভাই মনে নাই?? আমি ব্যাটের থেকে ছোট ছিলাম দেখে আমাকে খেলায় নিতেন না... বলতেন দুধ ভাত... আমি সেই আবিদ...” আমি ভেবেছিলাম আমিই সবাইকে চিনে ফেলব... তা কিনা ওরাই আমাকে চিনে ফেলল...! হয়ত এত পরিবর্তন দেখে মাথা ঠিক নেই। আবিদের কাছ থেকে সবার কথা শুনলাম... নিচে যে দাদু থাকতেন তিনি আর বেঁচে নেই... পরিচিত বেশিরভাগ মানুষই নাকি অন্যখানে চলে গেছে।

রুবেল ভাইও নাকি আর এখানে থাকেনা...আমি বলে বসলাম, “তাহলে নিতু আপু” ??

ও কিছু বলল না...

আমি বললাম, “নিতু আপুরা আগের বাসাতেই থাকে??”-হম...

শুনেই দিলাম দৌড়... চল তবে দেখা করি...!বাসার নিচের রাস্তায় দাড়িয়েই নিতু আপুকে বারান্দায় দেখতে পেলাম... কোলে একটা বাচ্চা... আমার দিকে তাকাল... কিন্তু আমি নিশ্চিত যে আমাকে চিনে নাই...

আবিদকে বললাম... চল...! রুবেল ভাইয়ের সাথে দেখা করে আসি... কতদিন দেখিনা.. দেখিশ আমাকে চিনবেনা...

আবিদ থামিয়ে দিল... বলল, রুবেল ভাই এর সাথে নিতুর বিয়ে হয়নি...রুবেল ভাই নাকি রাস্তার ছেলে... এরকম সস্তা ছেলে ছেলের সাথে নাকি নিতু আপুর বাবা তার মেয়ের বিয়ে দিবেন না...

-তবে, রুবেল ভাই এখন কই??-জানিনা...রাত ২-৩ টার আগে বাসায় ফেরে না... বাসা থেকে কখন চলে যায় তারও ঠিক নেই...

মনে মনে ভাবি... সেই সব দিন গুলি আর নেই...


Eccentric Mukhor.

1 comment:

  1. jibon ta sotti tik ato tai bichitro jemon kore apni liksen...

    ReplyDelete