জানালাটা খুলে দিয়ে বাইরে চোখ রাখলাম।অন্ধকার এখনো কাটেনি ।শহরটা এখনো ঘুমিয়ে । সূর্য সবে আড়মোড়া ভাঙছে । হু হু করে একদমক ঠাণ্ডা হাওয়া বয়ে গেলো । গায়ের শালটাকে আর একটু জড়িয়ে নিলাম ভালো করে ।মনে পরে গেল,সেদিনটাও এমন ছিল।আমার সামনে থেকে আস্তে আস্তে মুছে গেলো ওপারের রাস্তাটা,আশেপাশের শহুরে বাড়িগুলো,এমনকি জানালার পাশের আম গাছটাও ।
তার জায়গা দখল করে নিল ,কুয়াশা ভেজা একটা মেঠো পথ।দুপাশে ঘন হলুদ ফুল বুকে নিয়ে মাঠের পর মাঠ সরিষা ক্ষেত।একহাতে লাল শাড়ির আঁচল সামলিয়ে আর অন্য হাতে আনমনে ফুলগুলোকে ছুঁয়ে ছূঁয়ে সেই মেঠো পথ ধরে হনহন করে হাঁটছি ।ভীষণ রাগ হয়েছে আমার।তোমার কাছে আর ফিরে যাবনা ।চলে যাবো ,যেদিকে দুচোখ যায়।উফফ...ঢাকা আর কতদূর !
ভাবতে ভাবতেই আমার শিশির ভেজা হাতে একটা শুকনো হাতের স্পর্শ পেলাম। চমকে ফিরে তাকালাম,দেখি তুমি দাঁড়িয়ে।সাথে সাথে আবার এক বুক অভিমান উছলে উঠলো।এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিতে চাইলাম হাতটাকে । কিন্তু তুমি ছাড়লে না। একটু প্রশ্রয় মাখানো হাসি হেসে বললে--''আমার রাজকন্যার কি খুব বেশি রাগ হয়েছে?''
কোন কথা না বলে মাথা নিচু করে তাকিয়ে থাকলাম নিজের পায়ের দিকে।এই মুহূর্তে যেন ওই দুটো দেখাই বেশি জরুরি।তাচ্ছিল্য গায়ে না মেখে হাত টা ধরে আমাকে আর একটু কাছে টানলে তুমি ।আস্তে করে বললে-''কোথায় যাচ্ছিলে এতো ভোরে,আমাকে কিছু না বলে?'' সটান মুখটা উপরে তুলে,তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে বল্লাম--''তাতে তোমার কি?আমাকে তোমার কি দরকার?আর তোমার কাছে থাকবনা ।এক্ষণই ঢাকা চলে যাবো,মায়ের কাছে গিয়ে থাকব।আর আসবনা তোমার কাছে।তারপর তুমি ফিরে যেও তোমার যেখানে ইচ্ছা । ''
রাগে আমার গা জ্বলে যাচ্ছিলো । আর তুমি হা-হা করে অট্টহাসি হেসে বল্লে--''তুমি কি হেঁটে হেঁটে ঢাকা যাচ্ছিলে নাকি?তাও আবার শাড়ি পরে!আগে বললে তো তোমাকে জগিং স্যুট কিনে দিতাম,বেশ জগিং করতে করতে এখান থেকে ঢাকা পৌঁছে যেতে পারতে।''
আর একবার হাত ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে করতে বললাম --''একদম ফাজলামো করবে না।কোনো লাভ নেই।আমি হাসবও না।রাগও ভাঙব না।''
তুমি তখন অল্প একটু হেসে আবার বললে--''ঝগড়া করার সময় না ,তোমার নাকের পাশ দুটো ফুলে যায়।ভীষণ আদুরে লাগে দেখতে।এখন যেমন লাগছে আর আমার ইচ্ছে করছে তোমাকে চেপে ধরে একটু আদর করে দেই।দেব নাকি?''
ছটফট করে উঠলাম--''না! যাও !''
---''তাহলে ঘরে চল।পাগলামি করোনা , তুমি তো সবই বোঝো ।''
---''না।কিছু বুঝিনা।বুঝতে চাই ও না।যাবনা তোমার ঘরে।যাবনা যাবনা যাবনা ।যাও , একলা থাকো গিয়ে ।''
---''বিয়ে করছি কি বউ ছাড়া থাকার জন্য?''
---''হুম-তাই তো। নাহলে আমাকে রেখে যাচ্ছ কেন?কেমন করে থাকব একা একা?''
বলতে বলতে আবার চোখে জল চলে আসলো।একটু আগের সব ঝগড়া ভুলে মুখ লুকালাম তোমার বুকে।তুমি কিছু বললে না।শুধু আমার হাত ধরে ফিরিয়ে নিয়ে চললে বাংলোটাতে।যেটাতে মাত্র ৩ দিন আগে ছুটি কাটাতে এসছি তুমি-আমি । বিয়ের পর সেটাই ছিল সবার কাছ থেকে দূরে আমাদের প্রথম বেড়াতে যাওয়া ।
ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে আমাকে বিছানায় বসিয়ে মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসলে তুমি।কত করে বোঝানোর চেষ্টা করলে,কঙ্গোতে মানুষ কত দরিদ্র,কতটা অসহায়,কি ভীষণ কষ্টে কাটে ওদের জীবন !একজন ডাক্তার হিসেবে তাদের পাশে থাকা তোমার দায়িত্ব ।আর সেটা তোমার পেশাও।বোঝানোর চেষ্টা করলে,আর মাত্র ১ টা বছর । তার পরই তুমি একেবারে চলে আসবে এদেশে,আমার কাছে।আর কক্ষনো ছেড়ে যাবেনা আমাকে।
কিন্তু,আমি অবুঝ ,ছেলেমানুষের মত ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদেই গেলাম। গত তিন বছরে কতটুকুই বা কাছে পেয়েছি তোমাকে !বিয়ের দু সপ্তাহ পরেই কঙ্গো চলে গেলে...তারপর ,আমি এদেশে,তুমি ওদেশে। কতদিন পর ফিরে এসে,যেই না তুমি-আমি একটু সুখে সময় কাটাচ্ছি,তখনই আবার ফিরে যাবার ডাক । ডাক্তারদের নাকি নিজের বলে কোন জীবন থাকতে নেই , কিন্তু আমি তো আর ডাক্তার নই ।সেসব আমি কেন বুঝবো !
কিছুতেই সামলাতে পারছিলাম না নিজেকে।কি একটা যেন অস্থির করে ফেলছিল।সব বুঝেও কেন যেন মনটা থাকতে চাইছিল যুক্তিতর্কের বাইরে,আবেগি হয়ে। তুমিও কি অস্থির হচ্ছিলে ভেতরে ভেতরে ?অজানা কোন ভয় কি তোমার মনেও নাড়া দিয়েছিলো?নাহলে কেন আমাদের ৩ বছর ধরে জমিয়ে রাখা সব পরিকল্পনা ভেস্তে দিলে এক নিমিষে!যেই তুমি সবদিক একটু গুছিয়ে নিয়ে,সেনাবাহিনীর চাকরি টা ছেড়ে,একবারে বাংলাদেশে ফিরে এসে আমাকে একটা জীবন্ত খেলনা উপহার দিতে চেয়েছিলে,সেই তুমিই কেন মুহূর্তে ভুলে গেলে সব কিছু! আর আমাকেও ভুলিয়ে দিলে সব রাগ-অভিমান-ছেলেমানুষি...।
ভুলিয়ে দিলে পুরো পৃথিবীটাকে ।আমার হাতের লাল কাঁচের চুড়ি গুলো ভাঙছিল একটা একটা করে,আর আমি তলিয়ে যাচ্ছিলাম তোমার ভালোবাসার সমুদ্রের নীল জলে।হারিয়েই যেতাম হয়তো,যদি তোমার হাতের শক্ত মুঠোতে বাঁধা না থাকতো আমার হাত দুটো ।প্রথমবারের মত সেদিনই আমি নারীত্বের পূর্ণ স্বাদ পেয়েছিলাম ।
আজ ৫ বছর পরও যেন ওই মুহূর্তগুলোকে অনুভব করতে পারি।অনুভব করতে পারি কয়েকটা দিনের সেই বাঁধভাঙা-মাতাল ভালবাসা ।মাত্র ওই কটা দিনের জন্যই তুমি আমার হয়েছিলে । তার কয়েকদিন পরেই ফিরে গেলে,আবার আমার কাছে আসার মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে । হ্যাঁ,মিথ্যেই।কারণ, আর ফিরে আসোনি। সব কিছুই ফেরত পেয়েছিলাম...তোমার ইউনিফর্ম,স্টেথোস্কোপ,জামাকাপড়,টুকটাক আরও নানা জিনিস। একটা ছোট্ট কাঠের বাক্সে রাখা আমার তোমাকে লেখা সবগুলো চিঠি পর্যন্ত। শুধু তোমাকে পাইনি। জিনিস গুলো নিয়ে যখন নাড়াচাড়া করতাম,তোমার অস্তিত্ব পেতাম যেন।আর একটা অস্তিত্ব ও টের পেতাম,নিজের ভেতর । আমকে দেয়া তোমার শেষ ,কিন্তু সবচাইতে সুন্দর উপহারটার অস্তিত্ব।
ওই তো সে।বিড়াল ছানার মত গুটিসুটি মেরে বিছানায় শুয়ে আছে,তোমার ছেলে।একদম তোমার মত হয়নি।বরং আমার মত হয়েছে।চঞ্চল,ছটফটে,দুষ্টু আর ভীষণ ভীষণ ছেলেমানুষ । আমি ওকে জন্ম দিয়েছি , কিন্তু কেউ জানেনা আসলে জন্মটা যে ওই আমাকে দিয়েছে।ওর জনেই তোমাকে ভুলে নতুন একটা পৃথিবীতে ,নতুন করে বেঁচেছি ।নতুন করে স্বপ্ন দেখছি। অবশ্য আরও একজন ছিল ।
নাড়ী ছেড়ার অপরিসীম যন্ত্রণা সহ্য করে ওকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছিলাম ঠিকই । কিন্তু একটা বাচ্চা কেমন করে বড় করতে হয়,তার তখন কি জানতাম আমি!মাঝে মাঝে দিশেহারা হয়ে একা একা ওকে কোলে নিয়ে বসে কাঁদতাম।মনে মনে ডাকতাম তোমাকে । তেমনই কোন এক বিকেলে ওকে বুকে তুলে নিল সায়ন। সেই সায়ন ,যে ছিল তোমার সবচাইতে প্রিয় বন্ধু ।নতুন করে বাঁচার যে স্বপ্নটা আমি দেখেছিলাম,তাকে পূর্ণতা দিয়েছিল সায়ন।ও আমার হাত ধরেছিল ,আমাকে কাছে টেনে নিয়েছিল।তারপর আর একটা দিনের জন্যও হাত টা ছেড়ে দেয়নি ।ওর হাত ধরে আবার ভালবেসেছি,আবার স্বপ্ন সাজিয়েছি,আবার বেঁচেছি । আর আজ ওর সন্তানের গর্ভধারিণী আমি ।
ভীষণ ভালো আছি আমরা,জানো ...এত সুখে থাকব আবার,কক্ষনো ভাবিনি । তবে এখন আমি আর তোমার সেই ছেলেমানুষ পাখিটা নেই । সময়ের আকাশে সেই পাখিটা কোথায় যেন উড়ে গেছে । তোমার ছেলেটা আমাকে বড় হতে শিখিয়ে দিয়েছে । আমি যে এখন মা !আর সায়ন এখন তোমার ছেলের বাবা ।ওকে আমরা কখনও জানতে দিবনা , তুমি ওর কে ছিলে ।সায়ন কে ঘিরেই ওর বাবার জন্য ভালবাসা আবর্তিত হয়।সেটাই হবে বাকি জীবনটাতেও।
তুমি এখন শুধু আমার ভেতর বন্দী । তুমি এখন আমার অতীত ।
এইতো আমার একটা হাতে আমি স্পর্শ করে আছি,আমার বর্তমান কে । আরেক হাত ছুঁয়ে আছে অনাগত ভবিষ্যৎ । এভাবেই বোধ হয় ভালবাসা জেগে রয় ।
(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)
(বেশ পুরোনো কিছু মেইল ঘেটে গল্পটা পাওয়া হলো। মাঝে মাঝে ব্যাস্ততার কারণে ভালো কিছু লেখা হারিয়ে যায়।)



Dhaka Time
kisu basto bota sotti ridoy chuye jay...
ReplyDeleteawsome.........!
ReplyDeleteআসুন জেনে নিই সহবাসের সময় ছেলেদের কি কি সমস্যা হয় ও তার সমাধান
ReplyDeleteসহবাস সমস্যা
পুরুষের সকল স্বাস্থ্য সমস্যার প্রাকৃতিক ও মেডিকেল সমাধান
পুরুষের স্বাস্থ্য
পুরুষের সকল স্বাস্থ্য ও যৌন সমস্যার প্রাকৃতিক ও মেডিকেল সমাধান
পুরুষের স্বাস্থ্য ও যৌন সমস্যা
নারীর সকল স্বাস্থ্য সমস্যার প্রাকৃতিক ও মেডিকেল সমাধান
নারীর স্বাস্থ্য
নারীর সকল স্বাস্থ্য ও যৌন সমস্যার প্রাকৃতিক ও মেডিকেল সমাধান
নারীর স্বাস্থ্য ও যৌন সমস্যা
নারীর সকল স্বাস্থ্য ও যৌন সমস্যার প্রাকৃতিক ও মেডিকেল সমাধান
নারীর স্বাস্থ্য ও যৌন সমস্যা
র্দীর্ঘক্ষন সহবাস করতে না পারার সমস্যা ও তার মেডিকেল সমাধান নিয়ে প্রশ্নোত্তর!
যৌন সমস্যা ও তার সমাধান
সহবাসের স্বাভাবিক নিয়ম
সহবাসের আগে ও পরে করনীয়
সহবাস