Subscribe:

অপেক্ষা............

বাসের জানালা দিয়ে সিগারেটের ধুঁয়া টা ছাড়তে না ছাড়তেই মেয়েটা বিরক্তি মুখে তার জোড়া ভ্রু টা কুঁচকে আমার দিকে তাকালো। তারপর আমাকে সরি বলার সময়টুকু না দিয়েই গটগট করে বাসে এসে উঠল। ভেবে অবাক হলাম মেয়েটার এত বিরক্তি কি আমার উপর না অন্য কারো উপর। আমার ঠিক সামনের সিটটায় এসে যখন বসলো তখন ভাবলাম একবার ডেকে জিজ্ঞেস করবো কিনা যে এত বিরক্তির কি হল? কিন্তু বারাবরের মতই কিছু না বলেই চুপ করে বসে থাকলাম।


বাস থেকে নামার সময় মেয়েটি আবার বিড়ম্বনার স্বীকার হল। এবং এবারো আমিই তার বিড়ম্বনার কারন। একই জায়গায় নামবো বলে একই সাথে সিট থেকে উঠলাম এবং অনিচ্ছা শর্তেও হালকা একটু ছোঁয়া লাগলো তার সাথে। ঠিক ঐ মুহূর্তে তার দেয়া সেই রক্ত শীতল করা চাহনি আমি জীবনেও ভুলতে পারবো না।

দুই দিন পরে আবারো দেখা সেই সুদর্শিনীর সাথে। স্থান সেই বাসস্ট্যান্ড। আমাকে দেখে আবারো সেই বিরক্তি ভরা চাহনি। এবং এবারো আমার চুপ করে থাকা। এভাবে আস্তে আস্তে জিনিসটা অভ্যস্ত হয়ে গেল আমার কাছে। কিন্তু মনে সেই প্রশ্ন টা থেকেই গেল... কার উপর এত বিরক্তি ওর? আমার উপর? কিন্তু কেন?

এভাবে কত দিন গেল বলতে পারবো না...

খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো সেদিন। কাক ভেজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি বাসের অপেক্ষায়। পাশেই দাঁড়িয়ে সেই সুদর্শিনী। হয়ত বৃষ্টি বলেই তার চোখে আজ কোন বিরক্তি নেই। বার বার দেখছে আমাকে। কিছু কি বলবে? কি জানি... যথারীতি বাস এলো।মজার বিষয় হল আজকে বাসে দুটি সিটই মাত্র ফাঁকা। দেখে কেন যেন আমি একটু খুশি হয়ে উঠলাম। আর সে হল বেজায় বিরক্ত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বসতে হল আমার পাশের সিটেই।

 শুরু হল ভার্সিটির উদ্দেশে পথযাত্রা। কিন্তু আজ আর যাত্রাটা অসহ্যকর লাগলো না। বৃষ্টিই মনে হয় মনটাকে আর উদাস করে দিলো। মনে মনে ঠিক করলাম অনেক দিনের সুপ্ত প্রশ্নটা আজকে করেই ফেলব। মেয়েটা একটি বারও আমার দিকে তাকালো না। ওর চোখ বাইরের দিকে। বৃষ্টি মনে হয় ওকেও উদাস করে দিয়েছে। কীভাবে যে শুরু করবো বুঝতে পারছিলাম না।

ঠিক তখনি ত্রাণকর্তা হয়ে আবির্ভাব হল বাস হেল্পার এর। ভাড়া নেয়ার সময় বাধ্য হয়েই তাকে ঘুরতে হল আমার দিকে। এই সুযোগ... কি বলবো ঠিক করার আগেই হুট করে মুখ থেকে বের হয়ে গেল “ আপনার কাছে ৫০০ টাকার ভাংতি আছে?”
মেয়েটি আবার চোখে মুখে বিরক্তি এনে বলল “না”।

মাথাটা আমার মনে হয় কিছুক্ষনের জন্য কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল। আর হটাতই আমি যেন অনেক সাহসী হয়ে গেলাম। মুখটা জানালার দিকে ঘুরানোর আগেই তাই আবার প্রশ্ন করে বসলাম “আচ্ছা আপনি সব সময় আমাকে দেখে বিরক্ত হন কেন?”
মেয়েটি বলল “মানে!!” মানুষের চোখ যে এত জলদি পরিবর্তন হয় আর এত কিছু বলতে পারে তা এই মেয়েকে না দেখলে বোঝা যাবে না। এদিকে আমাকে যেন প্রশ্ন করার নেশায় পেয়েছে।
আবার বললাম “আপনার নামটা জানতে পারি?” মেয়েটি কি বলবে ঠিক বুঝতে পারলো না, আমার দিকে কিছুক্ষন চেয়ে রইলো তারপর মুখ ফিরিয়ে নিল জানালার দিকে। আমিও আমার গাধামির পরিমান বুঝতে পেরে চুপ হয়ে গেলাম।

এর পরের কিছুদিন মেয়েটিকে দেখলেও আর কথা বলার চেষ্টা করলাম না। নিজের ভেতর কেমন যেন একটা অপমান বোধ কাজ করতো। চোখে চোখ পরলে মুখ সরিয়ে নিতাম। এরই মাঝে একদিন জেনে গেলাম মেয়েটার নাম প্রিয়াঙ্কা। শুরু হল ফেসবুক এর সার্চ অপশনের উপর অত্যাচার। কিন্তু অনেক খুঁজেও পেলাম না সুদর্শিনীকে। অবশ্য পাবো এমন আশাটিও কখনো করিনি। ফেসবুকে কারো পুরা নাম জানা থাকলেও খুঁজে পেতে জান বেরিয়ে যায় আর সেখানে শুধু প্রিয়াঙ্কা নামটা তো বড়ই তুচ্ছ।

প্রিয়াঙ্কা পড়তো আমার ভার্সিটির ঠিক উল্টো পাশের ভার্সিটিটায়। কিন্তু কোন সাবজেক্ট এ পড়তো? কোন ইয়ার এর স্টুডেন্ট? আমার চেয়ে বড় না ছোট কিছুই জানতাম না আমি। আগে কখনো আমি হয়তো ওভাবে ওকে খেয়াল করিনি। কিন্তু হটাৎ করেই যেন ওকে আমি প্রতিদিন দেখা শুরু করলাম। রাস্তার ওপাশটায় গেলেই যেন দেখা হয়ে যেত ওর সাথে। আর আমাকে দেখলেই ও অবাক হয়ে যেত। সেই বিরক্তি ভাবটা আর তখন দেখতাম না ওর সুন্দর মুখটায়। জিনিস টা আমি খুব উপভোগ করতাম। ততদিনে মেয়েটিকে আমার ভালো লেগে গেছে। এই হল ছেলেদের এক দোষ। কোন মেয়ের দিকে কিছু দিন তাকালেই তাকে ভালো লাগা শুরু হয়ে যায়। জানি না মেয়েদের ক্ষেত্রেও এমনটা হয় কিনা......

এক বছর পরের কথা। এই একটা বছর প্রতিদিনই আমি সকাল সকাল বাসস্ট্যান্ডে যেয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম আর অপেক্ষা করতাম। এবং ওর সাথে একই বাসে উঠতাম। ব্যাপারটা ওর চোখেও ধরা পরেছিল। কিন্তু ও কখনই কিছু বলতো না। এর মাঝে যে ওর সাথে কথা হয়নি তা না। তবে সেটা না হওয়ারই সামিল।

 পর পর তিনদিন হল ওকে আর দেখলাম না বাসস্ট্যান্ডে। কি হল? কই গেল? কোন সমস্যায় পড়লো? তিনটা দিন এই ভেবেই কেটে গেল। কালকে ওর ভার্সিটির সামনে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু ও নেই তো নেইই। আমিও গাধা, একই জায়গায় থেকে বাসে উঠি অথচ কখনো জানতে চেষ্টা করিনি যে কই থাকে সে? কোথায় তার বাসা? আসলে কখনো যে কথাটা মাথায় আসেনি তা না। কিন্তু বিষয়টা একটু হ্যাংলামির পর্যায়ে পরে যায় বলে কখনো কাজটা করিনি। কিন্তু এখন কেন যেন মনে হচ্ছে ভুল করেছি, বিরাট বড় ভুল। হটাত করে নিজেকে খুব অসহায় মনে হল। কিন্তু কেন? কে ও? আমার তো কেও না। কখনো তো আমার দিকে ভালো মত তাকায়ও নি। তাহলে কেন এমন হচ্ছে আমার সাথে? মনে মনে ঠিক করে ফেললাম কালকে দরকার পরলে ওর বন্ধুদের সাথে কথা বলবো কিন্তু তাও ওকে আমি খুঁজে বের করবো এবং এবার ওকে আমি বলবোই “ভালবাসি। জানিনা কখন কিভাবে ভালোবেসে ফেলেছি কিন্তু এতাই সত্যি।”

পরদিন ক্লাসটা শেষ করেই ছুট দিলাম ওর ভার্সিটির সামনে। অনেকক্ষণ পর দেখলাম ওর এক বন্ধুকে, যার সাথে ওকে সবচেয়ে বেশি দেখতাম। এবারো কিছু না ভেবেই ওকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করে ফেললাম “প্রিয়াঙ্কা কই? ওকে এখন আর দেখি না কেন?” মেয়েটি আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে উল্টো জিজ্ঞেস করলো “আপনার নামই তো শুভ?” কিছুটা অবাক হলেও বললাম “ হ্যাঁ। কিন্তু ও কই?”
“প্রিয়াঙ্কা তো পরশু রাতে অস্ট্রেলিয়া চলে গেছে।” এবার আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না,অনেকটা চিৎকার করেই বললাম “চলে গেছে? অস্ট্রেলিয়া!!! কিন্তু কেন?”
“ওর বাইরে পড়ার খুব ইচ্ছা ছিল তাই ওর ভাই ওকে নিয়ে গেছে।”

কি যেন হল আমার। মেয়েটাকে একা ফেলেই চলে আসলাম ওখান থেকে। বাসায় এসে পুরো চুপ হয়ে গেলাম। কি হল? কেন এমন হল? আমি তো আর ওকে কখনো পাবো না। চোখের দেখা দেখার জন্যও না।একটা কথা মনে পড়লো। মেয়েটা আমার নাম কিভাবে জানলো তা তো জানা হল না।

পরদিন আবার গেলাম ওর ভার্সিটির সামনে এবং তার সাথে দেখা হতেই প্রশ্নটা করলাম। মেয়েটা বলল প্রায়ই নাকি প্রিয়াঙ্কা বলতো আমার কথা। কখনো বিরক্ত হয়ে কখনো হাসি মুখে।তার মানে প্রিয়াঙ্কা আমাকে লক্ষ্য করতো। আমার নাম টাও জানতো!! অথচ আমি কখনো বুঝতেই পারিনি। মেয়েটার কাছে অনেক খুঁজেও ওর সাথে যোগাযোগের কোন ঠিকানা পেলাম না। সে বলল প্রিয়াঙ্কা বলেছিল ওখানে গিয়ে ওকে কল দিবে। কিন্তু এখনো দেয়নি। মেয়েটি মনে হয় আমার মনের অবস্থা কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছিল।তাই নিজে থেকেই বলল ওর সাথে কথা হলে আমার কথা বলবে।

কোন কিছু না পাওয়ার দুঃখটা আমি বুঝি না। আমার কোন অনুভূতি নেই। এই কথাগুলো সবাই আমাকে বলতো। এবার আমি সবই বুঝলাম। কিন্তু এর বেশি আমার আর কিছুই করার নেই। শুধু একটাই অপেক্ষা ও যেন কল দেয়। ওর বন্ধুটির যেন মনে থাকে আমার কথা। সৃষ্টিকর্তার কাছে এই ক্ষুদ্র জীবনে অনেক বারই অনেক কিছু চেয়েছি। কিছু পেয়েছি আর কিছু না পাওয়াই থেকে গেছে। আর একটি বার চাইলাম। কিছু না শুধু মেয়েটি যেন আমার সাথে একটা বার যোগাযোগ করে, যেন একটা বার ওর কণ্ঠটা আমি শুনতে পাই। জানি না এরপর কি হবে? ওকে আমি কি বলবো। জানতে চাইও না.....................


Fb Id- Debproshad Dev

No comments:

Post a Comment