Subscribe:

"ডাকবি আমাকে?"

খট খট খট খট............................. এবড়ো থেবড়ো কীবোর্ড টার উপর ঝড় বইয়ে দিচ্ছে ভাইয়া।

"ভাইয়া............ শোন না!!"

বাজ পাখির চেয়েও দশ গুণ তীক্ষ্ণ ডাক টা শুনতে পেল ঠিক ই, কিন্তু সেদিকে কান না দিয়ে নিজের কাজে মন দিল ভাইয়া। এত সময় আছে তার?? কি যে পায় এই মনিটর এর ভেতর...!


ধুপ ধাপ করে রুম এ ঢুকলো নিম্মি। --"এতবার ডাকি শুনতে পাস না??"

"হুম... বল !"  চোখ মনিটর থেকে না সরিয়েই জবাব দিল ভাইয়া।

"কি করিস??"

"উফফ যন্ত্রণা দিস না তো!! কাজ করি দেখিস না, গাধা কোথাকার?"

"ইশশ কি আমার কাজ! সারাদিন এই হাম্বা মনিটর এর সামনে বসে থেকে থেকে তুই ও হাম্বা হয়ে যাচ্ছিস। " মুখ ঝামটা দেয় নিম্মি।

"বিরক্ত করবি না। কিছু বলার থাকলে বল নাইলে ভাগ।"

বকা খেয়ে ঠোঁট ফুলালো নিম্মি। ভাইয়া যাতে ফোলানো ঠোঁট দেখতে পায় সে জন্য দু পা এগুলো নিম্মি। ভাইয়া না দেখলে ঠোঁট ফুলিয়ে লাভ কি?

"আজাইরা ঢং করবি না তো নিমিন! যা এখান থেকে!!"

ওর নাম নিম্মি ঠিক ই, কিন্তু ভাইয়া কেন জানি ওকে নিমিন ডাকে। NIMIN নাম টা নাকি PALINDROME নাকি কি যেন...... উফফ খোদাই জানে আর ভাইয়াই জানে!! ভাইয়া ওকে পুরো দুনিয়া থেকে আলাদা একটা নামে ডাকে তাতেই নিম্মি খুশি।

"গাধা দাঁড়িয়ে আছিস ক্যান হাবার মতো?? কাজ করি দেখিস না?"




চুপচাপ ভাইয়ার রুম থেকে বেরিয়ে আসলো নিম্মি।

"কি হল? কোনটা নিতে বলল ভাইয়া?" আম্মুর জিজ্ঞাসা।

নিম্মি উত্তর দিল না। এখনো ঠোঁট ফুলিয়ে আছে। আম্মু কতগুলো কাপড় এনেছে, একটা দিয়ে নিম্মি জামা বানাবে। কিন্তু কোন রঙ নিবে বুঝতে পারছিল না, তাই ভাইয়া কে জিজ্ঞেস করতে গিয়েছিল যে কোন রঙ নিবে। দিলো তো কতগুলা ঝাড়ি মেরে! হুহ! বড় ভাই!!!

"হলুদ টাই দাও।" নিম্মি মন খারাপ করে বলল।

"গাধা হলুদ কেন? গোলাপি নে, তোকে মানাবে।"

চমকে পেছনে তাকিয়ে নিম্মি দেখে ভাইয়া দাঁড়িয়ে। নিম্মি কি জন্য ডেকেছিল তা দেখতে কাজ ফেলেই চলে এসেছে ভাইয়া।

সব সময় এটা করে! আচ্ছা, প্রথম বারেই ভাল behave করলে কি হয়?? ভাব.................. নিম্মি ভাবে। খুশিও হয়। ভাইয়ার ঝাড়ি গুলা মাঝে মাঝে মন্দ লাগে না তার।

নিম্মির যতসব আবদার তার এই হাম্বা ভাই টার কাছেই। কিন্তু সত্যি বলতে কখনই ভাইয়া তার কোনও আবদার রাখে না। এবার জন্মদিনে যখন ভাইয়া নিম্মি কে তার পছন্দের teddy টা এনে দিয়েছিল নিম্মি ভীষণ অবাক হয়েছিল।

"ভাইয়া ভাইয়া, hallmark এ যাবো। আমার ফ্রেন্ড নুসির বার্থডে কাল। gift কিনবো। একটু নিয়ে যা না...... ড্রাইভার আঙ্কেল আজ আসেনি।"

"হু আমার খেয়ে দেয়ে কাজ নাই তোর ড্রাইভার গিরি করি? সন্ধ্যায় আমার programming contest আছে। plus কালকে আমার পরীক্ষা। তোর গিফট কেনা লাগবে না। গাধা!!!!"

সব কথার শুরুতে বা শেষে "গাধা" word টা use না করলে হয় ই না!!! ভীষণ মন খারাপ হল নিম্মির। এমন করে ক্যান ভাইয়া? আজ সকালেও ভাইয়া কে বলে রেখেছিল যে ওকে নিয়ে যেতে হবে hallmark. তার উপর আজ ভাইয়া কে বলেছিল pc তে একটা game install করে দিতে।ভাইয়া তাও করে দেয়নি। এত পচা কেন?? সব সময় এত ঝাড়ি ভাল লাগে?



বিকেল বেলা। বাসায় আব্বু আম্মু কেউ নেই। ভাইয়া as usual কি একটা program বানাতে মহা busy. "আচ্ছা ভাইয়া ওটা পারছে না কেন? ভাইয়া তো coding এর boss... তাহলে হচ্ছে না কেন?"

"হুহ, কিসের boss! ছোট বোন কে এতটুকুন পাত্তা দেয় না! কারো help লাগবে না আমার! আমি একাই যাবো"

একাই বের হয়ে গেল নিম্মি। হেঁটে যেতে দশ মিনিট লাগবে হয়ত।

hallmark এর সামনে রাস্তা পার হচ্ছে, একটা বাস এসে ধাক্কা দিলো নিম্মি কে। বাস টা দেখতে পেয়েছিল নিম্মি, কিন্তু সরে যেতে দেরি হয়ে গেছে।


----------------------------------------------------------------------------------------------------------------



ছোট্ট সাদা রুম টা তে চোখ খুলল নিম্মি। হুম্মম্ম তাহলে সে সিরিয়াস ব্যথা পেয়েছে। নাহলে hospital এ কেন? কিন্তু ব্যথা তো লাগছে না!!

চারপাশে একবার চোখ ঘোরালো নিম্মি। ওইতো ভাইয়া বসে আছে! একি, ভাইয়া এভাবে বসে আছে কেন? আমার জন্য চিন্তা করছে? নাহ............মনে হয় ওই program যেটা গত দুইদিন্ ধরে মেলাতে পারছে না সেটা নিয়ে ভাবছে। আরে, মিলে যাবে তো! এত চিন্তা করলে brain damage হয়ে যাবে। হিহিহিহিহ...... brain damage হয়ে গেলে ভাইয়া একদম বাবু দের মতন হয়ে যাবে না? তখন অনেক মজা হবে! :)

ওহহো... ভাইয়ার না সন্ধ্যা সাত টায় contest ছিল? এখন কয়টা বাজে? নিশ্চয়ই মিস হয়ে গেছে ভাইয়ার... ধুর!! নিজেকে থাপ্পর লাগাতে ইচ্ছে করলো নিম্মির। সে যদি অ্যাকসিডেন্ট টা না করত তাহলে তো ভাইয়া contest attend করতে পারত।



একি ভাইয়া কাঁদে কেন?????? জীবনে প্রথম ভাইয়ার চোখে পানি দেখেছে নিম্মি। বুকের ভেতর টা হু হু করে উঠল তার। ভাইয়া টা এমনভাবে কাদছে কেন??? উফফ নিম্মির অস্থির লাগছে!!

আচমকা সাদা এপ্রন পরা ডাক্তার ঢুকল রুম এ। ভাইয়া ডাক্তার এর দিকে কেমন যেন শূন্য দৃষ্টিতে তাকাল। কি যেন বলার চেষ্টা করছে ভাইয়া। ডাক্তার হতাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল! একি ভাইয়া হাঁটু ভেঙ্গে মাটি তে বসে পড়লো কেন??? ভাইয়া কাঁদছে!! ভাইয়া চিৎকার করে কাঁদছে!!!

নিম্মির ভাব ওয়ালা ভাইয়া টা কাঁদছে, নিম্মি সহ্য করতে পারছে না... পচা ডাক্তার টা কি এমন বলল ভাইয়া কে? নিম্মি উঠে বসার চেষ্টা করলো। ভাইয়ার কাছে যেতে হবে!! ভাইয়া টা এমন ভাবে কাঁদছে কেন? ভাইয়ার চোখ মুছে দিতে হবে। ইশশস কত্ত পানি ঝরাচ্ছে পাগল টা!! কি এমন হল হঠাত??

কিন্তু নিম্মি উঠতে পারছে না। কে যেন তাকে ভেতর থেকে ডাকছে... একদম ভেতর থেকে। কে যেন তাকে মিশিয়ে দিতে চাচ্ছে অন্ধকারে, অতল গহবরে। নিম্মি কি মারা যাচ্ছে?


না না নিম্মি যেতে পারবে না! যতই ডাকুক! নিম্মি যদি অন্ধকারে মিশে যায় তাহলে রোজ সন্ধ্যায় ভাইয়ার অন্ধকার রুম এ লাইট কে জালিয়ে দিয়ে আসবে? ভাইয়া তো মনিটর এর দিকে তাকিয়ে কখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে টের ও পাবে না! চশমার পাওয়ার আরও বাড়বে তখন! নিম্মি চলে গেলে মাঝরাতে ভাইয়া কে কফি বানিয়ে কে খাওয়াবে? আব্বুর সাথে রাগ করে বোকা ভাইয়া টা সারাদিন না খেয়ে থাকবে, নিম্মি না থাকলে তো রাতেও কিছু না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়বে!! নিম্মি কিভাবে চলে যায়??



ভাইয়া কাঁদছে, একদম বাচ্চাদের মতন কাঁদছে। কেমন জানি অদ্ভুত লাগছে নিম্মির। না ভাইয়া আমি যাবো নাতো!! তুই কেন ভাবছিস আমি চলে যাচ্ছি??



ভাইয়া আমাকে ওরা নিয়ে যাচ্ছে, ভাইয়া প্রমিজ আমি আর কখনো তোকে জ্বালাবো না! আর কখনো তোর মাউস লুকিয়ে রাখব না! তুই আমাকে বকা দিয়ে উল্টা দিকে ফেরা মাত্র তোকে ভেঙচি কাটবো না। সত্যি বলছি!! তুই আমাকে যেতে দিস না ভাইয়া! গাধা নিমিন বলে একবার ডাক দে, আমি ঠিক চলে আসব!! লক্ষ্মী ভাইয়া টা আমার, ডাকবি আমাকে?



-samanta (sama)

No comments:

Post a Comment