Subscribe:

স্বপ্নের শেষ,জীবনের শুরু...

বিশাল সাদা আর্ট পেপার এর উপর কিছু দাগ টেনে তাকিয়ে থাকে রুদ্র , এর পরের অংশ টুকু কিছুতেই মেলাতেই পারছে না সে। নিজের অজান্তেই পকেটে হাত চলে যায় তার।  বেরিয়ে আসে একটা সাদা লাঠি,যার পিছনে আছে ফিল্টার । অভ্যাসটা নতুন তার কাছে , তাই এখনও কাশি আসে। এমন সময় মোবাইল টা বেজে উঠল । মা এর নাম্বার টা ভেসে উঠে ।মিথ্যা বলতে পারে না সে, তাই কল টা রিসিভ করল না ।
কিন্তু নিজের কাছেই নিজেকে অপরাধী মনে হল তার, বোঝে ড্রয়িং টা এখন আর শেষ করতে পারবে না ।কাগজটা গুটিয়ে রওনা দেয় ছাদ এর দিকে, ছাদ এর একটা অংশ খুব পছন্দের তার। ঢাকা শহরের ব্যস্ততা খুব ভাল দেখা যায় জায়গাটা থেকে। নিজেকে ওই ব্যস্ততার মাঝে হারিয়ে ফেলতে খুব ভাল লাগে তার। আর একটি সিগারেট ধরিয়ে আকাশ এর দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ সে, মনে পড়ে যায় কিছু কথা তার।



মনে পড়ে যায় রোদেলার কথা…………



“রোদেলা”……একটা ঝড়, যে ঝড় তার জীবনের গতি পথটাই পালটে দিয়ে গেছে ।এখনও মনে পড়ে তার সেই প্রথম দিনের কথা । একটা ডিবেট কম্পিটিশনে ওদের মেডিকেল কলেজে গিয়েছিল রুদ্র ।প্রথম ডিবেটটাই ছিল ওদের টিম এর সাথে। ডিবেট শুরু হওয়ার সাথে সাথেই তার মুখোমুখি এক রমণীকে আবিস্কার করল রুদ্র। তাকে দেখে কি বলবে না বলবে রুদ্র নিজেই ভুলে গেল। এরকম হাজার চেহারা সে রোজই দেখে আশে পাশে, কিন্তু ওই চেহারায় কি যে ছিল আজও তা বুঝতে পারেনি রুদ্র। ওকে দেখা মাত্রই কেন জানি সে নিজেকে ওর  মাঝে হারিয়ে ফেলেছিল ।

 সে এক অন্য ধরনের অনুভুতি । ডিবেট শেষে নিজেই যেয়ে কথা বলে ওর সাথে। শুধু পরিচিত হওয়া ছাড়া আর কিছুই বলতে পারেনি  ওই দিন। অনেক কষ্টে ওর এক ফ্রেন্ড এর কাছ থেকে নাম্বারটা যোগাড় করে। তারপর ভয়ে ভয়ে একদিন ফোন দেয় , রুদ্র ভাবে হয়ত চিনবেনা তাকে। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে রোদেলা চিনে ফেলে।



এরপর মাঝেমাঝেই কথা হত রোদেলার সাথে । ধীরে ধীরে দুজনের মধ্যে খুব ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। দুজনের দেখাও হত মাঝে মাঝে, এভাবে কখন যে রুদ্রর ভাললাগা ভালবাসা তে রূপ নেয় তা সে নিজেও বুঝতে পারে না।তার শুধু এটাই মনে হত যদি রোদেলা তার সাথে থাকে তবে সে পাড়ি  দিতে পারবে যে কোন দূর্গম পথ। একদিন রোদেলার খাতায় একটা ছবি আঁকা দেখে সে, একটি ছেলে এক রাশ ফুল নিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে একটি মেয়ে কে প্রপোজ করছে। জিজ্ঞাসা করতে ঐ দিন রোদেলা তাকে বলেছিল, এটা ওর স্বপ্নের ছবি। ওর মনেরও আশা এক দিন কেউ তাকে এইভাবে প্রপোজ করুক। তার ঐ ইচ্ছা অনুসারেই এক শীতের সকালে রুদ্র এক গুচ্ছ গোলাপ নিয়ে ওর হোস্টেল এর সামনে যায়। তারপর তাকে অনেকটা চমকে দিয়েই প্রপোজ করে বসে। রোদেলাও তাকে অবাক করে দিয়ে রাজি হয়ে যায়।



এর পরের একটি বছর রুদ্র এর জন্য ছিল একটি স্বপ্ন। আসলেই সপ্নের মতই কাটছিল ওর দিন গুলো। একসাথে রিকশায় ঘোরা, ফুচকা খাওয়া,নদীর তীর এ হাত ধরে বসে থাকা।এরকম হাজার টুকরো ঘটনায় রাঙ্গানো ছিল সেইসব দিনগুলো।



কিন্তু এরপর ই একটি  ঘটনা পালটে দেয় সবকিছু। কয়েকদিন  ধরেই রোদেলার সাথে যোগাযোগ করতে পারছিল না রুদ্র।মোবাইলটা কয়েকদিন ধরেই  বন্ধ  পাচ্ছিল ওর। ওর হোস্টেলে খোঁজ নেয় রুদ্র।ওই খানেও নেই সে। কিছুই  বুঝতে পারে না রুদ্র। তাকে কিছু না বলে কোথায় যেতে পারে রোদেলা।ওর বাসার সঠিক ঠিকানাটাও জানে না সে।এক  অজানা আতংক  ভর করে তার উপর। কিছু হয়নি তো ওর!


 এরপর ই একটা অবিশ্বাস্য খবর কানে আসে তার। রোদেলার সাথে নাকি ওর বড় ভাই এর কোন বন্ধুর আংটি বদল হয়ে গেছে। কথাটা প্রথমে বানোয়াট  মনে হয় তার কাছে।কিন্তু কয়েকজনই  তাকে কথাটা বলে। ও ফোন এর পর ফোন দিতে থাকে রোদেলা কে কিন্তু রোদেলা রিসিভ করে না। কয়েকদিন পর রোদেলা ফোনটা রিসিভ করে।  

 রোদেলা যা বলল তা শোনার জন্য রুদ্র কখনওই প্রস্তুত ছিল না।রোদেলা রুদ্রকে বলে তাকে ভুলে যেতে। ওদের মাঝে যা ছিল তা নাকি শুধুই ভাললাগা। এটুকু বলেই রোদেলা ফোনটা কেটে দিল।

এরপর কি কি হয়েছিল তা রুদ্রর মনে নেই ।তার শুধু এটুকুই মনে আছে কেঁদেছিল সে,অনেক কেঁদেছিল ওই দিন। তারপর থেকেই শুরু রুদ্রর বদলে যাওয়া।হাশি-খুশি মানুষটা হঠাৎ করে হয়ে গেল পাথরের মূর্তি।রোদেলা কেন তার সাথে এমন করল তার উত্তর সে খোঁজার চেষ্টা করেছিল অনেক,কিন্তু খুঁজে পায়নি।

সিগারেট এর আগুনটা কখন যে শেষ হয়ে গেছে রুদ্র তা টের পায়নি। আগুনের ছ্যাঁকাটা হাতে হঠাৎ লাগল তার। অতীত ভাবনা থেকে বাস্তবে ফিরে এল ও।জীবনের এই মুহূর্তে এসে হঠাৎ করেই কেন জানি জীবন কে নতুন ভাবে মূল্যায়ন করতে চাইল । তার নিজের কাছেই সে কতগুলি প্রশ্ন করল। কার জন্য কষ্ট পাচ্ছে সে?? কার জন্য আজকে নিজেকেই ভুলতে বসেছে সে?? কার জন্য আজ তার প্রিয়স্বজন দের কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে?  যে তার কথা একবারও না ভেবে অন্যের হাত ধরে চলে গেছে তার জন্য ??প্রশ্নগুলোর উত্তর ওর মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল।



 হঠাৎ উঠে দাঁড়াল সে। পকেট থেকে সিগারেট এর প্যাকেটটা বের করে ফেলে দিল চার তলা নিচের আবর্জনাতে।ড্রয়িংটা কিভাবে মিলাবে মনে পড়ে গেছে যে তার।মাকেও একটা ফোন দিতে হবে।মায়ের সাথে অনেক দিন ভালভাবে কথা বলা হয়নি তার।
                                                                                                         



 --AYO ZOE

No comments:

Post a Comment