Subscribe:

ক্যামেরার চোখে : নি:সঙ্গ পুতুলের কান্না!

[ দৈনিক কালের কন্ঠে কাজ করার সময় আমার এ সিরিজটা রাজনীতি বিষয়ক ম্যাগাজিন 'রাজকূট'-এ বেশ পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছিল। বিশ্বের অসাধারণ সব স্থির ছবি এবং তার পেছনের মানবীয় গল্পই ছিল 'চোখের আলোয়' শিরোনামে সে সিরিজের মূল উপাদান। ভালবাসার গল্পের বৈচিত্র পিয়াসী পাঠক-পাঠিকাদের জন্য এ সিরিজটা আবারো 'ক্যামেরার চোখ' নামে শুরু করলাম।
একটি ছবি, তার পেছনের গল্প কিংবা ক্যামেরা ম্যানের ভাষা আপনাদের চোখ ঝাপসা করবে, দেখাবে চেনা জগতের বাইরে এক ভিন্ন জগত- অন্তত আমার প্রত্যাশা এটাই... নিয়মিত লিখব কী না- তা নির্ভর করবে আপনাদের উপরই...]

টনির তোলা সেই বিখ্যাত ছবি...


পুতুল পুতুল খেলতে গিয়ে ছেলেটিকে বহুবার যুদ্ধ করতে হয়েছে। বড় ভাইয়ের সঙ্গে সে যুদ্ধে কখনও জিতেছে, কখনো হেরেছে। জয়-পরাজয়ের এমন যুগলবন্দি ছোট্ট ছেলেটির জীবনে সীমাহীন আনন্দ কিংবা পুতুলের অধিকার হাতছাড়া করার দু:খ ছাড়া বড় কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি কখনই। ছেলেটির কাছে তাই যুদ্ধ মানে পুতুল পুতুল খেলা। কিন্তু মানচিত্রের যুদ্ধে যে পাল্টে যায় জীবনের গতিপথ, বেঁচে থাকার আশা কিংবা পুতুল খেলার সঙ্গীদের ভবিষ্যত সেটি বোধকরি ছোট্ট খোকাটির জানা ছিল না। তাইতো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লন্ডন ধুলিসাৎ হাবার সময় গুড়িয়ে যায় শিশুটির প্রিয়বাসস্থল। বোমার আঘাতে চোখের সামনেই ভেঙে পড়েছে সব।

জানালার কাঁচ, ফুলের টব, দামি আসবাব কিংবা সাজানো বাগান কিছুই বাদ যায়নি সে তালিকা থেকে। বাবা-মায়ের আর্তনাদ, বড় ভাইয়ের চিৎকার আর ভাঙনের গান ছাপিয়েও শিশুটির জন্য বেদনাদায়ক ছিল তার পুতুলগুলো নষ্ট হওয়া। কত্ত কত্ত পুতুল ছিল তার। ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে একা চোখে মুখে রাজ্যের বিরক্তি ফুটিয়ে শিশুটি যেন বোঝাতে চাইছে তার বেদনার কথা। হাতের পুতুলটি আকড়ে ধরে যেন ফিরে পেতে চাইছে বারুদের গন্ধবিহীন পুতুল খেলার দিন

নিজের এ ছবি সম্পর্কে পরবর্তীতে বিখ্যাত ফ্যাশন ফটোগ্রাফার টনি ফ্রিসেল লিখেছেন, ‘আমি কিছু মুখ পেয়েছি যা স্বরনীয়। যদিও তারা রাজার মত সুখী নয়, কেননা এই সংকটের পৃথিবীতে এবং অস্থির সময়ে ক্যামেরার চোখ বাচ্চাদের চোখের মত মাঝে মাধ্যেই কিছু সত্য দেখে ফেলে।’

টনির তোলা উপরের ছবিটি বিশ্বের অন্যতম হৃদয়বিদারক একটি ছবি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা বোঝাতে উপরের ছবিটি শক্তিশালী ভাষা হয়ে ওঠে। যুদ্ধের সময় টনি ছিলেন রেডক্রসের ভলেন্টিয়ার। তার ক্যামেরার চোখ ছিল অসাধারণ।


-আবদুল্লাহ আল ইমরান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
joloj2007@yahoo.com

No comments:

Post a Comment