Subscribe:

ক্যামেরার চোখ : পূর্নিমার চাঁদ যখন ঝলসানো রুটি

দুর্ভিক্ষ দানবের মত শেষ করে দেয় সবকিছু। কেড়ে নেয় জীবনের স্বপ্ন, বেঁচে থাকার আশা। ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী হয়ে ওঠে গদ্যময়, পূর্নিমার চাঁদ তখন ঝলসানো রুটি। দুর্ভিক্ষ কবলিত জনপদে চিত্রিত হয় দিনের পর দিন অন্নহীন দিনযাপনের অদম্য সংগ্রাম। ঘরে খাবার নেই, এমনকী পানিও। কবে খাবারের সন্ধান মিলবে কারোই তা জানা নেই। ততদিন নি:শ্বাসের গতি থাকবে কি না সে নিশ্চয়তাও কেউ দিতে পারে না।
আমরা শুধু জানি দুর্ভিক্ষ মানে লক্ষ মানুষের প্রানহানী, দুর্ভিক্ষ মানে আফ্রিকার হাড্ডিসার মানুষের আহাজারি। সাম্রাজ্যবাদী পৃথিবীতে সবকিছুই যখন সামগ্রিকতাকে ছাপিয়ে ব্যাত্তিচেতনা ও ভোগে পরিনত হয়েছে তখন দুর্ভিক্ষে নিমজ্জিত অসহায় মানুষেরা আমাদের কাছে হয়ে ওঠে ভীনগ্রহের বাসিন্দা ।

মাইক ওয়েলসের তোলা সেই বিখ্যাত ছবি।


ওপরের ছবিটি উগান্ডার দুর্ভিক্ষ কবলিত কারামোজা শহরের তেমনি এক হতভাগ্য নিগ্রো বালক ও সাদা চামরার সাহায্যকারীর। সবল একটি হাতের উপর নির্লিপ্ত পড়ে থাকা পুষ্টিহীন কংকালসার হাতটি আমাদের বাকরুদ্ধ করে দেয়। কোন রাজণৈতিক নেতার জোড়ালো ভাষণ কিংবা বিখ্যাত সংবাদপত্রের লাল অরের সংবাদের চাইতেও অনেক বেশী শক্তিশালী এই ছবির ভাষা। বিলাসী জীবন যাপনে আগ্রহী পৃথিবীর মানুষের জন্যে মৃত্যুপথযাত্রী উগান্ডার এই বালকের মর্মস্পর্শী ছবিটি সেলুকাস-ই বটে!

আমরা জানি না শেষ পর্যন্ত সাহায্যকারী মানুষের ত্রান নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে আফ্রিকান এ বালকটিকে বাচাঁতে পেরেছিল কি না!  তবে এটা জানি, সেলুলয়েডে বন্দি হওয়া ছবিটির চাইতেও ভয়াবহ সংগ্রামে দিনকাটে উগান্ডা কিংবা আফ্রিকান জনপদের দরিদ্র মানুষের। 
  
১৯৮০ সালে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে উগান্ডার জনসংখ্যর প্রায় ২১ ভাগই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। পরবর্তীতে এ দুর্ভিক্ষ পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ দুর্যোগ হিসেবে ঠাঁই পেয়েছিল।

আলোচিত ছবিটি তুলেছিলেন ইংল্যান্ডের ফটোগ্রাফার মাইক ওয়েলস। ছবিটি তোলার পর তিনি ভীষন মর্মাহত হয়েছিলেন, খানিকটা লজ্জিতও। এ বেদনার রেশ তিনি টেনে নিয়ে যান ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো এ্যাওয়ার্ড’ অনুষ্ঠান পর্যন্ত। বিচারকদের রায়ে মাইকের ছবিটি বছরের সেরা ছবি নির্বাচিত হলে পুরস্কার গ্রহণে তিনি অস্বীকৃতি জানান। তাঁর ভাষায়, ‘ছবিটি তুলে আমি ভীষণ আহত হয়েছি। মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের ছবি তুলে পুরস্কার গ্রহনের কোন মানে হয় না।’


আবদুল্লাহ আল ইমরান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
joloj2007@yahoo.com

No comments:

Post a Comment