Subscribe:

নীলচে ভালোবাসা ...............

গল্পটা তরু আর শাহেদ এর....
ওরা একই কলোনিতে থাকতো.... একই ক্লাস এ পড়তো তবে ভিন্ন স্কুল এ...
পড়াশুনা তে শাহেদ বরাবরই ভাল ছিল,শান্ত,সহজ সরল...সকলের জন্য বড় মায়া তার...class eight এ বৃত্তি পেয়ে যে টাকা টা পেয়েছিল সেটা  বাড়ির বুয়ার ছেলে কে দিয়েছিল নতুন বই কেনার জন্য...


আর তরু... নিজের দুনিয়াতেই খুশি সে...... আপন মনে,নিজের খেয়ালে ... সারাক্ষন হাসি খুসি...
যতই বকা দিক মা, তরু ফিক করে হেসে অমনি মায়ের চোখের আড়ালে.... নিয়ম কানুন বাধা নিষেধ এসব কিছুই ভাল লাগে না তার......। কিন্তু মা কে সে খুব ভালবাসে...তাই যতই বাঁদরামো করুক পড়াশুনা ঠিকমতই করে....class nine এর  final exam এ roll 3 থেকে 5 হল, তরুর বাবার সেকি রাগ....বকা খেয়ে তরু মন খারাপ করে গাছের আড়ালে বসে চোখ মুছে.... হঠাৎ কে যেন মাথায় হাত রাখে... বলে কিরে পাগলি এখানে বসে কাঁদছিস কেনরে... বাবা বকেছে বুঝি ??
ঠোট উলটিয়ে তরু বলে "হ্যাঁ"... শাহেদ হেঁসে কুটিকুটি হয়...... তরু বলে তুই তো 1st হয়েছিস, এখন তো আমাকে দেখে হাসবিই...
ছোট বেলা থেকেই ওদের competition …. কে কার চেয়ে ভাল result করতে পারে... তরু তো ওকে দেখতেই পারেনা...
SSC এর পর শাহেদ এর বাবা বদলি হলে ওরা সিলেট  চলে যায়...
HSC exam ১৫দিন আগে তরু মায়ের কাছে জানতে পারে শাহেদ accident করেছে... হাঁটুতে fracture হয়েছে...ডাক্তার 3month rest নিতে বলেছে,
HSC টা এবার আর দিতে পারবে না...
খবর টা শুনে তরুর খুশি হবার কথা...সে  সব সময় শাহেদ এর ভাল result এর কারণে বকা খেতো, এইবার তার শোধ নিতে পারবে...কিন্তু কেন যেন বুকের মাঝে খচ খচ করতে থাকে ... কেন সে নিজেও বুঝতে পারেনা ...
Admission test দিয়ে versity তে ভর্তি হয় তরু... এরই মাঝে একদিন শাহেদ ওদের বাসায় আসে...আগের চেয়ে শরীর খারাপ হয়ে গেছে  ... মুখটা শুকিয়ে এতটুকু ... তরু ওকে দেখে বলে,"মন খারাপ করিস না..১টা বছর দেখতে দেখতে চলে যাবে..."
শাহেদ হাসে বলে,"ওরে আমার বুড়ি মা বড্ড পাকা পাকা কথা শিখেছিস...কে বলছে আমার মন খারাপ !! ??'

ঐদিন এর পর থেকে সব কিভাবে যেন বদলাতে থাকে...শাহেদ আর ছোটো বেলার বন্ধু থাকেনা... তার চেয়েও যেন বেশি কিছু হয়ে যায়..
সারা সপ্তাহ ধরে তরু অপেক্ষা করে শুক্রবার এর জন্য, ঐদিন uncle বাসায় থাকেন... শাহেদ চুরি করে ফোন টা নিয়ে আসে, তরু ও আপুর mobile টা হাত এ নিয়ে বসে থাকে,
১টা ফোন,১টা sms, ১টা miscall এর আশায়... যে শুক্রবার এ mobile টা বাজেনা, তরুর বুকে যেন সাগরের ঢেউ জমা হয়ে থাকে... পরের দিন সে ঢেউ শাহেদ কে ভাসিয়ে নিয়ে যায়... শাহেদ তরুর জন্য এক বাক্স চকলেট পাঠায়... তরু প্রতিদিন কুরিয়ার সেন্টার এ খোঁজ নেয়... চকোলেট এর box টা পেয়ে গালের কাছে ধরে বসে থাকে... খোলে না, ওকে না দিয়ে একা সে কিভাবে খায়?? এভাবেই দিন যায়, মাস যায়। শাহেদ এর HSC EXAM চলে আসে...ও রাত জেগে পড়ে , তরু জেগে থাকে আর 1hr পর পর miscall দিতে থাকে,যেন শাহেদ এর একা রাত জাগতে কষ্ট না হয়...
শাহেদ admission test দিয়ে DU তে ভর্তি হয়...
দুজনের ভালবাসা তখন যেন আকাশ ছুতে চায়  ... class শেষে দুজন হারিয়ে যায় ... টি এস সি, কার্জন হল ,দোয়েল চত্বর ,ফুলার রোড হেঁটে হেঁটে গল্প করে ... প্রতিদিন শাহেদ তরু কে বাসায় পৌঁছে দিয়ে হলে ফেরে...
শাহেদ এর মাঝে মজা করে তরু কে বলে তুই তো এখন আমার senior আপু ... তোর বাবা তো আমার সাথে তোর বিয়ে দিবে না রে ...
বলে আর মিটিমিটি হাসে ... তরু চিমটি কেটে বলে,"আপু" তাই না?? মাথায় গাট্টা মেরে তোর আপু বলার স্বাদ মিটিয়ে দেব...
তরুঃ আচ্ছা বিয়ের পর ও কি তুই আমাকে তুই তুই করে বলবি?
শাহেদঃ কেন তুই কি আমাকে আপনি করে বলতে চাচ্ছিস??
তরু রাগি চোখে তাকায়...  আবার ফাযলামি   !!!
শাহেদঃ আচ্ছা বিয়ের পর আমরা  honeeymoon এ কোথায় যাব?

তরুর গাল দুটো লাল হয়ে যায়...বলে,তুই যেখানে নিয়ে যাবি...
শাহেদঃ তাহলে আমরা বগা লেক যাব কি বলিস??
তরু ভেংচি কেটে উল্টোদিকে ঘুরে বসে... আর ভাবে কি গাধা ছেলের সাথে বিয়ের সপ্ন দেখছে... নতুন বউ কে নিয়ে যাবে বগা লেক !!!!
শাহেদ ভিতরে ভিতরে হেসে কুটিকুটি হয়...
১লা বৈশাখ এ তরু কে লাল টুকটুকে শাড়ি কিনে দেয়... তরু শাড়ীটা পড়ে শাহেদ এর সামনে গিয়ে হাসি মুখে দাড়ায় , শাহেদ বলে কিরে এটা পরে এলি কি মনে করে?? এটা তো আমাদের ছেলের বউ এর জন্য কিনেছিলাম...কোথায় যত্ন করে তুলে রাখবি তা না,তুই নিজেই পরে ঘুরে বেরাচ্ছিস!!

তরু  অভিমান করে উলটো দিকে হাঁটা শুরু করে ... শাহেদ দৌড়ে এসে হাত টা টেনে ধরে... তরুর গাল দুটো হাতের মাঝে নিয়ে বলে,"পাগলী,ঠাট্টা ও বুঝেনা......লাল শাড়িতে তোকে নতুন বউ এর মত লাগছে ... চল আজই বিয়ে করে ফেলি ...তরু লজ্জা পেয়ে শাহেদ এর বুকে মুখ লুকায়... আর ভাবে পৃথিবীটা এত সুন্দর কেন??"

কিন্তু খুব বেশিদিন তরুর পৃথিবীটা সুন্দর থাকেনা...  চট্রগ্রাম থেকে ফোন আসে মায়ের...বাবার শরীরটা ভাল না...
পরের দিনই রওনা দেয়... rail station এ শাহেদ গাল ফুলিয়ে দাড়িয় থাকে... বলে,"কবে আসবি ??" শাহেদ এর মাথার চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে তরু বলে,"আর আসবনা...  এবার বুঝবি আমি না থাকলে কেমন লাগে??"
তরুর বাবার lung cancer ধরা পড়ে,  সিঙ্গাপুর নিয়ে যায় চিকিৎসার জন্য...
বাবাকে সুস্থ করে দেশে ফেরে তরু.....মাঝে কয়েকটি মাস কেটে গেছে ..

শাহেদ এর সাথে এর মাঝে ভালভাবে কথাও বলতে পারেনি...ও ফোন করলে শাহেদ ঘুম কিংবা ক্লাস এ...আর শাহেদ ফোন করলে ও হাসপাতাল এ busy.. বাবার অসুখ,মায়ের কান্না...এর উপর সব দৌড়াদৌড়ি তো তরুকেই করতে হয়েছে।  এখন আবার সব আগের মত হয়ে যাবে... ট্রেন এ ঢাকা আসতে আসতে ভাবে তরু...এবার আপাকে বলবে শাহেদ এর কথা, আপা মাকে বলবে ...নিজের মুখে মাকে সে বলতে পারবে না... লজ্জা লাগবে।।  শাহেদ কে জানানো হয়নি তরু ঢাকা আসছে... কাল  versity  গিয়ে ওকে চমকে দেবে... কাল যে ওর জন্মদিন।।
খুব সকালে উঠে  হালকা নীল রঙের শাড়ীটা পরে, কপালে নীল টিপ, চোখে কাজল, হাতে সাদা নীল চুড়ি, চুল গুলো পিঠের উপর ছড়িয়ে দিয়ে হাত এ গিফট এর প্যাকেট আর খাম টা নেয়।। খামে এই কয়েক মাসে ওকে লেখা চিঠি... 
ওর হল এর সামনে গিয়ে ফোন দেয়...... ১বার ২বার ৩বার এভাবে ১৫বার...... ভাবে ঘুমাচ্ছে নাকি !! রাসেল কে আসতে দেখে তরু...ও শাহেদ এর রুমমেট ... রাসেল বলে,শাহেদ তো অনেক আগেই হল থেকে বেরিয়েছে...
হাঁটতে হাঁটতে তরু  কার্জন হল এর দিকে যেতে থাকে আর ভাবে ......শাহেদ ওর ফোন ধরছে না কেন??

পিচের রাস্তার উপর হাঁটে আর ভাবে এই রাস্তায় ওরা দুজন কত হেঁটেছে... হাসি কান্না রাগ অভিমান কত কিছুর সাক্ষী এই campus......
কিন্তু আজ কোথায় ও...  কতদিন ওকে দেখেনা...  তরুর যে আর তর সইছে না...

হঠাৎ একটি আওয়াজ শুনে খুশিতে ঝলমলিয়ে পিছনে তাকায় তরু............

এক সেকেন্ডের জন্য মনে হল মাটিটা কেঁপে উঠলো, দাড়িয়ে থাকতে পারে না ... চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে আসে .... কার্জন হল এর সামনে ঘাসের উপরে নিতু বসে আছে... ওর কোলে মাথা দিয়ে হাতের চুড়ি গুলো নিয়ে খেলছে শাহেদ.... নিতুর কানে কানে কি যেন বলল শাহেদ ... খিলখিল করে হেসে উঠলো নিতু...



চারিদিকের বাতাস টাকে বড্ড  দূষিত মনে হচ্ছে.... নিঃশ্বাস নিতে পারছেনা... বুকের মাঝে চিন চিন করে ব্যাথা করছে তরুর... দ্রুত পায়ে হাঁটছে সে ... আর ও দ্রুত ......  এই দূষিত বাতাস থেকে দূরে যেতে চায় সে...

দূরে  .........অনেক দূরে.........



-NEEL TIYA.

No comments:

Post a Comment