Subscribe:

কিন্নরী চুড়ি

এক
অতসী একটা প্যাকেট বাড়িয়ে দিয়ে বললো, ‘নাও ধরো।’

সময়টা দুপুরবেলা। রেস্টুরেন্টে লাঞ্চের পর ঘুরতে বের হব দু’জন। অতসীর খাওয়া প্রায় শেষ। কিন্তু আমি তখনো ‘টু বি কন্টিনিউ’ ভঙ্গিতে খেয়ে যাচ্ছি। তাই প্যাকেট হাতে না নিয়ে আমার প্লেটের দিকে তাকাতে ইশারা করলাম ওকে।


এবার কৃত্রিম রাগ দেখাল অতসী, ‘কি ব্যাপার, তোমার খাওয়া এখনো শেষ হয়নি?’

খেতে খেতে জবাব দিলাম, ‘না হয়নি। চাইলে তুমিও আবার শুরু করতে পারো।’

‘কোনো মানুষের এতক্ষণ লাগে খাওয়া শেষ করতে?’

‘আমি মানুষ- এ কথা তোমাকে কে বলল? আমি তো অমানুষ।’

‘একদম ফালতু কথা বলবে না। এসব ফালতু কথা বলে আমাকে রাগানোর চেষ্টা করো তুমি।’

অতসী আর কোনো কথা বলল না। খাওয়া থামিয়ে প্যাকেটটা হাতে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘মহামান্যা, প্যাক খুলে ভেতরটা দেখতে পারি?’

অতসী জবাব দিল না। কটমটে চোখে অন্যদিকে তাকিয়ে রইল।

প্যাকেটটা না খুলে আবার যথাস্থানে নামিয়ে রেখে বললাম, ‘সত্যি আপনার পছন্দের তারিফ না করে পারছি না।’

‘ফাজলামো কর? প্যাকেটটা না খুলেই বলে দিচ্ছো যে, আমার পছন্দ ভাল?’

‘পছন্দ ভাল না হলে কী আর আমার সঙ্গে বসে থাকতে?’

আমার কথা শুনে হেসে ফেলল অতসী। ওর চোখজুড়ে এখন আবার খেলা করছে এক অদ্ভুত মায়ামাখা দৃষ্টি। পরিচয়ের প্রথমদিনেই এই দৃষ্টি যেন আমার মনের দেয়ালে তীরের মতো বিঁধেছিল। এরপর যতবারই দেখা হয়েছে ততবারই সেই তীর যেন একটু একটু করে হৃদয়ের আরও কাছাকাছি, আরও গহীনে প্রবেশ করেছে। এমনি করেই একটা সময় এসে মনে হলো, ওর চোখের বন্ধনে সারাজীবনের জন্য বাঁধা পড়ে গিয়েছি আমি।

 

দুই

‘এ্যাই দেখ না চুড়িগুলো কেমন হয়েছে?’ অতসী আজ হাতভর্তি রেশমী চুড়ি পড়ে এসেছে। একটু পরপর সেই চুড়ির ‘টিং টাং টুং’ টাইপ শব্দ হচ্ছে। অনেক দূর থেকে ভেসে আসা পিয়ানোর মৃদু শব্দের মতো শোনাচ্ছে সেই শব্দ। আর এমনটা হচ্ছে বলেই হয়তো অতসী আজকে হাতটাও একটু পরপরই নাড়াচ্ছে। এই যেমন এখন অতসী তার চুড়িভর্তি হাত আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বসে আছে।

আমি ওর বাড়িয়ে ধরা হাতটা ধরে বললাম, ‘তোমার এই চুড়িসমগ্র বিটোভেন দেখতে পাননি বলেই সিম্ফোনির সিরিয়াল নয় নাম্বারেই আটকে গিয়েছিল। না হলে দশম সিম্ফোনির আগে তাকে থামানোই যেত না।’

‘বলেছে তোমাকে।’ মনে হলো খানিকটা লজ্জা পেয়েছে অতসী। নিজেকে সামলে নেওয়ার জন্য বলতে শুরু করল, ‘জানো, আজকে কিন্নরী চুড়ি কিনতে গিয়েছিলাম। পাইনি। এটা নতুন ডিজাইনের চুড়ি। একসঙ্গে অনেকগুলো পড়া যায় না। একটা করে পড়তে হয়।’

‘তুমি কিন্নরী চুড়ি পরে কি করবে? কিন্নরী সংগীত গাইবে নাকি?’

‘সবকিছুতেই তোমার ফাজলামো’।
হাতটা টেনে সরিয়ে নিতে চাইলো অতসী। আমি ছাড়লাম না।

‘ফাজলামো হবে কেন ? আমি জানিতো, চুড়ি-কাজল-টিপ এগুলো তোমার অসম্ভব পছন্দের সাজগোজের যন্ত্রপাতি। ইলেক্ট্রেশিয়ানদের যেমন স্কচটেপ-স্ক্রুডাইভার-প্লায়ার্স।’

অতসী ঝট করে উঠে দাঁড়িয়ে হাটতে শুরু করলো। এতক্ষণ বসে ছিলাম শাহবাগের ছবির হাটে। অতসী  এখন টিএসসির দিকে যাচ্ছে। আমিও একটা সিগারেট ধরিয়ে বেশ খানিকটা গ্যাপ রেখে অতসীর পেছন পেছন হাটতে শুরু করলাম। সেটা দেখে অতসী আরও জোরে জোরে হাটতে শুরু করলো। অবশ্য অতসী  আমাকে ফেলে রেখে যেতে পারবে না। বেশি এগিয়ে গেলে সে নিজে থেকেই প্রথমে কচ্ছপ তারপর শামুক এরপর শ্লথের গতিতে হাটবে। সিগারেটটা শেষ হতে না হতেই অতসীর হাটার গতি একদম শ্লথে চলে এসেছে। আমি সিগারেটের ফিল্টারটা ছুঁড়ে ফেলে অতসীর দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম।


তিন

নিউমার্কেটে সেদিন অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিলাম অতসীর জন্য। ঘন্টা পার যাচ্ছে- কোনো পাত্তা নেই। ফোনও ধরছে না। এত বিরক্ত লাগছিল। সমস্যা হলে একটা কলও তো করতে পারতো। এভাবে টেনশনে রাখার তো কোনো মানে হয় না! আগে কখনও ও এমন করেনি। তাই টেনশন হচ্ছে আরও বেশি। আমাকে ওয়েট করানোর মতো মেয়ে অতসী নয়। বরং দেরিটা আমারই হয়। কিন্তু আজকে...
আরও আধঘন্টা পর।
সেলফোনের রিং বাজার তিন সেকেন্ডের মাথায় রিসিভ বাটন চেপে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কোথায় তুমি?’

‘আমি এই যে, এক নাম্বার গেটের সামনে। তুমি কোথায়?’, অতসীর কন্ঠ পুরোপুরি স্বাভাবিক।

‘আচ্ছা ওখানেই থাক। আমি আসছি।’ লাইন কেটে দিয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম যা বলার মুখোমুখি বলবো।

গেটের সামনে থেকে রিকশায় তুলে নিলাম অতসীকে। কেমন যেন অন্যমনষ্ক মনে হচ্ছে ওকে। ভেবেছিলাম সরি-টরি কিছু বলবে। কিন্তু কোনো কথাই বলছে না একেবারে। শেষপর্যন্ত আমিই জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কি ব্যাপার? এত দেরি করলে যে? এতবার ফোন দিলাম, ধরলে না...’

‘দেরি হতেই পারে। সেটা নিয়ে এতকিছু বলার কি আছে? আর ফোনের রিং আমি খেয়াল করিনি। তোমার কি ধারণা ইচ্ছা করে ফোন রিসিভ করিনি?’

‘আমি কী সেটা বলেছি? আর এ নিয়ে এত রিয়েক্ট করার কিছু নেই।’

‘রিয়েক্ট! হোয়াট ডু ইউ মিন? আমাকে যা ইচ্ছা তাই বলবে আর আমি সেটা মেনে নেবো! আমাকে কী পেয়েছো তুমি?’

‘তুমি এমন করছো কেন?’, অবাক হয়ে তাকাই ওর দিকে।

অতসীর চোখের পাতা ছোট ছোট করে হিসহিস করে বলল, ‘আমি এমনই, কেন আগে জানতে না বুঝি?’

আমি কোনো কথা বাড়ালাম না। শাহবাগ মোড়ে রিকশা থেকে নেমে মানিব্যাগ বের করলাম। দশ টাকার নোট দেখে মাথা নাড়লো রিকশাওয়ালা। নেবে না। ভাড়া নিয়ে তর্ক বাঁধানোর মত কোনো মানসিকতা কাজ করছিল না তখন। মানিব্যাগ খুলে আরও টাকা বের করতে যাচ্ছিলাম।

এ সময় চড় মারার শব্দে মুখ তুলে দেখি অতসীর হাত রিকশাওয়ালার গাল থেকে সরে আসছে। ‘এ্যাই ব্যাটা ভাড়া বেশি চাস কেন? আগে ডাকাতি করতি নাকি?’

আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। রিকশাওয়ালার চেহারা দেখে মনে হল, বেচারা হাজার ভোল্টের ইলেক্ট্রিক শক খেয়েছে। আশেপাশের মানুষজনও তাকিয়ে আছে এদিকে।

অতসী বিড়বিড় করে আরও কী যেন সব বলে যাচ্ছে। পরিস্থিতি সুবিধার নয়। চারপাশে লোক জমে যাচ্ছে। তাড়াহুরো করে রিকশাওয়ালাকে বিশ টাকার একটা নোট ধরিয়ে দিয়ে সরে এলাম ওখান থেকে। অতসী যে এমন কখনো করতে পারে সেটা না দেখলে কখনো বিশ্বাসই করতে পারতাম না। অতসী  এরকম কখনোই ছিল না। ওর সঙ্গে আমার চার বছরের পরিচয়। কিন্তু...

নাহ! কোথাও বসে মাথা ঠান্ডা করে ভাবা দরকার। নিরিবিলি একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে পড়লাম অতসীকে নিয়ে। ওখানে বসতেই অতসী মুখে একরকম তাচ্ছিল্যের ভঙ্গি নিয়ে এসে বলল, ‘এটা কী রকম একটা খ্যাত কালারের শার্ট পরেছ! তোমার রুচি তো দিন দিন ওই রিকশাওয়ালাটার মত হয়ে যাচ্ছে।’

আমি অতসীর কথার জবাব না দিয়ে বললাম, ‘কী খাবে?’

‘ভাত খাব। গরুর মাংস দিয়ে আগুন গরম ভাত। সঙ্গে বেগুন ভর্তা আর ডাল।’

গরুর মাংস খেতে চাচ্ছে অতসী ! এ অসম্ভব! গরু ওর একেবারে অপছন্দ। আর বাইরে ভাত খেতে আমি কখনোই দেখিনি ওকে। বাইরে খাবার বলতে হালকা কিছুই ওর পছন্দ। তবুও কিছুই বললাম না ওকে। বলার মতো পরিস্থিতি নেই এখন। বিষয়টা আসলে কী হচ্ছে সেটা আরও ডিটেইলস বোঝা দরকার।
ওয়েটারকে ডেকে খাবার দিতে বললাম। তবে বেগুনভর্তা হবে না বলে জানাল ওয়েটার। ভেবেছিলাম, এ কথা শুনে খেপে যাবে অতসী। কিন্তু বেগুনশূণ্যতা নিয়ে তেমন কোনো ভাবান্তর আছে বলে মনে হল না।

অতসীকে আজ লাগছেও অন্যরকম। সাধারণত ওর চুলে ক্লিপ থাকে। আজকে নেই। খোলা চুল চারপাশে ছড়িয়ে পরেছে। কপালে টিপ নেই তবে চোখে বেশ গাঢ় করে কাজল দেওয়া। ঠোঁটে লালচে লিপস্টিক। কোনো প্রোগ্রাম ছাড়া অতসী এসবের স্টিক-ফিস্টিকের ধার ধারে না। তাহলে আজ কেন...

ওহ্! ওর বাহাতে একটা অদ্ভুত ডিজাইনের চুড়িও দেখা যাচ্ছে। এটাই মনে হয় সেই বিখ্যাত কিন্নরী চুড়ি। কিন্নরী চুড়ি পড়ে অতসীর মন আরও ভাল থাকার কথা। সেদিন এই চুড়ির কথা বারবার বলছিল। কিন্তু ও এরকম করছে কেন? আচ্ছা, অতসী না হয় আজ একটু অন্যভাবে সেজেছে। তাই বলে মানসিকতা পাল্টে যেতে পারে না।

খানিক পর ওয়েটার খাবার দিয়ে যেতেই খাওয়া শুরু করলো অতসী। একজনের খাবারের কথা বলেছিলাম। আমার খাবার রুচি হচ্ছিল না একদম। আমি না খেলে অতসী খাবারে হাতই দেয় না কখনো। অথচ সেই অতসী আজ আমাকে না বলেই খেতে শুরু করেছে। বুকের ভেতরে কোথাও মনে হচ্ছে দুমড়ে-মুচরে গেল। অতসীর খাবার ভঙ্গি দেখে মনে হলো, অনেকদিন সে কোনো কিছু খায়নি। খেতে খেতেই হঠাৎ কী কারণে যেন থমকে গেল অতসী। ওয়েটারকে ডেকে দিতে বলল আমাকে। ওয়েটার আসতেই ডালের বাটিটা একটানে তুলে ওয়েটারের মুখ বরাবার ছুঁড়ে দিল অতসী। তারপর টেবিলে একটা দড়াম করে একটা ঘুষি বসিয়ে দিয়ে ওয়েটারের দিকে তাকিয়ে হিসহিস করে বলল, ‘তোকে না বেগুন ভর্তা আনতে বলেছিলাম। ওইটা কই? আর এটা কি দিছোস? গাছের ডাল সিদ্ধ করা পানি?’

ভয়াবহ ঝামেলা হয়ে যাচ্ছিল। তবে রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার নেহায়াত ভদ্রলোক বলে রক্ষা। কোনোরকমে তাকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে ওখান থেকে বেড়িয়ে এলাম।

‘তোমার কি হয়েছে? এমন করছ কেন?’ নিজের কন্ঠ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে টের পাচ্ছিলাম।

অতসী মুখে আবার সেই তাচ্ছ্যিলের হাসিটা ফিরে এল, ‘আমি এমনই।’

‘এরকম তুমি কখনোই ছিলে না। তুমি বদলে গেছ অতসী। আমি কখনই ভাবিনি তুমি এমন করে বদলে যাবে।’

‘এরকম প্যানপ্যানানি মার্কা কথা শুনিয়ো না তো, মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। পারলে এসব মেনে নাও। না মানলে চলে যাও।’

‘চলে যাও- মানে কী? কোথায় যাবো?’

‘গো টু হেল- কথাটার অর্থ বোঝো?’

ওর মুখে এ কথা শোনার পর আমার দৃষ্টি আরও তীক্ষ্ণ হয়ে গেল। ভালভাবে তাকিয়ে দেখলাম অতসীকে। সে কী সত্যিই আমার অতসী? নাকি অন্যকেউ? এই কী আমার ভালোবাসার সেই মেয়েটি?
নাহ্- এমন সে ছিল না কখনই। হিসেব মিলছে না কিছুতেই। সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।

আমি খানিক্ষণ চুপ করে থেকে বললাম, ‘আর তুমি- তুমি কোথায় যাবে?’

অতসী উদাস ভঙ্গিতে বলল, ‘এখনও ঠিক করিনি।’

আমি অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ভালো। ঠিক আছে- যেতে চাইলে যাও। আমি কাউকে জোর করতে চাই না। ’

অতসী এবার সত্যি সত্যিই চলে যাচ্ছিল। আমি পেছন থেকে ওর বাম হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলাম। সঙ্গে সঙ্গে ঘুরে দাঁড়ালো অতসী। তাচ্ছ্যিলের হাসিটা উধাও হয়ে গেছে মুখ থেকে। তার বদলে সেখানে ভর করেছে অবর্ণনীয় কোনো এক যন্ত্রণা। কুঁচকে গেছে চোখ মুখ। আমার দিকেও সরাসরি তাকাতে পারছে না সে।

আমি কী খুব শক্ত করে ধরেছি? দ্বিধান্তিত হয়ে খেয়াল করলাম, আমার হাত ওর সেই কিম্ভুতকিমাকার কিন্নরী চুড়ির ওপর গিয়ে পড়েছে। হঠাৎ কী যেন মনে হলো, সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ল ওই চুড়ির ওপরে। আরও জোরে চাপ বাড়িয়ে দিয়ে ভেঙ্গে দিলাম চুড়িটাকে। আর তখনই অতসী ঢলে পড়ে গেল আমার হাতের ওপরে।

চার
হাসপাতালের কেবিনে অতসীর হাত ধরে বসে ছিলাম অনেকক্ষণ। তখনও ওর জ্ঞান ফরেনি। ডাক্তার অবশ্য বলে দিয়েছেন, তেমন সিরিয়াস কিছু নয়। নার্ভাস ব্রেকডাউন থেকেও এমনটা হতে পারে। ধরে রাখা হাতে অতসীর স্পর্শ জোড়ালো হতেই বুঝলাম ওর জ্ঞান ফিরেছে। কিন্তু তখনও চোখ খুলেনি অতসী। হাতটাকে আরও শক্ত করে আমার নাম ধরে ফিসফিস করে ডাকলো আমাকে। আমি সাড়া দিতেই ওর চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ল জল। ফিসফিস করে বললাম, ‘কিছু হয়নি তোমার। চোখ খোল।’

অতসী কান্না জড়ানো কন্ঠে বললো, ‘সবকিছু আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল, ওই কিন্নরী চুড়িটা হাতে দেওয়ার পর থেকেই। বিশ্বাস কর, যা হচ্ছিল আর যা করছিলাম কোনটাইও আমার নিজের ইচ্ছায় নয়। তুমি কষ্ট পাচ্ছিলে আমার এরকম আচরণে- বুঝতে পারছিলাম কিন্তু আমার কিছুই করার ছিল না। ওই চুড়িটা আমাকে বদলে দিয়েছিল। অনেক চেষ্টা করেও খুলতে পারিনি চুড়িটা।’

ওর কথা শুনে আমি হেসে বললাম, ‘থাক হয়েছে। সারাজীবন আর তোমাকে কোনো চুড়ি পড়তে দেব না আমি। এসব ঢঙ্গের ডিজাইনের কিন্নরী-অপ্সরা চুড়ি পরা তোমার জন্য নিষিদ্ধ।’

আমার কথা শুনে চোখ মেলে তাকাল অতসী। ওর চোখের মাঝে আমি আবার ফিরে পেলাম নিজেকে। এই তো আমার সেই ভালোবাসার মেয়েটি।

এ সময় ডিউটিতে থাকা নার্স চলে এল ভেতরে। এসে দেখল, আমরা দু’জন হাত ধরে একে অপরের চোখের দিকে তাকিয়ে আছি। অতসীর রিপোর্ট ফাইলটা হাতে নিয়ে কিড়মিড় করে উঠল সে, ‘আজকাল ছেলেমেয়েদের রাখঢাক বলে কিছু নেই। কী যে হয়েছে এদের? অসভ্য মানসিকতা! হাসপাতালে এসেও এরা প্রেম করতে ছাড়ে না।’

নার্সের এসব কথা শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল আমার। আমরা এমন কিছুই করিনি যে, নার্স এরকম অভিযোগ তুলতে পারে। কড়া কিছু কথা বলতে যাচ্ছিলাম আমি। কিন্তু অতসী আড়চোখে না করল আমাকে। ইশারায় নার্সের হাতের দিকে তাকতে বলল আমাকে। এবার সত্যিই খানিকটা চমকে গেলাম আমি। অতসীর হাতের সেই চুড়ির মতই হুবহু আরেকটি কিন্নরী চুড়ি এখন নার্সের বাম হাতের শোভা বাড়াচ্ছে।



-এজি মাহমুদ

No comments:

Post a Comment