Subscribe:

পারসোনা ইস্যুতে আরিফ জেবতিক এর নিজস্ব কিছু মতামত...

পারসোনার ঘটনাটি প্রথম যখন শুনলাম, তখন আমলে নিলাম না। পারসোনা খুব বড় একটি প্রতিষ্ঠান, সেখানে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হয়, এমন বড় একটি প্রতিষ্ঠানের কোনো দায় পড়েনি তার গ্রাহকদের গোপন ছবি তুলবে। এটা পাড়ার মোড়ের কোনো সাইবারক্যাফে নয়, যেখানে গোপনে প্রেমিক প্রেমিকার একান্ত মুহুর্তগুলো ধারণ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়া যাবে। পার্সোনার ব্র্যান্ড কালারটি মেয়েদের মাঝে পরিচিত, সুতরাং ওরকম ভিডিও ছবি পাওয়া গেলে পারসোনার ক্ষতি ছাড়া লাভ নেই।


তাছাড়া পারসোনা একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান, সেখানে হাজার হাজার পদের মানুষ নিয়মিত ঢুকছে-বের হচ্ছে, এর হাতব্যাগ কি তার মোবাইল ফোন হাপিস হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা সেখানে অনেক বেশি, সুতরাং সিসিটিভি স্থাপনকে আমি দোষ দেই না। তবে পারসোনার ক্যামেরা ব্যবহারের বড় ত্রুটি আছে। সিসিটিভি যেখানে লাগানো হয়, সেখানে পরিস্কার করে সিসিটিভির অবস্থান ও মনিটরিংয়ের বিষয়টি জানিয়ে রাখা হয়, এতে করে ব্যবহারকারী বিষয়টি সম্পর্কে অবগত থাকেন এবং সে অনুযায়ী আচরণ করেন।


কিন্তু কাহিনীটা জমছে এর পরেই। মাছরাঙা টেলিভিশনের ফুটেজ দেখে চমকে উঠলাম।

দুই বদমাশের বাচ্চা পুরুষ কর্মচারী এই সিসিটিভি নিয়ন্ত্রন করে। সর্বনাশ। পারভার্ট পুরুষের অভাব নাই সমাজে, আর তাদের কাছেই যদি ক্যামেরা মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়, তাহলে কানিজ আলমাস কী চান কি না চান, সেখানে অবশ্যই গোপন ফুটেজ ধারণের সুযোগ থাকবে। সেক্ষেত্রে তথাকথিত ক্যামেরার অবস্থান নড়াচড়া হয়ে যেতে পারে।


কানিজ আলমাস ও পারসোনার কথাবার্তার মাঝে অসংলগ্নতা দেখে ডাল মে কুচ কালা হ্যায় বলেও সন্দেহে ভুরু কুচকে যাচ্ছে।

কথাবার্তাগুলো যা দেখলাম:
১. ক্যামেরাটা ইলেক্ট্রিশিয়ানের ভুলে অবস্থান বদল করেছিল। (মনে হচ্ছে এটা যেন টেবিল ফ্যান।)
২. ক্যামেরায় কোনো ছবি উঠে নাই। (ছবি না উঠলে ওখানে ক্যামেরা রাখছ কেন?)
৩. হার্ডডিস্ক পুলিশ নিয়ে গেছে। হার্ডডিস্ক সেই অভিযোগকারিনীর স্বামী নিয়ে গেছে। ( কোনটা সত্যি?)
৫. ক্যামেরা শুধু কানিজ আলমাসের কক্ষ থেকে মনিটর করা হয়। (তাহলে আমরা মাছরাঙা টিভির নিউজে যে দুই বদমাশকে চড় খেতে দেখলাম, এরা কি সেখানে ভিডিও গেম খেলছিল?)

এখন তো বলছে ঐ শাখায় স্পা-ই নাই। এই সপ্তাহের মধ্যে কবে আবার বলে বসবে বনানী-১১ তে আমাদের কোনো শাখাই নাই। আবোল তাবোল বকার তো একটা মাত্রা থাকে, এর মাত্রাজ্ঞান নাই।

তবে সবচেয়ে বেশি মজা পেয়েছি মিডিয়াগুলোর অবস্থান দেখে। কয়েকটা পত্রিকা দেখে মনে হলো, কানিজ আলমাস হচ্ছেন এ যুগের মাদার তেরেসা, বাংলার নারীদের সেবার জন্য তিনি রূপ পসরার আলো হাতে পথে প্রান্তরে ঘুরছেন। এই মহিয়সী নারীর বিরুদ্ধে কেবল ষড়যন্ত্র আর ষড়যন্ত্র। তবে সব পত্রিকাকে একসঙ্গে ম্যানেজ করা যায় নি, বড়দের বড় রেট, উনারা আবার রয়েসয়ে মুখ খুলেছেন।

বেচারা এসআই সাসপেন্ড হয়েছে কেন, সেটাও এক রহস্য।
ভাগের টাকা কি সিনিয়ারদের দেয়নি নাকি এটাও ফিসফিস সর্বত্র।


সব কিছুর পরেও কানিজ আলমাস আপাত একটি কঠিন অবস্থান ধরে রেখেছেন। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ক্যামেরা খোলা হবে না। তিনি পত্রিকায় অভিযোগকারিণীর স্বামীর দস্তখত দিয়ে লাখ টাকার বিজ্ঞাপন ছেপে বলছেন, সব ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটেছে। দেখা যাচ্ছে, মিডিয়া ম্যানেজ, পুলিশ ম্যানেজ, অভিযোগকারীও ম্যানেজ।


কিন্তু কানিজ আলমাস একটা জায়গায় ভুল করছেন। তিনি ফেসবুকে এবং ব্লগে যারা এটা নিয়ে লেখালেখি করছে, তাদেরকে তুচ্ছাতিচ্ছু করছেন। কানিজ আলমাস বিজনেস ম্যাগনেট হলেও একথা বোধহয় জানেন না যে আজকাল মিডিয়ার সংজ্ঞা বদলে গেছে।

আজকাল সব মিডিয়া ম্যানেজ করা যায় না। ফেসবুক আর ব্লগ হচ্ছে এমনই এক মিডিয়া। এখানে ম্যানেজ করা খুব কষ্ট। ৯ লক্ষ বাংলাদেশী ফেসবুক ব্যবহার করে, ৯০ লক্ষ লোকের ইন্টারনেট কানেকশন আছে। এরা প্রত্যেকেই একেকজন সাংবাদিক-কলামিস্ট। এতো এতো লোককে পারসোনার ফেসবুক পেজে গালাগালি করে তিনি আটকে রাখতে পারবেন না। আর এসব ভুজুং ভাজুং ত্যানা প্যাচানিও এদের কাছে হালে পানি পাবে না।

একমাত্র নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেই কানিজ আলমাস তার গ্রহনযোগ্যতা এ যাত্রায় কিছু রক্ষা করতে পারবেন। কিন্তু অন্য কোনো উপায়ে, এখানে ওখানে দয়া দাক্ষিন্য করে আর ফেসবুকে চোখ রাঙিয়ে তিনি পিছলে বেরিয়ে যেতে পারবেন না সহজে।

সুনীলের একটি কবিতার লাইন কৈশোরকাল থেকে মাথায় ঘুরে। সুনীল লিখেছিলেন, সভ্যতার নামে শুওরের বাচ্চারাই জিতে গেল অবশেষে। স্যরি কানিজ আলমাস, এ যুগে সভ্যতার নামে শুওরের বাচ্চারা এত সহজে জিতে যেতে পারে না।

আরিফ জেবতিক,
সাংবাদিক ও ব্লগার।
Facebook ID : Arif Jebtik

No comments:

Post a Comment