হ্যালোরে?
দিনে যতবার আমাদের কথা হত ততবার আমি ফোন ধরেই এটা বলতাম,মনে আছে তোর? তোর শুনতে ভাল লাগতো নাকি।
তোর কান্ড দেখলে মাঝেমধ্যে মনে হতো ভালবাসাটা এক তরফাই ছিল!শুধু মনে হত আমি তোর মত করে তোকে ভালবাসতে পারি না। কি যে মেজাজ খারাপ হত! তোর সাথে রাগ করে একবার ফোন বন্ধ করে রেখেছিলাম।
তুই তো বুঝিস নাই কেন,উল্টা সারাদিন না আমাকে না পেয়ে তুই অসুস্থ হয়ে গেছিলি।পরে কত কষ্ট করে তুই আমার আপুর নাম্বার যোগাড় করে আমাকে ফোন দিলি!আমার সাথে থাকার জন্য তুই কত কষ্ট করে মাইগ্রেশন ক্যান্সেল করে চিটাগাং থেকে গেলি!!একই কারণে আরো একবার তুই আন্টির (তোর মা)সামনে মাইগ্রেশন পেপার ছিঁড়ে ফেলেছিলি।অনেক পরে যখন আমরা এক শহরে থাকা শুরু করলাম,তোর সাথে খুব রাগারাগি হল একদিন।আমি তুই কেউ ই নিজের জায়গায় ঠিক থাকতে পারিনাই সেদিন। শেষে তুই আর না পেরে রাত এগারোটায় বাসায় চলে আসছিলি আমাকে দেখতে!!এসব দেখে আমার মনটা খারাপ হয়ে যেত। হবে না কেন? কোনদিক দিয়েই তো আমি তোর সমান বা কাছাকাছিও ছিলাম না। তারপর ও কি করে আমি তোকে পাওয়ার স্বপ্ন দেখছিলাম!! আসলে আমার মত ভ্যাগাবন্ড ছেলেকে কেউ এভাবে ভালবাসতে পারে তা আমার ফ্যান্টাসিতেও ছিলনা!তখন যদি আজকের সত্যিটা জানতাম এই ভুল তো আমি করতাম না?তোকেও হারাতে হত না।আমাদের শুরুটা হইছিল ফেসবুক থেকে।তোর ছোটবেলার হারিয়ে যাওয়া বন্ধুর সাথে আমার চেহারার নাকি অদ্ভুত মিল ছিল।সেইখান থেকে শুরু। এরপর তুই আমাকে তোর ডায়েরিটাই খুলে দিলি।কারণ আমিই তখন তোর সবচেয়ে প্রিয় আর একমাত্র বন্ধুটা ছিলাম।আমার প্রতি তখন তোর কি প্রচন্ড টানটাই না ছিল!তখন তুই ই আমাকে শুধু হারানোর ভয় করতি।নিজে হারিয়ে যাবি – এটা কখনো বলিস নাই!
আমার ও হারানোর ভয় ছিল।তোর ভালোবাসাটা হারানোর ভয়!তাই তো যখন তুই কোন একদিন দেখা হওয়ার কথা বলতি,আমি চাইতাম না।তুই কারণ জানতে চাইলে বলতাম খুব কাছের মানুষদের দূর থেকেই ভালবাসতে হয়,কাছে আসলে টানটা কমে যায়।তুই খোঁচা মারতি –“ওরে!হিমু আসছে!!...আমরা হলাম গিয়ে Soulmate,বুঝলি হারামি?আমাদের টান কখনোই কমবেনা।” এমন ভরসার পর আর আপত্তি থাকবে কেন?আমারো কি তোকে দেখতে ইচ্ছে করতোনা নাকি?হ্যাঁ?!!খুব করতো।মূলত সেজন্যেই আমার প্রথমবারের মত ঢাকা যাওয়া।
গত শীতের কথা।ডিসেম্বরের ১০ তারিখ ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ছিল আমার ভর্তি পরীক্ষা। কিন্তু পরীক্ষা দিতে গিয়ে যদি আমার Soulmate এর দেখা না পাই তাহলে পরিক্ষা কেন দিব?আজিব!!দিলাম নাহ!!তারপর...পেলাম তোর দেখা! সিদ্বেশ্বরী থেকে টিএসসি পর্যন্ত আমার সেরা রিকশা ভ্রমণ,আর টিএসসির পাশের রোড আইল্যান্ডটায় আমার জীবনের সেরা মূহুর্তগুলোর একটা কাটালাম। এখন মনে হয় সেটাই ভুল ছিল!ফিরে যাওয়ার সময় তুই আর আমি বুঝতে পারলাম দুজনেই আরো গভীর টানে আটকে গেছি! সেই থেকেই তো কাছে আসার আকুলতা,কাছে আসা,কাঁছে আসার পর অনিবার্য পরিণতি।
মানুষকে কষ্ট না দিয়েও ফিরিয়ে দেয়া যায়।প্রত্যাখান জিনিসটাও মানুষের কাছে সহনীয় করে তার কাছ থেকে সরে যাওয়া যায়। কিন্তু শেষ সময়ে সেই সম্মানটাও কেন জানি দিলি না।সবদিক থেকে পিছিয়ে থাকা আমি কখনোই তোকে পাবই এমন আশা করতাম না।কিন্তু আমি সুযোগ চাইতাম কিছু করে দেখাবার মত সময় দিতে।কিন্তু সেই সুযোগটা এনে দেওয়ার মত লড়াই করার মানসিকতাও কেন জানি তোর মধ্যে আর ছিলনা।আমাদের ব্যাপারটা জানার পর তোর উপর দিয়ে প্রথম যে চাপটা গেল,তাতেই আমার প্রতি তোর টানটা প্রায় পুরোটাই ছিঁড়ে গেল।তুই বুঝতে পারলি এতদিন তুই ভুল বিশ্বাস নিয়ে বেঁচে ছিলি।
আঙ্কেল আন্টির প্রতি আমার কোন ক্ষোভ নাই রে। Honest!!উনাদের যেটা করা উচিত ছিল,সেটাই তারা করেছেন ।আবেগ,ভালোবাসা দিয়ে জীবন চলেনা।সেটা আমরাই বুঝিনাই।
Crash আর Fascination এর সাথে ভালোবাসার পার্থক্য তুই ই আমাকে শিখিয়েছিলি।অনেকগুলো দিন ভালোবাসার পরে শেষদিন যখন তুই রুক্ষভাবে ফিরিয়ে দেওয়ার পর বললি যে আমার প্রতি তোর আসলে fascination ছিল,ভালবাসা না।সেদিন কেমন লাগছিল!!! এরপর থেকে কাউকে বিশ্বাস করার ক্ষমতাটাই নষ্ট হয়ে গেল।কেউ খুব আন্তরিকতা দিয়ে কিছু একটা বললেই মনে হয়,সব fascination!সব মোহ!! এটা কি আমার জন্য খুব ছোট কোন ক্ষতি??
নিজের ভুলের জন্য এমন কষ্ট পেলাম বলে মেনে নিয়েছি।তোর অতীতের কথা,তোর সব কষ্টের কথা জানার পর খুব খারাপ লাগছিল।তোকে আনন্দ দেয়া,হাশিখুশি রাখাটাই নিজের কর্তব্য মনে করতাম।আমার ফ্যামিলির মানুষগুলোর যখন খুব খারাপ সময় যাচ্ছে,তখন ও আমি রুম বন্ধ করে আলাদা হয়ে লিখে গিয়েছি তোকে হাসানোর জন্যে।এজন্যেই এমন কষ্টটা পেয়েছি।তুই কি এখনো সেগুলো দেখিস?ফেসবুক অ্যালবামে এখনো সেই দিনগুলো জীবন্ত! আমি দেখি মাঝেমধ্যে বুঝে না বুঝে অনেক সময় তোকে কষ্ট দিয়েছি।তার জন্যেই এমন কষ্টটা পেয়েছি। সব মেনে নিয়েছি।
এখন আর তেমন দেখা হয়না।কথা হয় না। কিন্তু হঠাৎ করে রাত বারোটায় ডেকে নিয়ে কিংবা আড়াইটায় ফোন করে তোর নতুন মানুষটার কথা আমাকে শোনাস তখন আমার কেমন লাগতে পারে তুই কি বুঝিস না? বুঝলেও কেন এমন করিস?আমি তোকে এত বেশি কষ্ট দিয়ে দিয়েছি?
তারপর ও...তোর প্রতি আমার অভিমান ছাড়া খারাপ কোন কিছুই নেই। এখনো তোকে আগের মতই ভালোবাসি(জানি তুই এই চিঠি পড়বিনা,তাই এত সহজে বলে ফেললাম।শেষ সময়গুলোতে ভালোবাসি কথাটা বললেই তুই কেমন নির্দয়ের মত খারাপ ব্যবহার করতি!!)। এখনো তোকে খুব মিস করি।তোকে আমি কোথায় মিস করিনা!!?কোথায় তুই নেই?!!
এই শহরের সব রিকশায়...তোকে নিয়ে হাঁটা রাস্তাগুলোয়...ম্যাডিকেল কম্পাঊন্ডে...পতেঙ্গায় তোর সাথে গাওয়া গানগুলোয়...আমার দেয়ালে আটকানো তোর চিহ্নটায়... এলোমেলো চুলগুলোয়...পাসওয়ার্ডে...
প্রথম দিন দেয়া তোর গিফট ‘পেলিকান ব্রীফের’ প্রথম পাতায় তোর প্রিয় গানের লাইন গুলো তোর হাতে লেখা-
“So close no matter how far
Couldn’t be much more from the heart
Forever trusting who we are
And nothing else matters..”
কোন গানের কথা পছন্দ হলেই বলে ফেলা যায়।কিন্তু বিশ্বাস করে ফেললে যাকে বলা হয়, কষ্টটা সেই পায়!!
এই গান নিয়েও আমাদের কত্ত গল্প!বলে শেষ করার মত না।আগেতো আমি নতুন কিছু শুনলে তোকে শেয়ার করতাম।তোর নতুন মানুষটা কি তোকে নতুন নতুন গান দেয়?সেগুলো তোর ভালো লাগে তো?? কার্ড,প্রফ আর ক্লাস টেস্টের চাপে ক্লান্ত তোকে দিনের শেষে আমার মত ঘুম পাড়ানী Lullaby গেয়ে শোনায়?
সত্যিরে...তোর প্রিয় গান গুলো এখন আর শুনতে পারিনা।‘অন্ধ’ গানটা তো একদম ই না।ওটা যে সারাদিন বাজতো তুই ফোন করলে!!
উফ!এতক্ষনে ঘুম আসছে।ঘুম না আসায় কি বিরক্তিকর, দীর্ঘ এক চিঠি লিখে ফেললাম।জানিস?তোকে মনে পড়ে যাবে বলে,তোর সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হবে বলে এখন দিনে খুব হাঁটি,দুপুরে ঘুমাই না।যাতে রাতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।আজ কেন জানি দুপুরে ঘুমিয়েছিলাম!আবোল তাবোল অনেক ছাঁইপাশ লিখে ফেললাম রে...কি লিখেছি আর মনে নাই।তোকে কষ্ট দিয়ে থাকলে আবারো ক্ষমা চাই,আমি জানি তুই প্রতিবারের মত ক্ষমা করবি।জানি পারবোনা তবু চেষ্টা করব তোকে নিয়ে এই ডায়েরীতে আর না লেখার। আজকে যাই তাহলে?খুব ঘুম আসছে...ভালো থাকিস? সবসময়...বাআআ...আআই!! বাই!!!
ইতি...
…
zZzz…ZzZ. Z.. zZ.Zzz.. Z,zzZz,,zZzZZzZZZZ!!!
-tipu Ashek
(tipu ashek) .....
No comments:
Post a Comment