Subscribe:

“অসমান ভালোলাগা ও অসমাপ্ত পরিণতি”

যদিও অন্য সময় ঢাকা ছাড়ার কথা ভাবতেই পারিনা, এই বসবাসের অনুপযুক্ত শহর টাকেই বড্ড ভালবেসে ফেলেছি! তবুও ঈদ এর সময় গ্রামের বাড়ি যাওয়া টা এক্কেবারে বাধ্যতামুলক। তাছাড়া উপায় কী! একা একা তো আমাকে রেখে যাবেনা! এইচ এস সি রেজাল্টের অপেক্ষায় থাকা এক উড়নচন্ডী আমি। কুরবানী ঈদ উপলক্ষে দাদু বাড়ী যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।  পিচ্চি বোনটা হই হই করতে করতে দাদু বাড়ি জিন্দাবাদ বলে স্লোগান দিচ্ছে! কোথাও ঘুরতে যাওয়ার আগের ঘটা করে ব্যাগ গোছানো এবং প্ল্যান করার মজাটাই আলাদা। যদিও ৯০% আম্মুই গুছিয়ে দেয়!


রওনা দেওয়ার আগ মুহূর্ত থেকেই মনটা প্রচন্ড খারাপ। শুনলাম আবীর,শুভ আর জামিল দাদুর বাড়ী যাচ্ছে না। শুভর টাইফয়েড হয়েছে। আবীর জামিলদের আব্বু কি এক অজ্ঞাত কারনে এবারের ঈদ ঢাকাতেই করবে। এরা সবাই আমার চাচাতো ভাই। প্রতি ঈদেই দুই চাচা আর দুই ফুফুর পরিবার একসাথে ঈদ করি। স্বভাবতই দাদুর বাড়িতে । এক ফুফুর তখন ও বাবু হয়নি। আরেক ফুফুর পিচ্চি মেয়ে। তাই সময় কাটানো আর ঘুরাঘুরি করার কোন পার্টনার নাই ভেবে ট্রেনেই দম বন্ধ হয়ে আসছিল।


দাদু বাড়িটা দোতলা। যদিও প্রায় সবসময় ই খালি থাকে। এক ভুতুড়ে পরিবেশ। আমরা আসলে প্রাণ ফিরে পায় বাড়িটা। চাচাতো ভাই আর কেউ না আসায় দোতলার পূর্ব পাশের ঘরটায় আমি একাই থাকবো। নিচতলায় খাওয়া দাওয়া ছাড়া আর কোন কাজ নেই। টিভির রিমোট নিয়ে কাড়াকাড়ি করার ও কোন এনার্জি নেই। কাজেই দোতলার রুমেই ঘাপটি মেরে বসে মাসুদ রানা পড়েই একটা দিন কেটে গেলো । ঈদের আগেরদিন বিকালে একটু হাটতে বের হবো ভাবছি হঠাৎ জানালা দিয়ে পাশের বাসার দোতলার ব্যাল্কনিতে চোখ পরলো।

মায়াবী চেহারার একটি মেয়ে উদাস ভংগীতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। বাইরে বের হওয়ার প্ল্যান ক্যান্সেল। প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে গেলাম ! ! মৃদু বাতাসে কয়েকটা চুল মুখের উপর এসে পড়ছিল ইচ্ছে হচ্ছিলো হাত দিয়ে সরিয়ে দিই! আমার বেহায়ার মতন দৃষ্টি তার চোখ এড়ালো না। পর্দাহীন জানালা দিয়ে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। ঘরের টেবিলটা সরিয়ে জানালা মুখো করলাম। আর খুব জরুরী দরকার ছাড়া ঘর থেকে বেরুনোর প্রশ্নই আসেনা! এ জন্যে বেশ কয়েকবার দাদুর বকা ও খেলাম। মেয়েটি বড় একঘরে ও একাকী বুঝতে বাকি রইল না। ব্যাল্কনীর পাশের রুমটা তার। পর্দার ওপাশে আবছা হাটা চলা আর ব্যাল্কনীতে বসে বই পড়তেই দেখা যায় বেশী। উম্মম্‌, খুব সম্ভবত এইচ এস সি ফার্স্ট ইয়ার হবে।  আমি মনে মনে ঠিক যেমন টা মেয়ে পছন্দ করি মনটা তার সাথেই কিভাবে যেন মিলিয়ে নিচ্ছিলো!

আমি যে ওকে খেয়াল করছি সেটা সে ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে। আমার কেন জানি  মনে হলো আমাকে সে কিছুটা প্রশ্রয়ও দিচ্ছে! হঠাৎ মনটা খারাপ হয়ে গেলো। দুদিন পরেইতো চলে যাব। যোগাযোগ করার কোন রাস্তা দেখছিনা। এই সময় আবীরকে বড্ড মিস করলাম। তার মাথায় অনেক বুদ্ধি।

সে থাকলে সুন্দর একটা উপায় বাতলে দিত। খুব বেশিক্ষন টেনশনে থাকতে হল না। সেদিন ঈদের দ্বিতীয় দিন। সন্ধ্যায় আম্মু বললেন আমাকে নিয়ে বের হবেন। আমিতো দুপা গুটিয়ে নারাজ। শেষে বেরুতেই হলো। আমি আম্মু আর ছোট ফুফু। আম্মুর সায়াটিকার ব্যথা ভালো হচ্ছে না। পাশের বাসার এক বুড়ো লোক নাকি ঝাড়ফুঁক দেয়। সেই জন্যেই যাওয়া । কিন্তু যে বাড়িতে ঢুকলো,দেখে আমার বুক টা ধ্বক করে উঠলো! দোতলা বাসার, নীচ তলা তে ঢুকেই হার্টবিট দ্বিগুণ বেড়ে গেলো! সেকি! এতো মেয়েটির বাসায়! উফ! আগে জানলে আরেকটু ভালো গেট আপ নিয়ে আসতাম! উফ! কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না! আল্লাহর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রবেশ করলাম বাসাতে আম্মুর পিছু পিছু।


ছোট ফুফু ফরমালি পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন আমাদের। এরা এই বাসাতে এসেছে দুইমাস হল। ওই বাসার আন্টি আর বুড়ো দাদুর সাথে পরিচিত হলাম। হঠাৎ আন্টি ডাক দিলেন “রেবা... মা এদিকে আয় তো!

সাথে বলে উঠলেন,আমার ছেলেটা বাইরে গেছে, আর এইটা মেয়ে, ছোট সংসার।“ আমার বুক মাঝখানে একটু রেস্ট নিয়েছিলো আবার শুরু হলো তুমুল ধুকধুকানি। সামনে আসলো রেবা। আন্টি পরিচয় করিয়ে দিলেন । আম্মু আর ফুফুকে সালাম দিলো। আমার চোখে চোখ পড়তেই চোখ নামিয়ে নিলো। তার লুকানো মৃদু হাসি আমার চোখ এড়ালো না।

কাছে থেকে আরো বেশি সুন্দর লাগছে তাকে । আমি মেঝেতে নখ ঘষতে থাকলাম। আম্মু বললেন, “অনেক মিষ্টি মেয়েতো, কিসে পড় মা?”

“ এই তো রাজশাহী ভার্সিটি থেকে ইংরেজিতে অনার্স শেষ করলাম, মাস্টার্সে ভর্তি হবো।“


দশতলা বিল্ডিং এর ছাদ থেকে হঠাৎ নিচে তাকালে যেমন মাথা ঘুরে যায়। আমার মাথায় তেমন হল। হ্যাং হয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ।

আমার ভাগ্যটা এমন কেন! প্রথম দেখায় যাদের প্রেমে পড়ি তারা বড় আপু কেন হয়?


 

- নীরব কবি
  ফেইসবুক আইডি : Nirob Kobi

No comments:

Post a Comment