Subscribe:

যে জীবন মেঘের মতন...

চণ্ড বিরক্ত লাগছে।বাসার সব গুলো মানুষ পাগল হয়ে গেছে । এটা অবশ্য নতুন কিছু না, অনেক আগ থেকেই একগাদা মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ অসুস্থ মানুষের সাথে আমার বসবাস , বলা ভাল জন্মের পর থেকেই। একটা দীর্ঘশ্বাস এর সাথে আমার  দিন শুরু হয় , শেষটাও হয় দীর্ঘশ্বাস দিয়ে।


বিরক্তিভাবটা মুখ থেকে মুছে ফেলে নিচে নামলাম । আমাদের বাসাটা খুব সুন্দর , আমরা চারতলায় ভাড়া থাকি, পুরো বাসাতেই ভাড়াটে থাকে।বাসার সামনের অংশটুকুতে বাগান । এ বাসায় আমাদের থাকার কারন মোটেও আমাদের শখিনতা না, কারন এই বাসার ভাড়া, পাঁচ পাঁচটা রুম অথচ ভাড়া মাত্র ৭০০০ টাকা।

নীচতলার মেয়েটা আর প্রতিদিনের মত হাঁটতে বেড়িয়েছে ,সদ্য কৈশোর পার করে রাজ্যের স্বপ্ন চোখে নিয়ে মেয়েটা ঘুরে বেরায়, আমার মাঝে মাঝে ওর জন্য একটা অদ্ভুত মায়া হয় , মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে ওকে ডেকে জিজ্ঞেস করি , ও কি জানে সামনে কি ভয়াবহ একটা ভবিষ্যৎ ওর জন্নে অপেক্ষা করছে! ধুর ছাই সবার জীবন যে আমার মত হবে এমন ত নয়।
আপু, ভাইয়া তো কাল আসছে , খুব খুশি আপনি নিশ্চয়! মিষ্টি করে হাস্লো মেয়েটা, আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবেন তো !
উত্তরে কিছু না বলে হাসলাম । নরকের কীট এর মত কাউকে না চিনলেও চলবে তোমার। মনে মনে আওড়ানো কথা গুলো জোরে বলতে খুব ইচ্ছা হল। একবার ভাবলাম ওকে ডেকে একটু কথা বলি, মনে জমে থাকা বাস্প গুলো ঝরিয়ে দেই। পরের মুহূর্তেই  চিন্তাটা বাদ দিলাম। কি হবে এসব বলে? তবুও বলতে ইচ্ছে হয়।

হুট করেই ওঠ ছুড়ি তোর বিয়ের মতো করেই আমার বিয়েটা হয়ে যায়। সবার জন্য যা ঘোর লাগানো , রঙ লাগানো , স্বপ্ন বুনার মতো  কিছু দিন হয়ে আসে আমার  জন্য তা এল দুঃস্বপ্ন হয়ে। বইএর আগের রাতে মা আমার হাত ধরে কাঁদতে লাগলেন  , প্রলাপ বকার মত ক্ষমা চাচ্ছিলেন ,আমি প্রচণ্ড অবাক হয়ে তাকে দেখতে লাগ্লাম , এবং আমার অবাক ভাবের রেশ না কাত্তেই আমার বিয়ে হয়ে  গেল, কার সাথে হল , সে দেখতে কেমন আমি কিছুই জানিনা।

সেই রাতে আমি তার জন্যে অপেক্ষা করছিলাম , তিনি এলেন । আমার জন্মদাতা পিতার থেকেও বেশি বয়সী এক টা মানুষ যার দৃষ্টিতে ছিল...।

আস্তে আস্তে আমি সব জানতে পারলাম , এ লোক আমেরিকা ফেরত , ওখানে তার স্ত্রী পুত্র অ আছেন , নিজের কাজে প্রায়ই এ দেশে আসেন , সাম্নের বার থেকে আর হোটেলে উঠবেন না , হোটেলের কাজ বাসায় মেটানোর মত মানুষ পেয়ে গেছেন , বিনিময়ে আমার পরম শ্রদ্ধেয় বাবা মা পাবেন কিছু টাকা পয়সা এবং আমি হয়ত পাবো সপ্নের দেশে যাওয়ার সুযোগ! একটা খুব কুৎসিত ঘৃণার অনুভূতি জন্ম নিল! একবার ভাবলাম সুইসাইড করি , আম্মা সে রাতে আবার আমার হাত ধরে বসে থাকলেন , কাঁদতে কাঁদতে বললেন তুই একাজ করবিনা , ওই লোক তোদের সংসারের ভার নিয়েছেন , তুই মরে গেলে হবে? আমি সেদিন ভেবেছিলাম আমি মনে হয় এদের মেয়ে না, কিন্তু পরে আমার ভুল ভাংল, আমি জানলাম পিতা মাতাও তাদের মেয়েকে বেচে দিতে পারে ।শুধু একটু অর্থের অভাবের দরকার।

মধ্যবিত্ত হয়ে দুনিয়ায় আসাটা সবচেয়ে বড় পাপ! সম্মান বাঁচাতে সবার সম্মুখে  ভিক্ষা করা যায়না ঠিক ই কিন্তু রাতের আঁধারে নিজেকে সঁপে দেয়া যায়!

নাহ লোকটার উপর আমার কোন ক্ষোভ নাই , থাকা উচিত ও না , তিনি আমাকে অন্তত স্ত্রীর মর্যাদা ত দিয়েছেন , তা না হলে হয়ত আমার জন্মদাতাদাত্রি আমাকে ............ নাহ কি করতেন আমি জানিনা ।

আমার জীবনটা না হয় মেঘের মতোই হল , জল ঝরে ঝরে মেঘ যেমন হারায় , তেমনি হয়ত হারিয়ে যাবো , কেউ জানবেওনা কোনদিন কতোটা কষ্ট জমে আছে আমার প্রতিটা দীর্ঘশ্বাসে ।

নীচতলার মেয়েটা খুব আবৃত্তি শোনে , ওর ঘর হতে থেকে থেকে ভেসে  আসছে-
মেঘ বলতে আপত্তি কি,
বেশ বলতে পারি............

মেঘ বলতে কারো আপত্তি আছে কিনা আমি জানিনা , মেঘ হতে আমার খুব আপত্তি আছে, খুব!



-নূহা চৌধুরী

No comments:

Post a Comment