Subscribe:

নুসু ...সুসু(২)

প্রেম-টেমে আগ্রহী না বলে যে আমাকে প্রপোজ নামক ‘পেইনফুল সিচুয়েশন’ এর
মুখে পড়তে হয় নি, তা কিন্তু নয়। আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে ট্যালেন্টেড ছেলে,
রিফাতের সাথে আমার খুব খাতির ছিলো। আমরা নোট শেয়ার করতাম। লেখা-পড়া নিয়ে
আলাপ করতাম। (আবার ভেবে বসবেন না যেন, আমি খুব লেখাপড়ায় মনোযোগী ছাত্রী
ছিলাম! দূর্বল ছাত্রী ছিলাম বলেই রিফাতের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখতাম আর
কি! একটু সুবিধা তো আদায় করে নিতে হয়-ই।) কিন্তু আমি ও-কে বয়ফ্রেন্ড টাইপ
কিছু ভাবি নি কোনোদিনই। তবে রিফাতের হাব-ভাব দেখে সন্দেহ হচ্ছিলো আমার।


একদিন আমার সব সন্দেহকে সত্যি করে রিফাত একগুচ্ছ গোলাপ ফুল হাতে নিয়ে
আমাকে বললো যে, সে আমাকে ভালোবাসে। তারপর আরো হেন-তেন হাবি-জাবি কি বললো,
যার আগা-মাথা কিছুই বুঝলাম না! কোনো হিন্দী সিনেমার ডায়লগ হবে। আমি কি
করে রিফাতকে ‘না’ বলবো, বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ করেই একটা বুদ্ধি মাথায়
এলো! রিফাতের দিকে তাকিয়ে বললাম,
“দোস্ত… ফুলগুলো তো খুব সুন্দর! আমাদের বায়োলজী প্র্যাকটিকালে কি এবার
ফুলের চ্যাপ্টার আছে? এগুলো কাজে লাগাতে পারবো তাহলে… কি বলিস?”
রিফাত কিছু বুঝতে পারছে না, এমন ভাব করে হা করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।
মায়াই লাগলো ওর জন্য। তবে পাত্তা দিলাম না সেটা।
“আরে শোন দোস্ত, কি সব বলিস। তোর জন্য তো আমাদের নীলা পুরা পাগল হয়ে আছে।
আর তুই আমার কথা বলিস! তোর মতো হ্যান্ডসাম ছেলের বুঝি মেয়ের অভাব? আর
আমরা তো ফ্রেন্ড আছিই।”
ছোটবেলার বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলার ক্ষমতা টা কাজে লাগিয়ে, নিজের
প্রতিভা(!)তে নিজেই মুগ্ধ হয়ে গেলাম। সেদিনের পর রিফাত আর আমাকে
‘জ্বালায়’ নি। তবে আমি নোট নিতে গেলে মুখ গোমড়া করে থাকতে দেখতাম ওকে।
থাকুক মুখ গোমড়া করে! আমার কি! বয়ফ্রেন্ডের গুস্টি কিলাই। হু হা হা।
রিফাতের পর আরো কয়েকজন আমাকে প্রপোজ করার পর আমি প্রতিবারই এই একই থিওরী
ব্যবহার করেছি! সবগুলোকে ‘জানের দোস্ত’ বানিয়ে ছেড়ে দিয়েছি। ওরাও আমার
মনোভাব বুঝতে পেরে আমাকে আর বিরক্ত করে নি। মহা উৎসাহে অন্য মেয়েদের কাছে
ছুটে গিয়েছে। আর আমি মনে মনে জপেছি, “বয়ফ্রেন্ডের গুস্টি কিলাই।”
তাই সুসু যখন আমার দিকে তাকিয়ে থাকা শুরু করলো, আমার যে কি অস্বস্তি হওয়া
শুরু করলো, বলে বোঝানো যাবে না!
শুরুতে ছ্যাবলা টাইপ ভাবলেও পরে দেখলাম, ও সারাক্ষন কি যেন ভাবে। আর
প্রায় সারাক্ষনই আমার দিকে তাকিয়ে থাকে! অন্য কোনো ছেলে বা মেয়ের দিকে
তেমন তাকায় না। তালগাছের ভূতটাকে নিয়ে সত্যিই আমি খুব চিন্তায় আছি।
সরাসরি আমাকে এসে বললেই তো পারে। আমিও ওকে অন্য সবার মতো ‘জানের দোস্ত’
বানিয়ে ফেলতাম! কিন্তু সুসু তা ও করছে না। ক্লাস শুরুর সময় থেকে শেষ
পর্যন্ত প্রায় সারাক্ষনই আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। আচ্ছা, একটা মানুষ
সারাক্ষন আপনার দিকে তাকিয়ে আছে, ভাবতেও কেমন যেন লাগে না? আমার অবস্থাটা
তাহলে বুঝুন।
আমি অনেকভাবে বোঝার চেষ্টা করেছি যে, ও সত্যিই আমার দিকে তাকিয়ে থাকে কি
না। এজন্য আমি কয়েকবার সিট চেঞ্জও করেছি। আমি আবার জানালার পাশে ছাড়া
বসতে পারিনা। তাই সিট চেঞ্জ করলেও আমার সিট সবসময় জানালার পাশেই থাকতো।
আর আঁড় চোখে সুসুর দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করতাম, ও কি আমার দিকেই
তাকিয়ে থাকে কি না। একদিন বোতল-ভূতের ক্লাসেও আঁড়চোখে লম্বুটার দিকে
তাকিয়ে থাকতে গিয়ে ওর সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলো আমার। চমকে উঠে সামনের দিকে
তাকাতেই দেখি, বোতল-ভূত আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমাকে দাঁড়াতে ইশারা
করলেন। খুব ভয় হচ্ছিলো আমার। স্যার নিশ্চয়ই আমাকে সুসু’র দিকে তাকিয়ে
থাকতে দেখেছেন! এখন কি হবে আমার! আমি ভেবে পেলাম না, ক্যাবলাটা সারাক্ষন
আমার দিকে তাকিয়ে থাকে সে সময় একবারও সুসু’র দিকে তাকান না। আর আমি আজ
একটু তাকালাম, আর সেটাই স্যারের নজরে পড়লো! আমার কপালটাই খারাপ। এসব
সাত-পাঁচ ভাবতে লাগলাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। কি করবেন এখন স্যার? ক্লাসভর্তি
ছাত্র-ছাত্রীর সামনে আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করবেন? ভয়ে ভয়ে তাকালাম বোতল
ভূতের দিকে।
“ক্যালকুলাসের লাস্ট ক্লাসে এটেন্ড ছিলে?”
“জ্বী স্যার…”
“বোর্ডে যে প্রবলেমটা লিখেছি, সলুশন করতে পারবে?”
“জ্বী, পারবো স্যার।”
একদম সহজ একটা ইকুয়েশন! আমি এতো গাধী নই যে এটাও পারবো না। সলুশন করার পর
স্যারের দিকে তাকালাম।
“হুমমম… হয়েছে। ধন্যবাদ। এখন তোমার সিটে গিয়ে বসো।” এতো সহজে পার হয়ে
যাবো, ভাবি নি। তাই মনে মনে খুশিতে ফেটে পড়ছিলাম। বসতে যাবো, ঠিক এই সময়ে
বোতল-ভূত আবার ডেকে উঠলেন।
“মিস নুসরাত…”
“জ্বী স্যার?”
“আশেপাশে কম তাকিয়ে চোখ দু’টো বই এর পাতায় রাখার চেষ্টা করবে… সেটা তোমার
জন্যই ভালো হবে।”
একটা চাপা গুঞ্জন উঠলো ক্লাসের মধ্যে। কয়েকটা ছেলে চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে
আমার দিকে তাকাতে লাগলো। আর নীলা, অর্পারা আমার দিকে তাকিয়ে ‘সব বুঝে
গেছি’ টাইপ হাসি দিতে লাগলো। রাগে আমার কানে আবারও ঝা-ঝা সঙ্গীত বাজতে
লাগলো। লম্বু ক্যাবলাটার দিকে তাকিয়ে দেখি, নির্বিকার ভাবে জানালার দিকে
তাকিয়ে কি যেন দেখছে। আমার দিকে এখন কোনো নজরই যেনো নেই উনার। ফাজিলের
ফাজিল একটা। ওর জন্যই আজ এতো কিছু হলো। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম, ক্লাস
শেষে ধরবো তাল গাছের ভূত বাবাজিকে। কেনো কিছু না বলে শুধু তাকিয়ে থাকে,
সে রহস্য উদঘাটন করেই ছাড়বো।
 ক্লাস শেষে র‌্যাবের মতো অতর্কিতে হামলা চালালাম লম্বুর উপর। বলা যায়
না, কথা বের করতে রিমান্ডেও নিতে পারি। আর তারপর ক্রসফায়ার। ঢিশুম ঢিশুম,
কেস খতম।
“ঐ সুসু…”
ভয়ে ভয়ে আমার দিকে তাকালো ক্যাবলা টা। তালগাছের ভূত না হয়ে তালগাছের
ইঁদুরের সাথে বেশী মিল পাচ্ছি ওর এখন।
“তোমার ব্যাপারটা কি বলোতো?”
অনেক গল্পে পড়েছি ‘ফ্যাল ফ্যাল’ নামক দৃষ্টির কথা। ‘ফ্যাল ফ্যাল’ হোক আর
‘পাস পাস’ হোক, সুসু আমার দিকে এমনভাবে তাকালো যেন, দুনিয়ার সবচেয়ে উদ্ভট
প্রশ্ন টা আমি করেছি ওকে। এটাই বোধহয় সেই ‘ফ্যাল ফ্যাল’ দৃষ্টি। পাক্কা
অভিনেতা দেখি!
“কি? কথা বলছো না যে? তুমি সারাক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকো কেন?”
“আমি?... তোমার দিকে তাকিয়ে থাকি?”
“তো নয়তো কি, আমি তোমার দিকে তাকিয়ে থাকি?
“না… মানে আমি তোমার দিকে তাকিয়ে থাকি একথা কে বললো?”
“কে বলবে? আমি নিজেই তো দেখি। ক্যাবলাকান্তের মতো হা করে তাকিয়ে থাকো
সারাক্ষণ! সত্যি করে বলতো, কি বলতে চাও তুমি? আমাকে ভালোবাসো? এইসব
কথা-বার্তা?”
সুসু তখন চমকে উঠে আহত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। ‘এহহ… ন্যাকা ভাব
ধরে আবার’ ভাবলাম আমি।
তারপর সুসু যা যা বললো, সেসব শুনে আমি হা হয়ে যেতে লাগলাম।
আমাদের ক্লাসটা দো’তলায়। ক্লাসরুমটার ঠিক পাশেই, কয়েকটা বড় বড় গাছ আছে।
(আমি গাছ চিনিনা, তাই নাম বলতে পারলাম না!) গাছগুলোর ডাল-পালা আমাদের
ক্লাসরুমের জানালার কাছে গিয়ে পড়েছে কিছু। আমি গাছগুলোর দিকে খেয়াল করিনি
তেমন। সুসু জানালো যে, ঐ গাছগুলোতে বেশ কয়েকটা কাঠবেড়ালী আছে। আর
কাঠবেড়ালী সুসু’র খুব প্রিয়। তাই সে সারাক্ষণ কাঠবেড়ালীর দিকে তাকিয়ে
থাকতো। মোটেও আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো না!
লজ্জায় আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে। আমি জানালার পাশে বসতাম আর ও জানালা
দিয়ে কাঠবেড়ালীর দিকে তাকিয়ে থাকতো… আর আমি ভাবতাম, ও আমার দিকে তাকিয়ে
আছে! কোথায় কাঠবেড়ালী আর কোথায় আমি! আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলাম।
কি করে স্যরি বলবো, ভেবে পাচ্ছিনা।
সুসুও আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো। সারা দিনে আর একবারের
জন্যও আমার দিকে… থুক্কু জানালার দিকে তাকালো না। মনটাই খারাপ হয়ে গেলো
আমার। কিসব উল্টাপাল্টা ভাবতাম আমি! ধূর…
বাসায় গিয়েও মন খারাপ হয়ে থাকলো আমার। এমনকি পড়তে বসেও। পরদিন শুক্রবার।
নোভার বাসায় যাবো ভাবলাম। নোভা আমার মতো ‘বয়ফ্রেন্ড বিদ্বেষী’। তবে ও
আরেকটা পরিচয়ে বেশী পরিচিত। নোভা আমাদের ‘ওয়ান পিচ আইটেম’। সারাক্ষণই
লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘লেটেস্ট ফিমেইল ভার্সান’
বলা যেতে পারে। একবার আমাদের কলেজ থেকে সবার ‘শখের বিষয়’ কি… তার উপর
একটা জরিপ করা হয়েছিলো। আমরা সবাই যখন বলছিলাম যে আমাদের শখ গান শোনা,
ঘুরে বেড়ানো, ঘুমানো… এসব, তখন নোভা ই একমাত্র ছিলো যে বলেছিলো, “আমি
শখ-ফখ বুঝি না… আমার লেখাপড়া করতে ভালো লাগে। সারাজীবন লেখাপড়াই করে
যাবো। এটাই আমার নেশা, পেশা সব।” আপনারাই বলেন, ওকে ‘ওয়ান পিচ আইটেম’ না
বলে উপায় আছে? আমার কাছে প্রায়ই মনে হয়, নোভা কে কোনো জাদুঘরে রেখে আসা
উচিত। স্ট্যাচু অব লিবার্টির মত একহাতে বই নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে, আর এক
হাতের লন্ঠন দিয়ে লেখা-পড়া করবে। ব্যতিক্রম থাকবে শুধু নোভার চোখের চশমা!
আমার মতো যারা লেখাপড়াতে মনোযোগী নয়, তারা টিকেট কেটে নোভাকে দেখতে যাবে।
দেখে অনুপ্রাণিত হবে!
নোভার সাথে দেখা করতে আসার একটা কারনও আছে। কয়েকদিন পরই একটা ক্লাস টেস্ট
আছে। কিছুই পড়া হয়নি। তার উপর গতকাল তালগাছের ভূতের সাথে যা হলো! লেখাপড়া
পুরোপুরি গেছে আমার! নোভার কাছ থেকে যদি কিছু নোটস পাওয়া যায়, সেটাই লাভ!
তবে নোভা নোটস শেয়ার করতে চায় না। ‘কুটনী পেত্নী’ ডাকি আমি ওকে এর জন্য।
আজ দেখি ছল-ছাতুরী করে কিছু পাওয়া যায় কি না। ওর বাসায় ঢুকতেই দেখি ও বের
হওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। অবাক হলাম আমি। নোভাকে কলেজ, কোচিং ছাড়া কখনও বের
হতে দেখেছি বলে মনে পরে না।
“কোথায় যাচ্ছিস, এই বিকেল বেলা? আজ তো কোচিং বন্ধ।”
“ইয়ে … নুসু… আজ ১৪ই ফেব্রুয়ারী না? ভ্যালেন্টাইনস ডে?”
“হু… কিন্তু তাতে কি?” অবাক হওয়ার মাত্রা আরো বাড়লো আমার।
“আসলে একটা ব্যাপার ঘটেছে?”
“কি?”
“প্রমিজ কর… আর কেউ জানবে না।”
“প্রমিজ।”
“আমি প্রেমে পড়েছি…”
নোভার কথা শুনে মনে হলো, আমার কানের কাছে যেন বাজ পড়লো! লেডি বিদ্যাসাগর
বলে কি! ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি পড়তে পড়তে উনি আজকাল প্রেমেও পড়ছেন! তার উপর
বাংলা সিনেমার ডায়লগের মতো করে বলছেও, “আমি প্রেমে পড়েছি…”!!!!! ও আল্লাহ
গো!!! কোনোমতে বললাম,
“ছেলেটা কে?”
“ইরফান।”
“ওর সাথে দেখা করতেই যাচ্ছিস এখন?”
লজ্জায় মুখ নামিয়ে নোভা বলল, “হ্যাঁ। প্লীজ নুসু, আর কেউ যাতে জানতে না পারে।”
সুযোগটার সদ্ব্যবহার করা দরকার, ভাবলাম মনে মনে।
“ঠিক আছে, বলবো না। তবে একটা কন্ডিশন আছে।”
“কি?”
“তোর নোটস গুলো দিতে হবে।”
“আচ্ছা দিবো। পরে নিস। আজ বের হচ্ছি তো।”
“হুমমম… ওকে।”
বেরিয়ে গেলাম আমি আর নোভা। একটা রিকশা ভাড়া করে ধানমন্ডি লেকের দিকে চলে
গেলো ও। আর আমি সেদিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম, শুধু কি আমি একাই প্রেমিক
শূন্য হয়ে থাকবো???

পরদিন ক্লাস করতে করতে হঠাৎ সুসুর দিকে তাকালাম। ও অন্যমনস্ক হয়ে বোর্ডের
দিকে তাকিয়ে আছে দেখলাম। বোর্ডে তখন কোনো লেখা ছিলো না। মনটাই খারাপ হয়ে
গেলো আমার। আগে আমার দিকে তা… ধূর জানালার দিকে তাকাতো। আর আজ আমার জন্যই
ও আর এদিকে তাকায় না। স্যরি বলবো কিভাবে, সেটাও বুঝতে পারছি না।
এরপর সারাদিনই একটু পর পর আমি সুসুর দিকে তাকাচ্ছিলাম। আশ্চর্য! সুসু টা
একবারও আমার দিকে (বা জানালার দিকে) তাকাচ্ছে না!!! এই একদিনেই কি আমি
অদৃশ্য হয়ে গেলাম নাকি!
জেদ দেখাচ্ছে। তা ও আবার আমার সাথে! ইহ্, যাহ স্যরিও বলবো না। দেখি কয়দিন
আমার দিকে(বা জানালার দিকে) না তাকিয়ে থাকতে পারে… হুহ।
একদিন গেল। দু’দিন গেল। আস্তে আস্তে পুরো সপ্তাহ গেল। আজ্জব ব্যাপার।
সুসু একবারও আমার দিকে(বা জানালার দিকে) তাকালো না! কাঠবেড়ালী গুলো সব
মরে গেছে, নাকি আমি মরে গেছি, যে একবারও তাকায় না! এমনকি কলেজ ক্যাম্পাসে
বা ক্যান্টিনে দূর থেকে আমাকে দেখলে সরে যায়। যেন, নুসরাত নামের এই আমি,
ওর কাছে পুরো অদৃশ্য হয়ে গেছি!
আরো দিন যেতে লাগলো। আমার সুসুর উপর এখন কোনো রাগই নেই। উলটো সারাদিনই
আমি ওর দিকে তাকিয়ে থাকি, যদি একবারও একটু এদিকে তাকায়, এই আশায়। কিন্তু
সুসু তাকায় নি।
সামার ভ্যাকেশন এর কথা শুনে ক্লাসের অন্য সবাই লাফিয়ে উঠলেও আমার চিৎকার
করে কাঁদতে ইচ্ছে করছিলো। মনে মনে বলতেই লাগলাম, “লম্বু… তালগাছের ভূত
একটা! সুসু কোনখানের। একবার তাকাও আমার দিকে…” পনের দিনের মতো ছুটি। এই
পনেরটা দিন একবারও সুসুকে দেখতে পারবো না আমি!
রাতে ঘুমানোর সময় ভাবতে লাগলাম, আমি সুসুকে নিয়ে এতো ভাবছি কেনো? হু ইজ
হি? সুসু তো আমার কেউ না, তাহলে ওকে নিয়ে এতো ভাবার কি আছে! মনে মনে
কয়েকবার ‘বয়ফ্রেন্ডের গুস্টি কিলাই’ বললাম। তারপর শান্তি মতো ঘুমাতে
লাগলাম।
পরদিন রিফাতকে কল করলাম।
“আরে, নুসু। কি খবর? অনেকদিন পর কল করলে? একা একা বোর ফিল করছিলে?”(আমি
ওকে তুই করে বললেও আমাকে তুমি করে বলে, কেন, কে জানে!)
“হু… অনেকটা। দোস্ত, সুহাসের বাসা কোথায়, জানিস?”
“কি দরকার?” ফোনেও বুঝতে পারছিলাম, ওর গলার স্বর কেমন যেন হয়ে গেলো।
“আছে দরকার, বল না তুই।”
রিফাত সুসুর আড্রেস দিলো। “থ্যাংক ইউ দোস্ত।” বলেই লাইন কেটে দিলাম।
সুসু’র বাসার ঠিকানা কেন নিলাম, বুঝতে পারলাম না। বোকার মতো আমার লেখাটার
দিকে তাকিয়ে থাকলাম। আজিমপুর এ থাকে লম্বুটা। কিন্তু তা দিয়ে আমার কি।
মনে মনে আমাদের মুলমন্ত্রটা জপতে লাগলাম। তারপর বাসা থেকে বের হয়ে একটা
রিকশা ডাকলাম। কোথায় যাবো, নিজেও জানি না।
“আজিমপুর যাবেন?”
“কই নামবেন?”
“অফিসার্স কোয়ার্টারে।”
“সত্তর টেকা।”
“চলেন।”
মোহাম্মদপুর থেকে আজিমপুর সত্তর টাকা রিকশা ভাড়া হয় কি না জানি না। আসলে
আমি আজিমপুর যাচ্ছি কেনো, সেটাও জানি না। আমি কি সুসু কে দেখতে যাচ্ছি? এ
কি সর্বনাশ! বয়ফ্রেন্ডের গুস্টি কিলাই, বয়ফ্রেন্ডের গুস্টি কিলাই… কিন্তু
রিকশা চলছে। আর যাচ্ছে আজিমপুরের দিকেই। এখন ‘বয়ফ্রেন্ডের গুস্টি কিলিয়ে’
কোনো লাভ হবে বলে মনে হয় না।
আজিমপুরে এসে রিকশা থেকে নেমে একটা বাচ্চা ছেলেকে জিজ্ঞেস করে নিলাম,
সুহাস কে কোথায় পাওয়া যেতে পারে। একটা খেলার মাঠ দেখিয়ে দিলো ছেলেটা।
মাঠে অনেকগুলো ছেলে ক্রিকেট খেলছে। তারমধ্যে সুসু’কে পাওয়া গেলো খুব
সহজেই। তাল গাছের মতো লম্বুটা দৌড়ে বোলিং করছে। দূর থেকে মনে হচ্ছে যেন,
লম্বা একটা বাঁশ দৌড়োচ্ছে।
আমি একটু আড়ালে থেকে ওদের খেলে দেখতে লাগলাম… সুসু কিছুক্ষনের মধ্যেই
ঘামিয়ে গেলো। কিন্তু দৌড়ে দৌড়ে ঠিকই খেলতে লাগলো। ইচ্ছে করছিলো, গিয়ে বকা
দেই, এই রোদের মধ্যে যাতে আর না খেলে। বেশ কিছুক্ষণ পর ওদের খেলা শেষ
হলো। সুসু’দের দল জিতেছে! সুসু’কে দেখলাম খুশিতে দৌড়োচ্ছে। পাগল একটা!
হাসলাম আমি।
আমি তারপর বাসায় চলে আসার জন্য রিকশা খুঁজতে লাগলাম। সুসু যাতে টের না
পায়, তাই তাড়াহুড়ো করতে লাগলাম। রিকশাতে করে বাসায় আসতে আসতে ভাবতে
লাগলাম, আমি এসব কি করছি! আমি কি নীলা, অর্পাদের মতো নাকি যে, বয়ফ্রেন্ড
খুঁজে বেড়াবো! মনে মনে সংকল্প করে নিলাম, আর কখনও এরকম কাজ করবো না।
কক্ষনো না। বয়ফ্রেন্ডের বিয়াল্লিশ গুস্টি কিলাই!!!
কিন্তু পরদিনই আমি আবার সুসুকে দেখতে গেলাম। তার পরদিন আবার। এমনকি তার
পরের দিনও! এরকম করে বন্ধের পনেরটা দিনই আমি সুসুকে দেখতে গেলাম ।
প্রতিদিনই আসার সময় ভাবি, আর যাবো না। কিন্তু তারপরও যাচ্ছি। নিজেকে
পুরোপুরি অসহায় মনে হচ্ছিলো আমার।
                         ~~~*~~~
কলেজ খোলার দিন অনেক আগে আগে কলেজে গিয়ে জানালার পাশের সবচেয়ে ভালো
জায়গায় গিয়ে বসলাম, যেখানে গাছের ডাল-পালা বেশী বেশী রয়েছে। আজকে
তালগাছের ভূতটা আমার দিকে তাকাবেই! এতোদিনে নিশ্চয়ই রাগ পরে গেছে! আজ
কেনো যেন, ইচ্ছে করেই একটু সেজেছি। চোখে কাজল দিয়েছি, কপালে টিপ পরেছি,
চুল বেণী করেছি। মনে মনে বহুবার নিজেকে প্রশ্ন করেছি, আমি এসব কেন করছি?
কার জন্য করছি? সুসু’র জন্য? কিন্তু আমি তো বয়ফ্রেন্ড সহ্য করতে পারি না!
তাহলে এসব ভাবছি কি করে? করছিই বা কেন? জানি না… আমি কিচ্ছু জানি না।
সুসু আমার সমান্তরালে পাশের দু’ডেস্ক পরে গিয়ে বসলো। আরো আনন্দ হতে লাগলো
আমার। জানালার দিকে তাকাতে হলে আমার দিকে তাকাতে হবেই । ক্লাস শুরু হলো।
বোতল ভূতের ক্লাস। তা সত্ত্বেও আমি সুসুর দিকে তাকিয়ে থাকলাম। পুরো
ক্লাসে একবারও তাকালো না আমার দিকে। এরপরের ক্লাস গেল, এরপরের ক্লাসও
গেলো। কিন্তু নবাবজাদার আমার দিকে তাকানোর নামই নেই। উল্টো ফোর্থ পিরিয়ডে
দেখলাম লম্বুটা অতসীর সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। রাগে গা জ্বলতে লাগলো
আমার। মনে মনে অতসীকে গালাগাল করতে লাগলাম, “ঐ খাটাশের নানী। তোর তো
বয়ফ্রেন্ডের অভাব নাই। এখন তানজীম রানিং। কথা বলতে হয় কি হাসাহাসি করতে
হয় তোর তানজীমের সাথে গিয়ে কর না। সুসুর দিকে নজর দিস কেন? শয়তানের নানী,
ব্যাঙ্গের ছাতা কোথাকার!”
সেদিনের মতো ক্লাস শেষ হয়ে গেলো… আজও লম্বুটা আমার দিকে তাকায় নি। বাসায়
ফিরে গেলাম। রাতে কিছু খেলাম না। ঘুমানোর সময় ইচ্ছেমতো কাঁদলাম। মনে মনে
বয়ফ্রেন্ডের গুস্টি কিলাতে কিলাতে হাত-পা ব্যাথা করে ফেলেছি। কিন্তু কোনো
লাভ হয় নি। আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারলাম না।
                           ~~~*~~~
প্রতিদিনই তাকাবো না, তাকাবো না করেও সুসুর দিকে তাকিয়ে থাকি। চিৎকার করে
কাঁদতে ইচ্ছে করে, যখন ওকে আমার দিকে না তাকিয়ে অন্য কোনো মেয়ের সাথে কথা
বলতে দেখি। এভাবেই দিন যেতে লাগলো। আমি আগেই ‘শুটকি’ ছিলাম, এখন হয়ে গেছি
‘পাটকাঠি’।
দেখতে দেখতে টেস্ট পরীক্ষা চলে এলো। সব রোমিও, জুলিয়েটরা প্রেম ভুলে পড়তে
বসেছে, আর আমি বসে বসে মিফতাহ জামানের গান শুনি, আর কাঁদি। মা প্রায়ই এসে
জিজ্ঞেস করে আমার শরীর খারাপ কি না। বাবাকেও দেখি, আমাকে নিয়ে চিন্তায়
আছে। কিন্তু আমি জোম্বীর মতো হয়ে আছি।
দিলাম টেস্ট পরীক্ষা। রেজাল্টও হলো। একটুর জন্য ফেল করা থেকে বেঁচে
গেলাম। ফেলই তো করতাম। পরীক্ষার সময়ও তাকিয়ে থাকতাম সুসু’র দিকে। কোনোমতে
পাস করেও তাই খুশি ছিলাম।
একদিন আপু আমাকে ধরলো হঠাৎ করে। আপু মেডিকেলে ২য় বর্ষে পড়ে। সারাক্ষনই
পড়ালেখা করে। আমার ঠিক উলটো টা!
“কি ব্যাপার নুসু ম্যা’ম… মন খারাপ?”
“না আপু।আমি ঠিক আছি।” জোর করে হাসার চেষ্টা করলাম।
 “হুমমম… তাহলে নুসু ম্যা’ম এর এবারকার রেজাল্ট টা এত বেশী খারাপ হলো
কেনো? অবশ্য কোনোকালে তেমন ভালো রেজাল্ট করিসও নাই।”
চুপ করে থাকলাম আমি। কিছু বললাম না।
“নুসু, কি হয়েছে তোর? আপুকে বলা যায়? এভাবে মন খারাপ করে থাকলে তো অসুস্থ
হয়ে যাবি। আমাকে বলে দেখ্, যদি কোনো হেল্প করতে পারি।”
আপুকে কিছু বলবো কি না… বুঝতে পারছি না। পরে যদি পঁচায়? ধূর… যা আছে
কপালে। বলেই দেখি, যদি আপু কোনো সলুশন দিতে পারে!
আপুকে সব বললাম। সুসু’র কলেজে আসার দিন থেকে এই দেড় বছরে ওর জন্য যা যা
করেছি… সব। যখন আজিমপুরে গিয়ে সুসু’কে লুকিয়ে দেখার কথা বলছিলাম, তখন আপু
হাসতে হাসতে পড়ে যেতে লাগলো। কোনোমতে হাসি থামিয়ে বলল, “আমি আমার জীবনে
কোনোদিন শুনি নি, প্রেমিকা, প্রেমিককে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে যায়, হা হা
হা…”
আমি মহাবিরক্ত হয়ে বললাম, “সুসু মোটেই আমার প্রেমিক নয় আপু। ও আমাকে
একদমই সহ্য করতে পারে না।”
আপু কোনোমতে হাসি থামিয়ে বললেন, “আচ্ছা… ঠিক আছে, ঠিক আছে… তুই বাকি ঘটনা বল।”
আমি বললাম। আমার পুরো কথা শুনে আপু তখন বলল, “একটা সমাধান আছে তোর জন্য।”
“কি সেটা?”
“সুহাস কে তোর সব কথা বল। এই যে, তুই এতো কষ্ট করেছিস, করছিস… এসব বল। আই
মিন, সোজা কথায়, প্রপোজ কর।”
“আমি সুসু’কে প্রপোজ করবো? এতোদিন ধরে ছেলেরা আমকে প্রপোজ করতো আর এখন
আমি আর একটা ছেলেকে প্রপোজ করবো?” আৎকে উঠলাম আমি।
“এতোদিন যা যা করেছিস, সেটাই বা কম কি? প্রপোজ করা তো সেই তুলনায় আরো সহজই।”
ভাবতে লাগলাম… আপু হয়তো ঠিকই বলেছে। কিন্তু………
“যদি রাজি না হয়?”
“হুমম… ভালো প্রশ্ন করেছিস। তাহলে আর কি! দেবদাসী হয়ে যাবি। আর বসে বসে
মিফতাহ জামানের গান শুনবি… ‘চোখেরই জল যায় যে ছুঁয়ে… আমার এ অধর।’”
“ধূর… পারবো না আমি।”
“তুই তো কারাতে পারিস, এক কাজ করলে পারিস তাহলে। কষিয়ে দু’টো জুডোর
প্যাঁচ দিয়ে বলবি ‘ভালোবাসবি কি না বল’।”
“আপু… তুমি ফান করছো…”
“আরে নাহ… আমি সিরিয়াস। তুই ভেবে দেখ।”
“এহ… ও ব্যাথা পাবে না?”
“হুমমম… তুই তাহলে ব্যাথাও দিতে চাস না। তাহলে এক কাজ কর। একটা চাকু নিয়ে
যা। রাজি হতে না চাইলে বলবি ‘ভুড়ি ফাঁসিয়ে দিবো’। সত্যি সত্যি তো আর
ফাঁসাবি না… ভয় পেয়েই রাজি হয়ে যাবে।”
আপুর এই আইডিয়া টা খারাপ না। ভেবে দেখলাম। তবে আপুকে কিছু বললাম না। উঠে
চলে এলাম আপুর সামনে থেকে।
লম্বুর নাম্বারে কল করলাম… অনেকদিন ধরে নাম্বারটা নিয়ে রেখেছি। কল দেওয়ার
ছুঁতো পাই নি। আজ পেয়েছি!
“হ্যালো”
“কাল… ঠিক সকাল দশটায় ধানমন্ডি লেক এর পাড়ে আসবে… আমি থাকবো।”
“কে আপনি?”
“আমি নুসরাত, ফ্রেন্ডরা শর্ট করে ডাকে নুসু… তুমি সুহাস… আমি তোমাকে শর্ট
করে ডাকি সুসু… এখন চিনতে পেরেছো?”
“হু”
“যা বললাম, মনে থাকবে?”
“হু।”
“আসবে তো?”
“হু।”
“রাখলাম তাহলে…”
“হু।”
ফোন রেখে দিলাম…। ‘হু-পুরুষ’ হইয়াছেন… ইসস… ভাব কতো! কালকে ভাব ছুটাবো,
দাঁড়াও। ভাবছি আমি। ডাইনিং টেবিল থেকে ফল কাটার ছুরিটা নিয়ে ঘুমাতে
গেলাম। অনেকদিন পর শান্তিতে ঘুমালাম। কাল একটা ‘এসপার-ওসপার’ করেই ছাড়বো!
                       ~~~*~~~
রিকশা ভাড়া মিটিয়ে রিকশা থেকে নামলাম। হাতঘড়িতে দেখলাম দশটা বাজতে আরো
পাঁচ-ছয় মিনিট বাকি আছে। হেঁটে হেঁটে লেক এর পাড়ের দিকে যেতে লাগলাম।
তালগাছের ভূতটা এসে পড়েছে!!!
এক হাতে কি যেন একটা আড়াল করে রেখেছে। আমিও হ্যান্ডব্যাগ থেকে ছুরিটা বের
করে বাম হাতে আড়াল করে রাখলাম। আমাকে দেখেই লম্বুটা মুখ ঘুরিয়ে লেকের
পানির দিকে তাকিয়ে থাকলো। রেগে উঠতে গিয়েও রাগলাম না আমি। ওর ‘ভাব মারা’
আজ ছোটাবো।
“কেমন আছ?”
“ভালো।”
“লেকের পানির দিকে তাকিয়ে কথা বলছো কেনো? আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলা যায়
না? নাকি আমার চেহারা এতোই খারাপ যে তাকানো যায় না?”
সুসু এরপর আমার দিকে তাকিয়েই আবার মাথা নিচু করে ফেললো। এবার আর কিছু
বললাম না আমি। আর কত জোর করবো! সরাসরি আসল কথায় চলে আসলাম।
“তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।”
“বলো।”
“আমি তোমাকে অনেক পছন্দ করি। হয়তো ভালোবেসেও ফেলেছি। তোমাকে দেখার জন্য
আমি প্রতি কলেজ ছুটির দিন গুলোতে তোমার বাসার কাছে গিয়েছিলাম… শুধু
তোমাকে একবার দেখবো সে আশায়। তুমি আজিমপুর অফিসার্স কোয়ার্টারের 4c
ফ্ল্যাটে থাকো। তোমরা দু’ ভাই, এক বোন। ওরা কে কোথায় পড়ে তা ও জানি। আমি
লুকিয়ে লুকিয়ে তোমাকে অনেকবার দেখেছি। কিন্তু তুমি একবারও আমার দিকে
তাকাও নি। সেজন্য আমি প্রতিদিনই কাঁদি। আমার দিকে এখন তাকিয়ে দেখ, আমার
চোখ ভেজা। এখন তোমাকেও আমাকে ভালোবাসতে হবে। বলো তুমি রাজি কি না।” এক
নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে থামলাম। প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে আমার কেনো যেনো।
“যদি রাজি না হই?” ভাবলেশহীন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো সুসু।
“তাহলে এই ছুরি দিয়ে তোমার ভুড়ি ফাঁসিয়ে দিবো।” হাতের ছুরিটা বের করে বললাম।
আমার কথা শুনে হাসতে লাগলো তালগাছের ভূতটা। আর এদিকে আমি কেঁদেই যাচ্ছি।
সুসু ওর আড়াল করে রাখা হাতটা সামনে আনলো। এক গুচ্ছ সাদা গোলাপ!!! আমার
প্রিয় রঙের গোলাপ!!!
“আমার জন্য?” কান্না ভুলে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম আমি।
“হ্যাঁ… গুনে দেখো তো।”
গুনলাম আমি। আঠার টা গোলাপ! এতোক্ষণে মনে পড়লো আমার!
“হ্যাপি বার্থডে নুসু…”
আজ ৮ই জানুয়ারী। আমার ১৮তম জন্মদিন। লম্বুটার চিন্তায় নিজের জন্মদিনটাই
ভুলে গিয়েছিলাম প্রায়। কাঁদতে কাঁদতেই লম্বুর গলা জড়িয়ে ঝুলে পড়লাম আমি।
“থ্যাংক ইউ সুসু… আই লাভ ইউ…”
আর মনে মনে বলতে লাগলাম, ইরা, নিপা, প্রান্তি আমাকে মাফ করে দিস। তোদের
কথা আমি রাখতে পারি নি!
                          ~~~*~~~
গল্পের এখানেই সমাপ্তি। টেনে আর লম্বা করছি না। একটু হিন্টস দিয়ে রাখি…
“অতঃপর উহারা সুখে শান্তিতে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হইয়া বসবাস করিতে
লাগিলেন।” বাকিটা পাঠক/পাঠিকারা মন মতো সাজিয়ে নিন। কারণ, গল্পটা পুরোটাই
কাল্পনিক। মন মতো কিছু একটা ভেবে নিলেই চলবে।
***৮ই জানুয়ারী আমার এক কাজিন, জাহিদুল ইসলাম (অর্নব) এর জন্মদিন ছিল।(গল্পের
নুসুর সাথে ওর কোনো সম্পর্ক নেই!) এই গল্পটি উৎসর্গ করছি অর্নবকে আর এই
গল্পের নায়ক খালিদ হাসান সুহাস ওরফে ‘সুসু’ ভাইকে। গল্পের চেয়েও সুন্দর হোক উনার জীবন!***


সাকিব মাহমুদFb id-haru mia

No comments:

Post a Comment