Subscribe:

সোনার কাঠি,রুপোর কাঠি

গ্রীল দেয়া অনেক বড় একটা জানালা । তাতে গাড় নীল রঙের পর্দা দেয়া । জানালার একপাশে,দইয়ের  হাড়িতে লাগানো আছে মানিপ্ল্যান্ট । আজকাল লতাগুলোর যত্ন নেয়া হয় না বললেই চলে । শেষ কবে মানিপ্ল্যান্টে  পানি পড়েছে,মনে করতে পারে না মেধা । আজকাল সব কাজে তার খুব আলসেমি ।


দিনের বেশিরভাগ সময় জানালার পাশে বসেই সময় কাটে তার । আকাশ তার বড় প্রিয় । হোক রাতের,হোক দিনের ।

বিছানাটাও তাই এমন ভাবে রাখা,যেন শুয়ে শুয়েই আকাশ দেখতে পায় মেধা । ছোটবেলায় এমন আকাশপ্রীতি ছিলো না যদিও । দুরন্ত মেয়েটি হঠাৎই একদম চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলো । সবার থেকে দূরে সরে সরে থাকতে চাইতো । তাই আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের মনে কথা বলার চেয়ে ভালো পদ্ধতি সে আর খুঁজে পেলো না । এই চুপচাপ স্বভাবের কারনে বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব একটা বন্ধু-বান্ধব নেই তার । ক্লাশে প্রথম দিন থেকেই মেধার বসার জায়গাটিও জানালার পাশে । সেটি তার খুব প্রিয়,তা নয় । কিন্তু,জানালার পাশেই রাস্তায় কত মানুষ হেটে যেতে দেখা যায় । কেউ শুধুই ছুটছে,কারো আবার সময় এগুতেই চায় না । মেধা দ্বিতীয় দলের ।

বাবা-মার খুব আদরের মেয়ে সে । কোন কিছুর অভাব সে কখনো অনুভব করেনি । তার চারপাশের মানুষগুলো তাকে পাগলের মত ভালোবেসেছে । কিন্তু,জীবন কোথায় যেন সুর হারিয়েছে । মেধা ভাবে,কেনো শুধুমাত্র একজন মানুষের ভালোবাসা আরকজন মানুষের জীবনে এতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায় ?   

মানবিক অনুভূতি গুলো কখনো কখনো বড় দূর্বোধ্য । তাই,জীবনের একুশটি বসন্তের মাঝে ঠিক কবে মেধার মনে একটু রঙ চড়েছিলো তা কেমন রহস্য থেকে যায় ।

শুধু জানত,কেউ একজন তার সমস্ত স্বত্তা জুড়ে বাস করে । প্রায় রাতে ঘুম ভেঙ্গে গিয়ে যখন পানির গ্লাস টা হাতে নেয়,তখন পানি আর গলা দিয়ে বেয়ে ওঠা কান্নার রোলের যুদ্ধে হার টা সবসময় মেধার ই হয় ।

যাকে নিয়ে তার পৃথিবী সে কখনো বোঝেনি মেধার ভালোবাসা । কতবার সে উদভ্রান্তের মত ছুটে গিয়েছে । কিন্তু,প্রতিবারই ফিরে এসেছে টুকরো হৃদয় নিয়ে । যদি রুপকথার কোন গল্পের মত জাদুর কাঠি ছুইয়ে জীবনের একমাত্র চাওয়া পূরণ করার সুযোগ পেত মেধা,তাহলে খুব একটা খারাপ বোধহয় হত না ।

শ্রাবণ নামের মানুষটাকে ঘিরে মেধার এই ভালো লাগাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে ।  

শ্রাবণ,মেধাদের এলাকায় খুব পরিচিত নাম । ভালো একটা ছেলের যা যা গুণ থাকা উচিৎ সবই তার আছে । এসব ছেলেপুলের নাম দিয়ে মা-বাবা নিজেদের ছেলে মেয়েদের জীবন অতিষ্ট করে তোলেন । মেধার জন্য ব্যাপারটা আরো ভয়াবহ ছিলো । শ্রাবণ মেধাদের পাশের বাসায় থাকত । ছোটবেলা থেকে এই ছেলের জন্য মনে তীব্র রাগ পুষে রেখেছিলো মেধা । ক্লাস ফাইভে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি,এইটেও তা । একরাশ বিরক্তি নিয়ে মেধা ভাবত, কি দরকার এতো ভালো ছাত্র হওয়ার ?
মেধা শ্রাবণের বছর দুয়েকের ছোট । মাঝে মাঝেই যখন নামাজ পড়ে আসার সময় মেধার মুখোমুখি পড়ে যেতো,কপাল কুঁচকে মেধাকে বলত, "সরো ... " ভাবটা এমন ছিলো,যেন মেধা তার পুরোটা রাস্তা জুড়ে দাঁড়িয়ে ।

এস এস সি তে পুরো চিটাগাং বোর্ডে সে ছেলে প্রথম হয় । কোন মানে আছে !!

এতোকিছুর মধ্যে একটা শান্তির ব্যাপার ছিলো,শ্রাবণ ঢাকায় চলে যায় রেজাল্ট দেয়ার পরপরই । মেধা তখন স্কুলে বুক ফুলিয়ে বলতো,"দেখেছিস,আমার অভিশাপের ফল !! "

এরপর অনেকদিন শ্রাবণের কোন খবর পাওয়া যায় নি । মাঝে মাঝে তার আব্বু-আম্মু ছেলেকে দেখতে ঢাকায় চলে যেতেন । শ্রাবণও আসত হয়তো । তবে,মেধার মুখোমুখি পড়েনি কোনদিনই ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর কিছু দিন পর পরই শ্রাবণ বাসায় চলে আসত । মেধার সাথে দেখা হতো প্রায়ই । কিন্তু,কথা হতো না । দেখা হলেই শ্রাবণ পরিচিত একটা ভাব নিয়ে হাসত,এই যা । তবে, মেধার প্রচন্ড হাসি পেতো,আগে কত অদ্ভুত চিন্তাই না সে করতো ।

ভালোই চলছিলো সবকিছু । মেধা এইচ এস সি পরীক্ষায় বেশ ভালো ভাবেই উত্তীর্ণ হল । ফ্যাকড়া বাধলো,যখন ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারটা মাথার উপর চেপে বসলো । মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে,মেধার মার অনুরোধে এই শ্রাবণই তার টিউটর নিযুক্ত হল ।

প্রথম দিন,শ্রাবণ মেধা কে বলল, "আমি তোমাকে কি পড়াবো আমি নিজেই বুঝতে পারছি না । "
মেধার তখন মনে মনে ভাবনা,"তুই কিছু বুঝবিও না,গাধা !! "
তোমাকে আমার প্রিয় একটা কবিতার কিছু চরণ শোনাই,শোন-

"The woods are lovely, dark and deep.
 But I have promises to keep,
 And miles to go before I sleep,
 And miles to go before I sleep. ..."

মেধা লাইনগুলো হা করে গিললো । কিছুই বোঝেনি সে ।

শ্রাবণ বলতেই থাকল,"আমার কেনো যেন সবসময়ই মনে হতো,আমি বেশিদিন বাঁচবো না । এই চিন্তা কেনো হতো জানি না । তবে,প্রথম যেদিন মৌমিতা ম্যাম লাইনগুলো ক্লাসে বলছিলেন,আমার মনে হয়েছিলো ফ্রস্ট সাহেব হয়তো,আমার জন্যই এই লাইনগুলো লিখে গেছেন । এই লাইনগুলো শুনলেই মনে হতে থাকে,আমার তো এখনো অনেকটা পথ চলা বাকি । কেনো মরতে যাব এতো তাড়াতাড়ি ? miles to go before i sleep"

ধীরে ধীরে কিছু একটা পরিবর্তন বোধহয় ঘটছিলো । যখনই শ্রাবণ পড়াতে আসত,মেধার মনে হতে লাগলো,এই মহাবিশ্বে একটা পড়ার টেবিল এবং তারা দুজন ছাড়া বুঝি আর কেউ নেই । প্রতিদিন অদ্ভুত একরকম কষ্ট অনুভূত হতো মনে । শ্রাবণ চলে যাওয়ার পর মেধা আবিষ্কার করত,তার কিছুই পড়া হয়নি ।

কি হচ্ছে,বুঝতে অবশ্য বেশি সময় লাগেনি তার । এই ছেলেটার জন্য মনে অদ্ভুত ভালো লাগার জন্ম হয়েছিলো । সেটা না বলতে পারার কষ্টটা তাকে তাড়িয়ে বেড়াতে লাগলো সবসময় ।

প্রতিদিনই কাগজে "প্রিয় শ্রাবণ" লিখে আর কিছু লিখতে পারেনা মেধা । ঘরময় দুমড়ানো কাগজের স্তুপ । তার আড়ালে লুকিয়ে থাকা,মেধার ভালোবাসা ।

অবশেষে,চিঠি একটা লিখেছিলো মেধা । শ্রাবণের জন্মদিনের উপহার হিসেবে কবিতার একটা বই সে অনেক কষ্টে খুঁজে বের করেছিলো । উপহারের উদ্দেশ্যটা ছিলো গৌণ । মেধা চেয়েছিলো,বইয়ের প্রথম পাতায়,তার অনেকদিনের জমানো এলোমেলো কথাগুলো লিখে ফেলা চিঠিটা রেখে দিবে ।

এরপর শুধুই বিশেষ দিনটার অপেক্ষা ।

সেদিন সাদা রঙের একটা শার্ট পরে এসেছিলো শ্রাবণ । আচ্ছা,ছেলেটাকে কেউ বলেনি তাকে কত ভালোমানুষের মত দেখায় । "শুভ জন্মদিন" বলে,উপহারটা দিতেই কি যে ছেলেমানুষের মতো খুশি হয়ে উঠল ! কিন্তু,ভয়টা পেয়ে বসলো তার পরপরই । মনে হতে লাগল,থাকত সবকিছু রহস্য । এখন যদি শ্রাবণ রাগ করে বসে ??যদি আর কখনো কথা না বলে??

এরপর শুধুই অপেক্ষা । পড়ার টেবিলে,সাদা কাগজে অনর্থক আঁকিবুকি । পড়ার সময় পেরোয় । শ্রাবণ আসে না । অদ্ভুত একরকম কষ্ট হতে থাকে মেধার । কেঁদে কেঁদে জ্বর উঠিয়ে ফেললো সে ।

প্রতিদিন ভোরে ছাদে ওঠা মেধার একটা নেশার মত ছিলো । জ্বরের কারণে পরদিন তার আর যাওয়া হলো না ।

ভোরে ছাদে গেলে হয়তো শ্রাবণের সত্যিটা তার মুখেই জেনে ফিরত মেধা । সেদিন শ্রাবণ ছাদে মেধার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলো । জানতো সে,এই অসম্ভব ভালো এবং পাগলী  মেয়েটা প্রতিদিন ছাদে এসে ভোর হওয়া দেখে । মেয়েটার ভুল ভাঙ্গানোর জন্য এর চেয়ে চমৎকার সময় আর হতেই পারে না । কিন্তু,আসেনি সে । শ্রাবণ ঠিক বুঝে উঠতে পারে না,মেয়েটার প্রতি তার অদ্ভুত এই মায়া জন্মানোর কারণ । সে শুধু এতটুকুই জানে,তার ভালবাসা ছাড়া আর সবই মিথ্যা । মেধাও তা ই ।

সুস্থ হতেই মেধা জানলো,শ্রাবণ ঢাকায় চলে গেছে । তার মা তাকে জানালো,কি একটা বই সে মেধার জন্য দিয়ে গিয়েছে । জ্বরের কারণে তার মা তাকে আগে জানায় নি কিছু ।

মেধা পাগলের মত বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছে । কিছু কি বলে যায় নি শ্রাবণ ? একটা ছোট্ট চিঠি পেলো সে । সেখানে মুক্তোর মত অক্ষরে লেখা,

"তোমাকে প্রায়ই মৌমিতা ম্যাম এর কথা বলতাম,মনে আছে তোমার ? তুমি অনেক সাহসী । আমি যদি তোমার মত হতে পারতাম ... "

অনেক কেঁদেছিলো মেধা । পৃথিবীটা কে শুন্য মনে হতে লাগলো তার  । প্রচন্ড রকম হতাশায় ভুগেছে দীর্ঘদিন । সেবার তাই আর কোথাও ভর্তি হওয়া হলো না ।

শ্রাবণের বাবাও সেবার রিটায়ার্ড করেছেন । তিনি স্বপরিবারে ঢাকায় চলে গেলেন । এরপর বহুদিন তাদের সাথে আর কোন রকম যোগাযোগ হয়নি ।


অনেকদিন পরের কথা-

মেধা এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগে অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী । শান্ত মেধার অস্থির চোখজোড়া প্রায়ই কাউকে খুঁজে ফিরত । নাহ্,সে কখনো নিজ থেকে কাউকে খোঁজার চেষ্টা করেনি । শুধু জানত, তার জীবনের সত্যি টা তার সামনে কোনদিন এসে দাঁড়ালে সে প্রশ্ন করবে । জানতে চাইবে,"তার দোষটা কোথায় ছিলো? "

রুদ্রের কথা-

বেশ কয়েকদিন থেকে ক্লাশের একটা মেয়েকে খুব গভীর ভাবে খেয়াল করছি । মেয়েটার চেহারায় কেমন একটা মায়া । কারো সাথে খুব একটা কথা বলে না । প্রায়ই জানালার কাছে এসে বসে । টিচার আসে-যায় কোন দিকেই খেয়াল নেই মেয়েটার ।

মেয়েটাকে প্রথম যেদিন খেয়াল করি,সেদিন কি নিয়ে যেন খুব তাড়াহুড়ায় ছিলাম । ক্লাস থেকে বের হওয়ার সময় হঠাৎ মেয়েটা মুখের সামনে পড়ল । চমকে উঠে সে হাত থেকে তার ডায়েরীটা ফেলে দিলো । ডায়েরীটা উঠিয়ে দিতেই,মেয়েটা সেটা নিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো । মুখে ধন্যবাদের বালাইও ছিলো না ।

খুব অবাক হয়েছিলাম । কিন্তু,তারপর যা হলো,তা আরো অদ্ভুত  । ক্লাসে এসেই সে মেয়েটার আশে পাশে জায়গা খুঁজে বের করতাম আমি । খুব কাছ থেকে খেয়াল করতাম তাকে । কেনো এমন করছিলাম,তা আমি নিজেই জানি না । মেয়েটা কারো সাথে কথা বলে না,ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত মনে হচ্ছিলো আমার ।

একদিন আমি নিজেই মেয়েটার পাশে গিয়ে বসলাম । বললাম,"আপনার নামটা জানতে পারি ?"
প্রশ্ন শুনে মেয়েটা খুব অবাক হয়েছে বলে মনে হল । পালটা প্রশ্নে সে বলল,"আমাকে বলছেন?? " যেনো বিশ্বাসই করতে পারছে না,তার সাথে কেউ কথা বলতে এসেছে ।
তারপর বলল,"মেধা ।"

এর পরেই জানালার দিকে তার মুখ ঘুরিয়ে ফেললো । ভদ্র ভাষায় বুঝিয়ে দেয়া,"আপনার সাথে কথা বলতে আমি ইচ্ছুক নই । "

বিরক্ত হয়েছিলাম । ভাবলাম,কি দেমাগী মেয়েরে বাবা । এমন বলেই তো কেউ কথা বলে না ।
কিন্তু,আমি কেনো যেনো কথা না বলে থাকতে পারলাম না । প্রতিদিনই মেধার পাশে গিয়ে বসতাম । তার সাথে হাজারো বিষয় নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করতাম । প্রথম দিকে সে আমার দিকে তাকাতেও চাইতোনা । আজকাল তাকায় ,তবে খুশি হচ্ছে নাকি বিরক্ত হচ্ছে বোঝা মুশকিল ।

বুঝতে পারছিলাম আমাকে সে কিছু বলতে চায় । সেই কিছু টা কি,আমার জানা নেই । এই বয়সের একটা মেয়ের চোখে এতো শূন্যতা কেনো,জানতে খুব ইচ্ছা হয় আমার । কিন্তু,জিজ্ঞেস করার সাহস হয়ে ওঠে না । বুঝতে থাকি,আমার আকাশটায় রংধনুর রাজত্ব শুরু হচ্ছে ধীরে ধীরে । আমি কথা বলে যেতে থাকি,এই আশায় কোনদিন হয়তো মেধা আমাকে সব খুলে বলবে । আর আমিও জানাবো আমার এতো কথার ভীড়ে লুকিয়ে থাকা ভালোবাসার কথাগুলি ।

একদিন হঠাৎ করে ভার্সিটিতে আসার সময়,মেধাকে দেখলাম কোন একটা ছেলের দিকে ছুটে যেতে । কি হয়েছে বুঝে উঠার আগেই দেখি,মেধা মাটিতে বসে পড়েছে । আমি ছুটে গেলাম । ছেলেটা কিছুক্ষণ বিব্রত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকার পর কি করবে বুঝতে না পেরে চলে গেলো ।

মেধাকে কিছু জিজ্ঞেস করিনি । ওকে জোর করে ঘুরাতে নিয়ে গেলাম । রিকশায় উঠেও বিপদে পড়ে গেলাম । কোথায় যাব বুঝতে পারছিলাম না । ও অনবরত কেঁদেই যাচ্ছিলো । এক সময় মেধা নিজেই বলল,সে হলে ফিরে যেতে চায় । আমি ওকে নামিয়ে দিয়ে চলে এলাম ।  

মেধার কথা-

গতকাল তৌফিক ভাইয়ের সাথে দেখা হয়েছিলো । এখন মনে হচ্ছে,দেখা না হলেই ভালো ছিলো । শ্রাবনের বন্ধু তৌফিক । দুজনই একই সাথে পড়ালেখা করছিলেন । কলোনীতে থাকতে অবশ্য কখনো তার সাথে কথা বলা হয়ে ওঠেনি । কিন্তু,গতকাল তাকে দেখে কথা না বলে থাকতে পারিনি । যাব না,যাব না করেও,আমি ই ছুটে গিয়েছিলাম ।

শ্রাবনের কথা জানতে ছুটে গিয়েছিলাম । অনেক কিছু জানার ছিলো আমার শ্রাবণের কাছ থেকে । কিন্তু,তৌফিক ভাইয়ের কাছ থেক সব কিছুর এমন অসম্ভব জবাব তো আমি শুনতে চাইনি ।

তৌফিক ভাইয়ের থেকে জানলাম,চিটাগাং থেকে চলে আসার অল্প কিছুদিন পরেই শ্রাবণ সুইসাইড করে । কেনো সে এমন করলো,সেটা রহস্যই থেকে গেলো । শান্ত,চুপচাপ নির্ভেজাল একটা ছেলে । কারো সাথে কোন কালে কোন ঝামেলা ছিলো না । তার কথা থেকেও কখনো বোঝা যায় নি ভেতরে ভেতরে এই ভয়ঙ্কর চিন্তা সে পুষে রেখেছিলো ।

কয়েকদিনের জন্য পালিয়ে যেতে ইচ্ছা করছে । মা কে ফোন করে তাই জানিয়ে দিলাম,কয়েকদিনের জন্য চিটাগাং থেকে বেড়িয়ে আসব । রুদ্র কে কি কিছু জানানো উচিৎ ? পরক্ষণেই এই চিন্তা বাতিল করলাম । কি দরকার ? আমি ভার্সিটিতে না গেলে ওর কোন সমস্যা তো হওয়ার কথা নয় ।

রুদ্রের কথা-

এই ঘটনার পর অনেকদিন পেরিয়েছে । মেধা এরপর বেশ কয়েকদিন ভার্সিটিতে আসেনি । ফোন করে জানলাম,ও চিটাগাং এ । আমি তখনই সব কিছু জেনে নিতে পারতাম । কিন্তু,জিজ্ঞেস করতে পারিনি,কি হয়েছিলো সেদিন ।

মেধা কে কাঁদতে দেখে বেশ বুঝতে পারছিলাম,কিছু একটা হয়েছে । এবং সেটা হয়তো আমার জন্য খুব সুখকরও হবে না । তবে বুঝেছিলাম,ওকে কাঁদতে দেখা আমার জন্য প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার ।

অনেকদিন সময় নিলাম,ভাবার জন্য । যে চিন্তা মনে রয়ে সয়ে উঁকি দিচ্ছে,তা কতখানি সত্যি জানার জন্য ।

সেদিনের সেই ছেলে কে খুঁজে বের করলাম । তার কাছে সব শুনে আমি স্তম্ভিত হয়ে রইলাম অনেক্ষণ । বেশ অভিমানও হল । এতদিন থেকে ওর সাথে আছি,ও কখনো কিছু বলার প্রয়োজনই মনে করেনি ? না করুক । কিন্তু আমি জানি মেধাকে ছাড়া সব কিছু কেমন ফাঁকা ফাঁকা মনে হয় । ও যখন পাশে থাকে নিজের জীবনটাকে অনেক অর্থবহ লাগে ।

আমি ভেবে ফেললাম । ওকে সব বলব আমি । জানিনা,আমার কথা শুনে কি ভাববে ও । মেধার আমাকে ভালোবাসতেই হবে কথা তো নেই,ভাবুক যা ভাবার  ।

অনেক আয়োজন করে তাই চিঠি লিখে ফেললাম ।

সুযোগ বুঝে,সেই চিঠিটা মেধার বইয়ের ভিতর ঢুকিয়ে দিলাম । অনেক হাস্যকর তবুও চিঠিতে লিখে দিয়েছিলাম,"যদি একটুও ভালোবাসো,তাহলে নীল শাড়ি পরে এসো । আমি বুঝে নিবো । "

পরিশিষ্ট-

রুদ্রের চিঠি হাতে নিয়ে মেধা জানালার পাশে বসে আছে । অনেকদিন পর লতানো মানিপ্ল্যান্টে পানি দিলো মেধা । এই মুহূর্তে চিঠি হাতে জানালার বাইরে তাকিয়ে আকাশ দেখার চেষ্টা করছে সে । চোখে,থেকে থেকে জমে উঠা পানি চোখের গভীরতা বাড়িয়েই চলেছে ।
অনেকদিন আগে এমন একটা কান্ড সেও করেছিলো । কিন্তু,তার অপেক্ষা পূর্ণতা পায়নি । আজ অন্য কেউ তার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করে আছে অনেক আগ্রহ নিয়ে,ভালোবাসা নিয়ে...      
    


- ফারহানা নিম্মী

1 comment: