Subscribe:

রিয়ার ভীণদেশী তারা

ভাগ্য আজ রিয়া ও শুভ্রকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে একই রেখায়।যে রেখায় তারা চলবে একসাথে, হাতে হাত রেখে।কিন্তু, তারা কি একসাথে চলছে?

শুভ্রর কথা,
  রিয়া, আমার সদ্যবিবাহিতা স্ত্রী।সেই বিয়ের দিন থেকে আজ পর্যন্ত আমি চেষ্টা করছি ওকে বুঝার।ওর কোনটা ভাল লাগে আর কোনটা ভাল লাগে না তা জানার।কিন্তু,এ জানার ফলাফলটা এখনও শুণ্যের কোটায় রয়ে গেছে।আসলে ওর কাছে কোন কিছু জানতে চেয়ে আজ পর্যন্ত সেটার কোন সরাসরি উত্তর পাওয়া যায় নি।
  হায়রে নারী জাতি, এ জাতির মন বুঝা বড় দায়! আমি গত এক মাসেও তা বুঝতে পারিনি।আদৌও কি বুঝব?


রিয়ার কথা,
  আমি না পারছি সহজ হতে, না পারছি নিলয়ের স্থানে শুভ্রকে বসাতে। কেন এমন হচ্ছে? আচ্ছা, শুভ্র কি আমার আচরণে কষ্ট পাচ্ছে?
  না না, আমার তো শুভ্রকে কষ্ট দেয়া ঠিক হচ্ছে না।কিন্তু, আমি যে পারছি না! ওর সামনে দাঁড়ালেই যে সমস্ত জড়তা এসে ভর করে আমার মাঝে!

শুভ্রর কথা,
  আমি একটা ব্যাপার বুঝতে পারছি না কেন রিয়া আমার সামনে এলেই এমন চুপ মেরে যায়। ওর এই নির্লিপ্ত আচরণের পিছনে কারণটা কি?
 বাড়ির সবার সাথে ওর সখ্যতা দেখলে আমি অবাক হয়ে যায়।মা, বাবা, মিতু, মৌ সবাইকে ও অনেক আপন করে নিয়েছে।সারাটা দিন মৌ আর মিতুর সাথে হাসি-ঠাট্টায় মসগুল থাকে মেয়েটা।বাবা-মা তো ওকে পেয়ে অনেক খুশি! কিন্তু, আমি কি খুশি? আমি তা নিজেই জানি না……

আচ্ছা, ওর কি বিয়ের আগে…..
আরে ধুর! কি সব ভাবছি আমি! এমনটা কেন হবে?হয়ত আমার সাথে ফ্রী হতে পারছে না বলেই…..

রিয়ার কথা,
  আমার notepad টাতে এতদিন পাতার পর পাতা লিখে গেছি শুধু নিলয়কে নিয়ে।আমার নিজর্স্ব একটা জগৎ ছিল নিলয়কে ঘিরে।এইতো এক মাস হল ওখানে নতুন নাম সংযোজন করেছি।শুভ্রকে নিয়ে লিখতে শুরু করেছি।লিখতে শুরু করেছি শুভ্রের সাথে আমার কথা, আমার অনুভূতি….

“রিয়া….,”
“ডাকছিলে?”
“হুম”
“কেন?”
“চল, দূরে কোথা থেকে ঘুরে আসি।তোমার ভাল লাগবে।”
“আচ্ছা”
“বল তো কোথায় যওয়া যায়?”
“তুমি যেখানে নিয়ে যাবে।”
উহ্! খালি indirect ans!
“শোন, তোমার উত্তরটা কিন্তু আমার পছন্দ হয়নি।”
“পছন্দ হয় নি!”
“না।”
আরে আরে, দেখ, এ মেয়ের কান্ড দেখ!
“পছন্দ হয় নি!” বলে মুখটাকে কেমন দু:খী দু:খী করে বসে আছে! আর কিছুই বলল না! ইচ্ছা করছে ওর কানটা মলে দিতে।তারপর বলতে, “তুমি কি একটা জায়গার specific নাম বলবে?”
নাহ্, ওকে নিয়ে আর পারা গেল না! কি যে করব!

রিয়ার কথা,
  আজ যখন ও আমাকে বলেছিল, “বলতো কোথায় যাওয়া যায়?” তখন কেন যে বলতে পারলাম না! মনে মনে ঠিকই বললাম, “কক্সবাজার, নিয়ে যাবে আমায়?”
কি লাভ হল এই মনে মনে বলাতে? ঘটার মধ্যে একটা ঘটনায় ঘটল, কিছুটা রেগে গেল শুভ্র। অথচ নিলয়কে ধরে বেঁধে কতবার যে নিয়ে গেছি ওই বেলাভূমিতে!
  ইন্নালিল্লাহ্…. কি করছি আমি এসব? আবার নিলয়! না না এই নামটা তো আর উচ্চারণ করা যাবে না! এখন তো শুধু শুভ্রকে নিয়ে এগিয়ে যাবে আমার লিখা।এগিয়ে যাবে আমার জীবনের গল্প……
  নাহ্, আমি আসলেই একটা অকর্মা।এই জীবনে শুধু একটা কাজই মন দিয়ে করতে শিখেছি তা হল মনের কথাগুলোকে লিখে রাখা।
লিখ লিখ রিয়া, তুমি আর কি করবা? laptop কোলে নিয়ে এটার সাথেই কথা বল।
“রিয়া…,”
চমকে ফিরে তাকালাম।পিছনে শুভ্র দাঁড়িয়ে।
“কখন এলে?”
“এইতো কিছুক্ষণ”
দুষ্টটা আজ একটু তাড়াতাড়ি চলে এসেছে।আমার লিখার বারটা বাজাতে হবে না, তাই!

২.

শুভ্রর কথা,
   কি এত লিখে ও? ওর লিখার সময় আমার উপস্থিতি মাঝে মাঝে ওকে ভীষণ অপ্রস্তুত করে তুলে।চমকে উঠে ও।আর ওর এই চমকে ফিরে তাকানোটাই আমার মনে প্রশ্নের সৃষ্টি করে।
  আমার স্ত্রী হিসেবে ওর সব কিছু জানার অধিকার কাগজে কলমে হয়ত আমার আছে।কিন্তু ও কি সে অধিকার এখনও আমায় দিয়েছে? কাছে থেকেও ওর আর আমার মাঝে অনেক দূরুত্ব। ও যেন একটা দেয়াল তৈরী করে রেখেছে আমাদের মাঝে!
এ দেয়াল কিভাবে ভাঙব আমি? ও না চাইলে কি আমার দ্বারা এ দেয়াল ভাঙা সম্ভব?
  এ ভাবনাগুলো যেন আজ আমার ঘুম না আসার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে! অথচ রিয়া, এক গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।কি আছে ওর মাঝে? যা আজও বুঝতে পারিনি!
ঘুমন্ত রিয়াকে দেখতে বেশ লাগছে, ইচ্ছা হলেই ছুঁয়ে দেয়া যায়!

    ভাবতে ভাবতেই আলতো করে রিয়াকে নিজের দিকে টেনে নেয় শুভ্র।আর তখন শুভ্রকে জরিয়ে ধরে ঘুমন্ত রিয়া শুধু একটা শব্দই উচ্চারণ করে।তা হল নিলয়….!

যা শুভ্রের রিয়ার প্রতি সমস্ত আবেগ, ভাললাগাকে সমূলে উৎপাটিত করার জন্য যথেষ্ট।এ যেন একটি ফুলের অঙ্কুরেই বিনষ্ট হতে যাওয়ার উপক্রম।

শুভ্রর কথা,
কাল রাতে রিয়ার মুখে শুনা নিলয় নামটা খালি ঘুরপাক খাচ্ছে আমার মাথায়।তবে কি আমার অবচেতন মনে ভাবা ভাবনাটাই ঠিক? যদি তাই হয় তবে কেন আমার সাথে ও নিজেকে জড়াল?

.

“রিয়া, আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিবে?”
“কি প্রশ্ন?”
“কেন তুমি আমার সাথে এমন করছ?”
“কি করেছি আমি?”
“তুমি জান না তুমি কি করছ?”
“আমি কি তোমাকে কোনভাবে কষ্ট দিয়েছি? দিয়ে থাকলে আমি sorry.”
“শোন রিয়া, দু:খিত বললেই সব সমস্যার সমাধান হয় না।”
“তুমি এভাবে কথা বলছ কেন?”
“তুমি আগে বল নিলয়টা কে?”
“নিলয়ের কথা আমায় জিজ্ঞাস করছ কেন? এ নামটা তুমি কোথায় পেলে?”
“রিয়া, পাল্টা প্রশ্ন করো না। বল নিলয়টা কে?”
“দেখ, আমি বুঝতে পারছি না কেন তুমি এমন করছ!”
“নিলয়ের সাথে তোমার সম্পর্কটা কি?আমি কিন্তু তোমার মুখেই নামটা শুনেছি।”
“আমার মুখে!”
“খুব অবাক হচ্ছ, তাই না?এবার বল কে সে?”
“আমি যাকে ভালবাসি।”
“ও! ভাল। তাহলে কেন নিলয়ের কাছে না গিয়ে আমার কাছে এলে? নিলয়কে বিয়ে করলেই পারতে। নাকি বাবা-মাকে বলতে পারনি ভালবাসার কথা!”
“আমার এখন তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছে না”
“তা তো করবেই না। নিলয়কে এনে দিলে ঠিকই কথার খৈ ফুটবে!”
“শুভ্র, তুমি চুপ কর।”

.

রিয়ার কথা,
  আমার মুখে ও কিভাবে নিলয়ের নাম শুনল? যা হোক, ও যেভাবেই জেনে থাকুক, ওর উচিত হয় নি নিলয়কে নিয়ে এত চিৎকার করা।

 শুভ্রর কথা,
   কেন আমার জীবনেই এমনটা ঘটল!
ও তো নিলয়কে এখনও….. আর এজন্যই আমার সাথে ওর এমন নির্লিপ্ত আচরণ।এমন পরিস্থিতিতে কি করতে পারি আমি?

৫.

“রিয়া, আমি চাই তুমি নিলয়ের কাছে চলে যাও।”

আরে আজব! ও এভাবে কেন ভাবছে?কেন আমাকে নিলয়ের কাছে যেতে বলছে?
“শুভ্র, তুমি কি বুঝতে পারছ তুমি কি বলছ?”
“হ্যাঁ, আমার মনে হয় তুমি নিলয়ের কাছে গেলেই সুখী হবে।”
“শুভ্র…, ছি! লজ্জা করছে না তোমার নিজের স্ত্রীকে অন্যের হাতে তুলে দেয়ার কথা ভাবতে?”
“হা, হা, হা, আমাকে এ কথা বলছ? তোমার লজ্জা করে না বিয়ের পরেও বয়ফ্রেন্ডের কথা ভাবতে?”
“নিলয় নামটা এখন অতীত।এই নামটা আমাদের মাঝে না আনাটাই কি ভাল ছিল না?আর অতীত নিয়ে আমি ভবছি না।তুমি তা টেনে আনছ।”
“মিথ্যা বলবে না।আমি জানি তুমি এখনও তাকে নিয়ে ভাব, স্বপ্ন দেখতে ভালবাস।আমি কি নিলয়ের কথা জানতে পারি না? কোথায় আছেন তিনি?”
“জানি না।”
“জানি না মানে? শোন রিয়া, তোমার কি উচিত না এ ব্যাপারে আমাদের মাঝে স্বচ্ছতা রাখা?”
“এটা জানা কি খুব জরুরী?কিছু কিছু ব্যাপার থাকে যা মানুষের একান্তই নিজর্স্ব।যা নিজের প্রয়োজনেই মানুষ একটা সময় ভুলে যায়।ভুলে যেতে হয়।এটা ঠিক তেমনি।”
“বুঝলাম।তবে পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে হয়ত মানুষ অনেক কিছুই ভুলে থাকতে চায়।কিন্তু চাইলেই কি সবসময় তা হয়?তুমি কি পারবে ভুলে যেতে? কিছু সময়ের জন্য হলেও সে স্মৃতিগুলো তাড়া করে বেড়াবে তোমাকে।কথায় আছে না, মানুষ তার প্রথম ভালবাসা ভুলতে পারে না!
আর তোমার মত পরিস্থিতিতে অনেকেই অভিনয় করে যায়, ভাল থাকার অভিনয়! কখনো কখনো তারা অভিনয়ে এতটাই পাকা হয় যে তাদের আশেপাশের মানুষগুলোও তা ধরতে পারে না।কিন্তু কি লাভ হয় তাতে? এতে কি কোন সুখ আছে?”
“শুভ্র, আমি শুধু একটা কথাই বলব, তুমি নিলয়কে নিয়ে যা ভাবছ আসলে ব্যাপারটা তা নয়।আর আমার সাথে অভিনয় করে যাওয়া মানুষগুলোর অনেক প্রার্থক্য।”
“বুঝতে পারছি তুমি আসলে নিলয়কে নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছুক না।ঠিক আছে, তুমি যদি না চাও তবে কখনো তোমার কাছে নিলয়ের কথা জানতে চাইব না।কিন্তু, একটা কথার কি সঠিক উত্তর দিবে?”
“কি কথা?”
“তুমি কি আমাকে নিয়ে সুখী?”
“কেন, তোমার কি মনে হয় আমি এখানে খুব কষ্টে আছি?”
“রিয়া, আমার কি মনে হয় সেটা পরের কথা।আচ্ছা, আজ পর্যন্ত আমার কোন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর কি তুমি দিয়েছ?তোমার কি উচিত না অন্তত এ উত্তরটা সরাসরি দেয়া?”
“হ্যাঁ শুভ্র, আমি সুখী।কথা দিচ্ছি, আমার দেয়া উত্তরগুলো যেন এখন থেকে সরাসরি হয় সে চেষ্টাই করব। আর তোমাকে অনিচ্ছাকৃতভাবে কষ্ট দেয়ার জন্য sorry.”
“sorry বলার দরকার নাই।তবে কথাগুলো যদি মন থেকে বলে থাক তাহলেই আমি খুশি।”

৬.

  এরপরের লাইনগুলো কি হওয়া উচিত? “অত:পর তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিল?”
হ্যাঁ, একটু দেরীতে হলেও সুখ নামের পাখিটার দেখা তারা পেয়েছিল।তবে, শুভ্রের কিছুটা সময় লেগেছিল আবার আগের অবস্থানে ফিরে আসতে, রিয়াকে নিয়ে আগের মত করে ভাবতে।
  সমূলে উৎপাটিত গাছটা যদি ছোট থাকে তখন আবার মাটিতে রূপন করা হলে সেটা বেঁচে যায়।তবে সেটার একটু বেশী যত্নের প্রয়োজন পড়ে বৈকি।
ওরাও তেমনি অঙ্কুরে বিনষ্ট হতে যাওয়া সম্পর্কটাকে আবার জোড়া লাগিয়েছিল।এগিয়ে গিয়েছিল সামনের দিকে।
  রিয়া ধীরে ধীরে শুভ্রকে বসিয়ে দিয়েছিল নিলয়ের স্থানে। না, এখন আর সে নিলয়কে নিয়ে ভাবে না।তবে তার জীবনের গল্প লিখা বন্ধ হয় না।ওখানে ও যুক্ত করে চলেছে ওর জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোকে….
কথা রেখেছিল শুভ্র।রিয়া চায় না বলে আর কখনো ও জানতে চায়নি নিলয়ের কথা।

৭.
  এভাবেই কেটে যায় একটা বছর।
ওদের প্রথম বিবাহবার্ষীকীতে শুভ্র রিয়াকে একটা মুক্তাসহ ঝিনুক উপহার দেয়।যাতে ও লিখে দেয়…

“if u find urself in the dark room
Flooded with blood & vibrating wall,
Don’t afraid dear!
U r in the safe place in the world
yes, u r in my heart..!”

রিয়া অবাক হয়ে পড়ে লিখাগুলা। তারপর শুভ্রর দিকে তাকিয়ে থাকে অপলক দৃষ্টিতে। ভেতরে ভেতরে ও যেন লাফিয়ে লাফিয়ে চলে!ওর খুশি আজ কে দেখে! শুভ্রর মাঝে এ যে নিলয়েরই প্রতিচ্ছবি!

“রিয়া….”
চমকে বাস্তবে ফিরে আসে ও…
“হু…..”
“কি দেখছিলে এমন করে?”
“কিছু না।”
“তুমি কাঁদছ!”
ও হেসে বলে,“না তো!”
“আজ একটা কথা খুব জানতে ইচ্ছা করছে।”
“কি কথা?”
“যা আজও তুমি আমার আড়ালে রেখেছ।”
“কি সেটা?”
“তোমার প্রতিদিনের লিখে চলা কথা।কতদিন ধরে লিখছ?”
“অনেকদিন।”
“পড়তে দিবে আমাকে?”
“আমার জীবৎদশায় এ লিখা কাউকে পড়তে দেয়ার ইচ্ছা আমার ছিল না।অন্য কেউ চাইলে আমি দিতাম না।কিন্তু তোমাকে কিভাবে মানা করি?”
একটা দুষ্টু হাসি হেসে শুভ্র বলে,
“তুমি না চাইলে দেখব না।তবে…. তোমার আগে যদি আমিই চলে যায় এ পৃথিবী ছেড়ে তখন আবার আফসোস করোনা যেন! কেন যে……”
কথাটা শেষ করতে পারে না শুভ্র তার আগেই রিয়া বলে উঠে,
“কি বললে তুমি?”
ঘটনা আঁচ করতে পেরে দ্রুত সরে পরার চেষ্টা করে শুভ্র কিন্তু পারে না,ওর কানটা এসে খপ করে ধরে ফেলে রিয়া।
“আহ্ কান ছাড়।”
“আগে বল এ ধরনের কথা আর বলবে?”
“না”
“কান ধরে উঠ বস কর।”
“আগে তো কানটা ছাড়বে….”
ছেড়ে দিতেই শুভ্র চলে যায় রিয়ার নাগালের বাইরে….
“তুমি আমার কাছে এলে আবার কানটা মলে দিব”
“sorry.....রিয়া, আর বলব না।এত রেগেছ কেন? Be cool…….
কিন্তু……, আমার ইচ্ছাটা কি পূরণ করা যায় না?”
“ঠিক আছে…., পড়।”
“ধন্যবাদ মহারাণী! আমার ইচ্ছাটা পূরণ করার জন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ।”

৭.
“জীবনের গল্প” শিরুনামে লিখা রিয়ার কথাগুলো পড়তে শুরু করে শুভ্র…..

“চল সমুদ্রে নামি।”
“আহা! কি সুন্দর আবদার! জান না আমি সাঁতার জানি না।”
“তাতে কি আমি তো জানি।”
“কিন্তু, আমার নামার ইচ্ছা নাই।”
“তা এখন তবে কি করবে?”
“তীর ধরে হাঁটব।”
“আমি তো হাঁটব না।”
“নিলয়……! আচ্ছা, তাহলে চল ফিরে যায়।তোমার সাথে যদি আর আসছি…”
“এটা তো তুমি প্রতিবারই বল।কিন্তু আসার সময় তো ঠিকই আস।আর আমি না আসতে চাইলেও নিয়ে আস।”
“ও…! আর আসতে হবে না।চলে যাও। কি হল যাচ্ছ না যে?”
“তুমি যাবে না?”
“না”
“তোমাকে ছাড়া আমিই বা যাই কি করে?”
“ন্যাকামো করবা না, যেতে বলছি যাও।”
দাঁড়িয়ে থাকে নিলয়….
“রিয়া……, একদিকে নীল আর একদিকে সবুজ।কোনটা বেশী সুন্দর?”
“সবুজ”
“না নীল”
“উফ্! কেন জ্বালাতন করছ?”

এমনি করে কখনো সমুদ্র তীরে বেলাভুমিতে, কখনো পাহাড় চূঁড়ায়, কখনো নীল গিরি, কখনো বা শ্যামল গাঁয়ে নিলয়কে নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর কথা, খুনশুটির কথা পাতার পর পাতা লিখে গেছে রিয়া…..

পড়তে থাকে শুভ্র….

ওহু... আমি তো খালি নিলয়কে নিয়েই বকবক করে যাচ্ছি! কিন্তু, তার আগে তো বলা দরকার কোথা থেকে উদয় হয়েছিল বিচ্ছুটা..! আর এলোমেলো করে দিয়েছিল আমার সকল ভাবনা….
তার আগে জানিয়ে দেই আমার কিছু কথা....
তাহলে শুরু করা যাক?
আমি ছিলাম ছোট্ট মেয়েটি সেজে, সবুজ বনের একটা কোণে। যে বনের আলো নীলচে সবুজ, আর মাটি স্বপ্নে ভেজা।সে ভেজা মাটিতে পা ফেলে আমি ঘুরে বেড়াতাম স্বপ্নের দেশে...
কিন্তু সেই দুষ্টুমিতে ভরা শৈশব ছেড়ে হঠাৎ করেই হয়ে গিয়েছিলাম বড়, হয়ে গিয়েছিলাম জড়সড়।ঠিক যেমন হঠাৎ করে বড় হয় আর আট দশটা বাঙালি মেয়ে।
আর বড় হওয়ার সাথে সাথে হয়ে গিয়েছিলাম ভীষণ রকম ছেলেবিদ্বেষী।বিয়ে নামক ব্যাপারটা ছিল আমার দু চোখের বিষ! আমার দ্বারা এ কাজ! Impossiable!

  কিন্তু ঝামেলা বেঁধে গেল তখনই যখন জানলাম, “সৃষ্টিকর্তা প্রত্যেককে সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায়।” যেমনটা তিনি আদমের জন্য করেছেন, সৃষ্টি করেছ্যেন হাওয়াকে।
তবে কি আমার জন্যও আছে কেউ? আছে কোন এক অজানা দেশে?
তাহলে তো আমার কোন জারিজুরিই খাটবে না! সে ঠিকই কোন না কোন সময় এসে কড়া নাড়বে হয় আমার মনে না হয় সবুজ বনের দরজায়!
আসলে আসুক, একেবারে মেরে ভাগিয়ে দিব।আমাকে নিয়ে যাবে! যাচ্ছি না আমি এ স্বপ্নের দেশ ছেড়ে, সবুজ বনের নীলচে আলো ছেড়ে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, তাকে তাড়ানোর কথা ভাবতে ভাবতে একটা সময় আবিষ্কার করলাম…. আমার মনের ছোট্ট কোণে কেউ ঢুকে পড়েছে!
ও আর কেউ নয়, যাকে তাড়ানোর কথা ভাবতাম সেই।যাকে নিয়ে আমি সাজিয়ে ছিলাম আমার কল্পনার পৃথিবী।আর ওর নাম দিয়েছিলাম নিলয়....
জানি না বাস্তবে ওর নামটা কি হবে…..
যখন আমি ওর কথা ভাবি তখন খুব অবাক লাগে।একটা সময় যাকে তাড়িয়ে দেয়ার কথা ভেবেছি আজ তারই জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছি!
কেন আমার মনের মাঝে এমন পরিবর্তন?কিভাবে ঘটল এটা? কি বলা যায় এটাকে? ভালবাসা?
তা কি করে হয়? যার সাথে কখনো দেখা বা কথা হয় নি, যার কোন ঠিকানা কেউ জানে না এমন কাউকে কি কেউ ভালবাসতে পারে?
তবে আমার এ অনুভূতিটাকে কি বলা যায়?
হাজারো প্রশ্নে জরজরিত আমার মন……..
জানি না, আমি এসবের কোন উত্তরই জানি না…..

আসলে ও যখন আমার সামনে এসে দাঁড়াবে তখন কি ঘটতে পারে সেই সব সম্ভাব্য দৃশ্যপটগুলোই লিখে রাখার চেষ্টা করি আমি। জানি, আমার ভাবনার সাথে ভবিষৎ এর কোন মিল হয়ত থাকবে না।কিন্তু তারপরও লিখি।কারণ, অদ্ভুত এ কাজটা করতে আমার ভাল লাগে….


আমার ভীনদেশি তারা
তোমার আকাশ ছোঁয়া বাড়ি।
আমি পাইনা ছুঁতে তোমায়,
আমার একলা লাগে ভারি….

এ লাইনগুলো যখন শুনেছিলাম তখন মনে হয়েছিল এ যেন আমারই মনের কথা।  নিলয়, আমার ভীনদেশী তারা.......
আচ্ছা, আমি কি বের করার চেষ্টা করব কে এই ভীনদেশী তারা?
আমার মনের আমাকে নিয়েই কৌতুক, যাও রিয়া, রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাকে পছন্দ হবে তাকে জিজ্ঞাসা কর “তুমি কি আমার ভীনদেশী তারা?”
“চুপ কর! ফাজিল কোথাকার! তুমি দিনকে দিন চরম বেয়াদপ হচ্ছ।খালি ওল্টাপাল্টা কথা।” ধমক দিয়ে মনকে পথে আনার চেষ্টা….

 এ তো আমার কল্পনার রাজ্যে বিচরণের কথা।কিন্তু বাস্তবে কি আমার কাউকেই ভাল লাগে নি? এখানে তো আমি মিথ্যা বলি না! তাই লিখে দিলাম সে কথাটাও…..
হ্যাঁ, লেগেছিল।কিন্তু সে ভাল লাগাটা অন্য কিছুতে রূপ নেয়ার আগেই হাজির হয়েছিল আমার বিবেক।
বলেছিল, দাঁড়াও, কেন কল্পনার রাজ্য ছেড়ে বাস্তবের পিছনে ছুটতে যাও? জান না বাস্তব বড় নিঠুর, নির্মম।মনকে কি সব সময় পস্রয় দিতে হয়?

ফিরে গিয়েছিলাম আমি আমার কল্পনার রাজ্যে।যেখানে ছিল আমার স্বাচ্ছন্দ বিচরণ আর ছিল একটা সুন্দর বাস্তবের অপেক্ষা……
যা আমাকে সাহায্য করত ক্ষণিকের ভাললাগা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে…

আমার অপেক্ষার পালা শেষ করতেই যেন আগমন ঘটে শুভ্রর।সমস্ত প্রকার আনুষ্ঠনিকতা শেষ হয়ে যাচ্ছে।আর মাত্র কটা দিন পরেই আমায় বসতে হবে বিয়ে নামক পিঁড়িতে! কিন্তু এখন আমার মনে হচ্ছে এমনটা না হলেই ভাল হত।দিব নাকি শুভ্রকে তাড়িয়ে? কিন্তু, কিভাবে? সুযোগের অপেক্ষাই না হয় থাকি…

না, শুভ্রকে তাড়ানোর কোন সুযোগ আমার হয় নি। কিভাবে হবে? ও ই যে আমার কল্পনার নিলয়! যাকে চাইলেও তাড়ানো সম্ভব হয় না…..
কল্পনার নিলয় বাস্তবে শুভ্র হয়ে আমারই আশেপাশে এখন বিচরণ করছে! কিন্তু কল্পনা আর বাস্তব যে এক হয় না।কল্পনায় আমি ওকে যেভাবে সাজিয়ে ছিলাম তার সাথে ওর কতটাই বা মিল আছে?

আর পড়ে না শুভ্র। কারণ,এরপরের কথাগুলো ওর জানা।কথাগুলো পড়লে ওর আর রিয়ার মধ্যে দীর্ঘ এক বছর ধরে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর প্রতিচ্ছবিই চোখে ভেসে উঠবে….

৮.

“রিয়া….”
“বল”
“কেন তুমি নিলয়ের পরিচয়টা আমার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে চেয়েছিলে?”
“শুভ্র, কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর হয় না।তোমার এই প্রশ্নটাও তেমনি।”
“আমি একটু বাইরে যাচ্ছি।”
“বাইরে যাচ্ছ মানে? তোমার না আজ off day ছিল? এখন কোথায় যাবে?”
“জাহান্নামে...”
“তোমার রেগে যাওয়ার পিছনে কারণটা কি?”
“তুমি আমার সাথে আর একটা কথাও বলবে না।”

বেরিয়ে পড়ে শুভ্র।আজ ওর অ....নেক কাজ।
রিয়াকে একটু tension এ রাখা দরকার তাই রাগ দেখিয়ে চলে এসেছে ও।কিন্তু সব কিছু তো নির্ভর করছে অফিস ছুটির উপর। ছুটিটা না পেলে যে পুরা পরিকল্পনাই বিফলে যাবে!
দেখা যাক কোথাকার পানি কোথায় গিয়ে গড়ায়…

   শুভ্রর এমন হঠাৎ রেগে যাওয়ার কারণটা বুঝতে পারে না রিয়া ।ফোনটা পর্যন্ত বন্ধ করে রেখেছে, সারাটা দিন যোগাযোগের চেষ্টা করে এখন ক্লান্ত রিয়া।খাওয়াও হয় নি ওর।
সন্ধ্যায় ফিরে আসে শুভ্র।ভেতরে ভেতরে অনেক খুশি ও।যেমনটা ইচ্ছা ছিল তেমন করেই ঘটে যাচ্ছে সব।এখন শুধু রেগে থাকার অভিনয়টা করে যেতে হবে….

“সারাটা দিন কোথায় ছিলে? আর ফোনটা কেন বন্ধ রেখেছ?”
কোন উত্তর দেয় না শুভ্র
“কি, কথা না বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছ নাকি? আচ্ছা, তোমার সমস্যাটা কি বল তো?”
“সেটা একটু পড়েই বুঝতে পারবা। এখন কথা বলতে ইচ্ছা করছে না।ক্ষুধা লেগেছে…”
“তাহলে এখানে না বসে থেকে দয়া করে খাবার টেবিলে চলুন।”

৯.

“টেবিলের উপরে একটা খাম রাখা আছে খুলে দেখ।”
“কি আছে এতে?”
“জাহান্নামের টিকেট”
খামটা খুলে ঢাকা টু কক্সবাজারের দুটা টিকিট বের করে রিয়া।
“ও আচ্ছা, এই তাহলে ব্যাপার! শুভ্র… তুমি যে কি না……”
“কি আমি?”
“জানি না…..”
“কল্পনার নিলয়ের সাথে তো বহু বার ওখানটায় ঘুরে বেরিয়েছ, আজ সে নিলয় শুভ্র হয়ে তোমায় নিয়ে যেতে প্রস্তুত।কেমন লাগছে?”
কিছু বলে না রিয়া শুধু চোখে মুখে ফুটিযে রাখে একটা মিষ্টি হাসি….
শুভ্রও কোন উত্তরের অপেক্ষা করে না।কারণ, ও যে এ হাসির মাঝে লুকানো কথাগুলো পড়তে পারছে….


ফারজানা মৌ

2 comments: