Subscribe:

“ ক্ষণিকের মোহ ”

 বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পা রাখার সাথে সাথেই ইতি হয়ে যায় নীরবের সাথে চলতে থাকা মৌরির পাঁচ বছরের সম্পর্কটার।তারপর থেকে বড় বেশী একলা অনুভব করতে থাকে ও।মিতালীকে এক সময় খুলে বলে ওর কথাগুলো….
ওর ব্রেকআপের কথা শুনে মিতালী ওকে বলে সাগরের কথা।


-“সাগরের সাথে frndship করবি?”
-“সাগর?”
-“হ্যাঁ, খুব ভাল হবে, তোর সময়ও কাটবে ভাল।”
-“আচ্ছা।”
-“সাগরের সাথে কথা বলি তাহলে?”
-“তোর ইচ্ছা”
-“দেখি ওইটারে ফোনে পাওয়া যায় কিনা…….
হ্যালো, সাগর…”
-“হুম”
-“কিরে, কি করিস?”
-“কি আর করমু? কাজ নাই তাই ডিমে তা দেই”
-“কার ডিম? মুরগীর?”
-“না…… মোরগের”
-“শোন যা বলতে তোরে ফোন করছি সেটা বলি।”
-“কি কথা?”
-“মৌরিকে চিনিস?”
-“মৌরি? Botani department এর ওই সুন্দরী মেয়েটা?”
-“হুম। frndship করবি ওর সাথে?”
-“ও কি রাজি হবে?”
-“সেটা সময়ই বলে দিবে। আচ্ছা, কাল তাহলে দেখা হচ্ছে।”


মিতালী মৌরিকে নিয়ে যায় সাগরের কাছে।
-“চলে এলাম মৌরিকে নিয়ে ।”
-“কি খবর মৌরি, ভাল আছ?”
-“হ্যাঁ, তোমার কি অবস্থা?”
-“ভালই।”
-“আচ্ছা, তোরা কথা বল, আমি আসি।”
একটু দূরে গিয়ে আবার ফিরে আসে মিতালী।
-“সম্পর্কটাকে frndship এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখিস। বুঝলি?”
-“জী মহারাণী, মনে থাকবে।”
-“আমি তাহলে যাই।”
-“তুইও থাক।”
-“নারে, কাবাবের মধ্যে হাড্ডি হবার ইচ্ছা নাই।”
চলে যায় মিতালী…..
   এভাবেই শুরু হয়েছিল ওদের frndship এর প্রথম পর্ব।তারপর থেকে চলতে থাকে ওদের আড্ডা, ঘুরাঘুরি। ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনালাপ তো আছেই…..
মূলত timepass করার উদ্দেশ্যেই সাগরের সাথে কথা বলা শুরু করে মৌরি।এছাড়া এটাকে নীরবের কথাগুলো ভুলে থাকার একটা উপায়ও মনে হয় ওর কাছে।

২.

মিতালী আর মৌরির একটা বাতিক হচ্ছে স্যারদের প্রেমে পড়া….

-“জানিস, আমাদের আজ কবির স্যারের ক্লাস ছিল।”
-“তো?”
-“স্যারটা যা handsome না!”
-“মৌরি, তুই তো মরছিস!”
-“নারে মিতালী, ওনি আমায় বিয়ের প্রস্তাব দিলে নাচতে নাচতে রাজি হয়ে যাব…”


    অবাক করার মত হলেও বাস্তবে ঘটে যায় ঘটনাটা।ওদের এই কথবার্তার পরবর্তী দুবছরের মাথায় মৌরিদের বাসায় প্রস্তাব পাঠায় কবির স্যার।মৌরির আনন্দ তখন দেখে কে!যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে ও!একটা ঘোরের মাঝে কাটতে থাকে ওর সময়….

-“মৌরি, দেখ কি ভাগ্য তোর, যা চাইলি তাই পেয়ে গেলি!”
-“এখেনো তো পাই নি!”
-“তুই স্যারকে একটা ফোন দে।”
-“নারে মিতালী, এখনই নয়।”

৩.

এক মাস পর…..

আড্ডায় মশগুল মিতালী আর মৌরি।বিষয়বস্তু সাগর…
হঠাৎ করেই বেজে উঠে মৌরির ফোনটা।সেটটা হাতে নিয়ে রতন স্যারের নামটা মিতালীকে দেখিয়ে ও বলে,
-“আমাদের department এর রতন স্যার….! করির স্যারের ঘনিষ্ট বন্ধু…”
-“ধর ফোনটা…”
-“কেমন যেন ভয় লাগছে!”
-“হায়রে গাধী…!”

ইতি ওতি করতে করতে ফোনটা ধরে ও…..

-“কেমন আছ মৌরি?”
-“ভাল। স্যার আপনি ভাল আছেন?”
-“ভাল।তোমার পড়াশুনা কেমন চলছে?”
-“চলছে মোটামুটি।”
-“কি করছিলে?”
-“কিছু না।”
-“কবির তোমার সাথে কথা বলবে, লাইনে থাক।”
-“হ্যালো, মৌরি…”
-“স্যার, ভাল আছেন?”
-“হ্যাঁ ভাল। তোমার কি অবস্থা?”
-“ভাল”
-“সকালে খাওয়া দাওয়া করেছ?”
-“জী। স্যার, আপনি করেছেন?”
-“হ্যাঁ”

এভাবেই শুরু হয় কবির স্যারের সাথে মৌরির ফোনালাপ।প্রতিদিন খওয়ার আগে, ক্লাস থেকে এসে, রাতে ঘুমাতে যাবার আগে কথা না বললেই যেন নয়!
ধীরে ধীরে ওর সম্বোধন নেমে আসে আপনি থেকে তুমিতে…..

-“এখনো ঘুমাও নি!”
-“না, practical লিখা যে শেষ হয় নি। তুমি কাল ক্লাসটা ৮ টায় না নিয়ে ৯ টায় নাও না…”
-“আচ্ছা, ঠিক আছে।”
-“শাড়িটা খুব সুন্দর হয়েছে।”
-“তোমার পছন্দ হয়েছে?”
-“খুব…”
-“ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করেছ তো?’
-“হ্যাঁ, তুমি?”
-“হুম”


৪.

   একদিকে কবির স্যার অন্যদিকে সাগরকে নিয়ে যেন অজানা এক খেলায় মত্ত হয়ে যায় মৌরি।কোন পরিণতির কথা না ভেবে মনের ইচ্ছাধীন হয়ে গা ভাসিয়ে দেয় গড্ডালিকা প্রবাহে…

  সাগরের সাথে মৌরির সম্পর্কটাও আর frndship নামক বিষয়টার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না।এটা চলে যায় বহু দূরে….  রূপ নেয় অন্য কিছুতে…


-“মৌরি, তুই আসলে কাকে চাস?”
-“আমি জানি না মিতালী…”
-“কবির স্যারের সাথে যে তোর প্রতিদিন কথা হয় এটা তোর বাসায় জানে?”
-“না।”
-“সাগরের সাথে কেন নিজেকে জড়াচ্ছিস?এখনো সময় আছে ওর কাছ থেকে সরে আয়।”
-“পারব না। আমি ওকে ।ভালবাসি।”
-“what? তাহলে কবির স্যারে সাথে কেন কথা বলিস?”
-“ওনি ফোন করে তাই..”
-“তোর একজনকেই বেছে নেয় উচিত।আর আমি বলব তুই কবির স্যারকে বেছে নে।ওনি তোকে এখানকার teacher বানাতে পারবে ,কিন্তু সাগর পারবে না।”
-“আমাকে ভাবতে দে”
-“ভাবতে হবে না, তুই সাগরের সাথে যোগাযোগ বন্ধ কর।”

মিতালীর কথায় দুদিন সাগরের সাথে যোগাযোগ বন্ধ রাখে মৌরি।কিন্তু পরবর্তীতে থাকতে না পেরে ফোন দেয় সাগরকে।আবার শুরু হয় ফোনালাপ……..

   একদিকে রান্না করে কবির স্যারের জন্য খাবার পাঠানো আর অন্যদিকে সাগরের সাথে রেস্টুরেন্টে যাওয়া।এভাবেই কাটতে থাকে মৌরির সময়।এক সময় দরজায় কড়া নাড়ে ফাইনাল পরীক্ষা।কিন্তু ওর তো কোন সিলেবাসই শেষ হয় নি!

ওর পড়াশুনার অবস্থা জানতে পারে কবির।আর ভালবাসায় অন্ধ কবির তখন ব্যস্ত হয়ে পড়ে শিক্ষকতা পেশাটাকে কুলষিত করতে…..
কিভাবে?
মৌরিকে সে বলে দেয় পরীক্ষায় আসা প্রশ্ন।তারপরও শেষের কিছু পরীক্ষা খারাপ হয় ওর।কবির ওকে বলে চিন্তা না করতে।
কবির নিজে গিয়ে সুপারিশ করে আসে তার সহকর্মী শিক্ষকদের কাছে যাতে সর্বোচ্চ মার্কটা মৌরিকে দেয়া হয়।আর এভাবে কয়েকটা বিষয়ে ফেল করা মৌরি পেয়ে যায় সর্বোচ্চ মার্ক!


    ভালবাসা কি মানুষকে অন্ধ করে ফেলে?পদে পদে দুর্নীতি করতে প্ররোচিত করে?শিক্ষকতার মত মহান পেশাটাকে কুলষিত করার অধিকার কে দিয়েছে তাদের?
অথচ, কবিরের মত শিক্ষকেরা প্রতিনিয়ত কুলষিত করে চলেছে এ পেশাটাকে…...

কি চায় কবির?মৌরিকে তার সহকর্মী বানাতে?যদি সে চায় তবে এটা তার দ্বারা সম্ভব।কিন্তু ফেল করা একজন ছাত্রী শিক্ষক হয়ে কি শিক্ষা ছাত্রদের দিবে তা কি সে ভেবে দেখেছে?

না, সে হয়ত তা ভাবে না। সে যে চোখ থাকা সত্ত্বেও অন্ধ! জেগে জেগেও ঘুমন্ত!
    হায়রে ভালবাসা! না, এটাকে ভালবাসা বলতে ইচ্ছা হচ্ছে না।যা মানুষকে অনিয়ম আর দুর্নীতি করতে প্ররোচিত করে তাকে আর যা হোক ভালবাসা বলা যায় না। তবে কি বলা যায় এটাকে ধ্বংসযজ্ঞ?

কি পরিণতি হবে এর?এভাবেই কি চলতে থাকবে সব?
তা জানতে এবার না হয় চোখ রাখি গল্পের বাকি অংশে…….

৫.

ছুটিতে বাসায় গেলে মৌরিকে বিয়ের ব্যাপারে চাপ দেয় কবির।মৌরি তখন কথাটা তুলে বাবা মায়ের কাছে।

-“মা, কবির স্যারের ব্যাপারে তোমরা কি কিছু ভেবেছ?ঝুলাইয়া রাখাটা মনে হয় ঠিক হচ্ছে না।”
-“আমরা তো তার ব্যাপারে না জেনে তোকে তার হাতে তুলে দিতে পারি না!”
-“তাহলে জানার চেষ্টা কর। আমার মাঝে মাঝে ওনার সাথে কথা হয়।ওনি তোমাদের সিদ্ধান্ত জানতে চেয়েছেন”
-“তার গ্রামের বাড়ি ঘর দেখে তোর বাবার পছন্দ হয় নি।আমরা যেহেতু কিছু বলছি না সেহেতু তার বুঝা উচিত আমরা রাজি না।এসব ব্যাপারে কি সরাসরি বলতে হয় নাকি?যদি মত থাকত তবে তো প্রস্তাব দেয়ার এক দুমাসের মধ্যেই কথা বলতাম।এক বছর বসে থাকতাম না।”
-“মা, বাড়ি ঘরই কি সব? ওনার পেশাটাতো ভাল।”
-“মৌরি, আমরা যা করব তা্ তোর ভাল যাতে হয় সে জন্যই করব।এটা কি বিশ্বাস করিস?”
-“হ্যাঁ, কিন্তু….”
-“থাম।তুই কি বললি আমি তা জানি। তুই যদি ভেবে থাকিস তাকেই বিয়ে করবি তবে এটাও জেনে রাখিস এরপর থেকে তোর সব দায় দায়িত্বও হবে তোর।তখন আমাদের ডাকলেও সাথে পাবি না।”
-“মা…..!”
-“তোকে কে বলেছিল তার সাথে ফোনে কথা বলতে? ছোটবেলা থেকে দেয়া শিক্ষার কতটুকু মূল্য তুই দিয়েছিস?তোর জীবন পথটা কি তুই ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলছিস?মা, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলিস।আল্লাহ্ তোকে বিপদ থেকে রক্ষা করবে।  এখনো সময় আছে , নিজেকে শুধরে নে…”

মাথা নিচু করে শুধু শুনে যায় মৌরি….

৬.

ক্যাম্পাসে ফিরে মিতালীকে সব বলে মৌরি।সিদ্ধান্ত নেয় মায়ের কথা মেনে চলার।কিন্তু খুব বেশী সময় মায়ের কথাগুলো মনে ধারণ করতে পারে না ও।আবার ফিরে যায় আগের জীবন যাত্রায়…..

কিছুদিন এভাবে চলার পর কবিরকে বলে দেয় ওর দ্বারা কবিরকে বিয়ে করা সম্ভব না।

-“মা-বাবা না চাইলে আমি কি করতে পারি?”
-“বিয়ে তো করবে তুমি…”
-“আমি কিভাবে মা-বাবার বিপরীতে যাব?”
-“তাহলে আমার সাথে এক বছর যাবৎ কেন কথা বললে?”
-“আমি কি জানতাম ওনারা রাজি হবে না?”
-“তুমি তাদের বুঝাও।আর আমার status টা কি খুব খারাপ?”
-“শোন, status ই তো সব না।”
-“এটা কি তুমি মন থেকে বলছ?”
-“হ্যাঁ”
-“আচ্ছা, ভাল থেক।আমি হয়ত এ ক্যাম্পাসে আর থাকব না।”
-“কেন, আমি আছি বলে?আর একটা বছর পরে তো আমিই চলে যাব।তুমি থাক।”


   কবিরের সাথে কথা শেষ করার কিছুক্ষণ পর মৌরিকে ফোন দেয় রতন স্যার।প্রথমে ফোন ধরবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয় ও।কিন্তু আবার আসে ফোন।ভয়ে ভয়ে ফোনটা ধরে ও….
-“হ্যালো…”
-“কবিরের সাথে কেন খারাপ ব্যবহার করেছ?”
-“আমি তো খারাপ ব্যবহার করিনি!”
-“শোন কবির যদি না থাকে এ ক্যাম্পাসে তবে তোমারও থাকা হবে না। আর এর কিছুটা আঁচ অবশ্যই পবে তোমার frnd circle. mind it…”

সব শুনে ভয় পেয়ে যায় মিতালী।

-“তুই কেন মানা করতে গেলি?এ কাজটা আন্টি করলে ঘটনাটা এমন হত না।”
-“যেভাবেই বলা হোক না কেন এমনটাই হত।কারণ, কবিরও একদিন indirectly এমন পরিনতির কথা বলে শাসিয়েছিল আমায়।আর আজ সেটা সরাসরি বলে দিল ওর frnd…”

৭.

তিন মাস পর….

কবির স্যার চলে যায় জার্মানীতে।মৌরির কোন ভাবান্তর হয় না এতে।ও চলতে থাকে ওর মত।কিন্তু ওর কৃতকর্মের ফলাফলটা যে রয়ে গেছে…

রতন স্যারের দেয়া ভবিষৎবাণীটা ফলতে শুরু করে কিছুদিন পর থেকেই….
ফেল নামক ফলটা খেতে খেতে এক সময় এক বছরের জন্য শিক্ষা্ বিরতির ফাঁদে পড়ে যায় ও।মিতালীকে অবশ্য ওর মত বড় শাস্তি পেতে হয় নি।তবে ফেল এর স্বাদ গ্রহণ করতে হয় ওকেও।


সময় হারিয়ে চেতনা ফিরে পায় মৌরি।আর ধীরে ধীরে চলে যেতে থাকে সকলের অগোচরে ,নিজেকে আবদ্ধ করে নিতে থাকে এক বন্ধ ঘরে।

মায়ের বলা সেদিনের কথাটা বার বার কানে বাজতে থাকে ওর…
“মা, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলিস।আল্লাহ্ তোকে বিপদ থেকে রক্ষা করবে।  এখনো সময় আছে নিজেকে শুধরে নে…...”
ওর ভেতরের মূল্যবোধটা যেন জেগে ওঠে আজ
“মৌরি, কখনো নীরব, কখনো সাগর আর কখনো বা কবিরের দিকে শুধু ছুটে বেরিয়েছিস।কি লাভ হলে এতে? কি পেলি তুই?”
ওর কাছে নিজেকে মনে হয় এক ধার্মিক মায়ের কুলাঙ্গার সন্তান।আর কিছু ভাবতে পারে না ও..
শুধু কাঁদতে থাকে হু হু করে ……


-দ্বীপ শিখা

No comments:

Post a Comment