Subscribe:

“একটা পাখি, , চারটা পাখি, , তিনটা পাখি...”

সময় বেলা ১১ টা।

আকাশের আসার কথা ছিল সকাল ৯টায়। ওপরের দিকে তাকিয়ে তৃপ্ত কিছু একটা দেখছে। আজ এক মাস থেকে মনে বয়ে বেড়ানো ভাইরাস, দিন দিন তার সহজ সরল মনের ভিতরটাকে কঠিন অন্ধকার জগতের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।  
আজ আমরা শুনবো তৃপ্ত আর তার নীলার গল্প।


#####

( কোন এক বিকেলে)


দোস্ত দাঁড়া...
পিছনে ফিরে তৃপ্ত দেখল আকাশ।

তৃপ্তঃ কি রে কই যাবি???
আকাশঃ তোকে দেখেই ছাদ থেকে নেমে আসলাম। কাজকর্ম নাই। একা মানুষ আমি।  বুঝিসই তো সব.. দোস্ত মাইয়ারা দেখি ঝাঁকে ঝাঁকে আসতেছে স্কুল থেকে। মনে হয় ছুটি দিছে।
চলনা দোস্ত, ওই দিকটা থেকে একটা পাক দিয়ে আসি, যদি কাউকে মনে ধরে যায়...
তৃপ্তঃ দোস্ত আমার তো একটা খুব ইম্পরট্যান্ট কাজ আছে, আজ না দোস্ত অন্য দিন।
আকাশঃ কী কাজ ??? আমিও যাব। চল।
তৃপ্তঃ না দোস্ত পরে একদিন তোরে নিয়ে যাব। তুই থাক আমি যাই। রাতে ফোনে সব বলবো।  


এই বলে হন হন করে তৃপ্ত সামনের দিকে হাঁটতে থাকে, একটি বারের জন্যও পিছনে ফিরে তাকায় না। আকাশ অনেকক্ষণ রাস্তার দিকে চেয়ে চেয়ে তার অচেনা হয়ে যাওয়া বন্ধুটিকে দেখতে থাকে।


######


তৃপ্তঃ নীলা..নীলা.. এই নীলা...
নীলাঃ কখন আসার কথা ছিল???
তৃপ্তঃ কি আর বলব রাস্তায় এক বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে গেল। তাই ৫ মিনিট লেট নেক্সট টাইম আর কোনদিন হবে না......প্রমিজ।  
নীলাঃ ওকে!! মাফ করলাম। আচ্ছা শোনো তোমার কাছে কী ৫০০ টাকা হবে??? নেক্সট মাসে দিয়ে দিব..
তৃপ্তঃ দিতে হবে কেন??? আমার টাকা কী তোমার টাকা না???
নীলাঃ আচ্ছা দিলে তাড়াতাড়ি দাও। বাসায় যাবো। কাজ আছে।
তৃপ্তঃ আর একটু বস না । প্লিজ প্লিজ প্লিজ...
নীলাঃ এ রকম করলে কিন্তু আমি এখনি উঠলাম?
তৃপ্তঃ নাউ বাট আমি কিন্তু ব্যাক নিব না ...
নীলাঃ সেটা পরে দেখা যাবে। আমি আসি।
তৃপ্তঃ এখনি?
নীলাঃ হুম,বাই।
তৃপ্তঃ ফোনে ব্যাল্যান্স আছে?
নীলাঃ আছে। কিন্তু পারলে একটু দিয় তো...
তৃপ্তঃ বাই। সাবধানে যেও।

(আবার পথ চেয়ে থাকা পর্বের আগমন ঘটে,কিন্তু এবার আকাশ না)

এবার তৃপ্ত চেয়ে চেয়ে তার নীলাকে দেখতে থাকে...

তার মনে একটাই প্রশ্ন, নীলা কি তৃপ্তকে সত্যি সত্যি ভালোবাসে ??না অভিনয়?

 এভাবেই কেটে যায় প্রতিটি বিকেল আর তাদের গল্প সামনের দিকে এগিয়ে যায় ।


#######

আকাশঃ ১৭ টা বসন্ত পার হয়ে গেল আমি আজও একা।
কোন দুঃখ নেই। যা খুশী করা যায়। কোন ঝামেলা নেই। নেই কোন পিছু টান.....

তৃপ্তটা না কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে। প্রেম ট্রেমে পড়েছে মনে হয়। আমি কোন দিন প্রেম নামক সমীকরণে নিজেকে জড়াইনি। প্রেম পিরিতি আমাকে দিয়ে হবে না। এটা আমার মুখে মস্ত বড় করে লেখা।

######

##তৃপ্ত##

নীলা। আমার নীলা শুধুই আমার......

যে আমাকে ভালবাসতে শিখিয়েছে।

যার এস এম এস এ আমার দিন শুরু হয়...

যার হাতের পরশে দুপুরের ক্লান্তি দূর হয়...

যার জন্য আমার প্রতিটি বিকেল হয় এক একটি বসন্ত...

যার শাসনে আমার চোখে ঘুমের দেশের রাজকন্যারা  ডানা বুলিয়ে দিয়ে যায়......

নীলা, আমি তোমাকে অনেক কম ভালবাসি। তাই না????

আমি এত গাধা কেন। বলতে পারো??? কেন আমি তোমাকে বুঝি না???

এ জীবন আর রাখতে ইচ্ছে করে না...

কিন্তু আমি বাঁচতে চাই । আমার নীলাকে সারা জীবন ভালবাসতে চাই।

তুমি বুঝলে না তো কী হইছে!!

 সবাইকে সব কিছু বুঝতে হয় না ......আমি সারা জীবন শুধু তোমারই থাকবো শুধু তোমারই।

আমার মনে হয়...... কোন এক বিশেষ দিনে আমাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবে...

######

##নীলা##

 খুব মানসিক কষ্টে আছি। মানুষ যে কেন সম্পর্কে জড়ায়!
প্রথমে ভেবেছিলাম ঐ অপদার্থটা আমার জন্য পারফেক্ট। তাই কিছু না ভেবেই মন দিয়ে বসি...  

এখন দেখি গাধাটার সেন্স অফ হিউমার বলে কিচ্ছু নেই। কোন ফিলিংসই নেই স্টুপিডটার।

না...না...না...এই অনুভূতি নিয়ে বেঁচে থাকা অসম্ভব।

আমি আর গাধাটার সাথে ভালবাসার অভিনয় করতে পারবো না। আজকাল ষ্টুপিডটার মুখ দেখলেই বিরক্তি লাগে। গাধার অনেক শ্রেণীবিভাগ থাকে।কোন বিভাগেই এই স্টুপিডের স্থান নেই...


যাই হোক। আজ ১৪ই ফেব্রুয়ারী। বিকেলে গাধাটার সাথে দেখা করার কথা। কালই জানিয়ে দিব..

"গাধা তোর জন্য কোন গাধী খুঁজে নে...আমি আর তোর সাথে নাই"। আমার মনে হয় না আমি কোন ভুল করছি। এ রকম অপদার্থের সাথে পুরো জীবন কাটানো অর্থহীন। আজি আমার অভিনয়ের শেষ দিন। এরপর থেকে আমি গাধার রাজ্য থেকে মুক্ত...

#####
##তৃপ্ত##

নীলার জন্য বসে আছি।  আমি জানি নিলা আমার সাথে সুখী না। আমাকে দিয়ে কিছু হবে না। আমি অপদার্থ। এটা আমার মুখেই লেখা আছে। আর আমার মত ষ্টুপিডের সাথে কেইবা ভাল থাকতে পারবে!


আমি নীলার সাথে কখনো সহজ হতে পারি নি। নীলার সামনে গেলেই সব কিছু ওলোট পালট হয়ে যায়। মাথা ঘুরে। কি বলব কিছু খুঁজে পাই না। তাই উল্টাপাল্টা কথা বলে নীলার মেজাজ খারাপ করাই আমার নিত্য দিনের অভ্যাস। নীলা কোনদিন আমাকে বুঝতে পারে নি।  না বুঝুক ......

সবাইকে সবকিছু বুঝতে হয় না......

কিন্তু নীলাকে নিয়ে আমার কল্পনার রাজ্য সম্পূর্ণ আলাদা। সেখানে আমি আর নীলা অবাধে সব বাঁধা ভাঙ্গতে পারি।

নীলা রিক্সা থেকে নেমে আমার দিকে এগিয়ে আসছে...


অসম্ভব রূপবতী মেয়েটি আজ নীল একটা শাড়ি পরেছে। নীল রঙটি আমাকে সেভাবে টানে না। নীলা এটি জানে।
আমার বুঝতে আর কিছু বাকি রইলনা।

নীলা আমার পাশে বসে নীরবে মোবাইল টিপছে। আমি গাধাটা আজও চুপ। নীলার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে আমার কল্পনার রাজ্যের মায়ার দরজা খুলে গেছে বুঝতেই পারলাম না।


নীলা, আমার না তোমাকে নিয়ে কোথাও হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে...  যেখানে শুধুই তুমি আর আমি...

যেখানে থাকবে মায়াময়ী এক নদী। নদীর পাশে থাকবে অপরূপ এক বালি চর। আমি মনে মনে সেই মায়াময়ী নদীতে তোমাকে নিয়ে সাঁতার কাটবো...

কোন এক দিন তোমাকে নিয়ে অদ্ভুত সেই চরের কাঁশবনে হারিয়ে যাব... তারপর কোন একদিন এক গুচ্ছ কাঁশফুল হাতে আমাদের খুঁজে পাওয়া  যাবে...

 আমার এই রাজ্যে কোনদিন ভোর হবে না... কোন দিন আকাশের মায়ার চাঁদ লুকোচুরি খেলবে না...  আমি তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে মায়ার রাজ্যের প্রতিটি রজনী পার করবো...  

নীলা জানো, আমার মায়ার রাজ্যে কিছু টিকটিকি আছে... আছে কিছু জোনাকি... তুমি যখন এই টিকটিকিদের দেখে আমার বুকে আশ্রয় নাও, তখন এরা মুচকি হাসে। আর জোনাকিরা ধীরে ধীরে তাদের জানান দেয়...

আজ খুব ইচ্ছে করছে তোমাকে আমার মায়ার রাজ্যে নিয়ে যেতে। কিন্তু আমি তা করব না। আমি তোমাকে এভাবে পেতে চাই না...

ভালোবাসা কোন পরীক্ষা না। তাই আমার পাশ ফেলের চিন্তা নেই।

 তোমার প্রতি আমার অনুভূতি কঠিন কোন অংক না। যেটা তোমাকে বুঝতেই হবে।



আমার মায়ার রাজ্যে এরকম কোন শর্ত নেই যে, বামপক্ষ= ডানপক্ষ হতেই হবে।

আমার......

(এমন সময় নীলার ডাকে...... মায়া রাজ্যের দরজা বন্ধ হয়ে যায়......)


নীলাঃ তোমাকে একটা কথা বলব......
তৃপ্তঃ কি কথা ??? বল।
নীলাঃ (অনেকক্ষণ চুপ থেকে) আজ না, কাল বলব।
তৃপ্তঃ তুমি কি আমার সাথে ব্রেকআপ করতে চাইছ???
নীলাঃ হুম।
তৃপ্ত নীলার দিকে তাকিয়ে,  মুচকি হেসে বলল, ‘আমি আসি নীলা। তুমি ভাল থেকো।'


আকাশের দিকে তাকিয়ে হাঁটছি। খুব ইচ্ছে করছে পিছনে তাকিয়ে নীলাকে এক বার  দেখতে। কিন্তু সেই ইচ্ছেকে প্রশ্রয় না দিয়ে আকাশের দিকে মনোযোগ দেই। আকাশ আজ কেন জানি অসম্ভব নীল। যদি আমি আকাশের এই নীলের মাঝে লুকিয়ে থাকতে পারতাম!! আমার মায়ার রাজ্যে সব কিছুই সম্ভব। আমি মায়ার রাজ্যে ফিরে গিয়ে....এক মুঠো নীল মেঘ হাতের মুঠোতে বন্দি করে... মুক্তি সন্ধানে যাচ্ছি..


(প্রায় এক মাস পর আকাশের ফোন )


আকাশঃ (হ্যালো টেলো না বলে সরাসরি বলল) দোস্ত, আই এম ইন লাভ..
তৃপ্তঃ মানে????
আকাশঃ আরে গাধা আমি আমার মিস পারফেক্টকে খুঁজে পেয়েছি।
তৃপ্তঃ নাম কি?  কি করে? কেমন করে হলো?
আকাশঃ আজ কোন কিছু বলব না। কাল ৯ টায় বটতলায় আসবি। ওর সাথে পরিচয় করিয়ে দিব।


আমি আর চাপা চাপি না করে ফোন রেখে দেই......


#####


সময় বেলা ১১ টা ।

আকাশের আসার কথা ছিল সকাল ৯টায়। ওপরের দিকে তাকিয়ে তৃপ্ত কিছু  একটা দেখছে। আজ একমাস থেকে মনে বয়ে বেড়ানো ভাইরাস, দিন দিন এই সহজ সরল মনের ভিতরটাকে কঠিন অন্ধকার জগতের দিকে টেনে নিয়া যাচ্ছে।

মায়ার রাজ্যে কোথায় যেন একটা অপূর্ণতা। একমাস থেকে নির্বাণ লাভের চেষ্টায় আছি। আকাশটাও এখন আসছে না। আমি মায়ার রাজ্যে গিয়ে দেখলাম, আমি এখন একা একা হাঁটছি..


হঠাৎ কোন কিছুর শব্দে চোখ মেললাম।

দেখলাম, আকাশ আসছে। তার সাথের মেয়েটি নীল রঙের শাড়ী পরেছে।

নীল রঙ যে নীলাকে এত মানায় আগে কখনও সেটা লক্ষ করি নি। এখন মনে হচ্ছে, নীল রঙটা সৃষ্টি হয়েছে শুধু আকাশের জন্যে।

প্রকৃতি নীলাকে ঠিকই তার আকাশের কাছে পৌঁছে দিয়েছে।

মনে হল, আমার মায়ার রাজ্য আজ পরিপূর্ণ...

সামনে শুধুই নির্বাণের কোলাহল।  আর দেরী করা ঠিক হবে না।

আমি ফিরে গেলাম। আমার মায়ার রাজ্যে....


আজ মায়ার রাজ্যে আজ প্রথম ভোর হবে...মায়ার রাজ্যে প্রথম সূর্য উঠবে...আমি মায়াবতী নদীর পাশে দাঁড়িয়ে আছি... সূর্যোদয় দেখবো বলে..

হঠাৎ অনুভব করলাম আমার হাতে এক মুঠো মেঘ। আমি মুঠো খুলে দিলাম।

এ কি!আমার সামনে এক মেঘবতী রাজকন্যা। দেখতে অবিকল নীলার মত।

সূর্য উঠছে। আমি রাজকন্যার হাত ধরে বললাম...

“একটা পাখি, , চারটা পাখি, , তিনটা পাখি...”

-সিয়াম সাকেরিন

No comments:

Post a Comment