Subscribe:

কালো? তা সে যতই কালো হোক--

আমার জন্ম হয়েছিল কোন এক হেমন্তের সকালে। সে সময় আমার মা খুব অসুস্থ ছিলেন। ভাইয়া আপুরা তখন স্কুল পড়ুয়া। সারাদিন তারা পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকতো, অফিস নিয়ে বাবাও ব্যস্ত। সেই সময় আমার মার সময় কাটত একা একা। তাই আমার জন্ম হল আমার মায়ের অসম্ভব নিঃসঙ্গ সময়ে।


আমার সব ভাই-বোনদের সাথে আমার মূল তফাতটা ছিল এই যে আমি দেখতে তাদের মত ফর্শা বা সুন্দর ছিলাম না। খুব ছোটবেলা থেকেই আমাকে টুকটাক যে কথাগুলো শুনে আসতে হয়েছে গায়ের রঙ সংক্রান্ত কথা তার মাঝে ছিল অন্যতম। ছোটবেলায় এসব কথা শুনলে নাকি শিশুদের মনে অনেক প্রভাব পরে, কিন্তু না। আমার মনে কোন প্রভাব পড়েনি। সবাই বলে আমার মা নাকি দেখতে অভিনেত্রী কবরীর মতই সুন্দরি। আমার বড় বোনরা ছিল যথেষ্ট সুন্দর। সুন্দর নামক এই শব্দে আমাকেই শুধু কেউ ফেলতে পারেনি। ফেলতে পারুক বা না পারুক তা নিয়ে মাথাব্যথা হত না আমার। আমি ক্লাস টু থেকেই ছিলাম ভীষণ বই পড়ুয়া। মামাদের সাথে সাথে গান শুনতাম নচিকেতার আর আপুদের সাথে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতাম। সৌন্দর্য বা গুনাগুন কিছু নিয়েই কোন ভাবনা ছিল না আমার। তবে হুট করেই একদিন থমকে গেলাম। গায়ের রঙ নিয়ে প্রথম যেদিন আমার টনক নড়লো সেই দিনটা আমার আজও মনে আছে।


ক্লাস থ্রিতে পড়ার সময় আমার সবচেয়ে কাছের বান্ধুবী ছিল মৌরি। ওদের বাসায় আমাদের এবং আমাদের বাসায় ওদের বেশ আনাগোনা ছিল। দুজনে একসাথে ছবি আঁকতাম, ছড়া মুখস্ত করতাম, খেলতাম। একদিন হঠাৎ ওর দাদী আমাকে ডেকে বললেন- তুমি কি তোমার বাপ মায়ের আপন সন্তান? আমি ছোট মানুষ কয়েক মুহূর্ত্ব এই প্রশ্নের কিছুই বুঝলাম না। তারপর বললাম- কথাটা বুঝিনি দাদী। উনি পান চিবুতে চিবুতে বললেন- মানে হইল তোমার ভাই বোনেরা তো সবই ফর্শা, নাক-চোখ-মুখ খাড়া খাড়া। তোমার সাথে চেহারার কোনই মিলমিশ নাই। তাই জানতে চাইলাম তুমি কি তোমার বাপ মায়ের আপন সন্তান? আমার ছোট্ট মনটা এই কথা শুনে সেদিন এক মুহুর্তের মধ্যেই দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছিল। গলা ধরে এসেছিল সাথে সাথেই। কোনক্রমে বললাম- দাদী, আমার জন্মের সময় আমার আম্মু অনেক অসুস্থ ছিলেন। কোন খাবারই খেতে পারতেন না তাই আমি এমন। উনি বললেন- ও! আমি তো তাই ভাবি চেহারার, রঙে মিল নাই ক্যান? আমি এরপর উনার কোন কথা না শুনেই ছুটতে ছুটতে আমার বাসায় চলে আসলাম। সেদিন আমি কাঁদলাম। ভয়ংকর রকমের কান্না এলো সেদিন আমার। কাঁদতে কাঁদতে আম্মুর আলমিরা থেকে আমাদের ফ্যামিলি এ্যালবাম বের করে সবার ছবির সাথে আমার ছবি মিলিয়ে আবিস্কার করতে চেষ্টা করলাম আমার চেহারা বা রঙের সাথে সবার কি কি মিল বা অমিল। এরপর আস্তে আস্তে মৌরিদের বাসায় যাওয়া থামিয়ে দিলাম। মৌরি ডাকে, ওর মা ডাকে, আমার বাসা থেকে যেতে বলে তাও আমি যাইনি। আমার ছোট্ট মন সেদিন বিশাল বড় একটা পাথরের সমান কষ্ট মনে পুষে রেখেছিল। যা কোনভাবেই নিঃশেষ হবার নয়।


হাই স্কুলের গন্ডিতে রঙ নিয়ে নয় বরং পড়ালেখা বা সংস্কৃতি নিয়ে আমার আমার সময় বেশি কেটেছে। ক্লাস ফোর থেকে আমি ফোক ও ক্লাসিক্যাল নাচ শিখতে শুরু করি তাই স্কুলে আমার অল্প বিস্তর নামডাক ছিল। তবে কোন এক অনুষ্ঠানে নাচের আগে অসম্ভব সুন্দরী এক সিনিয়র আপু বলেছিলেন-“ "নাচ করে যেই মেয়েরা তাদের সুন্দরী হতে হয়। তুমি তো সুন্দর নও..."” আমি সেদিন তার কথার কোন উত্তর খুঁজে পাইনি। ফ্যালফ্যাল করে তার সুন্দর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।


দেখতে দেখতে স্কুল জীবন শেষ হয়ে গেল। বিশেষ করে ক্লাস নাইন ও টেন আমি শেষ করলাম দাপটের সাথে। ক্লাশ ক্যাপটেইন ও স্কুলের কালচারাল ক্যাপটেইন হবার সুবাদে সবাই আমাকে চিনত। সেই সময় আমাদের ক্লাস টিচার ছিলেন শ্রদ্ধেয় আব্দুল রব স্যার। তিনি আমাকে বলেছিলেন- "“মানুষের সৌন্দর্য তার চেহারায় না তার মনে। দেখতে অসুন্দর এমন কেউ হতে পারে সর্বাধিক সুন্দর যদি তার মন সুন্দর হয়। তার মনের আলোতে চারপাশ দুত্যিময় হয়। একেই তো সৌন্দর্য বলে”"।


স্কুল জীবন থেকেই প্রেম ভালবাসার ব্যাপার নিয়ে কখনো খুব মাথা ব্যাথা ছিল না। আমার আশে পাশের বান্ধবীরা যখন ভুরি ভুরি প্রেমের প্রস্তাব পেতো তখন তাদের কথা শুনে মনে হত হয় আমি অন্য জগতের মানুষ নয়ত ওরা। আমাদের স্কুলে সাত জনের একটা গ্রুপ ছিল যাদের মূল লক্ষ্য ছিল তারা কখনো প্রেম করবে না। কারণ সেই সময় প্রেমের ব্যাপারে বাসায় শক্ত মার বা স্কুলে টিচারদের শাসনের কাহিনীগুলোও আমাদের মনে একটা ধারনার সৃষ্টি করেছিল যে প্রেম মানে- “সামথিং ভয়ংকর”। 

কিন্তু কলেজে উঠে দেখা গেলো আমি ও আমার একটি বান্ধবী বাদে বাকি সবাই প্রেম করছে। তারপর কলেজে উঠেই আমার চারপাশের জগৎ বদলে গেলো। দেখলাম আমার প্রায় বেশিরভাগ সহপাঠির ধারণা যারা অসুন্দর এবং যারা অদ্ভুত তাদেরই কেবল প্রেম হয়নি। ফেসিয়াল, ফেয়ার পলিশ, টোনিং, ময়শ্চারায়জিং এর ভিড়ে মনে হয় এই পৃথিবীতে ফর্শা বা সুন্দরী বা হাল ফ্যাশনের না হওয়া ভীষন বড় অপরাধ। আমরা হাতে গোনা কিছু অপরাধী তখন একসাথে হলাম। এর মাঝে আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে সিম্পল মেয়েটার সাথে আমার বেশি সময় কাটত। ও ছিল ফর্শা তবে নিজেকে তথাকথিত সৌন্দর্যের উপমায় সাজাতে ও বরাবরই ছিল উদাসীন। আমার এই বান্ধবির নাম ছিল পূজা। আমি ও পূজা দীর্ঘক্ষন বসে বসে নিজেদের গল্প করতাম। রোজ ক্লাস শেষ যখন মেয়েরা ফাস্ট ফুড শপে বা ডেটিং এ যেত। তখন আমরা ফাঁকা ক্লাসের লাস্ট বেঞ্চে বসে বসে গান গাইতাম।

সুখে আছি, সুখে আছি সখা, আপন মনে।কিছু চেয়ো না, দূরে যেয়ো না,.শুধু চেয়ে দেখো, শুধু ঘিরে থাকো কাছাকাছি।“সুখে আছি, সুখে আছি সখা, আপন মনে”

মূলত কলেজ জীবনের সেই চোখ ধাঁধানো জগৎ দেখে একটা সময় আমি উপলব্ধি করলাম, আমি নিজেই নিজের ভেতরের দেয়ালগুলো ভেঙে বের হয়ে আসতে চাইছি। বিহ্বলতা, নিজেকে গুটিয়ে রাখা বা চারপাশের তথাকথিত চিন্তা ভাবনাগুলো দেখতে দেখতে আমি ক্লান্ত হয়ে গেলাম। সেই ক্লান্তি এক সময় আমাকে একগুঁয়ে করে তুলল। নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টা কিংবা নিজেকে নতুন করে আবিস্কার করার টার্নিং পয়েন্টটা শুরু হল ঠিক তখন থেকেই।

এরপরের কাহিনী বড্ড লম্বা, তবে রঙ বিষয়ক বা সৌন্দর্য নিয়ে যা দেখেছি, বা যা ভেবেছি সেগুলোকে আজ সাজিয়ে লিখতে চেষ্টা করছি কতটুকু পেরেছি জানিনা-


# "কালো যদি মন্দ তবে কেশ পাকিলে কান্দ ক্যানে?" "“জাতের মেয়ে কালও ভাল”"। "“কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি..." ”এত সব বিখ্যাত কথার মাঝেও আমি দেখেছি গায়ের রঙ ব্যাপারটা নিয়ে ছেলে মেয়ে কম বেশি সবাই খুব প্রভাবিত। বিশেষ করে আমাদের সমাজ বা দেশের বেশিরভাগ মানুষের মাঝে সহজ সরল মানুষিকতা কাজ করে যে গায়ের রঙ সাদা মানেই সে সুন্দর। আমার নানু চাইতেন টকটকে লালচে ফর্শা আর অসম্ভব সুন্দর কোন মেয়েকে তার ছোট ছেলের বৌ বানাবেন। শেষ পর্যন্ত আমার মামার পছন্দের যে মানুষটি আমাদের মামী হলেন, তিনি গায়ের রঙে শ্যামলা হলেও মনের রঙে ছিলেন অসম্ভব উজ্জ্বল। কিন্তু তারপরেও আমার নানুকে আফসোস করতে দেখেছি।


# সৌন্দর্য ব্যাপারটা মূলত আপেক্ষিক। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এর “কবি”র "ঠাকুরঝি " বা “সপ্তপদী”র "রীনা ব্রাউন" চরিত্রের তীক্ষ্ণতা আমাকে খুব মুগ্ধ করেছিল। কালো রঙেই যেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় অসম্ভব শৈল্পিক চরিত্র এঁকে ফেলেছিলেন সুনিপুন দক্ষতায়। আমি বলবো না যে সৌন্দর্যের দরকার নেই। তবে এতটুকু জানি, কেউ শারিরীক ভাবে একটু বেশি সুন্দর। কেউ একটু কম। কারো চুল সুন্দর তো কারো নাক সুন্দর। সৃষ্টির সবার মাঝেই সৌন্দর্যের কিছু না কিছু আছে। যে মানুষটির শারীরিক কোন ত্রুটি নেই, চোখের জায়গায় চোখ আছে, হাতের জায়গায় হাত আছে সেই মানুষটি শুধু মাত্র গায়ের রঙে বা তথাকথিত সুন্দরের সংজ্ঞার বাইরে বলেই অসুন্দর হতে পারেনা।


কিছু কিছু ক্ষেত্রে সৌন্দর্য ব্যাপারটা আসলে কিছুটা কনফিউজিং। অনেক মেয়ে এমনকি ছেলেও নিজেকে অসুন্দর মনে করে মানুষের মাঝে নিজেকে প্রকাশ না করে গুটিয়ে রাখে। হয়ত মানুষ মাত্রই সৌন্দর্যের প্রতি দুর্বল তবে শারিরীক সৌন্দর্যকে যেমন গুরুত্বপুর্ন ধরা হয় তেমনি অনেক সময় ব্যক্তিত্ব শারিরীক সৌন্দর্য্যকে ছাপিয়ে উঠতে পারে প্রায়শই...
#আমাদের এক দূর সম্পর্কের আত্নীয় প্রায়ই হা হুতাশ করতে এই বলে- তার মেয়ের রুপ বা রুপা কিছুই নেই। কীভাবে উনি উনার মেয়েকে ভাল বিয়ে দিবেন? এই দুটোর একটা না থাকলে নাকি চলেই না।
আবার অনেক বিত্তশালী এক পরিবারের এক মেয়ের কাছ থেকে শুনেছি- “আমি নিজে দেখতে সুন্দর নই তাই অসম্ভব সুন্দর আর স্মার্ট একটা ছেলেকে বিয়ে করতে চাই। যাকে দেখলেই আমার আশে পাশের সবাই জেলাস হবে। আবার ছেলেদের মধ্যেও বউ সুন্দরী হতে হবে এমন একটা প্রবনতা প্রকটভাবে দেখা যায়।


#কলেজে আমাদের বাংলা ১ম পত্র ক্লাস নিতেন যেই ম্যাডাম, তিনি দেখতে ছিলেন কালো কিন্তু তার সাহিত্য জ্ঞান আর অসম্ভব সুন্দর করে বলা কথা শুনে পুরো ক্লাস আচ্ছন্ন হয়ে থাকত। এলো খোঁপা আর সাধারণ তাঁতের শাড়ী পরা সেই ম্যাডামের দিকে আমরা এমন ভাবে তাকাতাম যেন পুরো ক্লাসকে উনি মোহচ্ছন্ন করে রেখেছেন। অথচ ফিটফাট আর বার্বি ডলের মত দেখতে আমাদের ইংলিশ ম্যাডাম ক্লাসে আসলেই আমরা ঝিমাতাম। তার নাম দেওয়া হয়েছিল-“ঘুম পাড়ানি মাসি”

#আমার চোখের সামনেই আমার খুব কাছের এক বন্ধু তার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ভেঙে দিল। ছেলেটি দারুন ছবি আঁকে, ফটোগ্রাফিও করে। আমার চোখে দেখা অন্যরকম কিছু ছেলের মধ্যে ছিল ও। মেয়েটিও ছিল আমার পরিচিত। জানতে পারলাম, সম্পর্কটা টেকেনি কারণ ছেলেটির ধারণা ছিল সে জীবনে মেয়েটির চেয়ে দেখতে আরও সুন্দরী মেয়ে পেতে পারে। টিন এজের ভুল আবেগের কারণেই এই সম্পর্কর শুরু হয় নয়ত তার গার্লফ্রেন্ডটি নাকি দেখতে হত কোন প্রতিমার মতই সুন্দর। আমাদের সোসাইটিতে সুন্দর গার্লফ্রেন্ড এবং বৌএর নাকি আলাদা স্ট্যান্ডার্ড আছে।

#আমার কস্ট ম্যানেজমেন্টের ম্যাডাম আমাকে একদিন কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন-বাহ্যিক দিক দিয়ে সুন্দর ছেলে বা মেয়েকে কখনো জীবন সঙ্গি করবেনা। এরা বড্ড আত্নকেন্দ্রিক হয়। আমি সেদিন প্রশ্ন করেছিলাম- কেন এই কথা বলছেন? তিনি উত্তর দিয়েছিলেন- কারণ আমাদের সমাজে বাহ্যিক সৌন্দর্যের কদর বড্ড বেশি। তাই যারা তথাকথিত সুন্দরের লিস্টে আছে তারা ভেবেই নেয় সবাই তাদেরকে অতিরিক্ত মূলায়্যন করতে বাধ্য। তাদের অহঙ্কার বা আত্ন বিশ্বাসের মূলেই থাকে তাদের বাহ্যিক সৌন্দর্য। অথচ ভেতরে ফাঁকা। কোন রান্নায় মসলার রঙ দেখতে খুব ভাল লাগছে তার মানেই এই নয় যে তা খেতে সুস্বাদু হবে।

#এক ব্লগার বন্ধু একদিন লিখেছিল-আমি খুব সাধারণ একটা মেয়েকে বিয়ে করতে চাই। চেহারা নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যথা নেই। একজন সুন্দর মানুষের চেয়ে বরং আমি একজন সুন্দর মনের মানুষের সাথে জীবন কাটাতে বেশি শান্তি অনুভব করবো। কোন কৃত্রিমতার প্রলেপ আমার ভাল লাগেনা।

#যুগ যুগ ধরে বইয়ে পড়ে এসেছি কন্যা সুন্দর না হলে তার বিয়ে হয়না। কিছুদিন আগে একজন আপুর সাথে পরিচয় হল। তিনি বেশ নামকরা বুটিক ও পার্লারের প্রতিষ্ঠাতা। তার ভাষ্যমতে, তিনি প্রথম পার্লার দিয়েছিলেন কারণ দেখতে ভাল না বা ফ্যাশনেবল না বলে আপুকে বিয়ে দিতে তার পরিবারে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। এরেঞ্জ ম্যারেজের শর্তের লম্বা লিস্টিতে তিনি কোনভাবেই নিজেকে ফিট করাতে পারেননি। তারপর থেকে তিনি ঠিক করেছেন নারীর সৌন্দর্যের নিয়েই তিনি কাজ করবেন।


#আমার এক কলেজ ফ্রেন্ডকে দেখতাম সেই সময়ে প্রতি মাসে তিনশ টাকা দিয়ে ঢাকার বাইরে থেকে রঙ ফর্শাকারী একটা ক্রিম কিনে ব্যবহার করত। সেই সময়ে আমাদের কাছে মাসে তিনশ টাকা মানে অনেক টাকা। এত টাকা খরচ করতো কেন প্রশ্ন করলেই ও বলত- “ও যেই ছেলেটিকে পছন্দ করে সেই ছেলেটি ওকে পাত্তা দেয়না। ও ফর্শা হয়ে গেলেই নাকি কোন ফ্লিমের সিনের মত ছেলেটা ওর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যাবে”।


#আমার এক কাজিন কখনোই কালো বা গাঢ় রঙের কোন পোষাক পড়েনা। ওর ধারণা ও ফর্সা না তাই নাকি ওকে গাঢ় রঙ মানায় না।

#শুধু গায়ের রঙ নয় আজকাল মেয়েদের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ডায়েট করার প্রবনতাও দেখা যায়, নিজেকে কষ্ট দিয়ে বা অভুক্ত রেখে হলেও তাদের স্বপ্নের হালকা শরীরটুকু চাই। কারণ সমাজ চায়। আর এইটাই যেন তাদের সৌন্দর্যের আরেক চাবিকাঠি।

#বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু হবার পরে আমার সাথে একটা মেয়ে পড়ত। সে দেখতে বেশ কালো , লম্বা আর আটপৌড়ে চেহারার ছিল। কিন্তু তাকে কখনো নিজেকে নিয়ে ভাবতে দেখিনি, বিকার দেখাতে দেখিনি। সবার সাথে ও মিশে যেত নিজস্ব এক দক্ষতায়। খুব নির্বিকার আর আত্নবিশ্বাসি ছিল ও। আমি মুগ্ধ হয়ে ওকে দেখতাম। ও খুব গর্ব করে বলতো-"আমার বাবা আমাকে ব্ল্যাক বিউটি/ ব্ল্যাক ডায়মন্ড বলেন। Complexion!! Doesn't Really Matter...!!! "

#শুনেছি অস্ট্রেলিয়ার সমাজে নাকি'ডার্ক'ডাকা রীতিমত কমপ্লি্লমেন্ট। অটো ট্যান মানেই অন্যরকম কিছু। আমাদের বাঙালীদেরই শুধু শ্যামলা বা কালো হওয়া মানে বর্ণহীন, ফ্যাকাশে হওয়া।

সে যাই হোক- সৌন্দর্যের ব্যাপারটা আসলে হয়ত একেজনের কাছে একেক রকম। আমি খুব ছোটকালে নিজের গায়ের রঙ আর সৌন্দর্য নিয়ে ভেবে ভেবে অনেক নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি। তাই আমার মনে হয় পারিবারিক পরিবেশ থেকে আসলে বেশিরভাগ সন্তানদের মানুষিক পরিপক্কতা শুরু হয়। মা-বাবা সন্তানের প্রথম শিক্ষক বা বন্ধু । তাঁরা চাইলেই, সচেতনভাবে চাইলেই সন্তানের ভেতর আন্তবিশ্বাসের বীজটা বুনে দিতে পারেন। তাকে উপলব্ধি করাতে পারেন তার রাজ্যের রাজা সেই। আর আমি বাহ্যিক সৌন্দর্যকেও ছোট করে দেখবো না। মানুষের বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ উভয় সৌন্দর্যেরই দরকার আছে। তবে তথাকথিত সৌন্দর্যের মাপকাঠিতে মানুষকে বিচার করার বিপক্ষে আমি। আমার কাছে মনে হয় একেক মানুষ একেক রকম সুন্দর। একেক মানুষ একেক কারণে সুন্দর। আমি এখন আর কখনো ভাবি না কোন রঙে আমাকে মানাবে। আমি ইচ্ছেমত নানান রঙে নিজেকে সাজাই। আমার ভাবনার স্বাধীনতাই আমার উচ্ছলতা হয়ে ফুটে উঠে আমার মাঝে। আমি এখন নিজের জন্যে সাজি। ঝিকমিক করা ছোট্ট কোন সাদা পাথরের নাকফুলও আমার মন ভাল করতে পারে। আমার রাজ্যে আমি পাখা উড়িয়ে ঘুরে বেড়াই। আর খুঁজে খুঁজে দেখি অনেক বছর আগের “একু”র মত কেউ ভাবছে না তো? একা এক কোনে মন খারাপ করে বসে নেই তো? আর ভাবি কৃষ্ণকলিদের যেই নাম বা রুপই থাকুক না কেন তারা কি জানে এই অসম্ভব সুন্দর পৃথিবীর কৃষ্ণচূড়া থেকে শুরু করে কচুরিপানা ফুল যেমন সুন্দর ঠিক তেমনি তারাও ভীষণ সুন্দর!



“Life is full of beauty. Notice it. Notice the bumble bee, the small child, and the smiling faces. Smell the rain, and feel the wind. Live your life to the fullest potential, and fight for your dreams.”
Ashley Smith quotes

একুয়া রেজিয়া-

No comments:

Post a Comment