Subscribe:

মধ্যরাতের কাব্য

মেয়েটি এখনও আমায় দেখলে হাসে কিন্তু কথা বলেনা।সেদিন ভাবলাম গিয়ে কথা বলবো ওর সাথে,সাহসে কুলায় নি।এমনিতে আমি এতো সাহসী যে এই ছোট্ট মনে সাহস রাখার জায়গার সঙ্কুলান হয়না।কিন্তু ওর সামনে দিয়ে গেলেই আমার এরকম হয় কেন?


২.
সেদিন আদরকে নিয়ে ওদের বাসার সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম।দেখি মুচকি হাসছে মেয়েটি।অসম্ভব রাগ লাগলো আমার।রাগে নাক মুখ ফুলে গেল। আমার আবার একটি সমস্যা হচ্ছে রেগে গেলে মুখের দুপাশে লালচে আভা পড়ে!আদর কিছুটা ভ্রুকুঁচকে জিজ্ঞেস করে, কি হয়েছে?আশার কথা ও মেয়েটিকে দেখেনি।তাই আদরকে কোনরকম বুঝিয়ে দিলাম ব্যাপারটি থেকে নিষ্পত্তি পাওয়ার জন্যে নিতান্তই ছেলেমানুষী যুক্তি দিয়ে।তবে ও যে আমার কথা মেনে নেয়নি সে ব্যাপারে আমার কোন সন্দেহ নেই।আসলে মেনে নেওয়ার কথাও নয়।ইদানীং আমি খুব বেশি অর্থহীন ও যুক্তিছাড়া কথা বলছি।তাতে অবশ্যই কিছু মনে করে না আদর।আমাকে খুব ভালভাবে নেয় ও।হয়না কখনও কোন ভুল বোঝাবুঝি আমাদের।তাই জীবনের একটা আলাদা স্বাদ খুঁজে পাই।আসলে আমাদের পরিবার খুব বেশি রক্ষণশীল।তাই আদরের সাথে ঘুরতে বের হওয়া।আদরকে নিয়ে আমাদের বিল্ডিং এরই আশেপাশে ঘুরঘুর করা আমার পক্ষে অসম্ভবই ছিল।কিন্তু সব অসম্ভবই সম্ভব হয়েছে এক আচানক ঘটনার মাধ্যমে।বাসায় জানতো আমার কোন বন্ধুবান্ধব নেই।এই কারণেই বের হতে দিতো না আমায়।

৩.
বর্ষা চলছে তখন।প্রায়ই বারান্দায় এসে বসে থাকতো নিলয়।কোন সঙ্গী তার ছিলোনা বললে ভুল হবে একাকীত্বকে সার্বক্ষণিক সঙ্গী হিসেবে পেতো নিলয়।ওর বাসাতেও খুব কড়াকড়ি ঘর থেকে বের হওয়া নিয়ে।তাই এই বৃষ্টিতে বাইরে গিয়ে একটু বৃষ্টির পানিতে নিজেকে ভাসিয়ে দিবে সেই সুযোগটি মেলেনা ওর।তাই সারাদিন মন খারাপের বিলাসীতায় ভুগতে হয়।একদিন বারান্দায় এসে বৃষ্টি ধরার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছিল।কিন্তু তার সেই চেষ্টা বারে বারেই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছিল।এমনসময় এক জিন্স প্যান্ট ও টিশার্ট পরিধিত কেউ একজন তাদের বিল্ডিং এর সোজাসুজি দূরের কোন এক বিল্ডিং এর বারান্দায় তার মত বৃষ্টি ধরার চেষ্টা চালাচ্ছে।এবং মাঝে মাঝে সফল হয় সে।এভাবে প্রতিদিন মাঝরাতে সে বারান্দায় এসে বসে থাকতো কখন সেই মানুষটি এসে বৃষ্টি ধরার মহড়া দিবে এবং নিলয় তা দেখবে।মানুষটির নাম,বর্ণ সকল কিছুই নিলয়ের অজানা।এমনকি মুখ খানাও দেখতে পাইনি সে।কিন্তু মানুষটির আর না আসা ধীরে ধীরে নিলয়ের মনের ভেতর তোলপাড় করে ফেলে!!!.........আবেগের তাগিদে তার নাম্বার জোগাড়ের অনেক চেষ্টা চালাতে থাকে।এইদিকে শেষ হয়ে যায় বর্ষা।দেখা যায়না মানুষটিকে আর।মনের অস্থিরতা যখন একেবারেই শেষ পর্যায়ে তখন কিভাবে জানি নাম্বার পেয়ে যায় নিলয়।অক্সিজেনশূন্য কোন এক অন্ধকার কূপ থেকে কেউ যেন তাকে তুলে এনেছে এই অবস্থা।

৪.
তখন মধ্যরাত।নিঃশব্দের প্রচেষ্টা চলছিল অন্ধকারের রাজত্ব দখলের ঝিঁঝিঁদের সাথে তখনই ফোন আসে নাহিদের কাছে।নাহিদের ঘুম আসছিলনা।তাই রাত জেগে বই পড়ছিল গভীর মনোযোগের সাথে।অপ্রত্যাশিত ফোনের রিং এ তার সেই মনোযোগ মাঠে মারা যায়।পাশেই ঘুমিয়েছিল মা।নাহিদ বুয়েটে পড়ে।সারাবছর পড়া হয়না।দিনের বেলা ক্লাস করে আর ঘুমিয়ে কাটায় তাই রাত জেগে পড়ে।কোন অপরিচিত নাম্বারের ফোন ধরেনা নাহিদ।কারণ এভাবে প্রায়ই ফোন আসাতে বিরক্তিবোধ হয় নাহিদের।আর বিরক্তির সীমা মাত্রা অতিক্রম করার কথা যখন ফোনটা এতো রাতে আসে।এখন কয়টা বাজে?টিক টিক শব্দে বাজতে থাকা দেওয়াল ঘড়িটার দিকে তাকায় নাহিদ।রাত ২টা বেজে ৪৫মিনিট।এতো রাতে কে ফোন করলো!!!ফোনটা ধরতে ইচ্ছে করে নাহিদের।মা জিজ্ঞেস করে একটু পর, “এতো রাতে কে রে?”।“Wrong Number মা” নির্লিপ্ত উত্তর নাহিদের।

৫.
বারবার ব্যর্থ হয়ে ফোন্ করা অফ করে দেয় নিলয়।মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়।বিষন্নতার কৃষ্ণগহ্বরে হারিয়ে যেতে থাকে নিলয়।এরপরের দিনও একই সময়ে ফোন দেয় নিলয়।কিন্তু ওপাশে ধরেনা ফোন।নাহিদের খুব ইচ্ছে করছে ফোনটা ধরে দেখার।কিন্তু পারেনা।মোবাইল Silent করে রাখে।আম্মু যে সারাদিন ওর পিছনে লেগে থাকে!
 আর না পেয়ে ক্ষুদেবার্তা পাঠায় নিলয়।অবশেষে কি ভেবে জানি উত্তর দিয়ে দেয় নাহিদ।ক্ষুদেবার্তাগুলো অনেকটা এই টাইপ।
-একটু ফোনটা কি ধরা যায়?(নিলয়)
-পাশে আম্মু আছে যে!আমি কখনও বাসায় কথা বলতে পারিনা।স্যরি!আর সামনে আমার পরীক্ষা!!(নাহিদ)
 সেদিন নিলয় বিশ্বজয়ীর আনন্দে ভাসতে থাকে SMS এর রিপ্লাই পেয়ে।কিন্তু সামনে যে ওর পরীক্ষা এটা মাথায় থাকে নিলয়ের।আশ্চর্যের কথা ওরা একজন আরেকজনের সম্পর্কে কিছু না জেনেই দিনে ২-১টা ক্ষুদেবার্তা চালাচালি করতে থাকে।এভাবে ২-১দিন চলতে থাকে।সারাদিন কে কি করেছে এরই মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে তাদের প্রশ্নোত্তর।দুজনের ফ্যামিলিই অসম্ভব কড়া।দুদিন পর নিলয়ের প্রচন্ড আগ্রহের কারণে নীচে এসে দেখা করতে রাজী হয় নাহিদ।ওদের মধ্যে তখনও হয়না কোন কথা।ক্ষুদেবার্তা চালাচালিতেই সীমাবদ্ধ।আগামীকাল দেখা করার দিন তাদের।এরই মধ্যে নাহিদের মা নাহিদের মোবাইলে নিলয়ের SMS দেখে ফেলে।এবং জেনে যায় তাদের দেখা করার কথা।

৬.
নাহিদ বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে এমনসময় মা এসে জিজ্ঞেস করে, “কিরে,কই যাবি?” “এইতো ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে!নাহিদের কথা মনপূত হয়না তার মা’র!!!তাই নাহিদ ঘর থেকে বের হওয়ার পরপরই পিছু নেয় নাহিদের।

৭.
দেখা হয়ে যায় দুজনের!অসম্ভব রূপবতী দুটি মেয়ের সামনাসামনি একই সাথে আশ্চর্য এবং লজ্জিত হওয়ার দৃশ্যটি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার চেষ্টা করছিল নাহিদের  মা।নিজের ভুল বুঝতে পারেন তিনি।মেয়ে আসলেই তার ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে আসে।এরপর থেকে নাহিদের  বাইরে যাওয়ার কোন বাঁধা রাখেন না।………দুজনের স্তব্ধ হয় থাকার সময়কাল বোধহয় অনন্তের ঘরে পৌছিয়েছে।তব্দা খেয়ে যাওয়ায় কোন কথা বের হয়না দুজনেরই।কিন্তু মা’র উপস্থিতি টের পেয়ে নিজেকে সামলে নেয় নাহিদ।নিলয়ের কাছে গিয়ে কথা বলতে থাকে অনেকটা জোড় করেই।কথা বের হচ্ছিলনা কারই!!!

৮.
এরপর থেকেই নাহিদ নিলয়কে দেখলেই বিব্রতবোধ করে।নিলয়েরও একই অবস্থা!কিন্তু যখন থেকেই নহিদকে তার প্রাণসঙ্গী আদরের সাথে দেখে,মুচকি হাসে সেদিনের ভয়াবহ টাস্কি খাওয়ার ঘটনা মনে করে।কিন্তু রাগ লাগে নাহিদের।বলার থাকেনা কিছুই…………

[এদের দুজন কি একজন আরেকজনাকে ছেলে ভেবেছিল?কি ভেবেছিল সেটা আমার ভাববার বিষয় নয়,আমার দায়িত্ব অনেক আগেই শেষ!!!]



উদ্ভট ঘটনার অবতরনের মাধ্যমে মানুষের মস্তিষ্ক ভড়কে দেওয়ার অদম্য ইচ্ছের তুচ্ছ এক্সপেরিমেন্ট মাত্র!জানিনা কতটুকু সফল হয়েছি।মাথায় জিল্যাপীর প্যাঁচ লাগাতে না পারলেও ভ্রুযুগল কিঞ্চিত কুঞ্চিত নাহয়ে স্থির থাকবে সে বিষয়ে আমি যথেষ্ট সন্দেহ পোষণ করছি 

অনির্ণেয় অন্তরক

No comments:

Post a Comment