Subscribe:

অভিনন্দন….এলেন জনসন সারলিফ, লেমাহ বোয়িই , তাওয়াক্কুল কারমান….

টেলিভিশনের পর্দায় যখন খবরটা বারবার ফ্ল্যাশ হচ্ছিল, ঠিকমত খেয়াল করিনি। অন্য কি একটা কাজে যেন ব্যস্ত ছিলাম। ঘরের টুকিটাকি কাজ। মেয়েরা যতই আজকাল মহাকাশ পর্যন্ত চড়ে বেড়াক না কেন, ঘরে এসে সে সেই আদুরে বউ অথবা মেয়েটি হয়ে যায়, চিরমায়াময়ী, সর্বজয়ী।



নারী।


নারীরা সবসময়ই এমন। তাদেরকে কষ্ট করতে হয় ঘরে, ঘরের বাইরে, সর্বত্র। সবজায়গায় অত পেতে থাকা কাল বাঘের থাবা, অন্ধকারের বিভীষিকা, আর পরীক্ষা, সব যেন নারীর জন্য তৈরি। কাল পরিবর্তন হয়েছে, সময়ের কত ঘণ্টা মিনিট সেকেন্ড কেটে যাচ্ছে হরদম। নারী, তাকে প্রমাণ করতে হয়, বারে বারে, এই সমস্যাজর্জরিত পৃথিবীতে নারীদেরও সামর্থ্য আছে, যোগ্য কিছু করে দেখানোর।


এবছর নোবেল শান্তি পুরস্কারে তাই তিন তিনটি তারার উপস্থিতি আমাকে আনন্দিত করেছে, ভীষণ। অভিনন্দন জানাচ্ছি, তিন মহীয়সী নারীকে…



এলেন জনসন সারলিফ, লেমাহ বোয়িই , তাওয়াক্কুল কারমানকে……



লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট এলেন জনসন সারলিফ। এই অত্যুজ্জ্বল নারীকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবার কিছু নেই। আফ্রিকার প্রথম নারী সরকারপ্রধান এবং বর্তমানে একমাত্র নারী হিসেবে এই গৌরব এখনো মাথা পেতে রেখেছেন। পৃথিবী দেখতে পেয়েছে, এই ৭২ বয়সী নারীর পদচারণা, সমগ্র ক্ষেত্রে। বাবা ছিলেন নিতান্তই দরিদ্র একজন ছাপোষা মানুষ। কিন্তু, যার আলোয় পৃথিবী একদিন আলোকিত হবে, তাকে বেঁধে রাখা যায় না। অর্থনীতিতে নিজের পেশাগত জীবন গড়ে তোলা এই নারী কাজ করেছেন ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, ইউ এন ডি পি এর মত প্রতিষ্ঠানে। লাইবেরিয়ার অর্থমন্ত্রী হিসেবে একদফা দায়িত্ব পালনের পর অবশেষে ২০০৫ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নির্বাচিত এলেন ২৪তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।


লাইবেরিয়ারই আরেক মহীয়সী নারী, লেমাহ বোয়িই। লাইবেরিয়ার গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে শান্তিমুলক কর্মকাণ্ড আর তার সমাপ্তির পিছনে যে কয়জন মানুষের ছিল সবচেয়ে বেশি হাত, লেমাহ তাদের অন্যতম। অহিংস উপায়েও কেমন করে এই অস্ত্রসজ্জিত ভয়ানক পৃথিবীতে প্রতিবাদ করা যায়, লেমাহ দেখিয়েছেন। শুধুমাত্র প্রার্থনা আর সঙ্গীত পরিবেশনে যে আন্দোলনের সূত্রপাত হয়, তার পরিসমাপ্তি ঘটে এলেন জনসনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে।


ইয়েমেনের নারীদের প্রতিনিধিত্ব করে এই দুইজনের সাথে এবার আরও একজন নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হলেন। তাওয়াক্কুল কারমান , ইয়েমেনের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কর্মী।মাত্র ৩২ বছর বয়সেই শান্তিতে নোবেল পুরস্কার অর্জন করে তিনি ইতিহাসের পাতায় প্রথম আরব নারী হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন। নিজের তৈরি নারী সাংবাদিকদের নিয়ে সংগঠন প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহর সরকারের বিরোধিতায় ছিল সবসময় সোচ্চার, কয়েকবার কারাবরণও করতে হয়েছে কারমানকে। কিন্তু দমে যান নি, বরং কলমের কালিতে তাঁর কণ্ঠস্বরকে দমানো যায় নি।



এই তিন নারী, এবার যৌথভাবে, তাদের কর্মেই চিনিয়েছেন পুরো বিশ্বকে। নোবেল শান্তি পুরস্কার কমিটির এবারের এই তিন নারীকে পুরস্কৃত করেছেন তাদের বিশেষ অবদানের জন্য।


“শান্তিমুলক কাজে অংশগ্রহণের জন্য অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে নারীদের নিরাপত্তা আর তাদের অধিকারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা” -এই ছিল এই তিন নারীর পুরস্কার পাওয়ার মূল উপজীব্য।


সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার নোবেলের অন্যান্য শাখায় নারীদের উপস্থিতি আশঙ্কাজনকভাবে কম। কিন্তু শান্তির এই শাখায় আমরা পেয়েছি অনেক অনেক বিখ্যাত নারীকে, যারা পৃথিবীটাকে তাদের কাজে কর্মে আর চিন্তায় বদলে দেয়ার স্বপ্ন দেখেছেন, দেখে যাচ্ছেন। কয়দিন আগেই আমরা চিরবিদায় জানিয়েছি আফ্রিকার আরেক চিরসবুজ নারী ওয়ানগারি মাথাই কে। সবুজের জন্য তাঁর হাহাকার সবাইকে ছুঁয়ে গেছে। তিনিও স্বপ্ন দেখতেন একটা শান্তিময় বিশ্বের, একটা আলোকিত জীবনময় পৃথিবীর।


স্বপ্ন, আমরাও দেখি, দেখেই যাই। কখনো সত্যি হবে কিনা জানি না। কিন্তু ঝড়ের পর যেমন রৌদ্রকরোজ্জল বসুধা আমাদের স্বাগত জানায়, একদিন তেমন একটা দিন আসবে।



স্বপ্ন দেখতে দোষ কি?



তিন নারী। বাঁ থেকে... তাওয়াক্কুল কারমান, লেমাহ বোয়িই, এলেন জনসন সারলিফ


-আফরিনা হোসেন রিমু

No comments:

Post a Comment