বালিশের নীচে রাখা মোবাইলটা কেঁপে কেঁপে উঠছে। বৃষ্টিভেজা দুপুরের অলস ঘুমের আরামটুকু ছেড়ে নড়তেও মন চাইছেনা, কিন্তু মোবাইলের নৃত্যটা তো থামানো দরকার।
"হ্যালো ..."
"ঘুমাস?" কি সুন্দর আহ্লাদী গলা ...
"না, সাম্পান চালাই, মাঝ দরিয়াতে আছি, কাঁটা কম্পাস হারায় ফেলছি, তাই দিক খুইজা পাইতেছিনা ..."
"কাঁটা কম্পাস দিয়ে কি দিক নির্ণয় করে ... উজবুক? "
"আমি তো হরহামেশাই করি ..."
"তোর মত গাধারা এমনই করে ..."
"ওই ... দেখ, গাধা আর উজবুক এক না। যে কোন একটা বলবি, হয় গাধা, না হলে উজবুক ..."
"তুই দুইটার মিক্সচার "
"তাইলে আমি কি? গাবুক না উজধা? "
"তোর নিজের মতে - তুই একটা উদবিড়াল "
"সেটা কোন জিনিস?"
"তোরই জানার কথা। না জানলে রাজশাহী চিড়িয়াখানায় ট্র্যানসফার নে"
"রাজশাহী চিড়িয়াখানায় ট্র্যানসফার নিবো মানে? "
"আমি তো জানি তুই ঢাকা চিড়িয়াখানায় আবাসিক প্রানী "
"আস্তে বল ... তেলাপোকারও কান আছে ..."
"তেলাপোকার কান নাই "
"কান আছে, চোখ নাই ..."
"এনিওয়ে ..."
"আচ্ছা, এইসব প্যাচাল শুনানোর জন্য আমারে ঘুম থেকে টেনে তুললি তুই? "
"না, কাজ আছে তোর সাথে"
"শুন ... আমি আজকে মোটেও বের হবোনা। এত আরামের ঘুম থেকেও উঠতামনা, শুধু তুই বলে উঠছি ...। তোর বৃষ্টিতে ভেজার সখ,
ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম টু ডু দ্যাট এলোন ..."
"তুই কেমনে বুঝিস?"
"জামাতীর দৌড় যেমন মগবাজার পর্যন্ত, তেমনি বৃষ্টির দিনে তোমার দৌড় বৃষ্টিতে ভেজা পর্যন্ত - এটা বুঝতে বেশি ভিটামিন লাগেনা ..."
"হা হা হা হা ... বান্দর কাহিকা" - কাঁচভাঙ্গা সেই হাসি ... বুকের মধ্যে কেমন যেন করে ওঠে আমার ... জানবিনা ... তুই কোনদিনও জানবিনা তোর এই হাসি শুনলে আমার কেমন লাগে ...
"তুই আবার আমাকে বান্দর বললি? এইবার তিনটা প্রানী মিক্স করছিস "
"ভাল করছি "
"ওই ... তুই জানিস আমি কত ভাল বাবু? আমার মত ভাল বাবু আর তৈরী হয়না এখন। আমাকে বানানোর পর একটা মেকানিকাল ম্যালফাংশনে এত ভাল বাবু বানানোর যন্ত্রটাই নষ্ট হয়ে গেছে। আর সেই দুর্লভ পিসটাকে তুই উজবুক, গাধা আর বান্দর বললি?"
"হা হা হা ..." হাসির তোড়ে কথা বলতে পারেনা পাগলীটা ... বড় ভাল লাগে ওর হাসি শুনতে ...
"দম নে, দম নে ... দম নিয়ে আবার হাসা শুরু কর ..."
"তোর সাথে থাকতে হলে আমার অক্সিজেন মাস্ক আর ট্যাঙ্ক কিনতে হবে ..."
"সমস্যা নাই, স্কুবা ডাইভিং গিয়ার কিনে তোর পিঠে ঝুলায় দেব "
"আ্চছা দিস ... শোন ... বলতো আমি এখন কই?"
"সর্বনাশ ... তুই আমার বাসার নীচে না কি? "
"হু ... কেমনে বুঝলি?"
"আমি রোজ সকালে ডিম খাই তো ... তাই অনেক কিছু বুঝতে পারি "
"আ হা ... "
"তুই ডিম খাসনা কেন? জানিস ডিমে কত ভিটামিনা আছে?"
"সাথে আশটে গন্ধও আছে ... ওয়াক "
"নাকের সামনে একটা গোলাপ ফুল ধরে ডিম খেয়ে ফেলবি, মনে করবি যে গোলাপ খাচ্ছিস "
"ভাগ ... "
"তুই ভাগ ... যেখানে খুশী যা ... আমাকে জ্বালাবিনা একদম ... আমি ঘুমাবো..."
"আচ্ছা ... তাহলে আমি ক্যাডবেরী ডার্ক চকলেটের ২০০ গ্রামের বিশাল বারটা একা একা খেতে খেতে চলে যাই ..."
"ওই ... শোন শোন ... আমাকে অর্ধেকটা দিয়ে যা না ... প্লিজ ..."
"তোর জন্যই আনছিলাম, তুই ঘুম থেকেও উঠবিনা, আমার সাথে বাইরেও যাবিনা, তাইলে আমি তোকে চকলেট দিব কিভাবে?"
"মাইনসে করে ব্লাক মেইল আর তুই করতেছিস ডার্ক চকলেট মেইল? "
"হা হা হা ... হু ... চেষ্টা করতেছি"
"মুহাহাহাহাহাহাহা ... তোর এই চেষ্টা সফল হবেনা শয়তান ... আমি আজকে চকলেটের মায়া ত্যাগ কইরা ঘুমাবো ... "
"তুই তাইলে উঠবিনা? "
"না ... যতক্ষন না প্রকৃতি মাতা আমাকে উঠতে চুরান্ত ভাবে বাধ্য করে, ততক্ষন আমি কিছুতেই উঠবো না"
"অসভ্য কোথাকার ... ভাগ"
"কি অসভ্যতা করলাম?"
"চুপ ... চুপ ... একদম চুপ ... "
"আচ্ছা যা ... চুপ করলাম"
"দরজা খোল, আমি ভেতরে আসবো ... তারপর তোকে টেনে বের করবো"
"না ... কোন ভাবেই না ... ওই তুই ভাগ ... তুই ভাগ ... তুই ভাগ ..."
দরজার নব ঘুরিয়ে ঘরে ঢোকে একটা নীলপরী ... আমি ওর দিকে অপলক তাকিয়ে ওর ডানা দুটো খুঁজি ...
-Joy Kabir
No comments:
Post a Comment