সকালের আলো চোখে এসে লাগতেই ঘুম ভেঙে গেলো মাধবীর। চোখ মেলে তাকালো সে। পাশে তার বর আসিফ এখনো ঘুমাচ্ছে। বিছানার পাশের জানালার পর্দাটা পুরোপুরি সরিয়ে দিলো সে। যেন সোনালী রোদে আসিফের ঘুম ভেঙে যায়।
মাধবী আবার চোখ বন্ধ করলো। তারপর ঘুমের ভান করে শুয়ে থাকলো সে।
মাধবী চাইছে আজ আসিফের ঘুম আগে ভাঙুক। কারন আজ একটা বিশেষ দিন। তার জন্মদিন। তাই এইদিনটা মাধবী শুরু করতে চায় আসিফের কোনো মিষ্টি সারপ্রাইজ পেয়ে অথবা আসিফের মুখে উষ্ণ প্রেমময় কথা শুনে। অথবা দুটোই।
মাধবী আড়চোখে তাকালো আসিফের দিকে। ঐ মায়াবী মুখটাতে সূর্যালোক খেলা করছে। কি অপূর্ব! মাধবীর ইচ্ছা করছিলো দুচোখ মেলে তার জীবনসঙ্গীকে দেখতে। ইচ্ছা করছিলো তার মুখের দিকে তাকিয়ে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে।
কিন্তু পরক্ষনেই বাস্তবে ফিরে এলো মাধবী। রাগে তার শরীর জ্বলে উঠলো। মনে মনে বললো, "একটা মানুষ এতো ঘুমায় কেনো? কোনো দায়িত্ববোধ নাই। সব ছেলেই এমন। কিচ্ছু বোঝে না।"
এসব ভাবতে ভাবতে আবার চোখ বন্ধ করলো মাধবী। চোখের পাতার অন্তরালে সে ফিরে গেলো অতীতে। মনে পড়তে লাগলো আসিফের সাথে প্রথম দেখা। প্রথম কথা, প্রথম স্পর্শ। স্মৃতিগুলো অমলিন। কুষ্টিয়ার মেয়ে সে আর রংপুরের ছেলে আসিফ। দুটো আত্মা এক হয়ে তারা আজ ঘর বেধেছে রাজধানীতে। শত কোলাহলের মাঝেও তাদের ঘরে ভালোবাসার শান্ত আবেশ...।
এক সময় এভাবেই ঘুমিয়ে পড়লো মাধবী।
ঘুমের মধ্যে সে স্বপ্ন দেখা শুরু করলো। তাকে নিয়ে আসিফ চলে গেছে একটা নির্জন দ্বীপে। সেখানে কেউ নেই। সমুদ্রের নীল আর অরণ্যের সবুজের মাঝে শুধু তারা দুজন। এক রাতে চাদের আলোয় তারা সমুদ্রের তীরে বসে আছে। জোয়ারের শেষে ক্লান্ত ঢেউগুলো বারবার ছুয়ে যাচ্ছে তাদের। আর জলের শীতল স্পর্শে শিহরিত মাধবী উষ্ণতার খোঁজে নিজেকে সমর্পন করছে আসিফের বুকে। কখনো সমুদ্রের গর্জন, আবার কখনো অরণ্যের ডাক। তবু এসবে খেয়াল নেই মাধবীর। সে শুধু সাড়া দিচ্ছে আসিফের ভালোবাসার আহবানে।...
মাধবীর ঘুম ভাঙলো অনেকক্ষন পর। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো সে। সকাল এগারোটা বাজে। পাশে তাকিয়ে দেখলো আসিফ নেই। আর মোবাইলে আসিফের একটা মেসেজ। সে লিখেছে: "আমি অফিসে চলে গেলাম। নাস্তা করেছি। তুমি ঘুমাচ্ছিলে, তাই বিরক্ত করিনি। রাতে আসবো।"
মাধবী অনেকবার মেসেজটা পড়লো। প্রচন্ড অভিমানে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো তার। তারপর আবার নিজেই চোখ মুছে ফেললো। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো যে সে আর কাদবে না। কার জন্যে কাদবে? এই দিনটাতে যেই মানুষ এমন ব্যবহার করতে পারে, তার জন্য কাদা অর্থহীন।
একা একা বারান্দায় বসে আকাশ দেখলো মাধবী। তারপর গোসল সেরে নতুন একটা শাড়ি পড়লো সে। একটু সাজলো। তার উদ্দেশ্য নিজেই নিজের জন্মদিন উদযাপন করা। যদি তোর জন্মদিনে কেউ উইশ না করে, তবে একলা কেক কাটো রে....
দুপুর একটায় বাসায় হঠাত্ আসিফ এসে হাজির। মাধবী দেখেও না দেখার ভান করলো। আসিফ তার কাছে এসে বললো,
-একটু বাইরে চলো। ব্যাঙ্কে যেতে হবে। তোমার একটা সাইন লাগবে। প্লিজ একটু চলো।
মাধবী অন্যদিকে তাকিয়ে বললো,
-কেনো? আমার সাইন লাগবে কেনো? এখনি সাইন করে দিচ্ছি। ব্যাঙ্কে যাওয়া লাগবে কেনো?
-কাগজ আনতে ভুলে গেছি। এছাড়া দরকারও আছে। অফিসের কাজ। বেশি টাইম নাই। চলো।
যতোই অভিমান করুক, তবু আসিফের অফিসিয়াল কোনো কাজে ক্ষতি করতে চায় না মাধবী। তাই রাজি হলো সে।
তাদের গাড়িতে উঠে বসলো দুজন। ড্রাইভিং সিটে আসিফ। আর তার পাশেই মাধবী। দুজনেই চুপ। একরাশ বিস্ময় আর ভয় নিয়ে আসিফের দিকে তাকালো সে। মাধবী ভাবতে লাগলো, আসিফ এমন করছে কেনো? কোনো কারন খুজে পেলো না মাধবী। তাকে কি কোনো অপরাধের শাস্তি দেয়া হচ্ছে?
ভাবতে ভাবতে কিছুক্ষন পর মাধবী তার চিরদিনের অভ্যাস মতো ঘুমিয়ে পড়ল গাড়ির সিটে মাথা রেখে। আর এদিকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো আসিফ।
অনেকক্ষন পর আসিফের আদরমাখা ডাকে ঘুম ভাঙলো মাধবীর। আসিফ ডেকেই চলেছে,
-সোনামণি ওঠো। আমরা চলে এসেছি। ওঠো love bird...
পুরোনো অভ্যাস অনুযায়ী মাধবী প্রথমেই মোবাইলে টাইম দেখলো। টাইম দেখে সে আকাশ থেকে পড়লো! বিকাল সাড়ে পাঁচটা বাজে!!
আসিফের হাত ধরে বিস্ময়ে হতবাক মাধবী গাড়ি থেকে নেমে এলো। কিন্তু গাড়ি থেকে নেমে মাধবী যা দেখলো তাতে তার হার্টফেইল করার মতো অবস্থা!
মাধবী দাড়িয়ে আছে কুষ্টিয়া শহরে তার বাবার বাড়ির উঠোনে। তার সামনে দাড়িয়ে হাসছে তার মা বাবা আর ছোট বোন।
মাধবী মাথা ঘুরিয়ে আসিফের দিকে তাকালো। অপরাধীর ভঙ্গিতে সেও হাসছে।
মাধবীর মা, বাবা, ছোট বোন ছুটে এলো মাধবীর দিকে। তারপর সবাই মিলে একসাথে উচ্চস্বরে গেয়ে উঠলো, happy birthday to you মাধবী। happy birthday to you...
মাধবী আনন্দে কেদে ফেললো। জড়িয়ে ধরলো প্রিয়জনদের। জন্মদিনে এভাবে তাদের কাছে পাবে, এটা মাধবী স্বপ্নেও ভাবে নি।
পাশে দাড়িয়ে এসব দেখছিলো আসিফ। অনাবিল প্রশান্তিতে ভরে উঠেছে তার মন। অনেক অভিনয়ের পর শেষ পর্যন্ত তার ভালোবাসার দেবীকে সে উপহার দিতে পেরেছে আনন্দ। এ আনন্দের স্বাদ কিছুটা ভিন্ন। এ আনন্দের উচ্ছাস একটু বেশি।
..............................
Fb id: As If Shuvo
No comments:
Post a Comment