Subscribe:

এবার ফাগুন অন্যরকম, ভালোবাসাও...

(২০০৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি গল্পটা লিখেছিলাম। ব্লগেই দিয়েছিলাম শুধু। তখন তেমন ব্লগার ছিলো না। জীবনের প্রথম গল্প এটা। আজ ভালোবাসার গল্প গ্রুপে এই লেখাটাই শেয়ার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। কথা রাখলাম)

বিথির সাজগোজ, বকুল তলায় যাবে...


এসএমএসটা খোলে বিথি। গাঁদা ফুলের দুলটা পছন্দ হচ্ছে না একদম। তার দিয়ে করেছে। তাও যদি অন্য কোনো কালার করতো! একদম তার কালার! কানে বিধতে বিধতে পড়ার চেষ্টা করে : টোমার... উপাক্ষা... পেলে... ভালি যেট পেরি... সোমোস্তো বধের... উতসা...গ্র্যাস...
ধুর ছাই! বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে যায়। কি সব হাবিজাবি লেখে। এসএমএস ইংলিশেই যখন লিখবি ইংলিশই লেখ্। ইংলিশ বাংলা, তার উপর কবিতা! দুচোখের বিষ বিথির। মইন ভাই ঠিকই বলে। কবি মানেই জংলি। গোছল করে না, নোংরা থাকে। সারা মুখে দাঁড়ি। তার চেয়ে বড় কথা- মাথায় উকুন। উকুন বলেই তাদের মাথা চুলকায়, আর চুলকানি থামাতে তারা আবোলতাবোল লেখে।
মনে পড়লেই হাসি পায়। মইন ভাই মজার মানুষ। সামনের ফলেই দেশে আসবে। বাসায় চুপকথা শুনেছে। কানাকানি। তাকে কেউ কিছু বলে না অবশ্য। অ্যানগেজমেন্টটা হয়েই যাবে তখন। বিথির ভাবতে ভালোই লাগে। এখন এসএমএস ওয়ালাকে নিয়ে হয়েছে প্রব্লেম। ফোন করলে ধরে না। কেটে দেয়! কাপুরুষ একটা। এসএমএস পাঠাবে খালি। বিথি অবশ্য জবাব দেয় না। মাঝে মাঝে না পড়েই ডিলিট করে দেয়। ফোন আসে রিমুর।

-কিরে তোর হলো, আমি বেরিয়ে পড়েছি তো।
-এই আর ১০ মিনিট। নেইল পলিশটা দিয়ে নিই।
-অদ্ভুত তো! আমরা বিয়ে খেতে যাচ্ছি নাকি! এত সাজুগুজুর আছেটা কি! একটু পর খুব ভিড় হবে। আকাশ ও সুবিধের না, বৃষ্টি হতে পারে।
-তুই এত অস্থির হচ্ছিস ক্যানো! বললাম তো ১০ মিনিট। গাড়িতে আসব, তোর আগেই পৌছে যাব টিএসসি।
-এই জন্য তোর সঙ্গে বেরুতে ইচ্ছে করে না। ১০ মিনিটের কথা বলে ঘণ্টাভর দাঁড় করিয়ে রাখিস। জলদি আয়।
কেটে দেয় রিমু।
রিমুটা এত অস্থির- আবার বিরক্ত হয় বিথি। নিজে সাজবে না, অন্যকে সাজতে দিতে আপত্তি। নেইল পলিশ নিয়ে আরেক সমস্যা। বাসন্তি কাপড়ের সঙ্গে ম্যাচ করে অরেঞ্জ পড়া যায়। উহু, ভালো লাগছে না। গোল্ডেন দেবে! স্কিনের সঙ্গে যায় অবশ্য। হুমম। খুব মন দিয়ে ব্রাশ বোলায় বিথি। ম্যাসেজ টোন। আবার! ডিলিট।

সৌরভ অস্থির ভীষণ, বিথির কাছে যাবে...


রিমু’টানা যা তা। এত কঠিন সব কবিতার লাইন রেফার করে! বিরক্ত মুখে সিগারেট টানে সৌরভ। ধোঁয়াটা চোখে ঝাপটাচ্ছে, জ্বলছে খুব। ঘাড় কাৎ করে দেখে এসএমএসটা আবার :

তোমার উপেক্ষা পেলে
অনায়াসে ভুলে যেতে পারি
সমস্ত বোধের উৎস গ্রাস করা প্রেম
ভুলে যাব, তুমি শুধু কাছে এসে উপেক্ষা দেখাও...

লিখে দিতে পারতি! তা না। উনি বলবেন! শুনে শুনে লিখেছে সৌরভ। মিলিয়েছে দুবার। তারপর বানান চেক করে সেন্ড। এইসব ওর একদম আসে না। মেয়ে পটাতে এসব লাগে নাকি আজকাল! কবিতা! ছোঃ! সরাসরি বললেই হয় একটা কিছু। চলো খেতে যাই কোথাও, ঘুরে আসি। রিমু হচ্ছে মধ্যযুগের মেয়ে। শরৎচন্দ্রীয় সাহিত্যের পাতা থেকে উঠে আসা। জাদুঘরে মমি করে পাঠিয়ে দিতে হবে কিছুদিন পর। ফোন। রিমু।

-তুমি কই?
-বাসায়
-এখনো! তুমিও কি পাউডার ঘষছো মুখে! জলদি এসো। নায়ক-নায়িকা দুজনেই লেট লতিফ। ঘটকের দায় নাকি সব?
-কবিতা ফলাস নে তো। বেরুচ্ছি। বিথি আসছে?
-এই তো এখনি চলে আসবে।
-যা ভিড়, মনে হয় না আজ তোমাদের দেখা হবে।
-হবে না মানে! অবশ্যই হবে। তোরা কি চারুকলাতেই যাবি?
-হ্যা, বকুলতলায়। জলদি এসো।

এসএমএস। রিমু।
এবার ফাগুন, আসবে দেখো --অন্যরকম বার্তা নিয়ে
তোমার আমার ভীষণরকম ভালোবাসার যাত্রা নিয়ে
এবার কোকিল গাইবে দেখো অন্যসুরে গুনগুনিয়ে
এবার তুমি বাসবে ভালো শর্ত ছাড়া শর্ত দিয়ে
-শুভ বসন্ত পারেও মেয়েটা! বিথিকে ফরোয়ার্ড করে সৌরভ।

পেছনে যায় গল্প, এটুকু না বললেও হতো...

বিথিকে রিমুদের বাসাতেই প্রথম দেখেছিলো সৌরভ। যেমনটা অহরহ হয়, হচ্ছে, হবেও। সেই গৎবাঁধা শুরু। প্রথম দেখায় কাত! পাড়ার মেয়ে, বোনের বান্ধবী, তার ওপর মায়ের সখী রিমুর মা। ছোটো বেলা থেকেই আসা যাওয়া। ঘরের ছেলে। তারপর পটানো। নাম্বারটা দে না। আমি বলব না তোর কথা, প্রমিজ। জাস্ট এসএমএস। রিমু হাসে। ওর হাসিটা সুন্দর। ছোট থাকতে খুব খেপাতো সৌরভ- তোর দাঁত ভাঙ্গা। মানুষের দাঁত ৩২টা, তোর ৩৩টা। সেই ডিফর্মিটি এখন দুর্দান্ত ফর্মেশন! গজদন্ত। গালের টোলটায় আরো দারুণ লাগে। রিমু দিয়েছিল, তবে শর্তসহ। জাস্ট এসএমএস। ওটা আসে না সৌরভের। রিমুই লিখে দেয়। বিথি অবশ্য ফোন করেছিল, ও ধরেনি। মৌচাকে একটা কোচিং সেন্টারে পড়তে যায় রিমু-বিথি। সৌরভ আশেপাশেই থাকে। একনজর দেখবে বলে। পয়লা ফাগুন বিথির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে রিমু। সৌরভ কনফিডেন্ট। ভ্যালেন্টাইনস ডে তেই ডেট করবে বিথিকে। ওই এলেম তার আছে।


ফিরে যাই গল্পে, রিমু কষ্ট পাচ্ছে...


চুল ঠিক করতে করতে নামে বিথি। এসএমএস। পড়ে। এগিয়ে আসে রিমু।
-এই তোর ১০ মিনিট!
-পড়তো কি লিখেছে। জ্বালিয়ে মারলো। সুন্দরী হওয়ার এই দোষ। এসএমএস আর মিসকল!
-কে দিয়েছে? এবার... ফাগুন... অন্যরকম...
আর পড়ে না রিমু। ওর মুখেও আষাঢ় ঘনায়। এটা সৌরভকে দিয়েছিল সে। বিথির জন্য নয় এই কবিতা।
-বৃষ্টি আসছে। দেখেছিস কত্ত লম্বা লাইন। চারুকলায় ঢুকবি কিভাবে? বললাম সকাল সকাল আয়।
-আর বলিস না। জানতাম না তো এখানে আসব। হুট করে বললি। বাসন্তি কোনো শাড়িই পাচ্ছিলাম না। আম্মুর এই কাপড়টা খুঁজে পেলাম তাই রক্ষা। মাড় দেওয়াই ছিলো। দেখেছিস ফুলের হারটা কিভাবে বানিয়েছে? দুদিন আগে বলতি, সব ঠিক করে রাখতাম। এভাবে হয় নাকি কোনো প্রোগ্রাম!

সেল বাজে রিমুর। সৌরভ।
-কোথায় তুমি?
-তোরা কই?
-টিএসসির সামনে।
-ধ্যাত, ভীষণ জাম। হেটে আসলে আরো আগে আসতে পারতাম। বৃষ্টিও আসছে।
-আমরা দাঁড়াবো?
-কে? কার সঙ্গে কথা বলছিস?
-সৌরভ ভাই। তোকে বলেছি না? আচ্ছা তুমি এসে কল করো। আমরা আছি আশে পাশে।
-তোর বয়ফ্রেন্ড নাকি? হাসে বিথি। তোরা ঘুরবি আমাকে ডাকলি কেনো?
-আরে না। এমনিতেই। উনিও আসবেন বলেছে। ঘুরব তো তুই আর আমিই।
-তাহলে বললি যে দাঁড়াবো নাকি
-চলতো। এই ভিড়ে কেউ কাউকে পাবে না।


কল্পনায় বসিয়ে নিন মাঝের ঘটনা, গল্পের শেষটা বলি...


এই ধরুন বিথি রেগেমেগে চলে যাচ্ছে। রিমু থামাতে পারছে না তাকে। অসহায় তাকাচ্ছে একবার সৌরভ একবার বিথির দিকে। সৌরভের চোখে অন্য কিছু। সে তাকিয়েও কিছু দেখছে না। ইত্যাদি ইত্যাদি আবহ তৈরি করতে হবে এই প্রেক্ষাপটে।
গল্পের শেষটা টানা যায় এভাবে-
-আপা একটু দাঁড়ান।
ঘুরে দাঁড়ায় রিমু। তুলি আর রঙ হাতে একটা ছেলে এগিয়ে আসে।
-আল্পনা এঁকে দিই!
-আমি দিচ্ছি
সৌরভ এগিয়ে আসে। তুলিটা কালো রঙে ডুবিয়ে রিমুর গালে একটা ছোট্ট ফোঁটা এঁকে দেয়।
-বেশ হলো তিলটা! দেখি ঘুরতো। রিমুর দুকাধ চেপে ডানে বাঁয়ে মাথা কাত করে সৌরভ
-কি যেন কবিতাটা- তোমার তিলের জন্য বিলিয়ে দিতে পারি সমরখন্দ-বোখারা... ধ্যাত। আমি হলে লিখতাম, ওই তিলে তুমি... বাদ দে। চল্। তোর সঙ্গে কথা আছে। তোকে তুমি করে বললে খুব খারাপ শোনায় কীনা পড়ে ভাবব।

(বৃষ্টি পড়ছে। কেউ একজন এসএমএসে কাব্য করছে- তোমায় আমি খুব ভেজাবো ফাগুন বরিষনে। বিথির কথা নাইবা ভাবলাম। ওর এই গল্পে আর দরকার নেই কোনো।)




-অমি রহমান পিয়াল

No comments:

Post a Comment