Subscribe:

ভাল থেকো, ভালবাসার শহরে...

প্রিয়তার কথা:
আর্দ্র এর সাথে আমার চেনাজানা খুব সাধারন ভাবেই হয়েছিলো ! খুব ছোট ছিলাম তখন , আধ একটু বোল এ ছড়া টড়া বলতে পারি , কিভাবে যেন একটা বিশাল প্রোগ্রামে আবৃত্তি করার চান্স পেয়ে গেলাম ! হ্যাঁ , আর্দ্রের সাথে সেভাবেই পরিচয় ! আমি হয়তো খুব সাধারন কেউ তাই আর্দ্রর আমাকে ভুলে যেতে সময় লাগেনি । কিন্তু , আর্দ্র ছিলো অসাধারণ একজন , তাকে ভুলে যাওয়ার তো প্রশ্ন ই আসেনা ! সময়ের সাথে একটু একটু করে আমি বড় হতে থাকলাম , সেই সাথে আর্দ্র ও আর বড় হতে লাগলো আর্দ্র এর জন্য আমার একটু একটু করে জমতে থাকা অনুভূতি গুলো ! ভালবাসা ছিলো কিনা জানি না কিন্তু ঐ অদ্ভূত কাঁপন ধরানো অনুভূতি গুলোর উত্‍স যে হৃদয় ছিল তাতে সন্দেহ নেই ।


স্কুলে পড়ার সময় টিভিতে যখন আর্দ্রকে দেখতাম , আমার মুখে রক্ত জমত , আমি অবাক বিস্ময়ে ভাবতাম একটা মানুষ এতো সুন্দর গায় কি করে ! তারপর যখন একদিন ট্যালেন্ট হান্টে দেশ সেরা হবার মুকুটটা একটুর জন্য মিস করে , সেদিন সারারাত আমি কেঁদেছি !

আর্দ্রের সব খবর আমি রাখতাম , ও ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হল আর আমি তখনো কলেজ পেরুতে পারিনি ! আর্দ্রের সাথে আমার আবার দেখা হয়েছিল ক্যাম্পাসে , দলবল নিয়ে খুব হুল্লোড় করতো , আমি দূর থেকে দেখতাম , হলের রুমমেটের সৌজন্যে আর্দ্র আমার বন্ধু হয়ে গেলো ! আর্দ্র ছিলো সূর্য যাকে ঘিরে গ্রহ ঘুরে আর আমি ছোট্ট একটা উপগ্রহ ! তবু ওদের আড্ডায় আমার জায়গা হতো , আহ কি যে সুখ ছিলো কাছ থেকে ওকে দেখা !
তারপর আরো কয়েকটি বসন্ত পার হলো ! আর্দ্র আর অরুর ব্যাপারটা আমি জানতাম , তাই যখন বিয়ের নেমন্তন্ন এলো একটুও অবাক হইনি , অবাক হয়েছিলাম আর্দ্রের আব্দারে !

প্রিয়তা , তুই আমার বাসরঘর সাজিয়ে দিবি ? তুই তো চারুকলার ছাত্রী !
আর অরুর আব্দার ছিলো ওদের বিয়ের সবচেয়ে সুন্দর উপহার টা যেন পায় আমার কাছ থেকে !
আমি আমার সবটুকু সাধনা দিয়ে ওদের বাসর সাজালাম ! কান্নাটা যতবার দলা পাকিয়ে গলার কাছে আসছিল ততবার গিলে ফেলছিলাম ! আজ আমি কাঁদবো না !
ঘর সাজানো শেষ ! ব্রাউন পেপারে মোড়ানো উপহার টা ছোট্ট টেবিলে রেখে বের হয়ে আসলাম ! আমার কাজ শেষ !
আর্দ্রর কথা:
অরু কে নিয়ে আমি যখন দুরু দুরু বুকে বাসর ঘরে ঢুকলাম আমি হতবাক হয়ে গেলাম , বিস্ময়ে ! এটা কি কোন স্বর্গ ! রুমের দরজা থেকে বিছানা পর্যন্ত টকটকে লাল গোলাপের পাপড়ি বিছানো যেন লাল গালিচা , রুমের একপাশে একসারিতে রাখা ঘিয়ের প্রদীপের মৃদু আলোয় পুরো ঘর আলোকিত , একপাশে কাঁচের বোলে শিউলি , গন্ধরাজ ভাসছে ! পুরো ঘর একটা ভালবাসাময় সুগন্ধীতে ছেঁয়ে আছে ! বিছানায় উপর থেকে নেমে আসা বেলি ফুলের মালার ফাঁকে ফাঁকে অর্কিড দুলছে , ঘরের আরেকপাশে একটা ময়ূর যেনো এক্ষুনি পেখম তুলে নাচতে শুরু করবে !

আমার অরু তখন ভাষা হারিয়ে ফেলেছে , শুধু বলল ও কি করে করলো এটা ? এই অপার্থিব সৌন্দর্যতে আমি এতোটাই বুঁদ যে কিছু বলতে পারলাম না ! টেবিলের উপরে থাকা উপহারটা অরুই তুলে নিলো ! একটা পেইন্টিং ! আমি আর অরু আরেক দফা মুগ্ধ হলাম ! ছবিটাতে একটা হাত উপর থেকে শিউলি দিচ্ছে আর আরেকটা হাত তা নিচ্ছে কিন্তু সব মিলে একটা অন্যরকম সুন্দর , শিউলিতে ফোঁটায় ফোঁটায় জমে থাকা শিশির গুলো যেন একেকটা হীরার টুকরা , আমি অস্ফুস্ট কন্ঠে বললাম এটাতো মাস্টার পীস ! এঘর এটার যোগ্য না ! তখনি প্যাকেট থেকে একটা চিরকুট পড়লো ।

ওতে লেখা আমি আমার সবটুকু থেকে তোমাদের এই উপহার দিলাম , সামান্য কিন্তু বিশ্বাস করো এতে হৃদয়ের খাঁটি অনুভূতিটুকুই মেশানো আছে !
অরুর ডাকে চমক ভাঙলো !

ছবিটার কোটেশনে ওর হাত , আর তাতেই গত কয়েক বছরের প্রিয়তার না বলা সব কথা গুলো যেন বলা হয়ে গেছে ! ছোট্ট একটা বাক্য , গুটি কয়েক শব্দে ওর সমস্ত অপ্রকাশিত মনের কথা , ঠিক যতখানি কম কথায় সর্বোচ্চ যতটুকু বলা যায় তা ও বলে দিয়েছে ! ছবিটার কোটেশনে লেখা... ভাল থেকো , ভালবাসার শহরে ।।


-নূহা চৌধুরী 

No comments:

Post a Comment