Subscribe:

একজন সে-র জন্য...

১.
স্বপ্নের মত তুমি এসেছিলে আমার জীবনে, আবার স্বপ্নভঙ্গের মতই চলে গেছ । কষ্ট পাইনি । কারণ, কষ্টের অনুভূতিটা কেমন আমি কোনোদিন বুঝিইনি । আমার জগত্ ছিল ভিন্ন । আশেপাশের জগত্ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা । আনন্দের একটা জীবন । নিষ্ঠুর আনন্দ । হ্যা , নিষ্ঠুর আনন্দ ।


সেই দিন গুলোর কথা মনে পড়লে আজও মনটা বিষিয়ে উঠে । আজও সেই দিন গুলো আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায় । আমি মুক্ত হতে চাই । সাদামাটা জীবনে ফিরে যেতে চাই । রাতের নির্জনতায় তোমাকে ভেবে ভেবে শান্তিতে ঘুমিয়ে যেতে চাই ।

কিন্তু,সেটা কোনোদিনই হবার নয় । সেই মানুষরূপী পশু গুলো আমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে । আমাকে পেলে ওরা অভুক্ত কুকুরের মত কেটে ছিড়ে ফেলবে । আমি বাচঁতে চাই । তোমার হাত ধরে কাঁদতে চাই । তোমাকে বলতে চাই ,আমি ভাল হয়ে গেছি । বিশ্বাস কর রূপা , আমি সন্ত্রাসের পথ ছেড়ে দিয়েছি।


২.
রাত তিনটা ।

আমি দাড়িয়ে আছি একটা সরু গলির মাঝখানে। আমার সাথে আছে ফাহাদ আর সজল ।চারিদিকে অন্ধকার । শুধু ল্যামপোষ্টের আবছা আলো । অনেকটা আমার জীবনের মতই । কারন আমার জীবনে কোনো আলো নেই ।

আমরা ভাড়াটে সন্ত্রাসী ।কীরন ভাইয়ের হয়ে কাজ করি ।যেকোনো কাজ ,শুধু মাত্র টাকার জন্য ।কিরণ ভাই বিরাট রাজনৈতিক নেতা ।তার অনেক পাওয়ার । বিশাল নেটওয়ার্ক । আমাদের তিনি বলেন ,তোদের কোনো ভয় নাই ,বিপদে পড়লে আমার নাম

বলিস্ ,দেখি কোন ব্যাটা তোদের গায়ে হাত দেয় । আমরা তাই চিন্তামুক্ত ।কিরণ ভাইয়ের সাথে আমাদের দেখা হয়না বললেই চলে ।

তিনি পাটিঁ ইলেকশন্ ইত্যাদি নিয়ে ব্যাস্ত থাকেন । আমাদের সাথে দেখা করার সময় কোথায় তার ?


তো ,যা বলছিলাম ,দাড়িয়ে আছি । হাতে সিগারেট । হঠাৎ দেখি দুজন টহলদার পুলিশ আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে ।বোধ হয় জ্বলন্ত সিগারেটের আলো দেখেই আসছে । আমি সিগারেট ফেলে দিলাম ।

ফাহাদ বলল , "দোস্ত ,খাইছে । এরা কোথ্থিকা আইল ?"
আমি উত্তর দিলাম না ।

কাছে এসে একজন প্রশ্ন করল, "এই ,এত রাতে এখানে ঘুরাঘুরি করতাছেন কেন ? নাম কি ? কি করেন ?"

আমি অত্যন্ত বিনয়ী ভাবে বললাম ,"স্যার আমার নাম শুভ ,এখানে একটা মেসে আমরা তিন বন্ধু থাকি ।"

লোডশেডিং তো , তাই একটু বাইরে বের হয়েছি । ভেতরে প্রচন্ড গরম তো , তাই ।"

পুলিশ বলল ,"দেখি ,সার্চ করি ।"

পরে কিছু না পেয়ে বলল, "আচ্ছা ,আচ্ছা ,বেশি ঘুরাঘুরি কইরেন না । বাড়ি চইলা যান । আপনাদের দেইখা ভদ্র ঘরের ছেলে মনে হচ্ছে । তাই ছাইড়া দিলাম ।"
পুলিশ চলে গেল ।মনে মনে হাফ ছেড়ে বাচলাম ।
সজল বলল, "শুভ ,অপুর ব্যাপার টা নিয়া কি ভাবলি ?হালকার উপরে ছাইরা দিব ? "

আমি বললাম,"না ,পরে শালা প্রবলেম ক্রিয়েট করবে । আজাইরা ঝামেলা রাখমু না । শেষ কইরা দে ।ব্যাটার সাহস বেশি হইছে। কিরণ ভাইয়ের সাথে বেইমানি,বলে কিনা আমরা ভালনা ,আমাদের পথ ছেড়ে দেবে । বললেই হল ?"

 

পরদিন সকালে বাজার করতে গিয়ে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরল অপু। রক্তে ভিজে গিয়েছিল ওর সার্ট।

উল্লাসে মেতে উঠেছিলাম আমরা । মরার আগে আমাদের বলেছিল,"শুভ ,তোরা আমাকে ছেড়ে দে ,আমি বাঁচতে চাই । আমি সেই সাদামাটা জীবনে আবার ফিরে যেতে চাই। আমাকে মারিস না,খোদার দোহাই।"

আমরা প্রাণ খুলে হেসেছি ।


৩.
তুমি আমার জীবনে আসার পর থেকে আমি শিখেছি ভালবাসার মানে , কষ্টের মানে। আমার মত চালচুলোহীন ছেলে যে জন্মের পর বাবা মাকে দেখেনি তাকে তুমি ভালবেসেছ ,দিয়েছ ভাল জীবনের প্রতিশ্রুতি । তোমাকে আমি মরনের আগ পর্যন্ত ভালবেসে যাব।তুমি আমার সব।তোমার জন্য আমি সব ছেড়ে দিয়েছি।

আমাকে ছেড়ে কোনোদিন যেওনা রূপা ।


৪.
ওরা আসছে...
যাদের সাথে আমি একদিন চলেছি,যাদের কে নিজের বন্ধু বলে মনে করেছি তারা আমাকে মারার জন্য হায়েনার মত আসছে । আমি ছুটছি ।

ছুটছি...ছুটছি.....আজ অপুর শেষ কথা গুলো খুব মনে পড়ছে ।

"..শুভ,আমায় তোরা ছেড়ে দে । আমি বাঁচতে চাই!আমি সেই সাদামাটা জীবনে ফেরে যেতে চাই........"

 


- বিপ্রতীব

No comments:

Post a Comment