Subscribe:

অপ্রত্যাশিত

রান্না করতে করতে একেবারে হাঁপিয়ে উঠেছে বৃষ্টি । আজ মেঘের জন্মদিন । তাই বৃষ্টি আর শফিক মেঘের এপার্টমেন্টে এসেছে । ভুনা খিচুরি আর গরুর মাংস রান্না করার মহান দায়িত্ব পরেছে বৃষ্টির উপর । বৃষ্টি বহুবার মেঘের এই ফ্ল্যাটে এসেছে । গত পাঁচটা বছরে এখানে অনেক অনেক রান্না করতে হয়েছে বৃষ্টিকে।


                     মাংসটা চুলায় বসিয়ে দিয়ে একটু বিশ্রাম নেবার জন্য বারান্দায় এসে দাড়াল বৃষ্টি । এই শীতের সকালে বারান্দায় রোদ পোহাতে পোহাতে মেঘ আর শফিক দুজনে বিশাল মনোযোগ দিয়ে দাবা খেলছে। আচ্ছা, মাংসে কি ঝাল দিব?

বৃষ্টির কথা দুজনের কেউই খেয়াল করল না । তারা তাদের মত দাবা খেলতেই থাকল । এরপর বৃষ্টি ওদের ধমক দিয়ে বলল, আমার কথা তোমরা শুনতে পাও না ? মাংসে কি ঝাল বেশি দিব ? শফিক মেঘ একসাথেই বলে, হুম ।

ওদের কান্ড কাড়খানা দেখে আপনমনেই হাসতে থাকে বৃষ্টি ।
রান্নাঘরে ফিরে এসে বৃষ্টি ভাবতে থাকে এত সুখ ওর সইবে তো ! শফিকের মত স্বামী আর মেঘের মত বন্ধু, এই দুজন এভাবেই সারাজীবন ওর পাশে থাকবে তো ! মেঘের সাথে পাঁচ বছরের বন্ধুত্ব আর শফিকের সাথে সাড়ে চার বছরের প্রেমের শেষে বিবাহিত জীবন, এই নিয়ে ভাবতে ভাবতেই রান্না করতে থাকে বৃষ্টি। মেঘটা শুরু থেকেই একটা পাগল ছিল । অসম্ভব রকম ছেলেমানুষী আর বাচ্চা বাচ্চা চেহারার কারণে সকলের প্রিয় ছিল ও । আর মেঘের হাসি দেখলে তো যেকোন মেয়ে ইন্সট্যান্ট ফিদা হয়ে যেত । কত মেয়ের প্রপোজ রিফিউজ করল পাগলটা ! কিছু জিজ্ঞেস করলেই বলত, প্রেম ট্রেম আমার দ্বারা হবে না । যখন যা মনে হত তাই করত । নিজের ইচ্ছাপূরণের সাথে সাথে অন্যদের ইচ্ছা পূরণ করতেও তার উচ্ছ্বাসের কোন কমতি ছিল না । দেখলে মনে হত উনি যেন ইচ্ছাপূরণের দেবতা ।

   পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে বৃষ্টির সর্বক্ষণের সঙ্গী ছিল ওই একজনই, মেঘ । ওদের এই বন্ধুত্ব অনেকেই ঈর্ষা করত । অবশ্য ঈর্ষা করার মতই ওদের বন্ধুত্ব । মেঘের সাথে যখন বৃষ্টির পরিচয় তখন মেঘ ছিল পুরোপুরি আকারে মাদকাসক্ত এক যুবক । কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার ছিল এই ছেলেকে দেখে কোনদিনই মনে হয়নি যে এই ছেলে ড্রাগ এডিক্টেড । তাই বৃষ্টি যখন বন্ধুদের মুখে শুনল যে মেঘ নেশা করে । তখন বৃষ্টি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারেনি । বৃষ্টি বিশ্বাস করেছিল সেদিন যেদিন সে মেঘের কোন খোঁজ না পেয়ে মেঘের ফ্ল্যাটে গিয়েছিল । তারপর শুরু হল বৃষ্টির অঘোষিত যুদ্ধ । একমাত্র বৃষ্টির চেষ্টাতেই মেঘ এত সহজে নিরাময় কেন্দ্রে না থেকে সব নেশা ছেড়ে দিতে পেরেছিল । যেদিন মেঘ পুরোপুরি সুস্থ হল সেদিন বৃষ্টির মনে হল বৃষ্টি যেন মাত্র বিশ্বজয় করে ঘরে ফিরল ।

তারপর শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য আশ্রম এর জন্য ছোটাছুটি করতে করতে কিভাবে যে ক্যাম্পাস লাইফটা শেষ হয়ে গেল তা দুজনের কেউই বুঝতে পারে না । ভার্সিটি পর্বের সমাপ্তি হওয়া মাত্র শফিকের সাথে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হল । বৃষ্টি চেয়েছিল একটা জব হলে তারপর বিয়ে করবে । কিন্তু দুই ফ্যামিলির চাপে পড়ে মাস্টার্সের সার্টিফিকেট হাতে নিয়ে বেকার হয়েই কাবিননামায় সই করতে হল বৃষ্টির। শফিকের সাথে বৃষ্টির পরিচয়ের কাহিনীটা একটু অন্যরকম । বৃষ্টি, মেঘ ওরা তখন সবে মাত্র সেকেন্ড ইয়ারে উঠেছে । ভার্সিটির সমাবর্তনের অনুষ্ঠান হচ্ছে । মেঘ আসেনি তাই বৃষ্টি একাই করিম ভাইয়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিল । চায়ের দোকানে বসেই সমাবর্তনের অনুষ্ঠানের বকবকানি শোনা যাচ্ছিল । হঠাৎ করেই বৃষ্টি চা খেতে গিয়ে কাশি দিয়ে উঠল । এটা কি শুনছে সে ??? সমাবর্তনের ছাত্র ছাত্রীদের সামনে মেঘ কবিতা আবৃত্তি করছে ??? কোনরকমে করিম ভাইকে চার টাকা ধরিয়ে দিয়ে সমাবর্তনের স্টেজের সামনে গিয়ে তো বৃষ্টি অবাক । এ কি ! এত মেঘ না ! কিন্তু আবৃত্তি একদম মেঘের মত ! ঠিক মেঘের মত উচ্চারণ ! আবৃত্তি করা মানুষটার মাঝেও মেঘের মত বাচ্চা বাচ্চা ভাব আছে ।


এভাবেই মেঘের সাথে মিল খুজতে গিয়ে সদ্য পাশ করে বের হওয়া আইবিএ’র ছাত্র শফিকের সাথে বৃষ্টির পরিচয়, তারপর প্রেম । তারপর আর কি পাশ করার পরপরই বিয়ে । তারপর মেঘের বিয়ের গিফট, ঢাকা-মালয়শিয়া-ঢাকা টিকেটে সাত দিনের হানিমুন শেষে আজ সে আর শফিক মেঘের জন্মদিনে মেঘের ফ্ল্যাটে । মেঘের সাথে শফিকের অনেক মিল । মেঘের রাগ, জেদ, ক্রোধ, সিগারেট এইসব বাজে দিকগুলো বাদ দিলে দুজন সম্পুর্ণ একই মানুষ । বৃষ্টির কাছে সবকিছু স্বপ্নের মত মনে হয় । মাঝে মাঝেই বৃষ্টি নিজের গায়ে চিমটি দিয়ে দেখে আসলেই স্বপ্ন না তো !


রান্না শেষ করে তিনজনে মিলে খুব মজা করে বারান্দায় বসে ভোজনপর্ব শেষ করে ।
তারপর তিনমগ ধোয়া ওঠা গরম কফি নিয়ে গল্প করতে বসে ওরা ।
শফিক ভাই আজকে আপনাকে আমার জীবনের গল্প শোনাব , বলেই বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে মেঘ বলে, গল্পের মাঝখানে ডিস্টার্ব করলে কিন্তু তোর কপালে খারাপি আছে ।
নীল শাড়িতে বৃষ্টির হাসিমাখা মুখের দিকে তাকিয়েই চোখ ফিরিয়ে নেয় মেঘ ।

বৃষ্টি ভাবে কি গল্প বলবে পাগলটা, ওর সব কথাই তো বৃষ্টি জানে । পাগলটা শীতের মধ্যে সাদা ফুল হাতা শার্টের সাথে থ্রি কোয়ার্টার পড়ে আছে । চুলের সাথে চিরুনির দেখা নাই কতদিন কে জানে ? পাগলটাকে এইসব কে বোঝাবে ? সুন্দর দেখে একটা লাল টুকটুকে বউ এনে দিতে হবে পাগলটাকে । সেই লাল টুকটুক বউই ছাগলটাকে একেবারে মানুষ করে ফেলবে ।


মেঘকে সিগারেট ধরাতে দেখেই চেঁচিয়ে ওঠে বৃষ্টি, ওই তুই সিগারেট ধরাচ্ছিস কেন ?
 মেঘ হেসে বলে, সবই তো ছেড়ে দিয়েছি সিগারেটটা অন্তত থাকুক আমার সাথে ?
এই একটাই আর সিগারেট ধরাতে পারবি না আজ ।
আচ্ছা বলে সিগারেট ধড়িয়ে গল্প বলা শুরু করে মেঘ,


                              “শফিক ভাই আপনি হয়তো জানেন আমার জন্ম কানাডায় । জন্মের পরেই দেখলাম বাবা পাগলের মত টাকার পেছনে ছুটছেন আর মা আমাকে দেশীয় সংস্কৃতির সাথে আত্মার যোগাযোগ ঘটানোর প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন । ফলাফল হিসেবে আমার শৈশব, কৈশোর শুধু দস্তয়ভস্কি, তলস্তয়, কিটসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকল না, আমার পরিচয়ের ব্যাপ্তি ঘটল রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, তারাশঙ্কর, জীবনানন্দ দাস পর্যন্ত । সবকিছু ঠিকঠাকমতই চলছিল । কিন্তু হঠাৎ করেই মা স্কিন ক্যান্সারে মারা গেলেন । তখন আমি ও লেভেল এ পড়ি । মা মারা যাবার পর আমি খুব একা হয়ে গেলাম । বাবা তো তার ব্যাবসা নিয়েই ব্যস্ত । আমি তখন এলকোহল ধরলাম । পুরোপুরি এলকোহলিক হয়ে ও লেভেল পরীক্ষা দিলাম । একটা সুবিধার দিক ছিল যে আমি নেশা করলেও কেউ বুঝতে পারত না আমি নেশাগ্রস্থ । সেইজন্য বাবাও কিছু ধরতে পারলেন না ।


                বিদেশে আর ভাল লাগল না । মনে হল নিজের দেশে ফিরে যাই । নিজের আপন ঠিকানায় । বাবা মা ছাড়া আমার আর কোন আত্মীয় ছিল না । তাই দেশে এসে এই ফ্ল্যাট কিনলাম, গাড়ি কিনলাম । একটা বাংলা মিডিয়াম কলেজেই ভর্তি হলাম । দেশে এসে দেখলাম এখানে নেশাদ্রব্য বিদেশের চেয়ে অনেক বেশী সহজলভ্য । গাঁজা দিয়ে শুরু করে শেষমেষ হেরোইন এ পাকাপোক্ত ভাবে আসক্ত হলাম । ক্লাস টাস কিছু করি না । পরীক্ষা হলে শুধু গিয়ে পরীক্ষা দেই । কেমন করে যেন পাশও করে ফেলি । দলবদ্ধ হয়ে নেশা করতে ভাল লাগে না । ফ্ল্যাটে বসে একা একাই নেশা করি আর গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ি লং ড্রাইভে । এমন করতে করতেই এইচএসসি পরীক্ষা যায় । পাশ করে কেমন করে যেন একটা পাবলিক ভার্সিটিতেও চান্স পেয়ে যাই ।


               প্রথম দিন ই নবীণবরণ । বড় ভাইদের চাপে পড়ে আবৃত্তি করি জীবনানন্দ দাসের বনলতা সেন । স্যার-ম্যাডাম রা খুব প্রশংসা করেন আমার । সবাই ভাবল এই ছেলে কিছু একটা হবে । প্রথম দিনই অনেকের সাথে পরিচিত হলাম এবং আবৃতি করে মোটামুটি আমি সেলিব্রেটি বনে গেলাম ।

তারপরের দিন ডিপার্টমেন্টের সামনে দাড়িয়ে মাত্র সিগারেটটা ধরিয়েছি এমন সময় পিছন থেকে মেয়ে কণ্ঠে কেউ একজন আমার নাম ধরে ডাকল । আমি পিছনে ফিরেই স্তম্ভিত হয়ে গেলাম, এত সুন্দর কেন মেয়েটা ??? আমি তাকাতেই মেয়েটা আমাকে ইশারায় ডাকল ।

তোমার কাছে ১০ টাকা ভাংতি আছে ? আমার কাছে ১০০ টাকার নোট ।

আমি অবাক হয়ে চিরাচরিত উত্তর দিলাম, আমাকে বলছেন ?

হ্যা, তোমাকেই বলছি, ১০ টাকা ভাংতি থাকলে দাও রিকশাওয়ালা কে বিদায় করি ।
 আর নাহলে এও ১০০ টাকার নোটটা নাও ভাংতি করে দাও ।
আমি ১০ টাকার নোট বের করে দিয়ে অপলক দৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকলাম ।



                        এভাবেই বৃষ্টির সাথে আমার পরিচয় । দুজনের পছন্দের খুব মিল থাকার কারণে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খুব ভাল ফ্রেন্ড হয়ে গেলাম । ছয় সাত মাস পরেই বৃষ্টি আমার অন্ধকার জগতের খবর জেনে গেল । এই মেয়েটির জেদের কারণেই আমি দুই মাসের মধ্যেই সব নেশা ছেড়ে দিলাম । আসলে আরেকটা নেশা আমাকে ততদিনে গ্রাস করে ফেলেছিল । ততদিনে বৃষ্টির মায়ায় আমি প্রচন্ডভাবে আসক্ত গিয়েছিলাম । আমার সমস্ত সত্তা জুড়ে তখন কেবলমাত্র একটা মানুষের জন্যই প্রার্থণা উচ্চারিত হত । সেটা ভাললাগা না ভালবাসা তখনো বুঝে উঠতে পারিনি । ঠিক তখনি শুনলাম আপনার কথা, আপনাদের সম্পর্কের কথা, আমার পুনর্বাসনের সময়টাতে আপনার পরিচয়, ভাললাগা, ভালবাসা সব আমাকে বলল বৃষ্টি । কিন্তু কেন যেন ঠিক বিশ্বাস করতে পারলাম না । মনে হল বৃষ্টি বোধহয় মজা করছে । বিশ্বাস হল সেদিন যেদিন ও আপনার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল । সেদিনই প্রথম বুঝতে পারলাম আমি বৃষ্টিকে ভালবাসি । "
  মেঘের কথার মাঝখানে বৃষ্টি অবাক হয়ে কিছু বলতে নিলে মেঘ বাধা দিয়ে বলে, বৃষ্টি যা কিছু বলার আমার কথা শেষ হবার পরে বলিস ।
মেঘের চোখের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টি আর কিছু বলার পর সাহস পায় না ।
শুধু অবাক তাকিয়ে থাকে মেঘের দিকে ।
            মেঘ আবার বলতে শুরু করে, “সেদিনের পর আমি ক্রোধের বশবর্তী হয়ে আপনার সম্পর্কে খোঁজ নেয়া শুরু করলাম । আপনার সম্পর্কে খোঁজ নেয়ার পর আমি হতবিহবল হয়ে পড়ি । একটা মানুষ এতটা ভাল কিভাবে হয় ? বুঝতে পারলাম বৃষ্টির জীবনে আপনার চেয়ে ভাল জীবনসঙ্গী আর কেউ হতে পারে না । আর তাই ভাবলাম সরে যাব বৃষ্টির জীবন থেকে । সৃষ্টিকর্তারও বোধহয় তেমনি কোন ইচ্ছা ছিল । হঠাৎ করেই বাবা মারা গেলেন । আমি এক দিনের নোটিশে কানাডা রওনা হলাম । যাবার সময় শুধু ফোন করে বৃষ্টিকে জানিয়ে গেলাম ।
   বাবা মারা গেলে মানুষ নাকি অথৈ সাগরে পড়ে । আমার বাবাও আমাকে অথৈ সাগরে রেখে গেলেন তবে সেটা টাকার অথৈ সাগর । বাবার সব ব্যবসার দেখাশোনা করতে গিয়ে বুঝলাম বাবা কি পরিমাণ অমানুষিক পরিশ্রম করে গেছেন । সব করে গেছেন আমার জন্যে । আমার একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্যে একমাত্র ছেলেকেও তিনি সময় দিতে পারেন নি । বাবার জন্যে খুব কষ্ট হতে লাগল । ভাবলাম বৃষ্টি কে ছেড়ে এই কানাডাতেই হোক আমার স্বেচ্ছা নির্বাসন । কিন্তু এক মাসও থাকতে পারলাম না । সব সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়ে বেশুমার টাকা নিয়ে আমি দেশে ফিরলাম ।
দেশে ফিরে সবার আড়ালেই থাকলাম । আবার আমি হেরোইন নেয়া শুরু করলাম । দূর থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে বৃষ্টিকে দেখতাম । বৃষ্টি তখনও জানে না যে আমি দেশে । একদিন হঠাৎ করেই বৃষ্টি আমার ফ্ল্যাটে এসে উপস্থিত । আমি হেরোইন সহ আবার ওর কাছে ধরা পড়ি । তারপর পুরনো দিনের মত আবার সবকিছু ছেড়ে দেয়া এবং নতুন করে আবার বৃষ্টির মায়ায় আমার আসক্ত হয়ে পড়া । সেই একই ঘটনার যেন আবার পুনরাবৃত্তি ঘটল । তবে এবার আমি বদলে গেলাম । ভবিষ্যতে কি হবে তা না ভেবে বর্তমানের সময়টুকু আর নষ্ট করলাম না । আবার ওর সাথে মিশতে শুরু করলাম ।
                       বাবার রেখে যাওয়া এত টাকা দিয়ে কি করব ? দুজনে মিলে ঠিক করলাম শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য একটা আশ্রম খুলব । যেই ভাবা সেই কাজ । গাজীপুরে জমি কিনলাম । আশ্রম এর কাজ শুরু হল । প্রতি দিন ক্লাস শেষ করেই গাড়িতে করে গাজীপুর আশ্রমের কাজে চলে যেতাম দুজন । আশ্রমের ছোটাছুটি করতে করতে কখন যে মাস্টার্স শেষ হয়ে গেল টেরই পেলাম না । পাশ করার পরপরই আপনাদের বিয়ে হয়ে গেল এবং আমি সম্পূর্ণভাবে নিজেকে হারিয়ে ফেললাম ।
এতদিন যে কাজটা করতে ইচ্ছা করে নি তাই করতে ইচ্ছা করল । সিদ্ধান্ত নিলাম আত্মহত্যা করব । রেলস্টেশনে গেলাম, বিষ কিনে আনলাম কিন্তু আত্মহত্যা করতে পারলাম না । শুধু বারবার মনে হতে লাগল ভালবাসার মানুষটিকে একটিবারের জন্যেও ভালবাসি বলে যেতে পারব না ?
   ভাবলাম যা হবার হবে বৃষ্টিকে আমার ভালবাসার কথা বলতেই হবে ।
আমি যে বৃষ্টিকে ভালবাসি ।”
   কথা থামিয়ে মেঘ দুজনের দিকেই তাকায় । শফিক, বৃষ্টি দুজনেই একদম চুপ কেউ কোন কথা বলে না ।
আমি কিন্তু আজ আপনাদের একটা উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে এনেছি । আমাদের তিনজনের মধ্যে আজ একজনকে মরতে হবে । আমি অথবা শফিক ভাই, দুজনের একজনকে আজ মরতেই হবে । কে মারা যাবে সে সিদ্ধান্ত নেবে বৃষ্টি ।
বৃষ্টি, তুই আজ শুধু একজনকে বাঁচাতে পারবি । তোর স্বামী অথবা আমি । একজনকে তোর খুন করতেই হবে ।
তুই ভাল করেই জানিস আমি যা বলি তা করেই ছাড়ি ।
পকেট থেকে লাইসেন্স করা রিভলবারটা বৃষ্টির হাতে তুলে দেয় মেঘ ।
বৃষ্টি বিকারগ্রস্থের মত রিভলবারটা হাতে নেয় । রিভলবারটা হাতে নিয়ে বেশ কিছুক্ষন বসে থাকে বৃষ্টি । তারপর শফিকের দিকে তাকিয়ে বলে, মাফ করে দিও ।
                ঘটনার আকস্মিকতায় কি করা উচিত বুঝতে পারে না শফিক । মেঘের দিকে রিভলবারটা তুলে ধরে বৃষ্টি । তুই কখনও বলিস নি আমাকে । তুইও তো কখনও বুঝিস নি আমাকে । বৃষ্টি কাঁদতে থাকে । কাঁদতে কাঁদতে রিভলবারটা নিজের মাথার দিকে ধরে ট্রিগার টিপে দেয় । শফিক যেন এই দৃশ্য দেখে পাথর হয়ে যায় । গুলির শব্দ হবার সাথে সাথেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে মেঘ, আরে বাবা তোদের সাথে একটু মজা করলাম । রিভলবারে গুলি নাই । শুধু মেঘই হাসতে থাকে । ঘটনার আকস্মিকতায় সময় যেন থমকে যায় । মেঘ হাসতেই থাকে । বৃষ্টি উঠে গিয়ে মেঘের গালে জোরে একটা থাপ্পর মেরে ফ্ল্যাট থেকে বেড়িয়ে যায় । শফিক কি করবে বুঝতে না পেরে বৃষ্টির পেছন পেছন ছুটে যায় । কাঁদতে কাঁদতে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় গুলির শব্দে থমকে দাড়ায় বৃষ্টি ।
              শফিকের দিকে একবার তাকিয়ে ফ্ল্যাটের দিকে ছুটে যায় বৃষ্টি । শফিক ভিতরে গিয়ে দেখে মেঘের মাথা থেকে রক্ত বের হয়ে ভেসে গেছে মেঝে তার উপর অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে বৃষ্টি । বৃষ্টির হাতে ছোট্ট একটা চিরকুট ।
বৃষ্টি,
তোকে সত্যিই অনেক ভালবাসি ।
অনেক বেশি ভালবাসি ।
আকাশের মেঘ যেমন অল্প কিছু সময়ের জন্য বৃষ্টিকে ধরে রাখে ।
তেমনি কিছুটা সময় আমি তোকে ধরে রেখেছিলাম ।
তোকে ধরেই বেঁচে ছিলাম ।
মেঘ থেকে বৃষ্টি ঝরে গেলে যেমন মেঘ বাতাসে মিলিয়ে যায় ।
তেমনি আমিও আজ মিলিয়ে গেলাম ।
ভালো থাকিস ।
পরিশিষ্টঃ দুইবছর মানসিক হাসপাতালে থাকার পর শফিকের ভালবাসায় বৃষ্টি আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে । ওদের ঘর আলো করে জন্ম নেয় ফুটফুটে একটি ছেলেসন্তান । বৃষ্টি ওর ছেলের নাম রাখে -মেঘ ।

____________________________________________________________________________
 সাককাম জিতু

1 comment:

  1. o sadaron sundor jake prokas korber moto kono vasa amr nei...

    ReplyDelete