Subscribe:

এভরিথিং উইল বি পারফেক্ট

এইমাত্র একটা গণধোলাই খেলাম,এখন বিশাল জোরে শ্বাস প্রশ্বাস নিচ্ছি।মনে হচ্ছে তৃষ্ণায় বুক ফেটে ফানাফানা হয়ে যাবে তবুও ধড়ফড়ানি কমবেনা।আপনাদের মনে প্রশ্ন জেগেছে হয়তো কেন আমি এই ধোলাইটা খেলাম।কারণ সুস্পষ্ট,আমাদের দেশে রাস্তাঘাটে হাটাচলা করলে প্রায়ই দেখা যায় মানুষজন জটলা পাকিয়ে আছে।আমি এইরকম জটলা দেখামাত্রই দাঁড়িয়ে পড়ি এবং হাবাগোবা মানুষ খুজি যার পকেট মারলে বুঝতে সময় লাগবে।দয়া করে কেউ মনে করবেন না এটা আমার পেশা।আমি নিতান্তই ভদ্র ঘরের একজন সন্তান।এইচ.এস.সি পাশ করার পর তিন বছর বেকার হয়ে আছি।ইউনিভার্সিটি পড়ার সামর্থ্য নাই,যোগ্যতাও নাই তাই এইসব অকাজ কুকাজ করে পয়সা জমানোর ধান্দায় আছি।


আসলে এই বুদ্ধিটা আমি পেয়েছিলাম প্রথম আমাদের বাসার কাজের ছেলে মদিনার কাছ থেকে।হ্যা নামটা ঠিকই শুনেছেন, মদিনা।আমি বহুবার তাকে চড় থাপ্পড় দিয়েও এই নামের তাৎপর্য বাহির করতে পারিনি। মদিনা ছোটকাল থেকেই চৌর্যবৃত্তি নামক মহান পেশার কারিগর।কিভাবে মানুষের অজান্তে পকেট মারতে হয় তা ওই আমাকে হাতে কলমে শিখিয়েছে।গত ছয়মাস ধরে আমি তাই রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে এই কাজই করে আসছি।দুইএকবার ভয়ংকর মার খেয়েছি, দুদিন রেস্ট নিলে আবার সব ঠিক হয়ে যায়।আমার চেহারায় একটা ইনোসেন্ট ভাব থাকাতে আমি প্রায়ই ছাড়া পেয়ে যাই।

আমি জন্মের পর থেকে আমার এক চাচার বাসায় মানুষ।আমার চাচা একজন বিশাল দিল দরিয়া মানুষ।আমার মত একটা বাড়তি প্রানীকে তিনি বছরের পর বছর থাকতে পড়তে দিচ্ছেন এইজন্য আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া জানাই।সমস্যা একটাই প্রতি মাসের এক তারিখে চাচা মদ খেয়ে বাসায় এসে আমাকে বেদম মার মারেন।মার দিয়ে বাপের নাম যে আসলেও ভুলিয়ে দেয়া যায় সেটা আমি চাচার মাধ্যমে ছয় বছর বয়স থেকেই শিখতে পেরেছি।আমার চাচি অবশ্য ভালো মানুষ।উনার রাগ পেলে আমাকে রান্নাঘরে তেল গরম করে একটু হা্তে পায়ে ছিটিয়ে দেয়।বিশ্বাস করুন আমার এখন আর কোন রকম জ্বালা যন্ত্রণা হয়না সেজন্য।মাঝে মাঝে একটু বাথরুমে যেয়ে কান্নাকাটি করলেই এভরিথিং ইজ পারফেক্ট।

আমার বাবা মায়ের কথা একটু বলা দরকার।বাবা অনেক আগেই ভেগে গেছে আমার জন্মদাত্রীকে ফেলে রেখে।মা আমাকে দুদিন নিজের কাছে রেখেছিলেন, তারপর নিজেও আরেকজনকে বিয়ে করে এখন লন্ডনে আছেন আমার সৎবাবাকে নিয়ে।আমার সৎবাবা দেখতে শুনেছি বেশ চমৎকার।উনি অবশ্য জানেন না আমার ব্যাপারে কিছু।কারণ মাকে যখন বিয়ে দেয়া হয় তখন বলা হয়েছিল যে মায়ের পূর্বের স্বামী যৌতুক নিয়ে পালিয়ে গেছে বিদেশে, আর কখনোই দেশে আসবেনা।এখন মজার কথা বলি।আমি আমার মাকে জীবনেও নিজ চোখে দেখিনাই।হ্যা একটা ছবি আছে অবশ্য।ছবিটা আমি যত্ন করে লুকিয়ে রেখেছি।আমার চাচার বড় ছেলে প্রায়ই আমার একমাত্র সম্বল ছেড়া কালো ব্যাগটিতে অনুসন্ধান চালান।একবার ছবিটা তার হাতে পড়লে হয়তো নিয়ে আর ফেরত দেবেন না।আমার মা দেখতে কিন্তু ভয়ানক সুন্দরী ছিলেন।লোকমুখে শুনেছি উনি আমাকে সবসময় প্রচন্ড ঘৃণা করতেন। কারণ্টা ছিলো আমার বাবা।উনি কখনোই আমার বাবাকে বিয়ে করতে চাননি, কারণ মা আরেকজনকে ভালোবাসতেন।যাকে ভালোবাসতেন তাকেই অবশ্য পরে বিয়ে করেন।আমি সেজন্য বড়ই আনন্দিত, আহলাদিত।বাংলা সিনেমায় যখন নায়ক নায়িকা ভিলেনকে সাইজ করে মিলিত হয় আমি অজান্তেই তালি বাজাই।সেকারণেই আমার মায়ের প্রতি আমার কোন রাগ ছিলোনা।মাঝে মাঝে শুধু মনে হতো, আমার জন্য একটু চকোলেট বিস্কুট লন্ডন থেকে পাঠালে এমন কি ক্ষতি হতো?শুনেছি লন্ডনী চকোলেট গুলোতে নাকি আফিম থাকে।

আসল গল্পে ফিরে আসি।আমার পকেট মেরে জমানো সর্বমোট অর্থের পরিমাণ ৩০,৫৯৪ টাকা।আমার কাছে সেটা অনেক টাকা।তবে যখন আরো কিছু টাকা হবে তখন নীতুকে একটা গিফট কিনে দেব।গিফট আমি ঠিক করে রেখেছি, একটা বিশাল বড় হীরার আংটি।আমি জানি হীরার আংটি কোথায় পাওয়া যায়।কিছু টাকা জমিয়ে ভালো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য চেষ্টা করবো।একবার কোথাও যদি ভর্তি হতে পারি টিউশনী করে ঝাক্কাস একটা জীবনে পেয়ে যাবো।নীতুর সাথে মনের সুখে রিকশায় ঘুরে করনেলী আইসক্রীম খাবো আর প্রেম করবো।নীতু অবশ্য আমাকে কখনো পাত্তা দেয়নাই।অবশ্য পাত্তা দেবে কি করে, আমি তো কখনো ওর সামনে যেয়ে দাড়ানোর সাহসই পাইনাই।নীতু আমার চাচার মেজ মেয়ে যে কিনা আমার সমবয়সী তার খুব ক্লোজ বান্ধবী।নীতু যখন বাসায় আসে তখন আমি ওকে প্রায়ই লুকিয়ে লুকিয়ে দেখি।কিন্তু কখনো সামনে যেতে পারিনাই।অতটুকু সাহস করতে পারিনি কখনোই।

এইসব প্রেমের গল্প বাদ দেই।আজকে সকালে যে আচানক ঘটনা হয়েছে সেটাই আপনাদের একটু বর্ণনা করি।আমার মাতাজী বহুদিন পর বাংলাদেশে আসেছেন এবং উনার ব্যস্ত সময়ের খানিকটা আমাকে দেবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।এই ব্যাপারটা যখন চাচা আমাকে ব্যাখ্যা করলো তখন আমি একটু টাশকি খেলাম, একটু লজ্জাও পেলাম।আমার মায়ের মত এলিগান্ট একজন মহিলার সামনে একটা ভালো জামাও পড়ে যাওয়ার মত সামর্থ্য আমার নাই। আরো ভয়ানক ব্যাপার হলো আমার মায়ের সাথে তার ছেলে মেয়েরাও হয়তো থাকবেন।ওরা নিশ্চয় আমাকে খুব ছ্যা ছ্যা করবে।ভাবছি পকেট মেরে জমানো টাকা দিয়ে কিছু ভালো জামাকাপড়, একটা ভালো ব্র্যান্ডের সেন্ট কিনবো।যাই হোক এইসব আগ পিছ ভাবতে ভাবতে রাস্তায় বের হলাম।গেটের বাহিরেই দেখি পলাশ দাঁড়িয়ে আছে। সামনে এসে আমার হাতে একটা সিগারেট দিয়ে বললো, “ভালো পোলার মত টান মার নাইলে আইজকা গলাটা নামায় দিমু”।

আমি পলাশের গালে ফটাস করে একটা চড় মেরে বললাম, “দূর হ হারামজাদা।মেজাজটা বিলা হয়ে আছে।আমার আম্মা আইতাছে সামনের সোমবারে”।

পলাশ গাল ডলতে ডলতে ফিক করে হেসে বললো, "দোস্ত তোর তো তাহলে কেল্লা ফতে।নতুন জামা কাপুড় পাইবি, লন্ডনী চকলেট, সাঙ্গেলাস...আমারে কিছু শেয়ার দিস।রুমানার সাথে সামনের সপ্তাহে ডেটে যামু।"

আমার বন্ধু পলাশের ব্যাপারে কিছু বলা দরকার।সে একজন ভয়ংকর চামবাজ ছেলে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের ফাস্ট বয় (সে বলে, আমি বিশ্বাস করিনা), কিন্তু তাকে আমি পড়াশোনা করতে দেখিনা।তার প্রধান কাজ বিড়ি টানা আর রুমানা নামে তার ক্লাসমেটের সাথে প্রেম করা।তার জীবনে অন্যতম কষ্ট আমি বিড়ি খাইনা।আমি খাইনা কারণ নীতু একদিন আমার চাচাতো বোনকে বলছিলো তার বর্তমান লাভারকে নাকি সে চড় মেরেছে কারণ ওই ছেলে তার সামনে সিগারেট টানার চেষ্টা করেছিলো।বলা যায়না, নীতু যদি কখনো আমাকে পছন্দ করে ফেলে তাই এইসব ধোয়া খাওয়ার চিন্তা বাদ দেওয়াই ভালো।

পলাশকে নিয়ে আমি বসুন্ধরা সিটিতে গেলাম এবং আমার কিছু চুরি করা টাকার সদ্বব্যবহার করে বাসায় ফিরলাম।সমস্যা হলো যখন রাস্তায় ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামলো আর আমি কাউয়াভেজা হয়ে বাসায় ফিরলাম।বাসায় এসে দেখি সুমন ভাই আমার অসহায় মা বাবা ও তাদের ২৮ বংশের নাম ধরে গালাগালি করছে।ঘটনা অতি সামান্য, তার রুম থেকে এক প্যাকেট বেনসন চুরি গিয়েছে।আমি হলাম এই বাসার প্রতিষ্ঠিত চোর।কিছু হারিয়ে গেলেই সর্বপ্রথম ধোলাইটা আমাকেই খেতে হয় এবং আমি এজন্য সবসময়ই প্রস্তুত থাকি।তাই আমাকে যখন কুকুরের মত মারা হলো তখন আমি কিছুই মনে করিনাই।সব ভুলে গিয়ে যখন রাতে আমার ছোট্ট বিছানায় ঘুমুতে গেলাম তখন সারা শরীর কেপে জ্বর এসেছে।আমি তখন মনে মনে এক প্যাকেট বেনসনের দাম হিসাব করতে লাগলাম।একেবারেই ঘুম এলোনা।

আজ সোমবার, আমার মাতাজী আমার সামনে বসে আছেন।আমি ভদ্র ছেলের মত তার পাশে যেয়ে বসে রইলাম।বুঝতে পারছিনা কি বলা উচিত।উনিই নিজে থেকে আমাকে বললেন, “তুমি শুনেছি এইচ.এস.সিতে গোল্ডেন ফাইভ পেয়ে পাশ করেছো।কোন ভার্সিটিতে ভর্তি হওনি কেন?”

আমি মাথা নেড়ে বললাম, “জ্বী।পড়াশোনা করতে ইচ্ছা করেনি।এইবছর কোন একজায়গায় ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করবো”।

আমার মা মাথা নেড়ে বললেন, “তুমি কি আমাকে কিছু বলতে চাও?”

আমি মাথা নেড়ে বললাম “জ্বী।আপনি আমার বাবার ব্যাপারে এত খারাপ কথা কেন সবাইকে বলেছেন?”

আমার মা বেশ ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো।কিছুই তার মুখ থেকে বের হলোনা।আমি নিজে থেকে বললাম, “আপনি সবাইকে বলেছেন আমার বাবা আপনাকে ভালবাসতোনা।উনি আপনার থেকে ভেগে গেছেন তাই না?”

আমার মা চিৎকার করে বললো, “তোমার কি তাতে কোন সন্দেহ আছে?তোমার বাবার মত খারাপ মানুষ খুব কম আছে দুনিয়াতে”।

আমি মাথা নিচু করে বললাম, “আপনি কখনোই আমার বাবাকে ভালোবাসেন নাই।উনাকে মানসিকভাবে নির্যাতন করেছেন।উনি আপনাকে অনেক ভালবাসতেন কিন্তু আপনার থেকে উনি কিছুই পান নাই।শেষদিকে উনি মানসিক রোগী হয়ে পড়েছিলেন।একদিন উনি কোথায় যেন হারিয়ে যায়।কেউ কিন্তু তার খোজ নেয়নাই।কারণ আপনি সবাইকে বলেছেন সে পালিয়ে গেছে।তাই না?”

আমার মা আমার দিকে বড় বড় চোখ নিয়ে তাকিয়ে বলতে লাগলেন, “এইসব তোমাকে কে বলেছে?”

আমি আলতো করে হাসি দিয়ে বললাম, “আমি সব জানি।তবে আমি আপনার প্রতি কোন দাবী রাখিনা।আপনাকে আমার বাবার সাথে জোর করে বিয়ে দিয়ে নানাজান অপরাধ করেছিলেন।সেই অপরাধ আপনি পরে শুদ্ধ করেছেন।মাঝে দিয়ে শুধু আমার...”

বুক ফেটে কান্না আসছে, কিন্তু অনেক কষ্টে নিজেকে শান্ত করে আমি চলে গেলাম সেখান থেকে।সেইদিন আমি আর চাচার বাসায় ফিরে যাইনাই।পরেরদিন সকালে যখন বাসায় যাই আমার চাচা আমার হাতে মায়ের দেয়া একটা চিঠি দিয়ে যান।চিঠিতে সংক্ষেপে লিখা,
“তোমার বাবা একজন অসামান্য চিত্রশিল্পী ছিলেন।আমি তার সাথে অন্যায় করেছি,তোমার সাথেও করেছি।পারলে আমাকে ক্ষমা করো”।

আমি মনে মনে বললাম, আপনাকে আমি কখনো মনেই রাখার চেষ্টা করিনা, ক্ষমা করবো কি?

তখন চারদিকে কেমন যেন একটা শান্ত হাওয়া বইছে।আমি ছাদে যেয়ে সেই শান্ত হাওয়ার মাঝে নিজেকে বিস্তৃত করে দিলাম।আশেপাশের কোন ছাদে কেউ নাই, ফোটায় ফোটায় বৃষ্টি ঝরছে আর আমি একাকী একটি বালক সেই প্রকৃতির মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেললাম।কোথায় তা জানিনা।

নীতুকে আমি আমার কাজিনের মাধ্যমেই সাহস করে প্রেমপত্র দিলাম।আমার কাজিন মেয়েটা খুব ভালো এবং চাচার বাসায় ওই একজন যে আমাকে সবার মত তুচ্ছ করেনা।আমার নিজের বোন থাকলে হয়তো এভাবেই আমাকে ভালবাসতো।যাই হোক, ওকে যখন আমি প্রেমপত্র হাতে ধরিয়ে দিলাম তখন সে হাসতে হাসতে আমাকে বললো, “ভাইয়া তুই জানিস না ওর লাভার আছে?”

আমি বললাম “তাতে কি?যদি আমার জন্য তাকে ছেড়ে দেয়?”

ও হাসতে হাসতে বললো, “আচ্ছা দেখা যাবে।আমি তোমার বাণী ওকে পৌছায় দিবো”।

সেদিন নীতু যখন চাচার বাসায় এলো তখন দুই বান্ধবী দরজা আটকিয়ে কি ভয়ংকর জোরে হাসাহাসি করতে লাগলো তা বলে বোঝানো যাবেনা।আমি অত্যন্ত বিব্রত বোধ করলাম।পরে আমার কাজিন এসে আমাকে বললো, “ভাইয়া তুমি ছাদে যাও।ও তোমার সাথে ছাদে কথা বলবে”।
আমি ছাদে যেয়ে আধঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর নীতু এসে আমার সামনে দাড়ালো।সাথে অবশ্য আমার কাজিনও ছিলো।কাজিন আমাদের সামনে এসে বললো, “তোরা একটু কথা বল।আমি আমাদের আমগাছটা একটু দেখে আসি”।

নীতু মুচকি হেসে আমার দিকে তাকিয়ে সরাসরি বললো, “আমি না আপনাকে খুব মদন টাইপ ভাবতাম।আপনার চিঠি পেয়ে ধারণা ভেঙ্গেছে”।
আমি ছাগলের মত কান খাড়া করে তার কথা বুঝার চেষ্টা করতে লাগলাম।আমার গা কেন যেন ভয়ে কাপছে।
নীতু আমাকে বললো, “আমার তো আসলে একটা এফেয়ার আছে।তিন বছরের এফেয়ার।এইটা আপনি জানতেন না?”
আমি হেসে বললাম “জানি তো”।
নীতু তার ভ্রু কুচকিয়ে আমাকে বললো, “আপনি তো তাহলে বড়ই ফাজিল প্রকৃতির লোক”।
আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলাম।নীতু আমাকে বললো, “আমার বয়ফ্রেন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে,সে বেশ ভালো ছাত্র।আমার আব্বা আম্মাও তাকে বেশ পছন্দ করে।আমিও তাকে অনেক পছন্দ করি”।
আমি অবাক হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, কেন পছন্দ করেন?
নীতু প্রানোচ্ছল হাসি দিয়ে বললো, “সে ভালো ছেলে।আচ্ছা আপনি আমাকে কেন পছন্দ করেন?”

আমি হঠাৎ করে বুঝতে পারলাম নীতু আমাকে নিয়ে জাস্ট জোকস করছে।আমার কাজিন সুমির উপর খুব মেজাজ গরম হলো।আমি নীতুকে একটু অভিমান করেই বললাম, “পছন্দ করি কেন তা তো জানা নাই।বেশি পছন্দ করি বলেই হয়তো আপনার এফেয়ার আছে জেনেও এই পর্যন্ত আগালাম।আপনি আমাকে পছন্দ করেন না সেটা আগেই জানি”।
নীতু বললো “আমি সরি”।

আমি অনেক সহজ হয়ে গেলাম।আমি তার দিকে তাকিয়ে হেসে বললাম, “কোন ব্যাপার না”।

যখন ছাদ থেকে নিচে নামছি তখন শুনতে পেলাম নীতু আর আমার কাজিন বেশ শব্দ করে হাসছে।আমিও হাসলাম নিজের প্রতি।আমার মত একজন আশ্রিত মানব এভাবে প্রেম প্রীতির শখ করে কিভাবে ভেবে হাসি পেলো।আমি কি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম?

রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি পলাশের সাথে।ব্যস্ত সড়ক, কঠিন রৌদ্র।আমি অপেক্ষা করছি রুমানার আসার জন্য।রুমানা এলে পলাশকে বিদায় দিয়ে চারুকলায় যাবো।মধুর ক্যান্টিনের ছোট্ট দুটো মিষ্টি আর মাখন দেয়া পাউরুটি খাবো।আজকাল ভয়ংকর একটা রোগ বাসা বেধেছে আমার শরীরে।সবসময়ই গায়ে জ্বর থাকে, গলা শুকিয়ে মনে হয় চৌচির হয়ে যাবে।কিন্তু জল খেতে ইচ্ছা করেনা।দুপুরের রোদে পুড়তে পুড়তে রুমানাকে একটা রিকশায় করে আসতে দেখলাম।মেয়েটা আমাকে দেখেই এমন একটা বিরক্তির ভাব দেখালো যে আমি পলাশকে কিছু তেমন না বলে উল্টোদিকে হাটা শুরু করলাম।হাটতে হাটতে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি।নিজের মনে নিজে নিজেই বলছি, সব ঠিক হয়ে যাবে।এভরিথিং উইল বি পারফেক্ট।

******************************************************************
গল্পটা কেন লিখালাম বুঝলাম না।এই গল্পটা লিখার সময় দুবার লোডশেডিং এর শিকার হয়েছি,তবুও পুনরায় লিখেছি।আজকে শেষ করতে পারলাম বলে আনন্দিত।প্রিয় পাঠক, আমার এই আলুথালু গল্পগুলো আপনার বিরক্তি উদ্রেক ঘটালে দুঃখবোধ জানালাম।

আরো জানাই, এই গল্পটা যেদিন থেকে লিখা হচ্ছে সেদিন থেকে লেখকের মেজাজ অত্যন্ত বিলা হয়ে আছে।লেখকের শেষ ফেসবুক স্ট্যাটাস মেসেজ "কারে যেন সাইজ করতে ইচ্ছা করতেছে"।তাই কি থেকে কি লিখা হলো বুঝলাম না।আবারো দুঃখিত।

সাদ আহাম্মেদ

1 comment: