Subscribe:

"আমার একটি জন্মদিবস"

মিআঅ্যাঁউউউ...মিআঅ্যাঁউউউ...... “ওরে ও বিল্লিরে বিল্লি, তুই থাম না রে। আর একটু ঘুমাইতে দে”। আমার ধমক (!) খেয়ে বিল্লিটা মনে হয় একটু ক্ষান্ত হয়েছে। যেই চোখের পাতা আবার লেগে আসলো বিল্লিটা আবার মিউ মিউ করতে লাগলো। আপনি ভাবছেন বিড়ালটি আমার ভক্ত। আমি যেন তাকে এখন কোলে নিয়ে আদর করি-তাই আমাকে ঘুমাতে দিচ্ছে না। বিষয়টা মোটেও সে রকম কিছু না। বরং এই বিড়ালটাকে আমি দেখতেই পারি না।


এই বাসায় সে এখন পর্যন্ত আছে শুধু মাত্র তার ম্যাডামের জন্য (!)। এখন আর তার মিউ মিউ সহ্য করতে পারলাম না। লাফ দিয়ে উঠে বসে পড়ি। আমার আকস্মিকতা দেখে বিল্লি দৌড় দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। হয়তো তার ম্যাডামের কাছে গিয়েছে। গ্রামের মানুষের ঘুম যদি মোরগের ডাকে ভাঙ্গে তাহলে আমার ঘুম ভাঙ্গে এই বিল্লির মিউ মিউ ডাকে। মোটে ৭ টা বাজে। আর দিলো আরামের ঘুমটা ভেঙ্গে। আমার জানটা যে কেন এই বিড়াল কেনার জন্য আমার কাছে বায়না ধরল কে জানে। শেষ পর্যন্ত এই বিড়ালই আমার প্রতিদিনের ঘুম কেড়ে নেয়। যদি মোরগ হতো তাহলেতো প্রথম দিনেই টুটি চেপে ধরে গ্রিল বানিয়ে খেয়ে ফেলতাম। কিন্তু বিড়ালতো... কিচ্ছু করতে পারি না......

“কই উঠসো? দেরি হয়ে যাচ্ছেতো। তাড়াতাড়ি উঠো”- আমার জানটা বলল। এখন তার সাথে আমার হাঁটতে যেতে হবে। মর্নিং ওয়াক ইজ গুড ফর হেল্‌থ- ছোটকালে এই কথাটা শুধু বইয়ে পড়ে এসেছি কিন্তু কখনও তা পালন করিনি। কিন্তু এখন তা আমার জানের জন্য পালন করতে হচ্ছে। কোনোমতে রেডি হয়ে আমার জানের সাথে বের হলাম। হাঁটছি আর মাঝে মাঝে দুই একটা কথা বলছি। পুরো রমনা পার্ক একবার চক্কর দিতেই হবে। তবেই আমার জান শান্ত হবেন। তার একটাই কথা তিনি আমাকে সুস্থ দেখতে চান। জানি তিনি আমাকে অনেক ভালবাসেন।

কিন্তু তাই বলে এতো কষ্ট করতে হবে আমাকে!!! হাঁটতে গেলে ওই বিল্লিটাও আমাদের সাথে যায় এবং তাকে সামলানোর দায়িত্বটাও আমাকেই নিতে হয়। আর পার্কে গেলেতো বিল্লি কি যে পায়... উসাইন বোল্ট এর চেয়েও তীব্র গতিতে দৌড়ায়। আর আমাকেই তার পিছনে পিছনে দৌড়াতে হয়। সে যেন আমার কাছে এক যুদ্ধের মতো। সবাই দেখে একটা মাঝবয়সী ছেলে বিড়ালের পিছনে দৌড়াচ্ছে কিন্তু বিড়ালটাকে ধরতে পারছে না- ওয়াট এ পিটি!!!!! আমার আর বিল্লির এই কাণ্ড দেখে আমার জান হেসে কুটি কুটি। শেষ পর্যন্ত বিল্লি কিন্তু তার ম্যাডামের পায়েয় কাছে এসেই থামে। আর আমিও তখন বলি, “আমি আর হাঁটতে পারব না। এই বিড়াল আমাকে অনেক খাটিয়েছে”। একটু বিশ্রাম নিতে বসলাম। আমার জানও বসলো। তার ঘাম মুছার জন্য পকেট থেকে টিস্যু এর প্যাকেট বের করে তার হাতে দিলাম। আর তখন আমার জান খুশি হয়ে প্রীতি জিনতা টাইপ এক হাসি দিল। ভাই-বোন বিশ্বাস করেন আমি তার এই হাসি দেখলে সত্যি পাগল হয়ে যাই। তাই আমি মাঝে মাঝে বাধ্য হয়ে বলি জান, তুমি একটু কম হাসবা। না হলেতো দুই দিন পর তুমি আমাকে পাগলাগারদে পাবা। আমি এই কথা বলার পরও সে হাসে। বুঝেন আমার অবস্থাটা......

বাসায় এসেই আমাকে অফিসে যাবার জন্য দৌড়াতে হলো। ৯টার মধ্যে অফিসে আসলাম। হাতের কাজ গুলো সারছিলাম। কিছুক্ষণ পর আমার এক দোস্তো ধপ করে রুমে ঢুকেই বলে, “হ্যাপি বার্থদে দোস্তো”...............

আমি তখন আকাশ থেকে পরলাম। কি বলে এই গাধাটা!!! আমার আজ জন্মদিন!!!! দ্রুত আমার ডেস্কের বাম পাশের ক্যালেন্ডারের দিকে তাকালাম। আসলেইতো আজ আমার জন্মদিন (!!)। আমার এই রকম অবস্থা দেখে আমার বন্ধু সোজা জিজ্ঞাস করে বসে, “ কিরে তোর কি আজ মনে নেই তোর আজ জন্মদিন? তাহলে কি তোর বউ তোকে আজ উইশ করে নাই??” ইসরে যা ভাবছিলাম তাই জিজ্ঞাস করলো। আমার এই বন্ধুর সাথে আবার আরেক প্রতিযোগিতা আছে। ঘটনাটা বলেই ফেলি। আমার বন্ধু বিয়ে করেছে প্রেম করে। আর আমি বিয়ে করেছি বাবা-মা এর পছন্দে। তার সাথে আমার প্রায়ই মধুর ঝগড়া হয় যে কে সুখী- আমি নাকি সে। সে তার মতো যুক্তি দেয় যে তারা অনেকদিন পরিচিত ছিল, তাই তাদের মাঝে বোঝাপড়াটা ভালো। তাই সে বেশি সুখী। অন্য দিকে আমি যুক্তি দি যে আমিই তার থেকে বেশি সুখী। বিয়ের আগেই যদি প্রেম করে সব রোমান্স করা হয়ে যায় তাহলে বিয়ের পর কি করবে। তাই আমি আর আমার জান বিয়ের পর প্রেম করি এবং রোমান্স করি- তাই আমাদের মাঝে কোন সমস্যা নাই। কিন্তু এই কথা সে মানতেই চায় না।

কোনো রকমে নিজেকে রক্ষা করার জন্য এই জন্মদিনের দিন একটা মিথ্যে কথা বললাম। “আরে, না দোস্ত আজ ওর একটু শরীর খারাপ। আমি ওকে আর ঘুম থেকে না জাগিয়েই চলে এসেছি”। “তাই নাকি?”- আমার বন্ধুর খোঁচা মার্কা উত্তর। ওর দেয়া গিফট নিয়ে ধ্যনবাদ দিয়ে কোনরকম এ কথা ঘুরাতে চেষ্টা করলাম। আমার দোস্তো চলে যাবার পর আমি খুব মনমরা হয়ে যাই। এটা কোন কথা হল... আমি না হয় আমার জন্মদিনের কথা ভুলে গেলাম কিন্তু আমার জান কি করে ভুলে গেল...

দুপুরে জান ফোন দিলো। আমি খেয়েছি কিনা তার খোঁজ নিতে।

“(কিছুটা মনমরা হয়ে) না খাই নি।  খেতে ইচ্ছে করছে না”।

“ এই! কি ব্যাপার দুপুর বেলা খাচ্ছো না কি হয়েছে তোমার??”

“না কিছু হয়নি। আজ কাজের অনেক চাপ। তোমার সাথে আমি পরে কথা বলব। এখন রাখি”।

ওকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ফোনটা রেখে দিলাম।

বিকেলের দিকে আমাকে আবার ফোন করলো। আমি ফোন ধরিনি দেখে ও আমাকে একটা টেক্সট দিলো।

“ শোন, তোমার যে আজ কি হল কিছুই বুঝতে পারলাম না। ফোনটাও ধরছ না। আজ তোমার আমাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা ছিল। মনে হয় তুমি তা ভুলে গেছ। ঠিক আছে, অসুবিধা নেই। আমি মায়ের সাথে যাচ্ছি। আজ রাতে আমি বাসায় আসব না। মায়ের কাছেই থাকব। আমি ড্রাইভারের কাছে চাবি দিয়ে দিচ্ছি। তুমি তাড়াতাড়ি বাসায় চলে যেও”।

বুকের ভিতরটাতে অনেক চাপ অনুভব করলাম। আমি এটা কি করলাম... সত্যিইতো আমার আজ ওকে ডাক্তারের কাছে নেয়ার কথা ছিল। গত সপ্তাহে ডাক্তার কিছু টেস্ট করতে দিয়েছিলেন। রিপোর্ট নিয়ে আজ যাবার কথা ছিল। ধ্যাত... কিছুই হচ্ছে না। মন-মেজাজ দু’টাই খারাপ হয়ে গেল। আরে আমি যেমন ডাক্তারের কাছে যাবার মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজের কথা ভুলে গেয়েছি আর ওতো আমার জন্মদিনের কথা ভুলে যেতেই পারে। নিজের উপর খুব রাগ হলো। ওর মোবাইলে ফোন দিলাম। কিন্তু এখন ও আমার উপর রাগ করে ফোন বন্ধ করে রেখেছে। কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না। আম্মুর কাছে ফোন দিলে আম্মু আবার অন্য কিছু ভাবে যে আমাদের মধ্যে কিছু হলো নাকি... সাতপাঁচ ভেবে চুপ করে বসে থাকা ছাড়া কিছুই করতে পারলাম না।

অফিসের কাজে কোন মতেই মন বসাতে পারছিলাম না। মাঝে একবার সন্ধ্যার দিকে আমার ড্রাইভারকে ফোন দিলাম। ওকে ঠিক মতো পৌঁছে দিয়েছে কিনা খোঁজ নিলাম। রাত প্রায় ৮টা বেজে গেছে। সাধারণত আমি এই সময় অফিস থেকে বের হই খুশি মনে। সারাদিন পর আমার জানটাকে দেখব বলে। কিন্তু আজ মন খারাপ। ও আজ বাসায় নেই। কিছুক্ষনের মধ্যেই অফিস থেকে নেমে পড়ি।

“স্যার, এই নেন বাসার চাবি। ম্যাডাম আপনেরে দিতে বলছিল“- গাড়িতে উঠতেই আমার ড্রাইভার আমার হাতে চাবি ধরিয়ে দিলো।

গাড়ি চলছে। মনটা খুব খারাপ। আজ আমার জন্মদিন। আর আজ কিনা আমার এরকম একটা দিন গেল। ওকে আবার ফোন দিলাম। ফোনটা তখনও বন্ধ। কি করব মাথায় কিছুই আসছে না। ৯টার মধ্যেই বাসার নীচে এসে পৌছালাম। ড্রাইভারকে গাড়ি বন্ধ করে চলে যেতে বললাম। লিফটে উঠে ৪তলায় আমার ফ্ল্যাটের দরজার সামনে এসে থামলাম। পকেট থেকে চাবি বের করে ভিতরে ঢুকলাম। পুরো বাসাটাই অন্ধকার হয়ে আছে। কিন্তু আমার কাছে কেন যেন মনে হল ডাইনিং রুম থেকে একটু আলো আসছে। আমাদের মেইন দরজা থেকে ডাইনিং রুম একটু আড়ালে। দরজা বন্ধ করে আমি ওখানে যা দেখলাম তা অবিশ্বাসকর।

খাবার টেবিলের মাঝে একটা ব্লাকফরেস্ট কেক এবং তার চারপাশে মোমবাতি জ্বলছে!!!!!!!!!!!! তার মানে আমার জান আমার জন্মদিনের কথা মনে রেখেছে। আরে এই না হলে আমার জান। আমার মাথায় তখন আসলো আচ্ছা আমার জান কি সত্যিই আজ মায়ের বাসায় থাকবে। যেই আমি আমাদের রুমের দিকে যাবো তখন আমার সামনেই দেখি যে আমার জান দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখে দেখি সেই প্রীতি জিনতা টাইপ এক হাসি।

“হ্যাপি বার্থডে“

“থ্যাংকইউ জান”

“তুমি কি খুব সারপ্রাইজড??”

“নয়তো কি! আমিতো ভেবেছিলাম যে তুমি আমার জন্মদিনের কথা ভুলেই গেছো।”

“স্যরি। আসলে সকালে উইস করলেতো আর এই রকম সারপ্রাইজ দিতে পারতাম না।"

“তোমার জন্য আরও একটা সারপ্রাইজ আছে”- আমার জান আবার বললো।

“কি বলতোছো!!!! কি সেটা???”

“তুমি বাবা হতে যাচ্ছো”

আমি তখন কি যে বলবো আমি ভাষা হারিয়ে ফেললাম। জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার আমার জানের কাছ থেকে পেলাম। আমার জানকে তখন দেখলাম লজ্জায় একেবারে লাল হয়ে গিয়েছে। আমি তখন তাকে জড়িয়ে ধরলাম।

“আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার তুমি আজ আমাকে দিয়েছো। থাঙ্কইউ সো মাচ”

এই আবেগঘন মুহূর্তটা যেই উদযাপন করতে যাচ্ছিলাম হঠাৎ করেই সেই চিরচেনা যন্ত্রণা এসে হাজির।

মিআঅ্যাঁউউউ...মিআঅ্যাঁউউউ.....

“তুই আর মিউ করার সময় পেলিনা। আজ তোর একদিন কি আমার একদিন”। যেই বিল্লিটাকে একটা কিক মারতে যাবো, আমার জান আমার হাতটা টান দিয়ে বলে,

“অ্যাঅ্যাআইইইই......”


-Farhan Rahman

1 comment:

  1. Valo laglo...R onek onek jonmo din hoi ai kamonai..

    ReplyDelete